চট্টগ্রামে ২ লাখ টাকা চাঁদা না পাওয়ায় মো. জাকির নামের এক ব্যক্তিকে ইয়াবা দিয়ে মামলা ফাঁসানোর অভিযোগে দুই পুলিশ সদস্যকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
মঙ্গলবার বিভাগীয় ব্যবস্থার অংশ হিসেবে গোয়েন্দা পুলিশের এসআই মো. মহসিন ও কনস্টেবল আজাদকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
গোয়েন্দা পুলিশের বন্দর জোনের উপ-কমিশনার আবু বক্কর সিদ্দিক এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, আদালতে দায়ের হওয়া মামলাটির তদন্ত সিআইডি করবে। পাশাপাশি গোয়েন্দা পুলিশের অভ্যন্তরীণ তদন্তের মাধ্যমে অভিযোগগুলোর সত্যতা যাচাই করা হবে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে দুই পুলিশ সদস্য তাদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তবে অভিযোগ ওঠায় এবং বাহিনীর শৃঙ্খলা ক্ষুণ্ন হওয়ায় তাদের সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
এক ব্যক্তিকে ইয়াবা দিয়ে মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগে দুই পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের হয়েছে। সোমবার মোছাম্মৎ সাবিনা নামের এক নারী চট্টগ্রাম অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম সরকার হাসান শাহরিয়ারের আদালতে মামলাটি করেছেন। আদালত অভিযোগ গ্রহণ করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) কে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলার আসামি দুই পুলিশ সদস্য হলেন — চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের বন্দর অঞ্চলের এসআই মো. মহসিন ও কনস্টেবল মো. আজাদ।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, গত ২২ জুলাই বিকেলে মোছাম্মৎ সাবিনার খালাতো ভাই মো. জাকিরকে নগরীর কদমতলি মোড় থেকে গোয়েন্দা বিভাগের বন্দর অঞ্চলের কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয় এসআই মো. মহসিন ও কনস্টেবল মো. আজাদের দ্বারা। সেই রাতেই জাকিরের খালাতো বোন সাবিনা গোয়েন্দা কার্যালয়ে যান।
তখন দুই পুলিশ সদস্য তাকে জানান, জাকিরকে ৩ হাজার ইয়াবাসহ গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা বলেন, ১ লাখ টাকা দিলে জাকিরকে ৪০০ পিস ইয়াবা দিয়ে আদালতে পাঠানো হবে এবং ২ লাখ টাকা দিলে তাকে সম্পূর্ণ মুক্তি দেয়া হবে। পরে জাকিরের স্ত্রীর সঙ্গে আলাপের কথা বলে সাবিনা সেই রাতে ফিরে যান। পরদিন আবার তারা ওই কার্যালয়ের সামনে গিয়েও এতো টাকা দিতে পারবেন না বলে জানালে, টাকা না পেয়ে পুলিশ ‘৪০০ পিস ইয়াবা উদ্ধার’ করার অভিযোগে নগরীর ডবলমুরিং থানায় মামলা করে এবং ২৩ জুলাই জাকিরকে আদালতে পাঠায় বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।
এসআই মো. মহসিন অভিযোগ প্রসঙ্গে বলেন, জাকিরের কাছে যে পরিমাণ ইয়াবা পাওয়া গেছে, সেগুলোর ভিত্তিতেই মামলা করা হয়েছে। তিনি বলেন, আমি আসামিপক্ষের কারো সঙ্গে কথা বলিনি, কনস্টেবল আজাদের কথা যদি থাকে তা তার নিজস্ব ব্যাপার। আমার সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই।
তিনি আরও জানান, গ্রেফতার জাকির, তার খালাতো বোন সাবিনা এবং সাবিনার স্বামী মো. সাইফুল ইসলাম ওরফে শাকিল সংঘবদ্ধ মাদক কারবারি। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, জাকিরের নামে এখন পর্যন্ত দুইটি মাদক মামলা রয়েছে। সাবিনার নামে দুটি মাদকসহ মোট তিনটি মামলা এবং তার স্বামী শাকিলের নামে দুইটি মাদক মামলা আছে। তারা পরিকল্পিতভাবে পুলিশের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য এই কাজ করেছে।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (পিআর) মাহমুদা বেগম বলেন, আদালতে দুই পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন পেলে তার ভিত্তিতে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।