জুমবাংলা ডেস্ক : গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতন হওয়ার পর দেশ জুড়ে বিভিন্ন থানায় পুলিশের ওপর চলে নারকীয় সহিংসতা। নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে দায়িত্ব পালনে অস্বীকৃত জানায় পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর অনেকটাই স্বাভাবিক হয়েছে থানার কার্যক্রম। কাজে ফিরতে শুরু করেছে কর্মবিরতিতে থাকা অধিকাংশ পুলিশ সদস্য। কিন্তু পুলিশের আলোচিত দুই কর্মকর্তা অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ এবং যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকারের এখনো কোনো খোঁজ মিলছে না।
এরই মধ্যে পুলিশ মহাপরিদর্শক, পুলিশ কমিশনার, পুলিশ সুপারসহ অন্তত অর্ধশত পুলিশ কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়েছে। চার পুলিশ কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। তবে এই দুই কর্মকর্তার ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত এখনো আসেনি।
সরকার পতনের ঠিক দুই দিন আগে হারুনকে গোয়েন্দা পুলিশের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস এবং বিপ্লব কুমার সরকারকে প্রশাসন ও গোয়েন্দা দক্ষিণের দায়িত্ব দেয়া হয়।
বৃহস্পতিবার বিকেলে ঢাকার পুলিশ কমিশনার মো. মাইনুল হাসান বলেন, ডিএমপির প্রায় সব সদস্য এরই মধ্যে কাজে যোগ দিয়ে দায়িত্ব পালন করছেন। তবে, হারুন অর রশীদ ও বিপ্লব কুমার সরকার এখনো কাজে যোগ দেননি। আর তাদের বিষয়টি সম্পূর্ণ আলাদা।
ইতোমধ্যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে হত্যাসহ বিভিন্ন অভিযোগে কয়েকটি মামলা হয়েছে। তার মধ্যে কয়েকটি মামলায় হারুন ও বিপ্লবের নামও এসেছে আসামির তালিকায়।
ঢাকা মহানগর পুলিশ, পুলিশ সদর দপ্তর বা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এই দুইজনের বিরুদ্ধে কোনো বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে কিনা, সে ব্যাপারে কোনো তথ্য মেলেনি। তারা কোথায় আছেন তাও জানাতে পারেননি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো সদস্য।
ঢাকা মহানগর পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা বলেছেন, মামলা যেহেতু হয়েছে, সেহেতু তাদের আর কর্মস্থলে যোগ দেয়ার সুযোগ নেই। বরং তাদের গ্রেপ্তার করাই এখন পুলিশের লক্ষ্য।
২০তম বিসিএস ক্যাডারে পুলিশের চাকরি নেয়া হারুন ১৯৯৮ সালে ছাত্রলীগের বাহাদুর-অজয় কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য ছিলেন। শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে একসময় চাকরি থেকে বরখাস্ত হয়েছিলেন। বিভিন্ন সময়ে নানা অভিযোগ তার বিরুদ্ধে এলেও বরাবরই ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে গেছেন।
ডিএমপির লালবাগ বিভাগে কয়েক বছর দায়িত্ব পালনের পর গাজীপুরের পুলিশ সুপার হন তিনি। সেখানে কয়েক বছর দায়িত্ব পালনের মধ্যে ২০১৮ সালের মে মাসে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সময় বিএনপি তার বিরুদ্ধে পক্ষপাতের অভিযোগ তোলে। এরপর ওই বছরের অগাস্টের শুরুতে তাকে ঢাকা মহানগর পুলিশে বদলি করা হয়।একই বছরের ২ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচনের কয়েক দিন আগে হারুনকে নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার হিসেবে বদলি করে সরকার।
নারায়ণগঞ্জে ১১ মাসের দায়িত্বে সন্ত্রাসী, মাদক কারবারি, চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে ‘জিহাদ’ ঘোষণা করেন হারুন। হকার ও অবৈধ দখল উচ্ছেদসহ বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়ে তিনি যেমন প্রশংসিত হন, তেমনি নারায়ণগঞ্জের অনেক প্রভাবশালীর সঙ্গে ‘টক্করে’ গিয়ে নতুন আলোচনার জন্ম দেন। ২০১৯ সালে পারটেক্স গ্রুপের কর্ণধার এম এ হাশেমের ছেলে আমবার গ্রুপের চেয়ারম্যান শওকত আজিজের স্ত্রী ও সন্তানকে আটক করেও আলোচনার জন্ম দেন এ পুলিশ কর্মকর্তা। এরপর তাকে নারায়ণগঞ্জ থেকে সরিয়ে পুলিশ সদর দপ্তরে আনা হয়েছিল। পরে আবার তাকে ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগে দায়িত্ব দেয়া হয়।
ডিআইজি হিসেবে ২০২২ সালের ১১ মে পদোন্নতি পাওয়ার পর একই বছর ১৩ জুলাই ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার হিসেবে ঢাকার ডিবির দায়িত্ব পান। এর আগে অতিরিক্ত ডিআইজি হিসেবে ডিএমপির যুগ্ম কমিশনারের দায়িত্বে ছিলেন তিনি।
সবশেষ কোটা সংস্কার আন্দোলনের ছয় সমন্বয়কারীকে নিরাপত্তা দেয়ার কথা বলে ডিবি কার্যালয়ে কয়েকদিন আটকে রাখেন হারুন। তাদের অ্যাপায়ন করার একটি ছবি আবার আলোচনা তৈরি করে। বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হলে হাই কোর্টের একটি বেঞ্চ উষ্মা প্রকাশ করে বলে, ‘ডিবি অফিসে যাকে তাকে ধরে নিয়ে যাবেন, তারপর খাবার টেবিলে বসাবেন। এভাবে জাতির সঙ্গে মশকরা করবেন না।’
এরপরই গত ৩১ জুলাই তাকে ডিবি থেকে ডিএমপির ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন্সে বদল করা হয়। বদলির পর থেকে নিশ্চুপ ছিলেন তিনি।
অন্যদিকে ২১তম বিসিএসে পুলিশ ক্যাডারে চাকরি নেয়া বিপ্লব সরকার ছিলেন ছাত্রলীগ জগন্নাথ হল শাখার সেক্রেটারি। পুলিশের চাকরিতে আওয়ামী লীগ সরকারের প্রায় পুরোটা সময় তিনি দাপুটে কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত ছিলেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।