জুমবাংলা ডেস্ক : বাংলাদেশে অনেক জাতের ধান আছে। গত শতাব্দীর শুরুর দিকে প্রায় ১৮ হাজার জাতের দেশীয় ধানের তথ্য পাওয়া যায়। তবে দেশের কয়েকটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন দেশীয় ধানের ৮ হাজার ৬০০ জাত সংরক্ষিত থাকলেও অন্তত ১০ হাজার জাতের দেশীয় ধান এখন আর পাওয়া যায় না।
২০১১ সালে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের এক জরিপে জানা যায়, বাংলাদেশে কমবেশি আট হাজার জাতের ধান আছে। তবে এসব ধানের মধ্যে সরাসরি দেশীয় জাতের ধান এখন নেই বললেই চলে। বেসরকারি সংগঠন উবিনীগ ‘নয়াকৃষি আন্দোলন’ এর মতে, দেশে এক সময় বিভিন্ন মৌসুমে প্রায় ১৫ হাজার জাতের ধান চাষ হতো। হাজারো জাতের ধানের আবাদ বাংলাদেশে হলেও লম্বা ও চিকন চালের ধান নেই বললেই চলে। যে কারণে ভোজনরসিকদের জন্য মজাদার বিরিয়ানি ও পোলাও রান্না করতে এখন হরহামেশাই বাসমতি চালের ব্যবহার হচ্ছে। এই চাল আমদানিতে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় হয়। দেশে চাহিদা অনুসারে লম্বা ও চিকন চাল অপ্রতুল থাকায় এবং রফতানির উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা) এবার বোরো মৌসুমে আবাদের জন্য বিনাধান-২৫ উদ্ভাবন করেছে। দেশে উদ্ভাবিত ধানের জাত সমূহের মধ্যে বিনাধান-২৫ সর্বাধিক লম্বা ও চিকন। বৈশ্বিক উষ্ণতা সহিষ্ণু উচ্চফলনশীল ধানের এই জাতটি আবাদ করে হেক্টর প্রতি গড়ে ৮ টন ফলন পাওয়া যায়। যা দেশের অর্থনৈতিক ও খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চয়তার পাশাপাশি আমদানি নির্ভরতা কমাবে বলে আশাবাদ বিজ্ঞানীদের। উচ্চফলনশীল এই ধানের চাল অনেকটাই বাসমতির মতো।
বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. সাকিনা খানম জানান, দেশে লম্বা ও চিকন চালের ধানের চাহিদা মেটানোর জন্য বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা) ৭/৮ বছর আগে গবেষণা শুরু করে। গেল বছর বিনাধান-২৫ উদ্ভাবনে সফলতা অর্জন করে। চলতি বোরো মৌসুমে সাতক্ষীরায় পরীক্ষামূলকভাবে আবাদ করে আশানুরূপ ফলন পাওয়া গেছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মাধ্যমে দেশের ২১ জেলার ৩৯৬ উপজেলায় চাষি পর্যায়ে আট টন বিনাধান-২৫ এর বীজ বিতরণ করা হয়েছে। বিএডিসির মাধ্যমে চার শ’ কেজি বীজ বর্ধনের জন্য প্রদান করা হয়েছে। এ পর্যন্ত আবাদকৃত বিনাধান-২৫ এর বাম্পার ফলন হয়েছে। দেখা গেছে, বিনাধান-২৫ ব্রিধান-২৯ অপেক্ষা ১৫ থেকে ২০ দিন এবং ব্রিধান-৫০ অপেক্ষা ১০ থেকে ১৪ দিন আগে পাকে। অনেকেই ১৩৯ দিনে এই ধান কেটে ঘরে তুলেছেন। এজন্য কৃষকরা বাজারমূল্য বেশি পাচ্ছেন।
তিনি জানান, বিনাধান-২৫ একটি প্রিমিয়াম কোয়ালিটির ধান। এটি দেশে যত প্রকার ধান রয়েছে, তার মধ্যে সবচেয়ে লম্বা ও চিকন। এটি বোরো মৌসুমের জাত। প্রিমিয়াম কোয়ালিটি সম্পন্ন আগাম জাতের বিনাধান-২৫ আবাদ করতে পানি, সার ও বালাইনাশক কম লাগে। ইউরিয়া ও পানি সাশ্রয়ী। কেবল থোড় অবস্থা থেকে দুধ অবস্থা পর্যন্ত জমিতে পর্যাপ্ত রসের ব্যবস্থা থাকলে এবং অন্যান্য সময় শুকানো ও ভেজানো পদ্ধতিতে সেচ দিলেই ভালো ফলন পাওয়া যায়। স্বল্প খরচে কম সময়ই অধিক ফলন পাওয়া যায়। হেক্টরপ্রতি ফলন সাড়ে সাত টন থেকে সাড়ে আট টন। পাকতে সময় লাগে ১৪৫ দিনের মতো। এই ধানের চাল রান্না করলে চালের আকৃতি দ্বিগুণ আকার ধারণ করে। যা অনেকটাই বাসমতির মতো। খেতে খুবই সুস্বাদু। রান্না করা ভাত ফ্রিজে রাখার দরকার নেই। সকালে রান্না করে যদি স্বাভাবিক অবস্থায় রেখে দিলেও সন্ধ্যা পর্যন্ত খাওয়া যাবে। ভাত গলে যাবে না। নষ্ট হবে না। দীর্ঘ সময় পরও ভাত ঝরঝরে থাকবে।
তিনি আরো জানান, বিনাধান-২৫ এর গাছ লম্বা হলেও শক্ত হওয়ায় প্রচণ্ড ঝড়বৃষ্টিতেও হেলে পড়ে না। অধিক ফলনের সাথে সাথে খড় পেয়ে কৃষক খুশি। কারণ খড় এখন মূল্যবান সম্পদ। দামও এখন অনেক বেশি। তাই কৃষক অধিক লাভবান হন। এই ধান লম্বা ও সরু হলেও প্রচলিত মিলেই ভাঙানো যায় এবং ধান থেকে চাল তৈরিতে লস কম হয়। বিনাধান-২৫ আবাদে কৃষকরা দুই ফসলি জমিতে তিন ফসল করতে পারবেন। তাতে কৃষকই লাভবান হবেন।
বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট বিনা মহাপরিচালক ড. মির্জা মোফাজ্জল ইসলাম জানান, এ পর্যন্ত বিনা ২৬টি ধানের জাত উদ্ভাবন করেছে। বিনাধান-২৫ একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জাত। এ জাতটির বৈশিষ্ট্য হলো এটি প্রিমিয়াম কোয়ালিটির সরু ও চিকন এবং বিদেশে রফতানিযোগ্য। এটি পাকিস্তান বা ভারতের বাসমতির অনুরূপ। এর বাজারমূল্য বেশি। এই চাল বাজারে ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে হরহামেশাই বিক্রি হয়। কৃষিকে বাণিজ্য ও রফতানিমুখী করার উদ্দেশ্যে বিনাধান-২৫ উদ্ভাবন করা হয়েছে। আমদানি নির্ভরতা কমাতে বিনাধান-২৫ বড় ভূমিকা পালন করবে। ৪২-৪৩ ডিগ্রি তাপমাত্রায় কোনো ধান টিকতে পারে না। কিন্তু বিনাধান-২৫ সেই বৈশ্বিক উষ্ণতা সহ্য করতে পারে। সহজেই হেলে পড়ে না। জমিতে পানি জমে গেলে, ঝড়-বৃষ্টির কবলে ধানগাছ হেলে পড়লেও পানি সরে যাওযার পর রৌদ্রোজ্জ্বল অবস্থায় দুই তিন দিনের মধ্যেই পূর্বাবস্থায় ফিরে আসে এবং স্বাভাবিক ফলন দেয়। এজন্য কৃষকদের কাছে সমাদৃত হবে।
তিনি বলেন, কৃষকরা দাম বেশি পাক অধিক লাভবান হোন এটাই আমরা চাই। এই ধান আবাদ করলে কৃষকরা দ্বিগুণ লাভবান হবেন এতে কোনো সন্দেহ নেই। সরকারের ঘোষিতনীতি কৃষিকে রফতানিমুখী করতে দেশের অর্থনৈতিক ও খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চয়তার পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন ও আমদানি নির্ভরতা কমাবে বিনাধান-২৫। এই ধানের চাল বাসমতির বিকল্প হিসেবে প্যাকেটজাত করে চেইনশপগুলো যেমন আগোরা, স্বপ্ন বা এ জাতীয় শপিংমলে ব্র্যান্ডিং করে বিক্রি করা যাবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।