আল্লাহর কাছে দুর্বল ইমানদারের চেয়ে শক্তিশালী ইমানদার অধিক পছন্দনীয়

islamic (2)

ধর্ম ডেস্ক : ইসলাম কারো ওপর অন্যায় আক্রমণ ও জুলুমকে হারাম করেছে। তবে এর অর্থ এই নয় যে কেউ অন্যায় আক্রমণ করলেও হাত গুটিয়ে বসে থাকার নির্দেশ দেয়, বরং সর্বশক্তি দিয়ে অন্যায় আক্রমণ প্রতিহত করার প্রতিও উৎসাহিত করে। এ জন্যই হাদিসের ভাষ্য অনুসারে আল্লাহর কাছে দুর্বল ইমানদারের চেয়ে শক্তিশালী ইমানদার অধিক পছন্দনীয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আল্লাহর কাছে দুর্বল ইমানদারের চেয়ে শক্তিশালী ইমানদার অধিক পছন্দনীয়। যদিও উভয় প্রকার ইমানদারের মধ্যেই কল্যাণ আছে। তুমি কল্যাণকর বিষয়াদির প্রতি আগ্রহী হও এবং আল্লাহর সাহায্য চাও, অক্ষম হয়ো না।’ (মুসলিম, হাদিস : ২৬৬৪)

islamic (2)

আল্লাহ তাআলা শুধু আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে অসহায় বসে থাকাকে পছন্দ করেন না, বরং আঘাত প্রতিহত করা এবং ন্যায়সংগত বদলা নেওয়ারও নির্দেশ দিয়েছেন। কোরআনে কারিমে এসেছে, ‘সুতরাং যে তোমাদের ওপর আক্রমণ করেছে, তোমরা তার ওপর আক্রমণ করো, যে রূপ সে তোমাদের ওপর আক্রমণ করেছে।’ (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ১৯৪)

অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, ‘তবে অত্যাচারিত হওয়ার পর যারা প্রতিবিধান করে, তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না।’ (সুরা : শুরা, আয়াত : ৪১)

জানমাল ইজ্জত রক্ষায় নিহত ব্যক্তি শহীদ

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি স্বীয় সম্পদ রক্ষায় খুন হবে সে শহীদ, যে ব্যক্তি দ্বিন রক্ষায় খুন হবে সে শহীদ, যে ব্যক্তি নিজের জান রক্ষায় খুন হবে সে শহীদ, যে ব্যক্তি পরিবারের প্রাণ অথবা ইজ্জত রক্ষায় খুন হবে সে শহীদ।’ (তিরমিজি, হাদিস : ১৪২১)

একজন ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে এসে জিজ্ঞেস করলেন, যদি কোনো ব্যক্তি এসে আমার সম্পদ ছিনিয়ে নিতে চায় (তখন আমি কী করব)? রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, তুমি দেবে না। লোকটি বলল, যদি সে আমাকে হত্যা করতে উদ্যত হয়? রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, তাকে তুমি প্রতিহত করো।

লোকটি বলল, যদি এতে সে আমাকে হত্যা করে? রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, তাহলে তুমি শহীদ। লোকটি বলল, যদি আমি তাকে হত্যা করি? রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, তাহলে সে জাহান্নামি। (মুসলিম, হাদিস : ২২৫)

প্রাণরক্ষায় আক্রমণে ক্ষতিপূরণ নেই

হাদিস শরিফে এসেছে— দুজন ব্যক্তি পরস্পরে সংঘর্ষে লিপ্ত হলো। ফলে একজন অন্য জনের হাত কামড়ে ধরল। এতে অপরজন কামড় থেকে হাত ছোটানোর জন্য টান দিতেই কামড়দাতার একটি দাঁত পড়ে গেল।

বিচার নিয়ে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে এলে রাসুলুল্লাহ (সা.) দাঁতের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে না মর্মে বিচার করলেন এবং বললেন : ‘সে কি তার হাত তোমার মুখে খাদ্যের মতো চাবানোর জন্য রেখে দেবে?’ (বুখারি, হাদিস : ২৯৭৬)

সম্ভ্রম রক্ষায় ধর্ষককে পাল্টা আঘাত করা বৈধ

ধর্ষক কোনো নারীর ওপর চড়াও হলে যদি মহিলা সম্ভ্রম রক্ষায় তার ওপর আক্রমণের ফলে ধর্ষক খুন হয়, তাহলে ইসলাম ওই খুনকে বৈধতা দিয়েছে। বর্ণিত হয়েছে, জনৈক ব্যক্তির ঘরে একজন মেহমান এলো। সেখানে একজন সুশ্রী বাঁদিকে দেখে মেহমান আকৃষ্ট হয়ে তার পেছনে ছুটল এবং জোরপূর্বক ধর্ষণ করতে চাইল। বাঁদি তাকে বাধা দিল এবং এ নিয়ে উভয়ের মধ্যে ধস্তাধস্তি হলো। বাঁদি তার থেকে ছুটে গিয়ে একটি পাথর ছুড়ে মারল। এতে ওই ব্যক্তি নিহত হলো। বাঁদি ঘরে এসে ঘরবাসীদের ঘটনা জানাল। তারা ওমর (রা.)-এর কাছে গিয়ে ঘটনার বৃত্তান্ত জানাল। ওমর (রা.) তদন্ত করে ঘটনা যাচাইপূর্বক ফায়সালা দিলেন যে সে আল্লাহর পক্ষ থেকে হত্যা হয়েছে, তার কোনো রক্তপণ দিতে হবে না। (মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, হাদিস : ১৭৯১৯)

অনুরূপ শাম অঞ্চলের একজন নারী জাহহাক ইবনে কাইস (রা.)-এর কাছে এসে নালিশ করে : এক ব্যক্তি তার ঘরে অসদুদ্দেশ্যে করাঘাত করে। ওই নারী তার থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য সাহায্য চাইল। শীতের রাতে কেউ তার সাহায্যে এগিয়ে এলো না। ফলে সে দরজা খুলে তাকে একটি পাথর নিক্ষেপ করলে লোকটি মারা যায়। জাহহাক ইবনে কাইস (রা.) তদন্ত করে জানতে পারলেন যে লোকটি একজন চোর, তার সঙ্গে চুরির সামগ্রীও ছিল। ফলে তিনি তার রক্তপণ বাতিল করলেন। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হাদিস : ২৭৭৯৫)

আত্মরক্ষায় পূর্ব প্রস্তুতি গ্রহণ সুন্নত

জুবায়ের (রা.) সূত্রে বর্ণিত, উহুদ যুদ্ধের দিন রাসুলুল্লাহ (সা.) দুটি বর্ম পরিহিত ছিলেন। (তিরমিজি, হাদিস : ১৬৯২)

আয়েশা (রা.) সূত্রে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) মদিনায় আসার পর আকাঙ্ক্ষা পোষণ করলেন যে যদি তার কোনো সাথি তাকে পাহারা দিতেন। তখন আমরা অস্ত্রের আওয়াজ শুনলাম। রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, কে? বলা হলো : আমি সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস, আপনাকে পাহারা দেওয়ার জন্য এসেছি। অতঃপর রাসুলুল্লাহ (সা.) ঘুমালেন। (বুখারি, হাদিস : ২৮৮৫)

বর্ণিত আছে, যখন রাসুলুল্লাহ (সা.) হাতিমে কাবায় নামাজ পড়লেন, তখন ওমর (রা.) তরবারি নিয়ে তাকে পাহারা দিচ্ছিলেন। (তারিখে মাদিনা : ১/৩০০)

https://inews.zoombangla.com/%e0%a6%8f%e0%a6%95%e0%a6%a4%e0%a6%be%e0%a6%a4%e0%a7%87%e0%a6%87-%e0%a6%86%e0%a6%ae%e0%a6%be%e0%a6%a6%e0%a7%87%e0%a6%b0-%e0%a6%9c%e0%a6%a8%e0%a7%8d%e0%a6%ae-%e0%a6%8f%e0%a6%95%e0%a6%a4%e0%a6%be-2/

সারকথা, ইসলাম ভারসাম্য ও মধ্য পন্থার শিক্ষা দেয়। যুদ্ধ-বিগ্রহকে মনে করে না সব বিবাদের একমাত্র সমাধান, না আবার তীর-বন্দুককে একেবারেই অস্পৃশ্য মনে করে। আগ বাড়িয়ে কারো গলায় ছুরি বাড়ায় না, তবে জালিমের সামনে হাত-পা গুটিয়ে নিজেকে সোপর্দ করারও শিক্ষা দেয় না, বরং জালিমের যথাযোগ্য পাওনা মিটিয়ে দেয়। প্রতি যুগেই মুসলিমরা এ শিক্ষাকে নিজেদের কর্মপন্থা হিসেবে গ্রহণ করেছে।
মুফতি মাহমুদ হাসান