ওয়াশিংটনের কূটনৈতিক দপ্তরের চিঠি যেন বজ্রাঘাত হয়ে নেমেছে আঙ্কারার মাথায়। বহুদিন ধরে বুকে লালন করা প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েব এরদোয়ানের স্বপ্নে বড় পদাঘাত ঘটল। পুনরায় মার্কিন এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান কর্মসূচিতে ফিরে আসার দরজায় এবার শক্ত কপাট আটকে দিল যুক্তরাষ্ট্র।
ঘটনার সূচনা ২০১৯ সালে। ওই বছর রাশিয়ার তৈরি এস-৪০০ এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম কিনেছিল তুরস্ক। এই সিদ্ধান্তে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো মিত্ররা ক্ষুব্ধ হয়েছিল। আশঙ্কা ছিল, রুশ প্রযুক্তি হাতে থাকলে ন্যাটোর সবচেয়ে গোপন প্রতিরক্ষা পরিকল্পনা চলে যেতে পারে মস্কোর হাতে। এর ফলেই ওই বছর আঙ্কারাকে বের করে দেওয়া হয় এফ-৩৫ প্রকল্প থেকে।
এরপর থেকে এরদোয়ান একের পর এক দর কষাকষি চালিয়েছেন। কখনো সরাসরি হুমকি, কখনো সমঝোতার বার্তা দিয়েও চেষ্টা করেছেন। সম্প্রতি নতুন আলো জ্বলে উঠেছিল যখন আঙ্কারার পক্ষ থেকে আবারো ওয়াশিংটনের সঙ্গে যুদ্ধবিমান সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। কিন্তু আগস্টের মাঝামাঝি এসে সেই আশা ভেস্তে দিল মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের স্পষ্ট ভাষার চিঠি।
২০ আগস্ট কংগ্রেসম্যান ক্রিস পাপাস ও তার সহকর্মীদের উদ্দেশ্যে পাঠানো চিঠিতে জানানো হয়, “আমাদের অবস্থান অপরিবর্তিত। তুরস্ক যদি এস-৪০০ ধরে রাখে তবে তারা কোনভাবেই এফ-৩৫ কর্মসূচিতে ফিরে আসতে পারবে না।” চিঠিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা ও গোয়েন্দা সম্পদ রক্ষা করাকেই অগ্রাধিকার উল্লেখ করা হয়। চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন স্টেট ডিপার্টমেন্টের শীর্ষ কর্মকর্তা পল ডি. গোয়াগলিয় আনুনে।
শুধু রাজনৈতিক বক্তব্যই নয়, ২০২০ সালের ন্যাশনাল ডিফেন্স অথরাইজেশন অ্যাক্টের ১২৪৫ ধারা এবং ক্যাটসা স্যাংশন আইনকেও সামনে টেনে এনেছে যুক্তরাষ্ট্র। স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, তুরস্কের উপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে যতক্ষণ না আঙ্কারা এস-৪০০ সরিয়ে দেয়।
এর আগে ৪০ জন প্রভাবশালী কংগ্রেস সদস্য হোয়াইট হাউসকে আহ্বান জানিয়েছিলেন কোন অবস্থাতেই যেন তুরস্ককে এই কর্মসূচিতে ফেরানো না হয়। তাদের দাবি, এস-৪০০ হাতে রেখে এফ-৩৫ এ ফিরে আসলে ন্যাটোর সবচেয়ে আধুনিক যুদ্ধবিমানের প্রযুক্তি চলে যেতে পারে রাশিয়ার হাতে। এই প্রচারণায় পাশে দাঁড়িয়েছিল গ্রিসপন্থি আমেরিকান হেলেনিক ইনস্টিটিউট, আর্মেনিয়ান ন্যাশনাল কমিটি, আমেরিকান জিউস কমিটি এমনকি কুর্দি সংগঠনগুলোও।
ফলাফল হলো এরদোয়ানের জন্য অপমানজনক এক প্রত্যাখ্যান। আঙ্কারা বারবার যুক্তি দিয়েছে, তাদের অন্যায়ভাবে বের করে দেওয়া হয়েছে। ন্যাটোর সদস্য হওয়ায় পুনর্বহাল করা উচিত। কিন্তু ওয়াশিংটনের সাফ জবাব—“না, আগে রুশ অস্ত্র সরাও।”
এই সিদ্ধান্ত শুধু কূটনৈতিক অপমানই নয় বরং তুরস্কের সামরিক স্বপ্নের জন্যও এক বিরাট ধাক্কা। কারণ, এফ-৩৫ কেবল একটি যুদ্ধবিমান নয়—এটি ন্যাটোর প্রযুক্তিগত শ্রেষ্ঠত্বের প্রতীক। সেখানে তুরস্কের অনুপস্থিতি মানে মিত্রদের ভরসার তালিকা থেকেও বাদ পড়া।
ওয়াশিংটনের অস্বীকৃতির মধ্যে লুকিয়ে আছে আরেকটি বার্তা। এরদোয়ানের দ্বিমুখী খেলা আর সহ্য করতে রাজি নয় আমেরিকা। একদিকে রাশিয়ার সঙ্গে অস্ত্র চুক্তি, অন্যদিকে ন্যাটোর ছাতার নিচে নিরাপত্তা চাওয়া—এই ভারসাম্যহীন কৌশল আজ বুমেরাং হয়ে ফিরে এসেছে।
এর প্রভাব পড়েছে আঙ্কারার অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেও। বিরোধী দলগুলো সরব হয়ে বলছে, এরদোয়ানের ভুলনীতি দেশের প্রতিরক্ষা স্বার্থকেই খাদের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। আন্তর্জাতিক মহলেও প্রশ্ন উঠছে—এই অপমানের পর তুরস্ক কি আরো ঘনিষ্ঠ হবে রাশিয়ার দিকে? নাকি চাপের মুখে শেষমেশ সরে আসবে এস-৪০০ থেকে?
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।