লাইফস্টাইল ডেস্ক : বর্তমান সময়ে সবচেয়ে আলোচিত টার্মগুলোর একটি হলো জেনজি বা জেনারেশন জেড। ১৯৯৭ থেকে ২০১২ সালের ভেতর যাদের জন্ম, তারাই হলো জেনজি। তাহলে ২০২৪ সালের হিসেবে সবচেয়ে বড় জেনজি সদস্যের বয়স ২৭, আর সর্বকনিষ্ঠ জনের চলছে ১২ বছর।
প্রশ্ন জাগে, জেড যেহেতু ইংরেজি বর্ণমালার শেষ বর্ণ, তাহলে জেনারেশন ওয়াই, এক্স এসবও নিশ্চয়ই আছে। এরা কারা!
জেনারেশন জেড বা জি প্রজন্মকে আইজেন বা ইন্টারনেট জেনারেশন, হোমল্যান্ড জেনারেশন, নেট জেন, ডিজিটাল নেটিভস, প্লুরালস, জেন টেক, জুমারস ইত্যাদি নামেও ডাকা হয়। হাতের মুঠোয় স্মার্টফোন ও ইন্টারনেট নিয়ে বড় হওয়াতেই এমন নামকরণ।
অন্যদিকে বোতাম টেপা মুঠোফোন দিয়ে যাদের কৈশোর-তারুণ্য শুরু, তারা হলেন জেনারেশন ওয়াই বা মিলেনিয়ালস বা সহস্রাব্দ প্রজন্ম। ইন্টারনেট ঘেঁটে জানা যায়, এদের জন্মকাল আনুমানিক ১৯৮১ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত। এবং এদের বর্তমান বয়স ২৮ থেকে ৪৩ বছর। মজার বিষয় হচ্ছে, এদের বলতে গেলে সবাই জেনজিদের মা-বাবা কিংবা বড় ভাইবোন।
মিলেনিয়ালদের আচরণে আড়ষ্টতা বেশি থাকে; নতুন কিছু গ্রহণের ক্ষেত্রে তারা অনেক দ্বিধায় ভোগে। অন্যদিকে জেনজিরা নিজেদের অভিমত প্রকাশের ক্ষেত্রে অনেক বেশি স্বতঃস্ফূর্ত। দিনের একটা বড় সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কাটিয়ে এরা নিজেদের ২৪/৭ ‘আপডেটেড’ রাখে।
ফ্যাশনের ক্ষেত্রেও আরাম আর স্বাচ্ছন্দ্যকে অগ্রাধিকার দেয় জেনজিরা। মিলেনিয়াল যুগের স্কিনি প্যান্টস, বডিকন আর হাই ওয়েস্ট জিন্স ছেড়ে নিজেদের শরীরের মাপের চেয়েও বড় (ওভারসাইজ) আর ঢিলেঢালা পোশাকে ‘ফ্লেক্স’ করতে দেখা যায় এই প্রজন্মের সদস্যদের।
মরচে ধরে যাওয়া ট্রাঙ্কে পড়ে থাকা দাদী-নানীর পুরনো শাড়িকেই মানানসই অনুষঙ্গ দিয়ে গায়ে জড়িয়ে ফিউশন সৃষ্টিতে সক্ষম জেনজি তরুণীরা।
পোশাকের রঙের ক্ষেত্রেও কোনো নিয়ম মানা হয় না। মিলেনিয়াল আমলে গোলাপি শুধুই মেয়েদের রঙ হিসেবে বিবেচিত হতো। অথচ এখন গোলাপি হয়ে উঠেছে ছেলেমেয়ে উভয়ের পোশাকের রঙ। ইউনিসেক্স বা লিঙ্গ নিরপেক্ষ পোশাকের প্রচলনকে জেনজিদের অন্যতম অবদান হিসেবে বিবেচনা করে থাকেন ফ্যাশন বিশেষজ্ঞরা।
বাহ্যিকভাবে মিলেনিয়াল আর জেনজিদের পৃথক করার মজার কিছু উপায় বের করেছেন নেটিজেনরা। এমনই একটি হলো সক থিওরি বা মোজা তত্ত্ব। গত বছরের নভেম্বরে সোশ্যাল মিডিয়া সাইট টিকটকে ফিটনেস পডকাস্টার ফিবি পারসনস জানান কীভাবে পায়ের গোড়ালি দেখেই দু’টি প্রজন্মকে আলাদা করা যায়!
মিলেনিয়ালদের মোজা পায়ের গোড়ালিতে এসে থেমে যায়। অর্থাৎ তাদের মোজার উচ্চতা পায়ের গোড়ালি পর্যন্তই। এমনকি অনেক সময় তারা নিজেদের ‘মিলেনিয়াল সকস’ পরে থাকলেও তা দেখাতে দিতে চান না। অন্যদিকে জেনজিরা সব সময় মোজা দেখিয়েই পোশাক পরেন এবং সে মোজার উচ্চতাও হয় বেশি। লম্বা এবং দৃশ্যমান এই মোজার নাম দেওয়া হয়েছে, ‘জুমার সকস’।
জেনজিদের মধ্যে জিন্স প্যান্ট কেনার প্রবণতাও হ্রাস পেয়েছে। ক্রপড টিশার্ট আর ঢোলা ট্রাউজারেই নিজেদের ফ্যাশনিস্তা হিসেবে ফুটিয়ে তুলছে তারা।
তবে অতীতের অনেক ফ্যাশন কিন্তু আবার ফিরেও এসেছে জেনজিদের হাত ধরে। ফরমাল, ক্যাজুয়াল, পাঙ্ক-যেকোনো স্টাইলেই জেনজি ফ্যাশনিস্তারা ভিনটেজ ধারা ফুটিয়ে তুলছে। তালিকায় রয়েছে আশি ও নব্বই দশকের ফ্লানেল শার্ট, ব্যাগি জিনস, ওভাল সানগ্লাস, গ্রাফিক বা স্লোগান টি-শার্ট, মম জিনস, ব্যাগেট হ্যান্ডব্যাগ ইত্যাদি। ফ্যাশন উইকগুলোর পর লেপার্ড প্রিন্ট নিয়েও নতুন করে উন্মাদনা দেখা যাচ্ছে।
এতসব বৈপরীত্যের মাঝে একটি ক্ষেত্রে কিন্তু জেনজি আর মিলেনিয়ালদের মিল রয়েছে। দুই প্রজন্মই ফ্যাশনের চলতি ধারা জানতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের শরণাপন্ন হয়ে থাকে। এ বছরের শুরুতে ভোগ বিজনেসের করা এক প্রতিবেদনে উঠে আসে, আমেরিকাতে ৭৭ শতাংশ জেনজি এবং ৭৯ শতাংশ মিলেনিয়াল ফ্যাশন ট্রেন্ড এবং নতুন আসা ব্র্যান্ডগুলো সম্পর্কে জানার জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নজর রাখে। এ ছাড়া ফ্যাশন ইনফ্লুয়েন্সাররাও জুমারদের কাছে স্টাইলের বড় অনুপ্রেরণা।
তথ্যসূত্র: ভোগ বিজনেস
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।