স্মার্টওয়াচ এখন আর শুধু সময় দেখার যন্ত্র নয়। এটি একদিকে যেমন ফ্যাশনের অংশ, তেমনি স্বাস্থ্য-সচেতনতা, ফিটনেস ট্র্যাকিং, এমনকি কাজের দক্ষতা বাড়াতেও বড় ভূমিকা রাখে। তবে বাজারে এত বৈচিত্র্যময় স্মার্টওয়াচ থাকার কারণে অনেকেই দ্বিধায় পড়ে যান-কোন স্মার্টওয়াচ আসলে নিজের জন্য উপযুক্ত হবে?
দাম, ফিচার, ব্যাটারি লাইফ, ডিজাইন-সব মিলিয়ে সঠিক ঘড়ি বেছে নেওয়া সহজ নয়। তাই কেনার আগে কয়েকটি বিষয় খেয়াল করলেই আপনার জন্য উপযুক্ত স্মার্টওয়াচ কিনতে পারবেন-
১. অপারেটিং সিস্টেম ও সামঞ্জস্যতা
প্রথমেই দেখতে হবে আপনার ফোনের সঙ্গে ঘড়িটি কতটা মানানসই। অ্যাপল ওয়াচ কেবল আইফোন ব্যবহারকারীদের জন্য। আইওএস এর সঙ্গে সবচেয়ে ভালোভাবে কাজ করে। গুগল ওয়্যারওএস অ্যান্ড্রয়েড ফোনের জন্য উপযুক্ত, তবে আইওএস এও সীমিতভাবে ব্যবহার করা যায়।
স্যামসাং গ্যালাক্সি ওয়াচ অ্যান্ড্রয়েড বিশেষ করে স্যামসাং ফোনের জন্য সবচেয়ে কার্যকর। হুয়াওয়ে, শাওমি বা অন্যান্য ব্র্যান্ড সাধারণত নিজেদের কাস্টম অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করে, তবে সেগুলোও অ্যান্ড্রয়েড ও আইওএস উভয়ের সঙ্গে কাজ করতে পারে। স্মার্টওয়াচ কেনার আগে নিশ্চিত হয়ে নিন সেটি আপনার ফোনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কি না।
২. স্বাস্থ্য ও ফিটনেস ফিচার
স্মার্টওয়াচের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ এখন স্বাস্থ্য ও ফিটনেস ট্র্যাকিং। হার্ট রেট মনিটর বেশিরভাগ ওয়াচেই এখন থাকে। SpO₂ সেন্সর রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা জানায়। ইসিজি কিছু প্রিমিয়াম ওয়াচে হৃদস্পন্দনের বৈকল্য শনাক্ত করতে পারে।
স্লিপ ট্র্যাকিং, স্টেপ কাউন্ট ও ক্যালোরি বার্ন প্রতিদিনের হাঁটা, দৌড়, ব্যায়াম ট্র্যাক করে। স্পোর্টস মোড-দৌড়, সাইক্লিং, সাঁতার, যোগাসন ইত্যাদির আলাদা অপশন থাকে। যদি আপনি স্বাস্থ্যসচেতন বা ফিটনেসপ্রেমী হন, তাহলে অবশ্যই এসব ফিচার সমৃদ্ধ ওয়াচ নিতে হবে।
৩. ব্যাটারি লাইফ
স্মার্টওয়াচ ব্যবহারের সুবিধা অনেকটাই নির্ভর করে ব্যাটারি লাইফের ওপর। অ্যাপল ওয়াচ বা গ্যালাক্সি ওয়াচ: সাধারণত ১-২ দিন চলে, কারণ এগুলোতে শক্তিশালী ফিচার বেশি থাকে।
ফিটনেস-কেন্দ্রিক ওয়াচ ব্যাটারি অনেক বেশি সময় ধরে চলে, অনেক সময় ৭-১৪ দিন পর্যন্ত। হাইব্রিড স্মার্টওয়াচ: ঘড়ির মতো দেখতে কিন্তু সীমিত স্মার্ট ফিচার থাকে; এগুলো সপ্তাহের পর সপ্তাহ চলতে পারে। যারা ঘন ঘন চার্জ দিতে চান না, তাদের জন্য দীর্ঘস্থায়ী ব্যাটারির ঘড়িই বেশি কার্যকর।
৪. ডিজাইন ও আরামদায়ক ব্যবহার
ঘড়ি তো শুধু প্রযুক্তির জন্য নয়, হাতের অলঙ্কারও বটে। ডিসপ্লে টাইপ অ্যামোলেড ডিসপ্লে উজ্জ্বল ও রঙিন হয়, এলসিডি সাধারণ মানের। সাইজ কারো কব্জি চিকন হলে ছোট ডায়াল মানাবে, আর বড় কব্জির জন্য বড় সাইজ ভালো।
ওজন ও স্ট্র্যাপ, দীর্ঘ সময় পরতে গেলে হালকা ঘড়ি এবং আরামদায়ক স্ট্র্যাপ জরুরি। ওয়াচ ফেস কাস্টমাইজেশন, যে ঘড়িতে বিভিন্ন ওয়াচ ফেস বদলানো যায় সেটিই ফ্যাশন সচেতনদের জন্য ভালো।
৫. স্মার্ট ফিচার
একটি স্মার্টওয়াচ কতটা স্মার্ট হবে, তা নির্ভর করে এর অতিরিক্ত ফিচারের ওপর। কল ও মেসেজ নোটিফিকেশন, হাতের কব্জিতেই ফোন কল রিসিভ বা মেসেজ দেখা। অফলাইন মিউজিক স্টোরেজ গান সংরক্ষণ করে ব্লুটুথ ইয়ারফোনে শোনা যায়।
জিপিএস ট্র্যাকিং করা যায়। দৌড় বা ভ্রমণের জন্য যা খুবই দরকারি। কন্টাক্টলেস পেমেন্ট অ্যাপল পে, গুগল পে, স্যামসাং পে-এগুলো ব্যবহার করতে পারলে অনেক সুবিধা হয়। ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্ট সুবিধা সিরি, গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট ব্যবহার করে ভয়েস কমান্ড দেওয়া যায়।
৬. বাজেট বিবেচনা
স্মার্টওয়াচের দাম ফিচারভেদে ব্যাপকভাবে ভিন্ন হয়। প্রিমিয়াম রেঞ্জ (অ্যাপল ওয়াচ, গ্যালাক্সি ওয়াচ, গারমিন) সাধারণত ৪০ হাজার থেকে লাখের কাছাকাছি হতে পারে। মিড-রেঞ্জ (অ্যামেজফিট, ফিটবিট, হুয়াওয়ে) ১২ থেকে ২০ হাজারের মধ্যে পাবেন।
এন্ট্রি-লেভেল (শাওমি, রিয়েলমি, নয়েজ ইত্যাদি) ৬ থেকে ১২ হাজার টাকার মধ্যে পাবেন। যারা হাই-এন্ড ফিচার চান তাদের প্রিমিয়াম রেঞ্জে যেতে হবে, তবে সাধারণ স্বাস্থ্য ও নোটিফিকেশন ব্যবহারের জন্য মিড-রেঞ্জও যথেষ্ট।
৭. টেকসই ও ওয়াটারপ্রুফিং
আইপি রেটিং দেখে নিন (যেমন IP67, IP68)। সাঁতার কাটা বা জিমের জন্য চাইলে ৫ ATM ওয়াটার রেজিস্ট্যান্ট ওয়াচ দরকার। স্পোর্টস ও অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমীদের জন্য শক-প্রুফ ও টেকসই ওয়াচ ভালো পছন্দ।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।