জুমবাংলা ডেস্ক : নদীর বুকে চর। সেই চরের তিন দিকে পানি। মাঝখানে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপূর্ব লীলাভূমি। আছে ইকো পার্কও।
পার্কের মধ্যেই চোখ জুড়ানো লেক। আছে বিশ্রামাগার। ঝালকাঠির কাঁঠালিয়া উপজেলায় বিশখালী নদীর তীরে জেগে ওঠা চরটি ‘ছইলার চর’ নামে পরিচিত। আয়তন ৬১ একর। প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো ছইলাগাছের আধিক্য থাকায় এমন নাম।
ছইলা একটি লবণসহিষ্ণু বন্য প্রজাতির বৃক্ষ। বৈজ্ঞানিক নাম Sanneratia Caseolaris। টকজাতীয় ছইলার ফল কাঁচা, পাকা ও রান্না করা অবস্থায় খাওয়া যায়। এই গাছের শিকড় মাটির অনেক গভীরে প্রোথিত বলে ঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে ভেঙে কিংবা উপড়ে যায় না। ছইলা ছাড়াও এখানে রয়েছে কেয়া, হোগল, মাদারসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ। গাছে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি শালিক, ডাহুক আর বকের সারি। চরে কোনো হিংস্র প্রাণী না থাকায় এবং অপেক্ষাকৃত নিরাপদ ও সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে সারা বছরই ভ্রমণপিপাসুদের ভিড় থাকে।
২০১৫ সালে ছইলার চরকে পর্যটন স্পট হিসেবে চিহ্নিত করে এর উন্নয়নে কাজ করছে জেলা প্রশাসন। চরের একদিকে ২০ একর জায়গাজুড়ে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে ডিসি ইকো পার্ক। পার্কের মধ্যে রয়েছে একটি নয়নাভিরাম লেক। এর মধ্যে ছইলার চরে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে তৈরি হয়েছে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত দুটি রেস্ট হাউস।
ঝালকাঠি জেলা শহর থেকে ছইলার চরের দূরত্ব ৪০ কিলোমিটার। সড়ক ও নৌপথে প্রতিদিনই শত শত মানুষ যাচ্ছে ছইলার চরের নৈসর্গ দেখতে। শীতে বিভিন্ন জেলা থেকে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা পিকনিক করতে আসে এখানে। এ ছাড়া পরিবার-পরিজন নিয়েও প্রতিবছর এই চর ভ্রমণে আসে অসংখ্য মানুষ। চরকে কেন্দ্র করে কয়েক শ মানুষের কর্মসংস্থানও হচ্ছে। গত শনিবার ছইলার চরে গিয়ে দেখা যায়, অনেকেই গোসল সারছে নদীতে। বোটে চরে আনন্দে ঘুরে বেড়াতেও দেখা যায় অনেককে। কেউ এসেছেন পরিবার নিয়ে, কেউ আবার বন্ধুদের নিয়ে পিকনিকে। তাদের একজন মিজানুর রহমান মুবিন। বলেন, ‘এখানে প্রায়ই ঘুরতে আসি। তিন দিকে পানি, মাঝখানে চর। সূর্যাস্তের সময় অপূর্ব দৃশ্য দেখা যায়। ’
সহকর্মীদের সঙ্গে ছইলার চরে ঘুরতে এসেছিলেন একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার কর্মকর্তা মেহের আফরোজ মিতা। বললেন, ‘ঝালকাঠি জেলায় এত সুন্দর একটি স্থান রয়েছে জানতাম না। এখানে নদী আর বনের সৌন্দর্য উপভোগ করা যায় একসঙ্গে। ’ পাশেই বিশ্রাম নিচ্ছিলেন বরগুনার বাসিন্দা প্রবাসী মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, ‘আমি বিদেশে বসে ছইলার চরের বিষয়ে জেনেছি। দেশে ফিরে কিছুদিন পর এখানে এলাম পরিবার নিয়ে। অনেক ভালো লাগল। ’ স্থানীয় বাসিন্দা সাগর আকন বলেন, “এখানে আগে তেমন কিছু ছিল না। এখন বসার জন্য বেঞ্চ, দোলনা, টয়লেট, খাবার ও বিশুদ্ধ পানি রয়েছে। ইউএনও স্যার ছইলার চরে ‘আশার আলো যুবসমাজ কল্যাণ সমবায় সমিতি’ করে দিয়েছেন। স্কুল ও কলেজ পড়ুয়া ছাত্ররা এই সংগঠনের সদস্য। সাধারণ পর্যটকদের গাইড হিসেবে কাজ করে তারা। প্রতিদিন এখানে চার-পাঁচ শ মানুষ ঘুরতে আসে। ”
কাঁঠালিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুফল চন্দ্র গোলদার বলেন, ‘বিনোদনকেন্দ্র হিসেবে ছইলার চর আদৃত হচ্ছে পর্যটকদের কাছে। চরটিকে আধুনিক পর্যটনকেন্দ্রে রূপান্তর করতে এর মধ্যেই পর্যটন মন্ত্রণালয়ে এক কোটি ৩০ লাখ টাকার একটি প্রজেক্ট পাঠানো হয়েছে। ’ ঝালকাঠির জেলা প্রশাসক জোহর আলী বলেন, ছইলার চরকে আকর্ষণীয় করতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।