হাসান ভুঁইয়া, সাভার (ঢাকা): সাভারের আশুলিয়ায় এক স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে ইফতারের কথা বলে বাসায় ডেকে নিয়ে মারধর করে মুক্তিপণ আদায়ের অভিযোগে দুই নারীসহ ৫ জনকে আটক করেছে পুলিশ । তবে আসামি আটকের পর পুলিশ ধর্ষণ মামলার ভয় দেখিয়ে ঘটনাটি মিমাংসার চেষ্টা করেন অভিযোগ করেন অপহৃত ওই ভুক্তভোগী। এদিকে ভুক্তভোগীর প্রতিবাদের মুখে আটক আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়।
শনিবার (০৮ এপ্রিল) অন্যান্য আসামীদের সাথে প্রিজনভ্যানে করে গ্রেপ্তারকৃতদেরকে আদালতে পাঠায় হয়।
এর আগে শুক্রবার রাতে আশুলিয়ার পলাশবাড়ি গোছারটেক এলাকা থেকে তাদেরকে আটকের পর অপহৃত বাদীকে ধর্ষণ মামলার ভয় দেখিয়ে মিমাংসার চেষ্টা করেন আশুলিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মিলন ফকির।
ভুক্তভোগী স্বর্ণ ব্যবসায়ীর নাম শফিক মিয়া (৫০)। তিনি আশুলিয়ার টঙ্গাবাড়ি ন্যাচারাল গার্মেন্টস রোড এলাকার ইতিহাস জুয়েলার্স এর মালিক ও হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং থানার ইকরামপুর গ্রামের মো. হামিদ মিয়ার ছেলে।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- ফরিদপুর জেলার সদর থানার আমিরাবাদ এলাকার তোতা মিয়ার মেয়ে মিতু আক্তার (৩০), দিনাজপুর জেলার ঘোড়াঘাট থানার সাদা মিয়ার মেয়ে বন্যা (২৪), গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানি থানার দুলু ফকিরের ছেলে জসিম ফকির (৩৫), একই থানার শাহাদাতের ছেলে চয়ন(২৪) ও মোস্তফার ছেলে তৌফিক আবির(২০)।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মিতু আক্তারের সাথে ব্যবসায়ী শফিক মিয়ার স্বর্ণের দোকান সূত্রে পূর্ব পরিচয় ছিল। মিতুর কাছে শফিক মিয়া ৪ হাজার টাকা পাওনা ছিলেন। সেই পাওনা পরিশোধ না করেই আরেকটি নুপুর বানিয়ে দিতে বলে মিতু। আগের বাকি টাকা এবং নুপুরের টাকা একসাথে দিবে বলে শফিক মিয়াকে মঙ্গলবার ৪ তারিখ আশুলিয়ার বাইপাইল স্ট্যান্ডে ডেকে নেয়। পরে নুপুর নিয়ে বাইপাইল পৌছালে ইফতারের দাওয়াত দিয়ে কৌশলে শফিক মিয়াকে পলাশবাড়ি এলাকার একটি বাসায় নিয়ে আটকে রাখে। এসময় তাকে উলঙ্গ করে আসামিরা ভিডিও ধারণ করে ভুক্তভোগীর কাছে থাকা ২ ভরি স্বর্ণ ও কিছু নগদ টাকা নিয়ে নেয়। পরে ভুক্তভোগীর ফোন দিয়েই পরিবারের কাছ থেকে ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে আসামিরা। টাকা না পেয়ে রাতভর নির্যাতন করে সকালে ২৫ হাজার টাকার বিনিময়ে তাকে ছেড়ে দেয়।
স্বর্ণ ব্যবসায়ী শফিক মিয়া বলেন, চিকিৎসা নিয়ে পরদিন থানায় এসে এসআই মিলন ফকিরকে নিয়ে গতকাল রাতে ঘটনাস্থলে যাই। ঘটনাস্থলে পৌছে ৫ জনকে আটক করে আলাদা কক্ষে নিয়ে তাদের সাথে কথা বলে পুলিশ। সেখানে আমাকে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। আসামিদের সাথে কথা বলে আমাকে এসে বলেন, তোমার বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা হবে। তুমি যদি অপহরণের মামলা দাও, তাহলে ওরা ধর্ষণের মামলা দেবে। তিনি আমাকে মামলার ভয় দেখিয়ে মিমাংসা করতে চেয়েছিলেন। পরে আমি বিষয়টি বুঝতে পেরে সাংবাদিকদের খবর দেই। সাংবাদিকরা ঘটনাস্থলে পৌছলে তিনি আবারও আমাকে হুমকি দেন। তিনি বলেন, সাংবাদিককে খবর দিছো কেন? পরে বাধ্য হয়ে আসামিদের গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে আসেন তিনি। তবে মাঝ পথে এক নারী আসামিকে ছেড়ে দেন তিনি। আমি প্রতিবাদ করলে আবার তাকে আটক করেন।
ভুক্তভোগীর দাবি অনুযায়ী ঘটনাস্থল থেকে আসামিদের নিয়ে পুলিশ ভ্যানের কাছে এনে এক নারী আসামিকে ছেড়ে দেয় পুলিশ। সেখানে থাকা একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, এখানে এক নারীকে ছেড়ে দিয়েছিল পুলিশ। ওই নারী রিকশাতেও উঠেছিলেন। পরে একজন হাতে ব্যান্ডেজ করা লোক বাধা দিলে আবার রিকশা থেকে নামিয়ে পুলিশের গাড়িতে তোলেন।
এব্যাপারে আশুলিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মিলন ফকির বলেন, এসব অভিযোগ মিথ্যা। এ ধরনের কোন ঘটনাই ঘটেনি। তারই দায়ের করা মায়লায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আসামিদের আদালতে পাঠানো হয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।