জুমবাংলা ডেস্ক : গাজীপুরে সংগঠনের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে স্থানীয় প্রভাবশালীদের ইন্ধনেই শ্রমিক নেতা শহিদুল ইসলামকে হত্যা করা হয়েছে। শহীদুল হত্যাকাণ্ড নিয়ে দেশ বিদেশে আলোচনার ঝড় বইয়ে যাচ্ছে। এরমধ্যেই ঘটনার নেপথ্যের এই তথ্য বের করে এনেছে পুলিশ। ৮ মাসের বেশি সময় তদন্ত শেষে হত্যায় জড়িত থাকা ১৪ জনকে চিহ্নিত করার পর আদালতে দাখিল করা হয়েছে চার্জশিট।
চাঞ্চল্যকর এই মামলার অভিযোগপত্রে, স্থানীয় প্রভাবশালী কামরুলের ভাই ও কারখানার প্রশাসনিক কর্মকর্তার ইশারাতেই এই হত্যাকাণ্ড হয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন গাজীপুরের শিল্প পুলিশ। ১৪ অভিযুক্তের মধ্যে রয়েছেন আবু সালেহ ‘প্রিন্স জ্যাকার্ড সোয়েটার লিমিটেডের’ অ্যাডমিন ম্যানেজার। আর মাজাহারুল বাংলাদেশ পোশাক শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশনের টঙ্গী পশ্চিম থানার সাধারণ সম্পাদক। বাকি আসামিরা কেউ শ্রমিক নেতা, কেউ স্থানীয় বাসিন্দা।
শহিদুল ইসলাম বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল শ্রমিক ফেডারেশনের গাজীপুর জেলা শাখার সভাপতি ছিলেন। তিনি বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকদের ন্যায্য দাবি ও পাওনা বেতন আদায় করে দিতে কাজ করতেন।
২০২৩ সালের ২৫ জুন শহিদুল ও তার সঙ্গীরা বেতন ও ঈদ বোনাস নিয়ে প্রিন্স জ্যাকার্ড লিমিটেডে শ্রমিকদের সমস্যা সমাধান করতে যান। বিষয়টি ভালোভাবে নেননি মাজাহারুল ও তার লোকজন। বেতন ও বোনাসের বিষয়ে কথাবার্তা বলে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে কারখানা থেকে বের হন তারা। এর মাঝেই স্থানীয় প্রভাবশালী কামরুজ্জামান কামরুলের ছোট ভাই মো. আমির হোসেন ও কারখানার মানবসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তা মো. সালেহের ‘ইশারায়’ মাজাহারুলেরা শহিদুলদের ওপর চড়াও হন। শহিদুলকে মারধর করেন। এতে শহিদুল গুরুতর আহত হন। পরে তাকে উদ্ধার করে গাজীপুর মেট্রোপলিটনের গাছা থানাধীন তালগাছ এলাকার তাইরুন নেসা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে সেখানে তার মৃত্যু হয়।
এসব তথ্য জানা গেছে শহিদুলের মৃত্যুর পর দায়ের করা হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন থেকে।
অভিযোগপত্রে মাজাহারুল ইসলাম (৩৫), আকাশ আহম্মেদ ওরফে বাবুল (৪৩), রাসেল মণ্ডল (৩৫), রাইতুল ইসলাম ওরফে রাতুল (১৯), সোহেল রানা (২৩), জুলহাস আলী (২৩), সোহেল হাসান সোহাগ (২৬), শাহীনুল ইসলাম (২১), শাকিল মোল্লা (২৩), মো. আমির হোসেন (৪০), মো. হালিম মিয়া (৪২), মো. রফিকুল ইসলাম (৪৬), জুয়েল মিয়া (২২) ও আবু সালেহের (৩৯) নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
সোমবার এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন হত্যা মামলার তদন্ত তদারক কমিটির প্রধান ও গাজীপুর শিল্প পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ইমরান আহম্মেদ।
তিনি বলেন, শ্রমিক সংগঠনের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে স্থানীয় প্রভাবশালীদের ইন্ধনেই শ্রমিক নেতা শহিদুলকে হত্যা করা হয়েছে। এরইমধ্যে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার ও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তাদের ইশারায় অন্য আসামিরা শহিদুলের ওপর হামলা চালায়। তদন্ত ও যাচাই-বাছাই শেষে অভিযোগপত্রটি অনলাইনে আদালতে জমা দেয়া হয়েছে।
এর আগে গত বছরের ২৫ জুন টঙ্গীর সাতাইশ বাগানবাড়ি এলাকার ‘প্রিন্স জ্যাকার্ড সোয়েটার লিমিটেড’ নামের কারখানায় শ্রমিকদের পাওনা টাকা আদায় সংক্রান্ত কাজ করতে গিয়ে সন্ত্রাসীদের হামলায় নিহত হন শহিদুল। পরদিন ২৬ জুন টঙ্গী পশ্চিম থানায় ছয়জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সভাপতি কল্পনা আক্তার। প্রাথমিক অবস্থায় মামলাটির তদন্ত করে টঙ্গী পশ্চিম থানা-পুলিশ। পরে বাদীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ৬ জুলাই মামলার তদন্তভার দেয়া হয় গাজীপুর শিল্প পুলিশকে।
পুলিশের অভিযোগপত্রের বিষয়ে বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি কল্পনা আক্তার বলেন, পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদনে অভিযুক্ত গার্মেন্টস মালিক ও স্থানীয় প্রভাবশালী কামরুলের নাম এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলে আমরা পরবর্তী সিদ্ধান্ত নিচ্ছি। এদিকে নিহতের স্ত্রী কাজলী বেগমও স্পেশাল তদন্তের দাবি জানান।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।