জুমবাংলা ডেস্ক : সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা ভাতা পাওয়ার ক্ষেত্রে শিথিল হলো আয়ের সীমা। নতুন নীতিমালা অনুযায়ী বছরে ১২ হাজার নয় বরং ১৫ হাজার টাকার কম আয় করা বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা নারীরা ভাতার আওতায় আসবেন।
এছাড়া সেবা আমদানি ও রপ্তানির বিধানযুক্ত করে আমাদনি ও রপ্তানি আইন ২০২৪ এর নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে তার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বৈঠকের পর মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, আয়ের সীমা শিথিল করে বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা ভাতা কর্মসূচি বাস্তবায়ন নীতিমালা-২০২৪ এর খসড়া অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
মাহবুব হোসেন আরও বলেন, সরকারের একটি খুব বড় সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি হলো বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা ভাতা কর্মসূচি বাস্তবায়ন। এটি প্রধানমন্ত্রী ১৯৯৮-৯৯ সালে শুরু করেন। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এসে ২৫ লাখ ৭৫ হাজার বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তাকে ভাতা দেওয়া হচ্ছে। তাদের মাসিক ৫৫০ টাকা করে ভাতা দেওয়া হয়।
এখন সেই নীতিমালায় কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আগের নীতিমালায় কারা ভাতা পাবেন সেই যোগ্যতার ক্ষেত্রে বলা ছিল- তার ব্যক্তিগত বাৎসরিক আয় ১২ হাজার টাকার নিচে হতে হবে। এখন টাকার পরিমাণটা বাড়িয়ে ১৫ হাজার টাকা করা হয়েছে। অর্থাৎ বছরে যাদের ১৫ হাজার টাকার কম আয় করেন তারা ভাতার আওতায় আসবেন।
এছাড়া মন্ত্রিসভার বৈঠকে নতুন নীতিমালায় মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের মাধ্যমে ভাতা দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, জিটুপি (সরকার থেকে ব্যক্তি) ভিত্তিতে এ ভাতা পরিশোধ করা হবে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আগে পরীক্ষামূলকভাবে ম্যানেজমেন্ট নেটওয়ার্ক সিস্টেমের মাধ্যমে অনলাইনে বাছাইয়ের যে ব্যবস্থা করা হয়েছিল সেটি এই নীতিমালায় প্রাতিষ্ঠানিক করণ করা হয়েছে। অনলাইনে আবেদন নেওয়া হবে এবং অনলাইনে বাছাই প্রক্রিয়া চলবে। ওখানে একটা যাচাই-বছাই সিস্টেম থাকবে, যাচাই-বাছাইয়ে যারা নির্বাচিত হবেন তারাই ভাতা পাবেন।
অপরদিকে সেবা অন্তর্ভুক্ত করে ‘আমদানি ও রপ্তানি আইন-২০২৪’ এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। নতুন আইন অনুযায়ী, সেবা আমদানি ও রপ্তানির ক্ষেত্রে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন লাগবে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আমদানি ও রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ ও নিষিদ্ধকরণের ১৯৫০ সালের আইন আছে। পুরোনো আইনগুলো পর্যায়ক্রমে যুগোপযোগী করার নির্দেশনা আছে। এজন্য নতুন আইনের খসড়া করা হয়েছে। নতুন আইনে অন্যান্য পণ্যের সঙ্গে সেবা আমদানি ও রপ্তানি নীতিমালার আওতায় আনা হয়েছে। সেবা কী এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, সেবার সংজ্ঞা বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সংজ্ঞায় (ডব্লিউটিও) যা বলা আছে তাই। বিস্তারিত এ সংক্রান্ত বিধিমালায় বলা থাকবে। তবে সেবা অনেক আগ থেকেই রপ্তানি হচ্ছে; কিন্তু তা আইনে ছিল না। নতুন করে আইনে যুক্ত করা হয়েছে।
কর্মকর্তাদের বদলির আদেশ যেন বাস্তবায়ন হয় সে বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন। একজন সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। একজন সাংবাদিকের প্রশ্ন ছিল প্রশাসনের কর্মকর্তাদের বদলি একটি রুটিন কাজ। কিন্তু গত এক বছরের ডাটা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে শতাধিক কর্মকর্তা বদলি করার পরেও তারা নতুন কর্মস্থলে যাননি এবং তদবির করে বদলী আদেশ স্থগিত অথবা পরিবর্তন করেছেন এবং এই প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে। সেক্ষেত্রে প্রশাসনের চেইন অব কমান্ডটা ভেঙে পড়ছে বলে অনেকে মনে করছেন।
আপনি কি মনে করেন? এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, বদলি আমাদের প্রশাসনের একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। বদলির আদেশ হলে বদলিকৃত কর্মস্থলে তাকে যেতেই হবে, এটাই নিয়ম। এটা সর্বাত্মকভাবে অনুসরণ করব, এটাই প্রত্যাশা এবং এটি আমরা সবসময় এস্টাবলিস্ট করে থাকি। কখনো কখনো ব্যতিক্রমী কিছু ঘটনাও ঘটে।
সচিব আরও বলেন, আমি উদাহরণ দিতে পারি আমি নিজেও অনুরূপ একটি কেইস হ্যান্ডেল করছি। হাজব্যান্ড এবং ওয়াইফ এক জায়গায় ছিল। একজনকে বদলি করে দিয়েছে। ওরা দুজনে আমার কাছে এসে তাদের বদলিটা ক্যানসেলের অনুরোধ করেছেন। ওরা দুজনই এক জায়গায় থাকতে চাচ্ছে। আমি তখন নারী কর্মকর্তাকে বলেছি, তোমার হাজব্যান্ডকে যেখানে বদলি করা হয়েছে তাকে সেখানে যেতেই হবে। আমি তোমাকে সেখানে পোস্টিং করিয়ে দিতে পারি। তোমার হাজব্যান্ডের বদলি আদেশ বাতিল করা যাবে না।
তিনি বলেন, কেউ যদি উদ্দেশ্যমূলকভাবে বা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ঠেকানোর চেষ্টা করেন, সেটি হলো গর্হিত কাজ। অনেক সময় আমার নিজের চাকরি জীবনে দেখেছি, বদলি করেছেন কিন্তু ওখানকার যে কর্মকর্তা হয়ত মনে করছেন আরও কিছুদিন আমাদের সঙ্গে থাকুক তার সার্ভিস ভালো। ভালো খারাপ দুটোই হতে পারে। তারা আরো কিছুদিন রাখতে চায়। এটি কিন্তু আমাদের প্রশাসনিক কার্টেসির একটি অংশ।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, যখন সিনিয়র অফিসার কিছুদিন চায় তখন আমরা কিছুদিন রেখে দিই; কিন্তু এটার অর্থ এই নয় যে তাকে বদলি করা যাবে না, বদলি অবশ্যই তাকে করতে হবে। সে তো স্থায়ী থাকতে পারে না।
তিনি আরও বলেন, এখন আমরা যে কাজটা করার চেষ্টা করছি জনপ্রশাসনের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে, বদলির আদেশ হলে সেটি যেন বাস্তবায়ন হয়। যদি কোনো বিশেষ যুক্তি থাকে, কোনো পরিস্থিতি থাকে, সেটি বিবেচনা পরবর্তী সময়ে করা হবে, তবে অবশ্যই এমন না যে সবার বদলি ঢালাওভাবে বিশেষ বিবেচনায় নেওয়া হবে। বাস্তবতা যদি থাকে, প্রয়োজন যদি থাকে, সেটি বিবেচনা করতেই হবে। এটা নিয়ে তো বিতর্ক করার কিছু নেই। এতে চেইন অব কমান্ড ভেঙে পড়ার কী আছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।