আন্তর্জাতিক ডেস্ক : অস্ট্রেলিয়া বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য ভিসা ফি দ্বিগুণেরও বেশি বাড়িয়েছে। দেশটি মূলত অভিবাসনে লাগাম টানতে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। খবর এনডিটিভির।
সোমবার (১ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এনডিটিভি জানিয়েছে, দেশটিতে দিন দিন আবাসন বাজারের ওপর চাপ তীব্র হতে থাকায় এই পদক্ষেপ নিয়েছে দেশটি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য অস্ট্রেলিয়া তার ভিসা ফি দ্বিগুণেরও বেশি বাড়িয়েছে। সর্বশেষ পদক্ষেপে চলতি জুলাই মাসের ১ তারিখ থেকে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ভিসার ফি ৭১০ অস্ট্রেলিয়ান ডলার থেকে বাড়িয়ে ১৬০০ অস্ট্রেলিয়ান ডলার (১০৬৮ মার্কিন ডলার) করা হয়েছে। ভিজিটর ভিসাধারী ও অস্থায়ী স্নাতক ভিসা রয়েছে এমন শিক্ষার্থীদের অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থানরত অবস্থায় স্টুডেন্ট ভিসার জন্য আবেদন করা নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
অস্ট্রেলিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ক্লেয়ার ও’নিল এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘আজকে কার্যকর হওয়া পরিবর্তনগুলো আমাদের আন্তর্জাতিক শিক্ষা ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা পুনরুদ্ধার করতে এবং এমন একটি অভিবাসন ব্যবস্থা তৈরি করতে সাহায্য করবে যা অস্ট্রেলিয়ার জন্য আরও সুন্দর, ক্ষুদ্রতর এবং আরও ভালোভাবে কাজ করতে সক্ষম।’
চলতি বছরের মার্চ মাসে অভিবাসন বিষয়ে প্রকাশিত সরকারি তথ্যে দেখা যাচ্ছে, ২০২৩ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ায় নেট ইমিগ্রেশন ৬০ শতাংশ বেড়ে রেকর্ড ৫ লাখ ৪৮ হাজার ৮০০ জনে দাঁড়িয়েছে।
এদিকে ভিসা ফি বৃদ্ধির ফলে অস্ট্রেলিয়ার স্টুডেন্ট ভিসার জন্য আবেদন করা এখন থেকে যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডার মতো প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় অনেক বেশি ব্যয়বহুল হয়ে উঠবে। উত্তর আমেরিকার এই দুই দেশে বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভিসা ফি যথাক্রমে ১৮৫ মার্কিন ডলার এবং ১৫০ কানাডিয়ান ডলার (১১০ মার্কিন ডলার)।
সরকার বলেছে, তারা ভিসা সংক্রান্ত নানা নিয়ম ও বিধির ত্রুটিগুলোও বন্ধ করছে যা বিদেশি ছাত্রদের অস্ট্রেলিয়ায় তাদের থাকার সময়সীমা ক্রমাগত প্রসারিত করার সুযোগ দিতো। ২০২২-২৩ সালে দ্বিতীয় বা পরবর্তী স্টুডেন্ট ভিসায় ছাত্রদের সংখ্যা ৩০ শতাংশ বেড়ে দেড় লাখের বেশি হওয়ার পর এই সিদ্ধান্ত নিলো তারা।
২০২২ সালে কোভিড-১৯ সম্পর্কিত বিধিনিষেধ ও নিষেধাজ্ঞাগুলো তুলে নেওয়ার পর থেকে অস্ট্রেলিয়ায় বার্ষিক অভিবাসন রেকর্ড মাত্রায় বেড়েছে। এরপর বিপুল সংখ্যায় অভিবাসীদের আগমন ঠেকাতে গত বছরের শেষের দিক থেকে স্টুডেন্ট ভিসার নিয়মগুলোকে কঠোর করার জন্য বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ নেয় অস্ট্রেলিয়া।
এরই অংশ হিসেবে সর্বশেষ এই পদক্ষেপ নেওয়া হলো। এর আগে গত মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে বিদেশি শিক্ষার্থীদের আগমন নিয়ন্ত্রণে ভিসার আবেদন করতে ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের প্রদর্শনের জন্য সঞ্চিত অর্থের পরিমাণ বৃদ্ধি করে অস্ট্রেলিয়ার সরকার এবং ইংরেজি ভাষার প্রয়োজনীয়তা কঠোর করা হয়েছিল।
সেসময় দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, যেসব বিদেশি শিক্ষার্থী অস্ট্রেলিয়ায় ভিসার জন্য আবেদন করবেন, তাদের অবশ্যই ন্যূনতম ২৯ হাজার ৭১০ অস্ট্রেলীয় ডলারের সমপরিমাণ অর্থ বাংলাদেশি মুদ্রায় (২১ লাখ ৪৬ হাজার ৯২২ টাকা) সঞ্চিত থাকতে হবে এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এই সঞ্চিত অর্থ সংক্রান্ত ব্যাংক নথি প্রদর্শন করতে হবে।
ইউনিভার্সিটি অস্ট্রেলিয়ার সিইও লুক শেহি বলেছেন, এই খাতের উপর সরকারের অব্যাহত নীতির চাপ দেশের শক্তির অবস্থানকে ঝুঁকিতে ফেলবে। এটি আমাদের অর্থনীতি বা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির জন্য ভাল নয়, উভয়ই আন্তর্জাতিক ছাত্র ফি গুলোর ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভর করে।
উল্লেখ্য, ২০২২–২৩ শিক্ষাবর্ষে এ খাতের মূল্যমান ছিল ২ হাজার ৪০০ কোটি ডলার। বেশি শিক্ষার্থী যাওয়ায় এমনটা ঘটেছে। এই অভিবাসনের ফলে বেড়েছে বাড়িভাড়া। অভিবাসীদের সংখ্যা ৬০ শতাংশ বেড়ে ২০২৩ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৪৮ হাজার ৮০০ জনে। সরকার আশা করছে, তাদের নেওয়া নীতি আগামী দুই বছরে অস্ট্রেলিয়ার অভিবাসী গ্রহণের পরিমাণ অর্ধেকে নামিয়ে আনতে পারবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।