জুমবাংলা ডেস্ক : বরগুনার বেতাগী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ফাহমিদা লস্করের বিরুদ্ধে ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি ওই ঘুষ বাণিজ্যের (৬ মিনিটি ৪৪ সেকেন্ডের) একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
ভিডিওতে স্বাস্থ্য কর্মকর্তার নির্দেশে ঘুষের টাকা গণনা করতে দেখা যায় ওই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত (ফার্মাসিস্ট) কৃষ্ণ কুমার পালকে। তিনি (কৃষ্ণ) ঘুষ লেনদেনের বিষয়ে সত্যতা স্বীকার করলেও এমন কোনো বিষয় ঘটেনি বলে দাবি স্বাস্থ্য কর্মকর্তার। এদিকে তদন্ত করে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জেলা ও বিভাগের ঊর্ধ্বতন কতৃর্পক্ষ।
ভিডিও থেকে জানা যায়, পথ্য ও স্টেশনারি সরবরাহকারী ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের অংশীদারী (প্রতিনিধি) মো. রেজাউল ইসলাম মামুন খান বেতাগী উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার কক্ষে ঢোকেন। পরে তাদের দুইজনের মধ্যে কথপোকথন হয়। একপর্যায়ে বেতাগী হাসপাতালে কর্মরত (ফামার্সিস্ট) কৃষ্ণ কুমার পালকে তার অফিসে ডেকে মামুন খানের কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকার বান্ডিলটি গুণে তার কাছে রাখতে নির্দেশ দেন। কৃষ্ণ তার অফিস কক্ষে গিয়ে টাকা ভর্তি খামটি খোলেন এবং টাকা গণনা করে রেখে দেন।
কথপোকথনে দেখা ও শোনা যায় স্বাস্থ্য কর্মকতা—জ্বি মামুন সাহেব বলেন, বিল কি উঠিয়েছেন কবে? মামুন খান জ্বি বিল উঠিয়েছি বুধবার। স্বাস্থ্য কর্মকতা—রিয়াজ মোল্লা কই? সে আমার ঠিকাদার, আপনি তো আমার প্রধান ঠিকাদার না। মামুন খান স্যার রিয়াজ মোল্লার মা অসুস্থ, আপনি তো জানেন আমরা সেয়ারে আছি, তাছাড়া সব কথাবার্তা তো আমিই বলি আপনি আসার পর থেকে। গত বৃহস্পতিবার আপনাকে ফোন দিয়েছি কিন্তু আপনি রিসিভ করেননি। স্বাস্থ্য কর্মকতা—ফোন রিসিভ করিনি মানে? আমি সবসময়ই ব্যস্ত থাকি। মামুন খান আমরাও তো ব্যস্ত থাকি, ঠিকাদারি করি, জুন মাসে আমাদেরও তো অন্য চাপ থাকে। তাছাড়া আপনি তো সেদিন বললেন, ২১ তারিখ দেখা করতে, তাই আমি এখন এসেছি। ওইটা নিয়ে আসছি স্যার। স্বাস্থ্য কর্মকতা—সেটা আপনার আগে জানানো উচিত ছিলো, আমার সাথে কথা বলা উচিত ছিলো। মামুন খান—আপনার সাথে তো এসব বিষয়ে মোবাইলে আমি কথা বলতে পারি না। স্বাস্থ্য কর্মকতা—মোবাইলে কেনো বলবেন? আমাকে ইনফর্ম করতেন! যে স্যার আমি বিল পেয়েছি। মামুন খান—বিল পেয়েই আপনাকে ফোন দিয়েছি, ফোন ধরেননি দেখে আজ অফিসে আসলাম।
এরপরই খামে প্যাকেট করা টাকার বান্ডিল বের করেন মামুন খান। বলেন স্যার শুধু একটু মিস আন্ডারষ্ট্যান্ডিং হয়েছে আর কিছুই না, আপনি রাগ কইরেন না। স্বাস্থ্য কর্মকতা—আমার কত আসে? মামুন খান—আপনার আসে ৫৩ স্যার, স্বাস্থ্য কর্মকতা- আমার আসছে? মামুন খান—জ্বি স্যার। স্বাস্থ্য কর্মকতা- টোটাল আসে কত? মামুন খান—স্যার তাতো আমি হিসাব করিনি, তবে জাকির সাহেব বলেছেন (হিসাব রক্ষক) স্যারকে (আপনাকে) এটা দিবেন। স্যার তাতে এই ছয় মাসে আমাদের সব খরচ গিয়ে দুজনে মোট পেয়েছি ১৮ হাজার টাকা। তারপরও বিল পেয়েই আপনাকে নক করেছি। এরপর স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ফোন দেন প্রধান ঠিকাদার রিয়াজ মোল্লাকে এবং বলেন মামুন সাহেব তো এসেছেন, আমার কত ছিলো যেন ওহ! তারপর কিছুক্ষণ হাসাহাসি করে ফোন রাখেন। কিছুক্ষণ পরে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (ফাহমিদা লস্কর) কৃষ্ণ কুমার পালকে (ফার্মাসিস্ট) ডাকেন, এবং বলেন মামুন সাহেবের কাছ থেকে ওইটা গুণে আপনার কাছে রখে দেন। সর্বশেষ মামুন বলেন—স্যার কৃষ্ণ দাদাকে একটু বলে দেন, ক্লিনারের বিলটার ব্যাপারে! কালকে তো ফান্ড ক্লোজ হবে। স্বাস্থ্য কর্মকতা—আরে ভাই কালকে কোনো আজকেই হয়ে যাবে, আমি আজ সারাদিন অফিসে কাজ করবো। পরে ভিডিওতে দেখা যায়, কৃষ্ণ কুমার পাল খামটি নিয়ে তার কক্ষে যান এবং টাকা ভর্তি খামটি খুলে ৫০০ টাকার নোটের বান্ডিল গণনা করতে করতে বলেন আপনার (মামুন খান) ক্লিনারের বিল আজই হয়ে যাবে চিন্তা কইরেন না।
হাসপাতালে খাবার (পথ্য ও স্টেশনারি) সরবরাহকারী ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের অংশীদারি (প্রতিনিধি) মো. রেজাউল ইসলাম মামুন খান বলেন, বিগত তিন বছর যাবৎ বেতাগী হাসপাতালে পথ্য ও স্টেশনারি সরবরাহ করে আসছি। বর্তমান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (ডা. ফাহমিদা লস্কর) বিল নিয়ে আমাকে প্রায়ই হয়রানি করেন, মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করেন। বিগত ৬ মাস আমার বিলের কাগজে স্বাক্ষর দেননি। বিল তুলতে না পেরে বাধ্য হয়ে তার প্রস্তাব মেনে নেই। পরে বিল উত্তোলন করে তাকে বিলের পার্সেন্টেন্স হিসেবে ৫০ হাজার টাকা দেই। আবার এই ৩ মাস হলো আমার কোনো বিলে স্বাক্ষর করেন না তিনি। গত ২৪ আগস্ট তার কাছে বিলের আবেদন করলে আবার টাকা দাবি করেন এবং আমি অপরাগতা জানালে আমার ওপর রেগে গিয়ে যা তা ব্যবহার করেন। এবং বলেন, বিল কীভাবে নেন তা দেখবো। ভাইরাল হওয়া ভিডিওর ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, লেনদেনের বিষয়টি সত্য আমি বাধ্য হয়ে তাকে ওই টাকা দিয়েছি।
বেতাগী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত (ফার্মাসিস্ট) কৃষ্ণ কুমার পাল সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ‘যেদিন ঘটনাটি ঘটে ওইদিন আমি অফিসে কাজ করছিলাম, তখন স্যার (ফাহমিদা লস্কর) আমাকে তার অফিস কক্ষে ডাকেন এবং মামুন সাহেবের কাছ থেকে টাকাগুলো গুনে রাখতে বলেন এবং আমি গুনে রাখি। মামুন সাহেব যাওয়ার পর, স্যার পরে ওই টাকা আমার কাছ নিয়ে গেছেন। যেখানে ৫০০ টাকার নোটের একটি বান্ডিলে মোট ৫০ হাজার টাকা ছিলো। ওই টাকা কোনো জরিমানা কিংবা হাসপাতালের কোনো ফান্ডের কিনা এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি (কৃষ্ণ) আরও বলেন, ওই টাকা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে মামুন সাহেব দিয়েছেন, যা আমি তারই (ফাহমিদা লস্কর) নির্দেশে গ্রহণ করেছি। ওই টাকা অন্য কোনো ফান্ডের না।
ঘুষ লেনদেনের বিষয়ে জানতে চাইলে বেতাগী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ফাহমিদা লস্কর বলেন, ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে তারা মানসম্মত খাবার পরিবেশন করেন না। আমি এ নিয়ে আরও তাদেরকে ডেকে মিটিং করে হুঁশিয়ারি দিয়েছি। আমি ঠিকাদারদের কাছ থেকে ছ্যাঁচড়ামি করে টাকা নিবো না। আমি পরিস্কার। সূত্র : ইত্তেফাক
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।