একদিকে আমানত সংগ্রহে তোড়জোড়, অন্যদিকে ঋণের বিপরীতে আকাশচুম্বী সুদহার। টাকা বেচাকেনার এই ব্যাংকিংয়ে আমানত ও ঋণের সুদহারের পার্থক্য সীমা অতিক্রম করেছে ৭৫ শতাংশ ব্যাংক। প্রতিষ্ঠানগুলোর বেসামাল প্রতিযোগিতায় বিনিয়োগে ভাটা পড়ছে বলে মত ব্যবসায়ীদের। যদিও দেশীয় ব্যাংকগুলো নিয়ে সাফাই গাইছে বাংলাদেশ ব্যাংক। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়াতে সুদের হারে সরকারকেই ক্যাপ দিতে হবে।
আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো গ্রাহকদের কাছ থেকে যে হারে সুদ নেয় এবং আমানতকারীদের যে হারে সুদ দেয়, তার পার্থক্যকেই বলা হয় স্প্রেড। ব্যাংকের মুনাফার অন্যতম বড় উৎস এটি। আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী সর্বোচ্চ ৪ শতাংশ স্প্রেডকে গ্রহণযোগ্য ধরা হলেও, বাংলাদেশের বেশিরভাগ ব্যাংকেই এ হার ৫ শতাংশের বেশি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উচ্চ সুদ হার কেবল ব্যাংকগুলোর মুনাফা বাড়াচ্ছে না, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানও বাধাগ্রস্ত করছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আইনুল ইসলাম মনে করেন, ‘এত বিশাল একটা গ্যাপ তৈরি হওয়ায় কস্ট অফ ক্যাপিটাল বেড়ে গেছে, ফলে বিনিয়োগও কমে গেছে। বিষয়টা অবশ্যই পুনর্বিবেচনা করা দরকার।’
ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে ব্যাংকগুলোর আগ্রাসী নীতি কোনোভাবেই ব্যবসাবাবন্ধব নয়, বলছেন ব্যবসায়ীরা। বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি মাহমুদুল হাসান খান বাবু বলেন, ‘কস্ট অফ ডুয়িং বিজনেস কমানোর পরিবর্তে প্রতিনিয়ত বাড়ছে। এখন ১৩-১৪ শতাংশ সুদে ঋণ নিয়ে শিল্প চালানো সম্ভব নয়।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের জুন পর্যন্ত হিসাব অনুযায়ী, বিদেশি, সরকারি ও বেসরকারি-এই তিন শ্রেণির মোট ৫৭টি ব্যাংকের মধ্যে ৪৬টির স্প্রেড ৫ শতাংশের ওপরে। এর মধ্যে বিদেশি ৯টি ব্যাংকেই স্প্রেড দাঁড়িয়েছে ৫ থেকে ১৩ দশমিক ৯৫ শতাংশে। সরকারি ব্যাংকের ৬টির মধ্যে ৫টিতেই এ হার ৫ শতাংশের বেশি। আর দেশের ৪২টি বেসরকারি ব্যাংকের মধ্যে ৩২টির স্প্রেড অতিরিক্ত সীমা অতিক্রম করেছে।
স্প্রেড নির্ধারণে প্রায় ৭৫ শতাংশ ব্যাংক অনিয়ন্ত্রিত হলেও দেশীয় ব্যাংকের সাফাই গাইছে খোদ কেন্দ্রীয় ব্যাংক। মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান বলেন, ৪ শতাংশের বেশি হলে ব্যাংকে আমরা প্রশ্ন করি কেন হয়েছে? তবে ব্যক্তিগতভাবে দেখেছি, বিদেশি ব্যাংকেই এই গ্যাপটা বেশি।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়াতে সুদের হারের সীমা নির্ধারণ করতে হবে সরকারকেই। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক পরিচালক ড. জামালউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ইন্টারেস্ট রেটের ওপর কোনো ক্যাপ নেই, এটা উন্নয়নশীল দেশের জন্য গ্রহণযোগ্য নয়। বাংলাদেশ এখনো সেই পর্যায়ে পৌঁছায়নি যেখানে বাজার নিজে থেকে সুদ ঠিক করবে। যারা এটা বলে, তারা বোকার স্বর্গে বাস করছে।’
প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালের মার্চে ব্যাংক খাতে গড় স্প্রেড ছিল ২ দশমিক ৯৬ শতাংশ। এক বছরের ব্যবধানে তা দ্বিগুণ হয়ে চলতি বছরের জুনে দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ৮২ শতাংশে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এতে ব্যাংকগুলো বিপুল মুনাফা করছে করলেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সাধারণ গ্রাহক ও উদ্যোক্তারা।
সূত্র : সময় টিভি
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।