সাড়ে তিন বছরের আইনি লড়াই শেষে অবশেষে চাকরি ফিরে পাচ্ছেন দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এর আলোচিত কর্মকর্তা মো. শরীফ উদ্দিন। বুধবার (৯ জুলাই) বিচারপতি মো. রেজাউল হাসান ও বিচারপতি বিশ্বজিত দেবনাথ সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ তাকে চাকরি ফিরিয়ে দেয়ার আদেশ দেন। সেই সঙ্গে তার পাওনা সকল বেতন ও সুযোগ-সুবিধা ফেরত দিতে হবে।
রায় পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে জ্যেষ্ঠতা, সব বেনিফিটসহ চাকরিতে পুর্নবহালের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া শরীফ উদ্দিনের চাকরিচ্যুতির আদেশকে প্রথম থেকে বাতিল ঘোষণা করেছেন বলে জানিয়েছেন তার আইনজীবী সালাহ উদ্দিন দোলন।
তিনি বলেন, কক্সবাজারে ভূমি অধিগ্রহণ নিয়ে কয়েক লক্ষ কোটি টাকার নয়ছয় নিয়ে ২০২২ সালে ৬২০ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন জমা দেন শরীফ। এ রিপোর্টের জেরেই তাকে শুধু চাকরিচ্যুতিই নয়, দেয়া হয় বিভাগীয় মামলা।
আদালত রায়ে বলেছেন, কক্সবাজারে ৭২টি প্রকল্পে সাড়ে ৩ লাখ কোটি টাকার ভূমি অধিগ্রহণে দুর্নীতি, কিছু রোহিঙ্গার এনআইডি ও পাসপোর্ট জালিয়াতি, কর্ণফুলী গ্যাসে অনিয়মসহ বেশ কিছু দুর্নীতিবিরোধী অভিযান পরিচালনায় তাকে পুরস্কৃত না করে চাকরিচ্যুত করার ঘটনা দুঃখজনক।
চাকরি হারিয়ে একটি কোম্পানিতে কাজ নেন শরীফ। অন্যদিকে চালাতে থাকেন আইনি লড়াই। বুধবার চাকরি ফেরতের আদেশ পাওয়ার পর প্রতিক্রিয়া তিনি বলেন, ‘আমি ন্যায় বিচার পেয়েছি। সবকিছু ভুলে এখন দেশের জন্য কাজ করতে চাই।’
২০২৩ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপ-সহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিনকে অপসারণ করা হয়।
দুদক তৎকালীন চেয়ারম্যান মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ সই করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, দুর্নীতি দমন কমিশন (কর্মচারী) চাকরি বিধিমালা, ২০০৮-এর বিধি ৫৪ (২) তে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে পটুয়াখালী সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপ-সহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিনকে চাকরি থেকে অপসারণ করা হলো। তিনি বিধি অনুযায়ী ৯০ দিনের বেতন এবং প্রযোজ্য সুযোগ-সুবিধা (যদি থাকে) পাবেন। কমিশনের অনুমোদনক্রমে জনস্বার্থে এ আদেশ জারি করা হলো।
শরীফ উদ্দিন প্রায় সাড়ে ৩ বছর দুদকের চট্টগ্রাম সমন্বিত কার্যালয়ে কর্মরত ছিলেন। সে সময় এনআইডি সার্ভার ব্যবহার করে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশি ভোটার করার অভিযোগে ২০২১ সালের জুনে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) একজন পরিচালক এবং ৬ কর্মীসহ আরও ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন তিনি। এই মামলার পরপরই ১৬ জুন তাকে চট্টগ্রাম থেকে পটুয়াখালীতে বদলি করা হয়।
নিজের মেয়াদকালে বিভিন্ন খাতে অনিয়মের খবর প্রকাশের জন্য আলোচিত হন শরীফ। সে সময় তিনি ইসি কর্মকর্তা, কর্মচারী, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (সিসিসি) ওয়ার্ড কাউন্সিলর, ইয়াবা চোরাকারবারি, রোহিঙ্গা এবং কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন লিমিটেডের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে এক ডজনেরও বেশি মামলা করেন।
রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশের জন্ম নিবন্ধন ও পাসপোর্ট দেওয়ার ঘটনায় এবং কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন লিমিটেডের (কেজিডিসিএল) কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলার বাদী তিনি। কর্ণফুলীর দুর্নীতির মামলায় তিনি কেজিডিসিএলের মহাব্যবস্থাপক (প্রকৌশল) সারোয়ার হোসেন এবং অন্যান্যদের সঙ্গে সাবেক প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসির ছেলে মুজিবুর রহমানকে অভিযুক্ত করেন।
শরীফ কক্সবাজারের তালিকাভুক্ত ইয়াবা চোরাকারবারি হাজী সাইফুল করিমের বিরুদ্ধে মামলাও করেন। সাইফুল ২০১৯ সালের ৩১ মে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন।
সর্বশেষ ২০২৩ সালের ৩০ জানুয়ারি পরিবারসহ হত্যার হুমকি পান শরীফ। বিষয়টি নিয়ে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আইয়ুব খান চৌধুরী ও তার সঙ্গীদের বিরুদ্ধে সিসি টিভির ফুটেজসহ চট্টগ্রামের খুলশী থানায় সাধারণ ডায়েরিও (জিডি) করেন তিনি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।