পবিত্র কোরআন শরীফ অবমাননার অভিযোগে অপূর্ব পাল নামে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
শনিবার (৪ অক্টোবর) মধ্যরাতে রাজধানীর একটি আবাসিক এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ভাটারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাকিবুল হাসান। তিনি বলেন, পবিত্র কোরআন শরীফ অবমাননার অভিযোগে অপূর্ব পালকে গ্রেপ্তার করে থানায় আনা হয়েছে।
তার বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়েছে, তাকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে তদন্ত চলছে।
এর আগে শনিবার সকালে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে ওই শিক্ষার্থী কোরআন শরীফ অবমাননা করেন বলে অভিযোগ ওঠে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ জানালে প্রশাসন দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং অভিযুক্ত শিক্ষার্থীকে ক্যাম্পাস থেকে বের করে দেয়।
এ ঘটনার কিছু ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। অভিযোগ রয়েছে, অভিযুক্ত শিক্ষার্থী নিজেও তার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে ওই ভিডিও আপলোড করেন। পরে রাতেই উত্তেজিত একদল শিক্ষার্থী ও স্থানীয় বাসিন্দা তার বাসার নিচে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে অপূর্ব পালকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়।
অপূর্বকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক আসিফ বিন আলী এবং অপূর্বের বাসার মালিক নাশীদ ধ্রুব। তারা উভয়েই বলছেন, অপূর্ব মাদকাসক্ত এবং মানসিক সমস্যায় ভুগছেন।
আসিফ বিন আলীর ফেসবুক পোস্টটি পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হল:
নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অপূর্ব পাল একজন ধর্মান্তরিত মুসলমান। তিনি আমার ছাত্র ছিলেন। ২০২৩ সালের শেষের দিকে তিনি ধর্ম পরিবর্তন করে ইসলাম গ্রহণ করেন, নাম পরিবর্তন করেন, এবং নিয়মিত ধর্ম পালন করতেন। তিনি আমার ক্লাস করেছেন জোব্বা পরে, মাথায় পাগড়ি দিয়ে।
দুঃখজনকভাবে, ছেলেটি পরবর্তীতে ড্রাগে আসক্ত হয়ে পড়ে এবং মানসিক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ২০২৪ সালের শুরুর দিকে ক্যাম্পাসে প্রায়ই অদ্ভুত আচরণ করত। (অদ্ভুত আচরণের নমুনা দেই, সে এনএসউ ও বসুন্ধরার মসজিদে গিয়ে মানুষকে টুপি না পরলে কিংবা টাকনুর উপর কাপড় না পরলে বকা ঝকা করতো)। এই সব নিয়ে ক্যাম্পাসে ভিন্ন ধর্মের একাধিক ছেলে মেয়ের সাথে ওর ঝামেলা হয়। তার বৃদ্ধ মা তাকে সুস্থ করার জন্য অনেক চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু পারেননি। ২০২৪ সালে তিনি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ড্রাগ আসক্তি ও অস্বাভাবিক আচরণের কারণে বহিষ্কৃত হন।
যদি আমি ভুল না বলি, তবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তার মানসিক স্বাস্থ্যের অবস্থা এবং পরিবারের সংগ্রামের বিষয়টি বিবেচনা করে তাকে পুনরায় পড়াশোনার সুযোগ দিয়েছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে, ছেলেটির ড্রাগ সমস্যা কিংবা মানসিক সমস্যা— কোনোটিরই যথাযথ চিকিৎসা হয়নি।
আমি জানি না, তার সাম্প্রতিক আচরণের পর আর কী বলব, শুধু এটুকু বলতে পারি—সে যা করেছে, তা মানসিকভাবে অসুস্থ অবস্থায় করেছে। কাজটি অতি অন্যায় ও ঘৃণিত। কিন্তু বিষয়টি কোন বড় ষড়যন্ত্র নয়, একজন মানুষিক রোগীর কাজ। এটি বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা তাকে চিনতেন, সবাই জানেন। এখন সবচেয়ে জরুরি হলো তাকে দ্রুত পুনর্বাসন কেন্দ্রে (রিহ্যাব) পাঠানো।
নাশীদ ধ্রুব’র ফেসবুক পোস্টটি পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হল:
নর্থ সাউথের বহু আলোচিত ছেলেটা মানে অপূর্ব রাদ’কে আমি বেশ ভালোভাবে চিনি। এই ছেলে এবং তার মা আমাদের বাসায় ভাড়া ছিল। জাস্ট গত মাসেই বেশ ঝামেলা করে এদেরকে বাড়ি থেকে বের করেছি।
ছেলেটার মা শিক্ষিত মহিলা, ব্যাংকে ভালো পোস্টে জব করতেন। ছেলেটার বাবা নেই। যতটুকু জানি ছেলেটার বাবা ছিলেন মুসলিম আর মা প্রাকটিসিং হিন্দু। এই সমস্ত বিষয় নিয়ে হয়তো ছেলেটার মানসিক সমস্যা ছিল।
প্রায়ই এই ছেলে রাত ২/৩ টার সময় বের হওয়ার জন্য বাসার দারোয়ানের সাথে ঝামেলা করতো। বিষয়টা হাতাহাতির পর্যায়েও গিয়েছিল। যেহেতু, আমরা বরিশালে থাকি, তাই সহজে সমস্যার সমাধান করা সম্ভব ছিল না। বারবার নোটিশ দেয়ার পরেও এই ছেলের মা নানাভাবে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করে বাসায় থাকতে চেয়েছিল। গত মাসের শুরুতে এই ছেলে তার মায়ের সাথে ঝামেলা করে আমার বাসায় ভাঙচুর করে, তারপর আমি ঢাকা যাই এদের পার্মানেন্টলি নামিয়ে দেয়ার জন্য।
এই ছেলের একটা বিড়াল আছে। কালো বিড়াল, খুব সুন্দর। ঢাকা গিয়ে আবিস্কার করি এরা কেউ বাসায় নাই, ফোন করি ফোন রিসিভ করে না..। পরে অনেক ঝামেলা করে জানতে পারলাম, এরা ময়মনসিংহ গেছে। বিড়ালটা বাসায়। বিড়ালটাকে বাথরুমে আটকে রেখে গেছে, ঐ বাথরুমে বাতিও নাই। আমি একরাত অপেক্ষা করলাম। পরেরদিন সকালেও যখন মহিলা আসলো না, তখন স্পেয়ার চাবি দিয়ে বিড়ালটাকে বাথরুম থেকে উদ্ধার করে খাবার দেই। মহিলাকে ফোন করে বলেছিলাম, ওয়েলফেয়ার সোসাইটিতে কম্প্লেইন করবো..। কেন করিনি, তা ভেবে এখন আফসোস হচ্ছে। ঐ মহিলা ফিরেছিল ৪ দিন পর অর্থাৎ আমি ইন্টারফেয়ার না করলে ঐ বিড়ালটা অভুক্ত অবস্থায় ৪ দিন অন্ধকার বাথরুমে আটকে থাকতো।
দারোয়ান থেকে শুরু করে বিল্ডিংয়ের অন্যসব টেনেন্ট— সবাই বলেছিল, ছেলেটা অ্যাডিক্টেড। রিসেন্ট কর্মকান্ড দেখে মনে হচ্ছে, মানসিকভাবে অসুস্থ। দ্রুত পুলিশের দ্বারস্থ হওয়া দরকার আর নাহলে এই ছেলে সামনে আরও বড় কোন ঝামেলা করবে কিংবা ঝামেলায় পড়বে..।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।