ধর্ম ডেস্ক : আধ্যাত্মিক সাধনা করা পুরোটাই আদব। আধ্যাত্মিক সাধনার অর্থ আল্লাহকে পাওয়ার জন্য সাধনা করা। দেশে বহু মানুষ আছে যারা কোরআন শরিফ পড়তে পারে না। মাসআলা-মাসায়েল জানে না, নামাজ পড়ে না, পর্দা করে না, তা সত্ত্বেও আধ্যাত্মিক সাধক হওয়ার দাবি করে। আসলে তারা মানুষের সঙ্গে প্রতারণা ও ধোঁকাবাজি করে থাকে হাদিয়া পাওয়ার লাভে। সব সময়ই এ ধরনের কিছু লোক থাকে, যারা সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করে। মহিলাদের সামনে এনে ঝাড়ে। আবার বোনও ডাকে। যুক্তি দেখায়, আপনি আমার আপন বোন না হলেও মারেফতি বোন। হাক্কানি আলেম-ওলামারা যখন এটাকে হারাম বলে, তখন তারা বলে, এরা আমাদের শত্রু, ইসলামের শত্রু।
তবে যারা প্রকৃত আধ্যাত্মিক সাধক অর্থাৎ সহি পীর, তাদের মধ্যে অবশ্যই শরিয়ত আছে। আর যারা বলে, আধ্যাত্মিক সাধনার জন্য শরিয়ত লাগবে না, তারা শয়তানের সীমানার মধ্যে বসবাসকারী। এ ধরনের আধ্যাত্মিক সাধনা গ্রহণীয় নয়। আল্লাহ ও তাঁর রসুলের বাতানো তরিকা পদ্ধতি ছাড়া কোনো মেহনত মকবুল হবে না। আল্লাহতায়ালা রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আধ্যাত্মিক সাধনা শিক্ষা দিয়েছেন এভাবে, হে নবী! তুমি প্রথমে কোরআনের আয়াত শিক্ষা দাও।
আধ্যাত্মিক সাধনার জন্য কোরআন জানা অপরিহার্য। দোতলায় উঠতে হলে আপনাকে প্রথম তলার সিঁড়ি বেয়েই উঠতে হবে। আত্মিক সাধনার প্রথম সিঁড়ির নাম হলো তেলাওয়াতে কোরআন। যারা বলে, আধ্যাত্মিক সাধনার জন্য কোরআন তেলাওয়াত শেখার প্রয়োজন নেই, তারা বিভ্রান্তি সৃষ্টিকারী ছাড়া আর কিছুই নয়। এসব শরিয়তবিহীন মারেফাতের দাবিদারদের যদি শিকড় সন্ধান করা হয়, তাহলে দেখা যাবে, সে ইহুদি খ্রিস্টান বা কাদিয়ানিদের অনুচর।
ইসলামের নামে ধোঁকা : এরা প্রথমে ভালো ভালো কথা বলতে বলতে একপর্যায়ে ইহুদি খ্রিস্টান কিংবা কাদিয়ানিদের কথা বলেন ইসলামের নামে। মনে হয় বিরাট বড় বুজুর্গ, কিন্তু গভীরভাবে খোঁজ নিলে দেখা যায়, সে ইসলামের নামে মুসলমানদের ধোঁকা দিচ্ছে। এ দেশের মানুষ ধর্মপ্রাণ ও সরলমনা। তাদের ইসলামের কথা বললেই তারা গ্রহণ করার জন্য উদগ্রীব হয়। পীর বা আধ্যাত্মিক সাধক কাকে বলা যাবে? যার মধ্যে প্রকৃত আবদিয়াত আছে, সে-ই সঠিক পীর। অর্থাৎ আল্লাহর প্রকৃত বান্দাই হতে পারে প্রকৃত পীর। হাজার হাজার মানুষ মুরিদ থাকলেই পীর হয় না। আল্লাহর কাছে মকবুল হতে হলে তাঁর গোলামি করতে হবে।
বেয়াদবির পরিচয় : বেয়াদবি কখনো মকবুল হতে পারে? বেয়াদবি কাকে বলে সেটা তো আমরা জানিই। একেক কাজের মধ্যে একেক ধরনের বেয়াদবি হয়। অনেক বেয়াদবিকে ইবাদত মনে করা হয়। যেমন মসজিদে আজান হচ্ছে আর এদিকে আপনি তেলাওয়াত করছেন। এটা বেয়াদবি। কারণ এ ক্ষেত্রে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নির্দেশনা হলো, তেলাওয়াত বন্ধ কর, আজানের জবাব দাও। আর একটি উপমা দেখুন, মসজিদে আসার পর তাহিয়্যাতুল মসজিদের দুই রাকাত নফল নামাজ পড়া অতি সওয়াবের কাজ। এখন যদি জুমার দিন ইমাম সাহেব খুতবা পড়ার জন্য দাঁড়ান আর তখনই কোনো মুসল্লি মসজিদে এসে আল্লাহু আকবার বলে নামাজে দাঁড়িয়ে যান তাহলে তিনি বেয়াদবি বা গুনাহ করলেন। কারণ খুতবা শোনা ওয়াজিব। ওয়াজিব ছেড়ে দেওয়া গুনাহর কাজ। আর গুনাহ করার নামই হলো বেয়াদবি। আল্লাহ ও রসুলের আদেশ না মানা অর্থাৎ শরিয়তের বিধানমতো না চলাই তো আল্লাহ ও রসুলের সঙ্গে বেয়াদবি।
মসজিদে ময়লা ফেলা : একদিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে প্রবেশ করে খুব কষ্ট পেলেন। কারণ সেখানে কে যেন নাকের ময়লা ফেলে রেখেছে। তিনি নিজ হাতে তা পরিষ্কার করলেন। এরপর সাহাবিদের ডেকে বললেন, যে ব্যক্তি মসজিদের মধ্যে নাকের ময়লা ফেলে, থুতু ফেলে, কেয়ামতের দিন এই ময়লা পাহাড়ের আকার ধারণ করে তাকে চাপা দেবে। মসজিদকে যদি ইচ্ছাকৃতভাবে ময়লাযুক্ত করা হয়, তাহলে গুনাহে কবিরা হবে। আমি সব জায়গায় বলে থাকি, মসজিদের দেয়ালে পোস্টার লাগানো গুনাহে কবিরা। কারণ এটা মানুষের হক। মানুষের টাকা দিয়ে রং করা হয়েছে। পোস্টার লাগানোর দ্বারা রং নষ্ট হয়, দেখতে বিশ্রী লাগে।
জুমার দিন হলো আল্লাহর প্রিয়তম দিন, যা অসংখ্য ফজিলত ও বরকতে পূর্ণ
মাদরাসা-মসজিদ বা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের দেয়ালে যে কোনো পোস্টার এমনকি ধর্মীয় ওয়াজ মাহফিলের পোস্টার লাগানোও বৈধ নয়। ওয়াজের দাওয়াত পৌঁছানার উপায় হলো- যেখানে পোস্টার লাগানোর অনুমতি আছে, সেখানে লাগাবে। কিংবা অননুমোদিত জায়গায় অনুমতি গ্রহণ করবে। মসজিদে ঢোকার সময় জুতা এলোমেলো দেখে মনে কষ্ট লাগে। নাকের ময়লার চেয়েও মারাত্মক ময়লা থাকতে পারে জুতার নিচে। তাই জুতা খোলা না রেখে কাপড়ের ব্যাগে সুন্দরভাবে রাখা উচিত। আল্লাহপাক আমাদের সবাইকে ছোট-বড় সব ধরনের গুনাহ পরিহার করে চলার তওফিক দান করুন!
লেখক : আল্লামা মাহ্মূদুল হাসান
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।