বিনোদন ডেস্ক : বলিউডের নায়িকা স্নেহা উলালকে নিয়ে অভিনেতা অনন্ত জলিল ও নির্মাতা অনন্য মামুনের মধ্যে ঝামেলা তৈরি হয়। স্নেহা উলাল ২০০৫ সালে মুক্তি পাওয়া ‘লাকি’ সিনেমায় সালমান খানের নায়িকা ছিলেন। সে সময় বলা হতো, ঐশ্বরিয়ার সঙ্গে বিচ্ছেদ-ব্যথা ভুলতে ঠিক তার মুখাবয়বখচিত স্নেহাকে খুঁজে বের করেছিলেন সালমান খান। সে বহু পুরনো কথা।
পরে অনন্ত জলিলের ‘মোস্ট ওয়েলকাম’ চলচ্চিত্রে স্নেহা উলাল টাইটেল গানে পারফর্ম করেন। ছবিটি পরিচালনা করেছিলেন অনন্ত জলিল। এই সিনেমায় স্নেহা উলালকে অন্তর্ভুক্ত করা নিয়েই নাকি অনন্ত জলিলের সঙ্গে অনন্য মামুনের ঝামেলা তৈরি হয়। এমনটাই দাবি করেছেন অনন্য মামুন।
এর আগে শুক্রবার এক টেলিভিশনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে অনন্ত জলিল বলেন, ‘অনন্য মামুনকে আমি ডিরেক্টর বানিয়েছি…। আমার টাকায় ওর ডিরেক্টর ফি (পরিচালক সমিতির সদস্য পদ) পর্যন্ত দিয়েছি, এক লাখ ৬০ হাজার টাকা…। সমালোচনা যদি আমার সামনে কোনো দিন করে আর আমার চোখে পড়ে ওকে (অনন্য মামুন) তো আমি কান ধরে উঠাব-বসাব…। ওর এত বড় সাহস কোথা থেকে হলো…ওর কী যোগ্যতা আছে অনন্ত জলিলের সমালোচনা করার মতো…। ’
এক সাক্ষাৎকারে অনন্য মামুন অনন্ত জলিলের সিনেমার ১০০ কোটি টাকা বাজেট নিয়ে সমালোচনা করেন। একই সঙ্গে ইঙ্গিতে অনন্তর সমালোচনাও করেন। যার প্রেক্ষিতে অনন্ত ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন।
তবে অনন্ত জলিলের অভিযোগ অস্বীকার করে অনন্য মামুন ফেসবুকে স্নেহা উলাল প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ‘আমি সারা জীবন কৃতজ্ঞতা জানাই অনন্ত ভাইকে আমাকে তার সিনেমায় প্রথম পরিচালক হিসেবে সুযোগ দেওয়ার জন্য। শুটিংয়ে আমার সাথে প্রথম ঝামেলা শুরু হয় মুম্বাইয়ের হিরোইন স্নেহা উলালকে নেওয়ার পর থেকে। অনন্ত ভাইয়ের সাথে বর্ষা ম্যাডামের সম্পর্ক খারাপ যাচ্ছিল। অনন্ত ভাই বাইরের হিরোইনকে নিয়ে কাজ করবেন, বর্ষা করতে দেবেন না। ফাইনালি তাদের সম্পর্ক ঠিক হলো, আমি ভিলেন হয়ে গেলাম। ’
এ ছাড়াও অনন্য মামুনকে অকথ্য ভাষায় নাকি অনন্ত জলিল গালিও দিয়েছিলেন। যার ফলে তিনি অনন্তর সঙ্গ ছেড়ে দেন। অনন্ত জলিলের বক্তব্যের পর ফেসবুকে অনন্য একটি পোস্ট করেছেন। যেখানে নির্মাতা অনন্ত জলিলের সঙ্গে পরিচয় থেকে সম্পর্কেচ্ছেদ পর্যন্ত তুলে ধরেছেন। নির্মাতা বলেন, ‘অনেক চুপ ছিলাম। দেখলাম চুপ থাকা মানে মিথ্যাটাকে অন্যায় হিসেবে মেনে নেওয়া। সত্যটা বলা দরকার। অনন্ত সাহেবের সাথে আমার পরিচয় ২০১০ সালের দিকে। আমি তখন কলকাতায় রেগুলার গল্প লেখক হিসেবে এসকে মুভিজের সাথে কাজ করি। স্প্ল্যাশ ম্যাগাজিনের বাবুর সাথে আমার আগে থেকেই চেনাজানা ছিল। বাবু আমাকে হোটেলে ডাকল, অনন্ত ভাইয়ের সাথে পরিচয় হলো। বাংলাদেশের ছেলে কলকাতায় কাজ করি শুনে উনি অনেক খুশি। আমি ল্যাপটপে গল্প লিখি, ব্যাপারটা উনার মনে ধরে। বললেন দেশে এসে আমার সাথে মিট করবেন। অনন্ত ভাইয়ের একটা ভালো গুণ, আছে উনি ছোট-বড় সবাইকে আপনি করে বলেন। ’
মামুন বলেন, ‘‘সোহান ভাইয়ের সাথে আমার জুটি হিট। আমার দেওয়া সবগুলো গল্প হিট। ‘কথা দাও সাথী হবে’, ‘আমার জান আমার গান’, ‘পরাণ যায় জ্বলিয়ারে’, ‘কোটি টাকার প্রেম’, ‘সে আমার মন কেড়েছে’, ‘এক মন এক প্রাণ’। সোহান ভাই অনন্ত ভাইয়ের সিনেমা ‘দ্য স্পিড’ লেখার জন্য তার অফিসে নিয়ে গেলেন। তার সাথে আমার দ্বিতীয় দেখা। এরপর তার সাথে আমার কাজ শুরু হলো। আমার কাজের দক্ষতা দেখে অনন্ত ভাই বললেন, আমাকে শুটিংয়ে থাকতে হবে। আমি এত কিছু ম্যানেজ করতে পারব না। শুটিংয়ের প্ল্যান অনন্ত ভাইয়ের সাথে থেকে আমি শুরু করলাম। ক্যামেরা লোকেশন, শিল্পী সব কিছু। তখন থেকেই আমি সোহান ভাইয়ের চোখে ভিলেন হয়ে গেলাম। ’’
অনন্ত জলিল অনন্য মামুনকে ছোট ভাই বানিয়েছিলেন। এমনটাই দাবি নির্মাতার। প্রসঙ্গটি নিয়ে মামুন বলেন, ‘সবাই শুটিং শেষ করে দেশে ফেরে। আমি আর অনন্ত ভাইয়ের অফিসের লোক ব্রুসলি এক সপ্তাহ পরে ফিরে আসি। কারণ তখন নেগেটিভে শুটিং হতো। টেলিসিনিং করে ফাইট এডিট করে আমি দেশে ব্যাক করি। মজার ব্যাপার হলো, অনন্ত ভাইয়ের সিনেমার খরচ তার অফিসের লোক দেখাশোনা করে। পরিচালক বা অন্য কারো হাতে টাকা দেওয়া হয় না। মালয়েশিয়া হিসাবে তার লোক ২৩ লাখ টাকা বেশি দিয়ে আসে, আমি পরে হিসাব বের করে তাকে টাকাটা ব্যাক করে দিই। সেদিন উনি বলেছিলেন, আপনি আমার ছোট ভাই। ’
অনন্ত জলিলের টাকায় পরিচালক সমিতির সদস্য হয়েছেন অনন্য মামুন। এমন বক্তব্যকে অনন্য মামুন নাকচ করে দিয়ে বলেন, ‘‘অনন্ত জলিলের ‘দ্য স্পিড’ সিনেমার সব পোস্ট-প্রডাকশনের কাজ আমি চেন্নাই থেকে করে নিয়ে আসি। অবশ্যই তার জন্য অনন্ত ভাই আমাকে সম্মানী দিয়েছেন। ‘দ্য স্পিড’ সিনেমার পরে অনন্ত ভাই বললেন, ‘মামুন আপনি এত কিছু পারেন, এবারের সিনেমাটা আপনি বানান। ’ সিনেমার মানুষ হিসেবে এটা আমার স্বপ্ন ছিল, সেটা পূরণ হলো। আমাকে এক লক্ষ টাকা সাইনিং মানি দিলেন। সম্পূর্ণ সিনেমার জন্য পাঁচ লাখ টাকা সত্যি একজন নতুন পরিচালক হিসেবে এটা অনেক টাকা। আমি পরিচালক সমিতিতে সেখান থেকে ৫৬ হাজার টাকা ফি জমা দিয়ে সদস্য পদ নিলাম। এখন আপনারা বলেন তো টাকাটা কার? আমার, নাকি অনন্ত ভাইয়ের?’’
অনন্য মামুন তার বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে বলেন, ‘‘লোকজনের মুখে শুনতে শুরু করলাম, আমি নাকি ‘মোস্ট ওয়েলকাম’ সিনেমার টাকা মেরে উত্তরাতে ছয়তলা বাড়ি বানিয়েছি। এক দিন সরাসরি অনন্ত ভাইকে জিজ্ঞেস করলাম, ভাই উত্তরাতে ছয়তলা বাড়ি বানাতে কত টাকা লাগে আপনি ভালো করেই জানেন। ‘মোস্ট ওয়েলকাম’ সিনেমার বাজেট তিন কোটি দুই লাখ টাকা। আমি সব টাকা মেরে দিলেও কি জায়গা কিনে উত্তরাতে বাড়ি বানানো সম্ভব? উনি জবাব দিতে পারেন নাই। কারণ উনি জানতেন উনার অফিসে কাউকে সরাসরি টাকা দেওয়া হয় না, সব খরচ তার অ্যাকাউন্ট দেখে। ’’
স্বামীর ব্রাশ দিয়েই দাঁত মাজেন আলিয়া, জানতে পেরেই রণবীরের কাণ্ড
অনন্ত জলিল মামুনকে গালি দিয়েছিলেন। এমন অভিযোগেই নাকি মামুন সরে আসেন। বিষয়টি নিয়ে অনন্য মামুন বলেন, ‘মোস্ট ওয়েলকাম-২ সিনেমার দেশের বাইরের সব শুটিং আমি পরিচালনা করেছি। নাজিম শাহরিয়ার জয়, মিশা ভাই, ডন ভাই উনারা ব্যাপারটা ভালো করেই জানেন। দেশে আসার পর যখন কথায় কথায় একদিন অনন্ত ভাই আমার বাবা-মাকে জড়িয়ে একটা গালি দেন ওই দিন থেকে চলে এসেছি। আপনার পাশের লোকজন টাকার জন্য আপনাকে হুজুর হুজুর করতে পারে, আমি না।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।