বাংলাদেশে জমির মালিকানা প্রমাণের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সরকারি স্বীকৃতি হলো নামজারি। জমি রেজিস্ট্রির পরপরই এটি করা বাধ্যতামূলক, কারণ নামজারি সম্পন্ন না হলে সরকারিভাবে আপনি সেই জমির মালিক হিসেবে গণ্য হবেন না। কিন্তু অনেকেই অসতর্কতা বা সামান্য ভুলের কারণে নামজারি আবেদন বাতিলের মুখে পড়ছেন।

বিশেষজ্ঞদের মতে, নিচের ১০টি সাধারণ ভুল নামজারি বাতিলের প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়ায়—
১. দাগ নম্বরে ভুল
দাগ নম্বর জমির পরিচয় নির্ধারণের মূল উপাদান। দলিলে ভুল দাগ নম্বর থাকলে তা রেকর্ডের সঙ্গে মেলে না, ফলে নামজারি বাতিল হয়।
করণীয়: দলিল করার আগে খতিয়ান দেখে সঠিক দাগ নম্বর যাচাই করুন এবং ভুল থাকলে সংশোধন করুন।
২. চৌহদ্দি বা সীমানা বর্ণনায় ভুল
মৌজা, সাবেক মালিক, দাগ, চৌহদ্দি ইত্যাদিতে ভুল তথ্য থাকলে নামজারি হয় না।
করণীয়: অভিজ্ঞ দলিল লেখকের সহায়তায় দলিল প্রস্তুত করুন এবং প্রতিটি তথ্য ভালোভাবে যাচাই করুন।
৩. ভোটার আইডি ও দলিলের নামের অমিল
দলিল ও জাতীয় পরিচয়পত্রে নামের বানানে বা তথ্যের অমিল থাকলে আবেদন বাতিল হতে পারে।
করণীয়: দলিল ও ভোটার আইডির নাম এক কিনা যাচাই করে প্রয়োজনে সংশোধন করুন।
৪. মালিকানা ইতিহাসে ধারাবাহিকতার ভুল
সিএস, এসএ, আরএস রেকর্ড অনুযায়ী মালিকানা ইতিহাস সঠিকভাবে উল্লেখ না থাকলে নামজারি হয় না।
করণীয়: অন্তত ২৫ বছরের মালিকানা ধারাবাহিকতা যাচাই করে দলিলে সঠিকভাবে উল্লেখ করুন।
৫. খতিয়ান নম্বরে অমিল
দলিলে থাকা খতিয়ান নম্বর যদি সর্বশেষ রেকর্ডের সঙ্গে না মেলে, আবেদন বাতিল হয়।
করণীয়: সর্বশেষ রেকর্ড অনুযায়ী খতিয়ান নম্বর সঠিকভাবে দলিলে অন্তর্ভুক্ত করুন।
৬. জমি পূর্বে অন্যের নামে নামজারি হওয়া
একই জমি একাধিকবার বিক্রি হলে বা নির্ধারিত সীমার বাইরে বিক্রি করলে নামজারি বাতিল হয়।
করণীয়: কেনার আগে ভূমি রেকর্ড ও দাগ নম্বর যাচাই করে নিশ্চিত হন জমিটি আগেই অন্য কারও নামে নামজারি হয়নি।
৭. অর্পিত সম্পত্তি (Vested Property)
সরকারি নিয়ন্ত্রণাধীন বা অর্পিত সম্পত্তি ভুলবশত ব্যক্তিগত মালিকানা ভেবে বিক্রি করা হলে নামজারি হয় না।
করণীয়: ভূমি অফিসে গিয়ে দাগ অনুযায়ী জমির আইনগত অবস্থা নিশ্চিত করুন।
৮. খাস জমি অন্তর্ভুক্ত থাকা
ব্যক্তিগত জমির ভেতর খাস জমির অংশ থাকলে সেটিতে নামজারি হয় না।
করণীয়: জমির প্রতিটি অংশ খতিয়ান ও দাগ অনুযায়ী পরীক্ষা করে দেখুন।
৯. নদীভাঙন বা সরকারি খাস জমির অংশ থাকা
জমির কোনো অংশ যদি নদীভাঙনে পড়ে বা সরকারি খাস জমি হিসেবে চিহ্নিত হয়, তাতে নামজারি বাতিল হয়।
করণীয়: মাঠ পর্যায়ে গিয়ে জমির ভৌগোলিক ও আইনগত অবস্থা যাচাই করুন।
১০. ওয়ারিশানদের অংশের বাইরে জমি বিক্রি করা
ওয়ারিশানদের কেউ নিজের অংশের বেশি জমি বিক্রি করলে পরবর্তীতে ক্রেতা নামজারিতে সমস্যায় পড়েন।
করণীয়: বণ্টননামা ও ওয়ারিশ সনদ দেখে বিক্রেতার বিক্রয়ক্ষমতা নিশ্চিত করুন।
নামজারি বাতিল হলে করণীয়
১. সংশ্লিষ্ট এসিল্যান্ড অফিসে গিয়ে বাতিলের কারণ জেনে নিন।
২. ভুল সংশোধন করে নতুন করে আবেদন করুন।
৩. কোনো দালালের মাধ্যমে অর্থ দিয়ে কাজ করানোর চেষ্টা করবেন না।
৪. প্রয়োজনে উপজেলা ভূমি অফিস বা অভিজ্ঞ আইনজীবীর পরামর্শ নিন।
নামজারি শুধু কাগজ নয়, এটি জমির বৈধ মালিকানার সরকারিভাবে স্বীকৃতি। নামজারি না থাকলে ভবিষ্যতে জমির ওপর আপনার আইনি অধিকার হারানোর ঝুঁকি থাকে। তাই জমি কেনার আগে দলিল, দাগ, খতিয়ান ও মালিকানা ইতিহাস ভালোভাবে যাচাই করাই বুদ্ধিমানের কাজ।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।



