ধর্ম ডেস্ক : মুফতি মুহাম্মাদ ইসমাঈল: স্বামী যে গুণাগুণের ফলে স্ত্রীর প্রিয়ভাজন ও প্রাণপ্রিয় হয়ে যায়। যে গুণাগুণে স্বামী-স্ত্রীর মাঝে সীমাহীন ভালোবাসা তৈরি হয়। যা পরস্পর ও সন্তানসন্ততির শান্তির কারণ। অনেক ধরনের পাপের রাস্তা বন্ধের প্রধান হাতিয়ার। স্বামীর এমন কিছু গুণাগুণ হলো—
১. দায়িত্বে যত্নবান: স্বামীর ওপর স্ত্রীর বাসস্থান, ভরণপোষণ ও অন্যান্য যে অধিকার অর্পিত হয়েছে, সে ব্যাপারে তার যত্নবান হওয়া। দায়িত্বশীল স্বামী স্ত্রীর খুবই প্রিয়। যথাযথ দায়িত্ব পালনে অনেক সওয়াবেরও অধিকারী হওয়া যায়। দায়িত্বে অবহেলায় শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কোনো ব্যক্তি স্বীয় পরিবার-পরিজনের জন্য পুণ্যের আশায় যখন ব্যয় করে তখন সেটা তার জন্য সদকা হয়ে যায়।’ (বুখারি, হাদিস : ৫৫) নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ প্রত্যেক দায়িত্বশীলকে তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবেন, সে তা পালন করেছে, না করেনি? এমনকি পুরুষকে তার পরিবার-পরিজন সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবেন।’ (ইবনে হিব্বান, হাদিস : ৪৪৯৩)
২. উত্তম আচরণকারী: উত্তম আচরণ দিয়ে অন্যকে জয় করা যায়, তার হৃদয়ে আসন করে নেওয়া যায়। এমনকি শত্রুকেও বশে আনা যায়। ইরশাদ হয়েছে, ‘সমান নয় ভালো ও মন্দ। জবাবে তাই বলুন, যা উত্কৃষ্ট। তখন দেখবেন আপনার সঙ্গে যে ব্যক্তির শত্রুতা রয়েছে, সে যেন অন্তরঙ্গ বন্ধু।’ (সুরা হামিম সাজদা, আয়াত : ৩৪) তাই স্ত্রীর সঙ্গে উত্তম আচরণ করতে হবে। অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, তোমরা স্ত্রীদের সঙ্গে সদ্ভাবে জীবন-যাপন করো।
যদি তোমরা তাদের অপছন্দ করো, তবে হয়তো তোমরা এমন জিনিসকে অপছন্দ করছ, যাতে আল্লাহ অনেক কল্যাণ রেখেছেন।’ (সুরা নিসা, আয়াত : ১৯)
নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘কোনো মুমিন পুরুষ কোনো মুমিন নারীর প্রতি বিদ্বেষ-ঘৃণা পোষণ করবে না। কেননা তার কোনো অভ্যাস অপছন্দ করলে তার অন্য কোনো অভ্যাস সে পছন্দ করবে।’ (মুসলিম, হাদিস : ৩৫৪০)
৩. স্ত্রীর সঙ্গে একান্তে বসে খোশগল্পকারী: অবসরে স্ত্রীর সঙ্গে একান্তে বসে কিছু গল্পগুজব করা। স্ত্রীকে তার পছন্দনীয় সুন্দর নামে ডাকা। রসাত্মক কোনো কথাবার্তা বলে হাসানো। বৈধ মজাদার কোনো গেম খেলা। নবীজি (সা.) জাবির (রা.)-কে বলেন, ‘কুমারী বিয়ে করলে না কেন? তুমি তার সঙ্গে খেলতে, সেও তোমার সঙ্গে খেলত। তুমি তাকে হাসাতে, সেও তোমাকে হাসাত।’ (বুখারি, হাদিস : ৫৩৬৭)
৪. স্ত্রীর জন্য সুসজ্জিত ও সুবাসিত: পরিচ্ছন্ন, পরিপাটি সুবাসিত লোকদের সবাই পছন্দ করে। তারা স্বীয় স্ত্রীদের কাছেও ভীষণ পছন্দের। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘আমি আমার স্ত্রীর জন্য সুসজ্জিত হতে পছন্দ করি, যেভাবে আমার জন্য তার সুসজ্জিত হওয়া পছন্দ করি।’ (তাফসিরে কুরতুবি : ৫/৯৭)
৫. স্ত্রীর পরিবারকে সম্মানকারী: স্ত্রীর পরিবারের লোকজনকে সম্মান করলে স্ত্রী সবার কাছে সম্মানিত ও প্রশংসিত হয়। ফলে স্বামীর প্রতি তার মহব্বত ভালোবাসা বৃদ্ধি পায়। সে স্বামী ও তার ফ্যামিলির জন্য নিবেদিত হয়ে যায়।
৬. অসুস্থ স্ত্রীর সেবাকারী: স্ত্রী অসুস্থ হলে সাধ্যমতো তার সেবা করা স্বামীর দায়িত্ব। আয়েশা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.)-এর পরিবারবর্গের কেউ অসুস্থ হলে তিনি ‘মুআববিজাত’ সুরাগুলো পড়ে তাকে ফুঁক দিতেন। (বুখারি, হাদিস : ৫৬০৭)
ইবনে ওমর (রা.) বলেন, ওসমান (রা.) বদর যুদ্ধে অনুপস্থিত ছিলেন। কেননা তাঁর স্ত্রী আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর কন্যা অসুস্থ ছিলেন। তখন নবীজি (সা.) তাকে বললেন, ‘বদর যুদ্ধে যোগদানকারীর সমপরিমাণ সওয়াব ও অংশ তুমি পাবে।’ (বুখারি, হাদিস : ৫৭৪৩)
৭. ঘরে স্ত্রীর কাজে সহযোগিতাকারী: ঘরে স্ত্রীর কাজে সহযোগিতাকারী স্বামী স্ত্রীদের পছন্দনীয়। নবীজি (সা.) স্ত্রীদের কাজে সহযোগিতা করতেন। আয়েশা (রা.) বলেন, ‘তিনি (নবীজি) ঘরের কাজ-কর্মে ব্যস্ত থাকতেন। অর্থাৎ পরিবারবর্গের সহায়তা করতেন। নামাজের সময় হলে নামাজের জন্য চলে যেতেন। (বুখারি, হাদিস : ৬৭৬)
৮. স্ত্রীর প্রতি ভালো ধারণাকারী: অনেকে স্ত্রীকে অযথা সন্দেহ করে এবং বাজে কথা বলে। ফলে তাদের মাঝে মনোমালিন্য ও ঝগড়া-বিবাদের সৃষ্টি হয়। স্ত্রীরা এ ধরনের স্বামীদের অপছন্দ করে। ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনগণ, তোমরা অধিক ধারণা থেকে বেঁচে থাকো। নিশ্চয়ই কোনো কোনো ধারণা পাপ।’ (সুরা হুজুরাত, আয়াত : ১২)
৯. স্ত্রীর সঙ্গে পরামর্শকারী: যে স্বামী নিজেদের জীবনঘনিষ্ঠ বিষয়ে স্ত্রীর সঙ্গে পরামর্শ করে ও তাকে গুরুত্ব দেয় সে স্বামী স্ত্রীর কাছে প্রিয়। আল্লাহ বলেন, ‘আর জরুরি বিষয়ে তাদের সঙ্গে পরামর্শ করুন।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ১৫৯) রাসুল (সা.) অহি নাজিলের পর খাদিজা (রা.)-এর সঙ্গে পরামর্শ করেছেন। (বুখারি, হাদিস : ৪৫৯৩)
১০. যে মারধর করে না: স্ত্রীর কোনো ত্রুটি হলে মহব্বতের সঙ্গে তাকে বোঝাতে হবে। উপদেশবাণী শোনাতে হবে। সঠিক নিয়ম ও বিধান তাকে শেখাতে হবে। মারধর করা উত্তম স্বামীর স্বভাব নয়। নবীজি (সা.)-এর আদর্শও নয়। নবীজি (সা.) কখনো তাঁর স্ত্রীগণকে প্রহার করেননি। আয়েশা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) নিজ হাতে কোনো কিছুকে প্রহার করেননি। না তাঁর কোনো স্ত্রীকে, না কোনো খাদেমকে।’ (মুসলিম, হাদিস : ২৩২৮)
যারা প্রহার করে তাদের ব্যাপারে নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘তারা তোমাদের মধ্যে উত্তম নয়।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ২১৪৬)
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।