বিজ্ঞান ও প্রযক্তি ডেস্ক : আপেল তাদের আইফোন এবং অন্যান্য পণ্যের নকশা ও ফরম্যাটে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনতে প্রস্তুতি নিচ্ছে। বছরের পর বছর ধরে শুধুমাত্র সীমিত আপডেট প্রদান করার পর, নতুন ডিজাইন বাজারে এনে প্রবৃদ্ধি পুনরুজ্জীবিত করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে তারা।
আগামী বছর থেকে, আপেল একটি পাতলা আইফোন উন্মোচনের পরিকল্পনা করছে, যা বর্তমান মডেলের প্রায় ৮ মিলিমিটার প্রোফাইলের চেয়ে কম হবে। এই মডেলটি প্রো মডেলের চেয়ে সস্তা হবে এবং খরচ কমাতে সরল ক্যামেরা সিস্টেম থাকবে।
প্রতিষ্ঠানটি দুটি ভাঁজযোগ্য ডিভাইস তৈরির পরিকল্পনাও করছে। একটি বড় ডিভাইস, যা ল্যাপটপ হিসেবে কাজ করবে এবং খোলার পর প্রায় ১৯ ইঞ্চির ডেস্কটপ মনিটরের মতো বড় একটি স্ক্রিনে পরিণত হবে। অন্যটি একটি ছোট ডিভাইস, যা খোলার পর আইফোন ১৬ প্রো ম্যাক্সের চেয়েও বড় ডিসপ্লে প্রদান করবে এবং এটি একটি ভাঁজযোগ্য আইফোন হিসেবে কাজ করবে।
দুইটি ভাঁজযোগ্য ডিজাইনের উন্নয়ন দীর্ঘদিন ধরে চলছে, তবে কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপাদান প্রস্তুত ছিল না। ডিভাইসের ভাঁজ এবং খোলার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য হিঞ্জ এবং ভাঁজযোগ্য স্ক্রিন রক্ষাকারী নমনীয় কভার তৈরিতে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল।
বর্তমান ভাঁজযোগ্য ফোনগুলো যথেষ্ট পাতলা, হালকা বা শক্তি-দক্ষ নয়, যা আপেলের মান পূরণ করতে পারেনি। এ কারণেই আপেল এই সেগমেন্টে প্রবেশ করতে দেরি করেছে।
আপেলের পরিকল্পনার সাথে পরিচিত ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, আপেল ভিন্ন ডিজাইন নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছে, যেমন ভাঁজ করার সময় ডিভাইসের বাইরের অংশে ডিসপ্লে থাকা। তবে এখন তারা ভেতরের দিকে ভাঁজ হওয়া নকশা পছন্দ করছে।
প্রথমে আপেল বড় ডিভাইসটি বাজারে আনার পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে ভাঁজযোগ্য আইফোনটি আগে প্রস্তুত হবে। ২০২৬ সালে এটি উন্মোচনের জন্য আপেল কর্মকর্তারা কাজ করছেন। তবে, প্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জের কারণে আরও এক বছর সময় লাগতে পারে।
অপরদিকে, অতিপাতলা ফোনটি তাদের জন্য একটি বিকল্প হবে, যারা একটি চমৎকার নকশার ডিভাইস পছন্দ করেন এবং প্রো মডেলের কিছু ফিচার বাদ দিতে রাজি আছেন।
আপেলের একজন মুখপাত্র এই বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকার করেছেন।
আইফোন ব্যবসা, যা এখনও মোট রাজস্বের প্রায় অর্ধেক নিয়ে আসে, বিক্রির মন্দার মধ্যে রয়েছে। ২০২৪ অর্থবছরে এর রাজস্ব বৃদ্ধির হার ১% এরও কম। শেষবার বড় বিক্রির প্রবাহ এসেছিল ২০২১ সালে, যখন ক্যারিয়ারগুলো ৫জি নেটওয়ার্ক সমর্থনে আইফোনের জন্য ভর্তুকি দিয়েছিল।
টিএফ ইন্টারন্যাশনাল সিকিউরিটিজের বিশ্লেষক মিং-চি কুয়ো প্রথম দিকের বিশ্লেষকদের একজন, যিনি নতুন ডিভাইসের আসার ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন। তিনি বলেন, আপেলের কর্মকর্তারা নতুন ডিজাইন দ্রুত নিয়ে আসার জন্য চাপ দিচ্ছেন।
যদিও আপডেটগুলো বড় প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন নয়—অনেক প্রতিযোগী ইতিমধ্যে ভাঁজযোগ্য ডিভাইস তৈরি করছে—তবুও এগুলো আপেলের সাম্প্রতিক বছরের তুলনায় উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন।
শেষ বড় আইফোন রিডিজাইন হয়েছিল ২০১৭ সালে, যখন আইফোন এক্স উন্মোচিত হয়েছিল। সম্প্রতি প্রকাশিত আইফোন ১৬ সিরিজে আপেল হার্ডওয়্যার আপগ্রেডের পরিবর্তে তাদের নতুন এআই সিস্টেম, অ্যাপল ইন্টেলিজেন্স, এর ওপর বেশি মনোযোগ দিয়েছে।
তবে এই নতুন এআই ফিচার ধীরে ধীরে চালু হচ্ছে এবং এটি চাহিদা পুনরুজ্জীবিত করতে পারবে কিনা তা নিশ্চিত নয়।
ভাঁজযোগ্য ডিভাইস বিক্রির ক্ষেত্রে প্রতিযোগীদের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্যামসাং এবং হুয়াওয়ের মতো প্রতিদ্বন্দ্বীরা এখনো ভাঁজযোগ্য ফোনকে মূলধারার ডিভাইস হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি।
ইতিহাস বলছে, নতুন হার্ডওয়্যার ডিজাইন আপেলের বিক্রয় প্রবৃদ্ধির মূল চালক। দশ বছর আগে, বড় আকারের আইফোন ৬ প্লাস বাজারে এনে তারা একটি প্রবৃদ্ধির তরঙ্গ তৈরি করেছিল।
আইফোনের বাইরে নতুন পণ্যেও আপেল প্রবৃদ্ধির সুযোগ খুঁজছে। এ বছর তারা প্রায় এক দশকের মধ্যে প্রথম নতুন ধরণের পণ্য, ভিশন প্রো, উন্মোচন করেছে। এটি একটি ভার্চুয়াল রিয়েলিটি হেডসেট, যার দাম ৩৪৯৯ ডলার। তবে উচ্চ মূল্যের কারণে এর বিক্রি ধীরগতিতে চলছে।
ভিশন প্রোর জন্য আপেল একটি নতুন সংস্করণ তৈরির পরিকল্পনা করছে। একটি পরিকল্পনা আইফোনের চিপ ব্যবহার করে হেডসেট চালানোর, যা এর খরচ কমাতে পারে। কিন্তু প্রাথমিক পরীক্ষাগুলোতে দেখা গেছে, আইফোনের চিপ কিছু অ্যাপ্লিকেশন চালানোর জন্য যথেষ্ট শক্তিশালী নয়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।