জুমবাংলা ডেস্ক : প্রতিদিনের মতো দিনমজুর কাজে বের হয়েছিলেন আব্দুল বারেক মিয়া (৮৪)। হঠাৎ তিনি শুনতে পান পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ চলছে। জানতে পারেন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তার নাতি মেহেদী হাসান আন্দোলনে যোগ দিয়েছে। নাতিকে খুঁজতে দৌড়ে যান সংঘর্ষের স্থানে।
এ সময় চোখে গুলি লাগে। আশপাশের লোকজন তাকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে নিয়ে যায় মদন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। সেখান থেকে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ময়মনসিংহে পাঠানো হয়। দীর্ঘদিন ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফিরলেও পুলিশের গুলিতে হারিয়েছে বারেক মিয়ার এক চোখের দৃষ্টি।
তিনি অচল অবস্থায় ঘরে পড়ে থাকলেও তার খোঁজ-খবর নেয়না কেউ।
বারেক নেত্রকোনার মদন উপজেলার চানগাও ইউনিয়নের চকপাড়া গ্রামের মৃত আব্দুল গণি মিয়ার ছেলে। তার তিন ছেলে ও এক মেয়ে আছে। মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন।
তিন ছেলেও বিয়ে করে আলাদা সংসার করছে। বারেক মিয়া তার স্ত্রীকে নিয়ে আলাদা বসবাস করছিলেন। দিনমজুরির কাজ করে প্রতিদিন যা রোজগার হত তা দিয়েই সংসার চলত তার। বর্তমানে তিনি নিজবাড়িতেই অবস্থান করছেন। চিকিৎসার জন্য ধারদেনা করে খরচ করেছেন প্রায় লাখ টাকা।
একটি চোখ নষ্ট হয়ে গেছে, বর্তমানে অন্য চোখটিও নষ্টের পথে। চিকিৎসক জানিয়েছেন, নষ্ট চোখ তুলে ফেলতে হবে। নয়তো অন্য চোখটাও দ্রুত সময়ের মধ্যে নষ্ট হয়ে যাবে। কিন্তু চোখ তোলার জন্য অস্ত্রোপচারের জন্য নেই টাকা। টাকার অভাবে ঠিকমতো বারেক মিয়ার চিকিৎসা না হওয়ায় পরিবারটি এখন দিশেহারা।
বারেক মিয়া বলেন, ‘নাতিকে খুঁজতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে চোখ হারিয়েছি। আহত হওয়ার পর থেকে কাজকর্ম করতে পারি না। চিকিৎসার জন্য লাখ টাকা ঋণ করেছি। একটা চোখ নষ্ট হয়ে গেছে। ডাক্তার বলেছেন, নষ্ট চোখ তুলে ফেলতে হবে। কিন্তু টাকার অভাবে তা করা সম্ভব হচ্ছে না। এখন ভালো চোখেও ব্যথা শুরু হয়েছে। সময়মতো চোখ তুলতে না পারলে ভালো চোখও নষ্ট হয়ে যাবে। কী করব? কোথায় যাব বুঝতে পারছি না।’
মদন উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও চানগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নূরুল আলম তালুকদার বলেন, ‘১৮ জুলাই পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের স্থানে বারেক মিয়া গুলিবিদ্ধ হন। তার চোখ নষ্ট হয়ে গেছে। বর্তমানে বারেকের পরিবার খুবই কষ্টে দিন কাটাচ্ছে। বারেক ছাড়াও উপজেলায় আরো অনেক লোক আহত হয়েছেন। আমরা আহতের তালিকা তৈরি করে কেন্দ্রে পাঠিয়েছি। আহতরা যাতে সহযোগিতা পান তার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’
গত ১৮ জুলাই কোটা সংস্কারের আন্দোলনের কর্মসূচির অংশ হিসাবে কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি দেন শিক্ষার্থীরা। সেই কর্মসূচির সমর্থন জানিয়ে মদন উপজেলার সাধারণ শিক্ষার্থীরা সকাল ১০টা থেকে মদন সরকারি কলেজ মোড়ে জড়ো হতে থাকে। একই সঙ্গে পুলিশও সেই স্থানে অবস্থান নেয়। সকাল ১১টার দিকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা একটি মিছিল নিয়ে উপজেলা পরিষদের দিকে আসতে থাকে। পরে পুলিশ ডাক বাংলো মোড়ে ব্যারিকেড দেয়। পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙেই শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে পাবলিক হলের দিকে রওনা হয়।
একই সময় আন্দোলনের বিরুদ্ধে একটি প্রতিবাদ মিছিল বের করে আওয়ামী লীগের অঙ্গসহযোগী সংগঠন। দুটি মিছিল উপজেলা খাদ্য গুদামের সামনে মুখোমুখি হলে প্রশাসন মিছিল দুটিকে ছত্রভঙ্গ করে আলাদা করে দেয়। পরে শিক্ষার্থীরা শহীদ আব্দুল কদ্দুছ মগড়া সেতুর পূর্ব পাড়ে অবস্থান নেয়।
জনপ্রিয় এক নায়কের সঙ্গে বিছানায় শুতে বলা হয়েছিল, দাবি এই নায়িকার
এরপর শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ বাঁধে। পুলিশের সঙ্গে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ দলের নেতাকর্মীরা সংঘর্ষে যোগ দেয়। এ সময় নাতিকে খুঁজতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে আহত হন বারেক মিয়া। এ ছাড়াও সেই সময় আরো ১২/১৩ জন গুলিবিদ্ধসহ অর্ধশত মানুষ আহত হয়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।