২০২৫ সালের জুন মাসে একটি ইনস্টাগ্রাম রিল ভাইরাল হওয়ার পর থেকেই ‘বেবিডল অর্চি’ নামে একটি প্রোফাইল সামাজিক মাধ্যমে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে আসে। তবে কিছুদিনের মধ্যেই জানা যায়, প্রোফাইলটি ছিল সম্পূর্ণ ভুয়ো এবং একটি গভীর ষড়যন্ত্রের ফল।
কীভাবে শুরু?
২০২০ সালের আগস্টে ‘বেবিডল অর্চি’ নামে ইনস্টাগ্রামে একটি প্রোফাইল তৈরি হয়। সেখানে একজন তরুণীর ছবি ও রিল পোস্ট হতে থাকে, যেগুলো ক্রমশ সাহসী হয়ে ওঠে। প্রথমদিকে কেউ কেউ বুঝতে পারলেও যে এটি একটি ফেক অ্যাকাউন্ট, সময়ের সঙ্গে কৃত্রিম মেধা ও ডিপফেক প্রযুক্তির অগ্রগতির কারণে অধিকাংশ মানুষই বিশ্বাস করতে শুরু করেন এটি একটি আসল প্রোফাইল।
ভাইরাল রিল ও জনপ্রিয়তা
২০২৫ সালের জুনে কেট লিনের ‘ড্যাম উন গ্র’ গানে একটি রিল ভাইরাল হলে ‘বেবিডল অর্চি’র অনুরাগী সংখ্যা হু হু করে বাড়তে থাকে। মাত্র কয়েক দিনের ব্যবধানে ইনস্টাগ্রামে ফলোয়ার সংখ্যা ১৩ লক্ষ ছাড়িয়ে যায়।
এরপর ইনস্টাগ্রাম প্রোফাইলটি থেকে আমেরিকার পরিচিত পর্ন তারকা কেন্দ্রা লাস্টের সঙ্গে একটি ছবি পোস্ট করে লেখা হয় প্রেরণাদায়ী বার্তা, যা নেটিজেনদের আরও চমকে দেয়। ফলস্বরূপ, বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে শুরু হয় তুমুল আলোচনা।
ডিপফেক ভিডিও ও বাস্তব সত্য
এরপর থেকেই একের পর এক আপত্তিকর ভিডিও, সাবস্ক্রিপশন ভিত্তিক কনটেন্ট, সাহসী ছবি প্রকাশ হতে থাকে। কিন্তু হঠাৎই জানা যায়, এই প্রোফাইলের আসল অর্চিতা ফুকনের সঙ্গে কোনও সম্পর্ক নেই। তিনি একজন সাধারণ তরুণী, যিনি নিজেও জানতেন না তাঁর নামে এমন একটি অ্যাকাউন্ট চালু রয়েছে।
পুলিশ তদন্ত ও প্রতারক গ্রেফতার
অর্চিতার ভাই ডিব্রুগড় থানায় অভিযোগ দাখিল করলে তদন্তে নামে পুলিশ। সাইবার বিশেষজ্ঞদের সহায়তায় ধরা পড়ে প্রতিম বোরা নামের একজন মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার, যিনি অর্চিতার প্রাক্তন প্রেমিক ছিলেন। তিনি অর্চিতার মুখ এআই টুল ব্যবহার করে মডিফাই করে ‘বেবিডল অর্চি’ নামে এই ফেক প্রোফাইলটি ৫ বছর ধরে চালাচ্ছিলেন।
তদন্তে উঠে এসেছে, প্রতিম ওই ভুয়ো প্রোফাইল থেকে নানা উপায়ে অর্থ উপার্জনও করেছেন। আপত্তিকর ভিডিও ও ছবি বিক্রি করে লক্ষাধিক টাকা আয় করেন তিনি।
উদ্দেশ্য ছিল সম্মানহানি
পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে প্রতিম স্বীকার করেছেন, বিচ্ছেদের পর রাগ ও মানসিক হতাশা থেকে তিনি এই প্রতারণামূলক কাজ করেন। বর্তমানে তিনি পুলিশ হেফাজতে রয়েছেন এবং তাঁর বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির প্রাসঙ্গিক ধারায় মামলা দায়ের হয়েছে।
সমাজের জন্য সতর্কবার্তা
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ঘটনা ডিপফেক ও কৃত্রিম মেধা প্রযুক্তির অপব্যবহারের একটি ভয়ঙ্কর দৃষ্টান্ত। মাত্র কয়েকটি ছবির মাধ্যমেই তৈরি হয়ে যেতে পারে এমন প্রোফাইল, যা একজন নিরপরাধ মানুষের জীবনে চরম বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।
তাই প্রয়োজন আরও শক্তিশালী আইন, সাইবার নিরাপত্তা ও সামাজিক সচেতনতা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।