জুমবাংলা ডেস্ক : এ যেন রূপকথার গল্পকেও হার মানায়। এক সময় বান্দরবানের সিনেমা হলে বাদাম বিক্রি করতেন অমল কান্তি দাশ। সেই আয়ে চলত সংসার। কিন্তু অল্প সময়ের ব্যবধানে তিনি শতকোটি টাকার সম্পদের মালিক হয়েছেন। প্রশ্ন উঠেছে, কী এমন জাদুর কাঠি বা আলাদিনের চেরাগ পেয়েছেন অমল, যার বদৌলতে স্বল্প সময়ের ব্যবধানে তিনি শত কোটি টাকার মালিক বনেছেন।
এই প্রশ্নের উত্তর জানতে চাওয়া হয় অমল কান্তি দাশের কাছে। তিনি বলেন, আমি অতীতে কি করেছি সেটা আপনার জানার বিষয় নয়। আবারও প্রশ্ন করা হয়, আপনি সাবেক পার্বত্যবিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈশিং ও মন্ত্রীর স্ত্রীর আশীর্বাদপুষ্ট হয়ে ১৫ বছর বান্দরবান জেলার যাবতীয় ঠিকাদারি কাজ নিয়ন্ত্রণ, ভূমি দখল, নিয়োগ বাণিজ্য করে অবৈধভাবে শত কোটির মালিক হয়েছেন। বান্দরবান শহরে অর্ধশত কোটি টাকার সম্পদ কিনেছেন। এসব সম্পদের বৈধতা কি? এর জবাবে তিনি বলেন, আপনি আমার আয়কর ফাইল চেক করে দেখেন, আমিও একজন ঠিকাদার। আমি কখনো বাদাম বিক্রেতা ছিলাম না, মুদির দোকান করিনি, এটা ভিত্তিহীন কথা।
অমল কান্তি দাশ ১৯৮৯ সালে বান্দরবানে লাল মোহন বাহাদুরের সিনেমা হলে ফেরি করে বাদাম বিক্রি করতেন। তার ভাই বিমল কান্তি পান বিক্রি করতেন। পরে ১৯৯০ সালে অমল বিভিন্ন বাজারে দুধ বিক্রি করে সংসার চালাতেন।
অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, বান্দরবান জেলা শহরে অমল কান্তি দাশের রয়েছে একাধিক আলিশান বাড়ি ও বহুতল ভবন। বিশেষ করে, বান্দরবান পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ডের নিউ গুলশান এলাকায় রয়েছে আনুমানিক ১০ কোটির টাকার রানী ভবন নামের ৫ তলা বাড়ি। পৌরসভার কালাঘাটা ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বীর বাহাদুর এলাকায় ১৫ কোটি টাকার ৩টি প্লট, এর মাঝে একটি প্লটে ৫ কোটি টাকার বাড়ি। অন্য এক প্লটে ১০-১২ লাখ টাকার নান্দনিক বাড়ির গেট। অন্যদিকে পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের রাজারমাট এলাকায় ১০-১২ কোটি টাকার জমির ওপর নির্মিত ২০ কোটি টাকার ৭ তলা ভবন। এছাড়াও পৌরসভার ৯ নাম্বার ওয়ার্ডের ইসলামপুর অফিসার্স ক্লাব এলাকায় ৭-৮ কোটির ১০ কাঠা জমির ওপর ১৩-১৪ কোটি টাকার অত্যাধুনিক হোটেল হিলটন। যার ৫০ শতাংশ শেয়ারের মালিক অমল কান্তি দাশ। অপরদিকে উপজেলার জায়গায় দখল করে পৌরসভার সামনে ৪-৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়েছে হোটেল হিল কুইন। যার ৬০ শতংশ শেয়ারের মালিক অমল কান্তি দাশ।
এ ছাড়া রয়েছে বান্দরবান জেলার বিভিন্ন এলাকায় নামে-বেনামে শত বিঘা ফসলি জমি। অমল ক্ষমতার অপব্যবহার ও সাবেক মন্ত্রী বীর বাহাদুরের ব্যবসায়িক পার্টনার হিসাবে বান্দরবান এলাকায় সবার কাছে বেশ পরিচিত। অল্প সময়ের ব্যবধানে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রণ, ভূমিদস্যুতা, সরকারি বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষায় মন্ত্রীর একক ক্ষমতার আধিপত্য বিস্তার করে হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা।
অমল কান্তি দাশের এক ঘনিষ্ঠজন বলেছেন, শুধু বান্দরবান নয়, ঢাকা ও চট্টগ্রামে অনুসন্ধান করলেও মিলবে অমলের প্লট ও ফ্ল্যাটসহ নানা সম্পদের ফিরিস্তি।
ব্যারিস্টার সুমনের পাশে দাঁড়িয়ে লাবন্যময়ী হাসি ভাইরাল, মুখ খুললেন পিয়া জান্নাতুল
১৯৯০ সালে ব্যবসায়ী মাধল বড়ুয়ার কাছ থেকে সুদে ১ লাখ টাকা নিয়ে শুরু হয়েছিল অমলের ব্যবসা। আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর ভাগ্য খুলে যায়। বান্দরবান জেলার ঠিকাদারি তার একক নিয়ন্ত্রণে। ঠিকাদারদের কমিশনের বিনিময়ে কাজ পাইয়ে দিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা নেওয়া তার জন্য মামুলি ব্যাপার। অমলের মেয়ে পড়াশোনা করছেন অস্ট্রেলিয়ায়। ২০০৬ সালে বীর বাহাদুর উশৈশিং এমপির হাত ধরে আওয়ামী লীগে যোগ দেন অমল। হন পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি। এরপর হন রেড ক্রিসেন্ট বান্দরবান ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক। বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি স্ত্রীর আশীর্বাদে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। এ ব্যাপারে বীর বাহাদুর এমপির বক্তব্য জানতে মোবাইলে কল দিলেও তিনি ধরেননি। সূত্র : যুগান্তর
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।