স্পোর্টস ডেস্ক : লুসাইল স্টেডিয়ামের ফাইনালের আগে আর্জেন্টিনার লিওনেল মেসি এবং ফ্রান্সের কিলিয়ান এমবাপের নাম ঘুরে ফিরে আসছিল এবং তারা প্রমাণ করেছেন কেন এই ম্যাচটিকে মেসি বনাম এমবাপে লড়াই বলা হচ্ছিল।
তবে দিন শেষে আরও একটি নাম এসেছে, আর্জেন্টিনার এমিলিয়ানো মার্টিনেজ।
জমজমাট উত্তেজনা, একের পর এক মোড় ঘোরানো এবং আবেগে পূর্ণ ১২০ মিনিটের খেলার পর এই ম্যাচটিতে ৩-৩ গোলে সমতায় ছিল দুই দল।
পেনাল্টিতে ঠিক হবে কার হাতে উঠবে ফুটবলের সবচেয়ে বড় পুরস্কার।
আর্জেন্টিনার হয়ে যারা স্পটকিক নিয়েছেন তারা ভুল করেননি, তবে ফ্রান্সকে ভুল করতে বাধ্য করেছেন আর্জেন্টিনার গোলকিপার এমিলিয়ানো মার্টিনেজ। তিনিই মূলত ফরাসীদের হৃদয় ভাঙ্গেন শেষ পর্যন্ত।
ম্যাচে কিলিয়ান এমবাপে দুটি পেনাল্টি পেয়েছিলেন, দুটিতেই গোল করেছেন বিশ্বকাপের গোল্ডেন বুটজয়ী ফরোয়ার্ড। টাইব্রেকারেও তিনি মিস করেননি। যদিও এমবাপের জোরালো শটেও হাত ছুঁইয়েছেন মার্টিনেজ কিন্তু সেটি ঠেকাতে পারেননি। এরপর অ্যাস্টন ভিলার কিপার ছিলেন আর্জেন্টিনার নায়ক।
কিংসলে কোমানকে ঠেকিয়েছেন ডানদিকে ঝাঁপ দিয়ে।
এরপর তিনি মুখের কথা দিয়ে ফ্রান্সের হয়ে পেনাল্টি নিতে আসা ফুটবলারদের অপ্রস্তুত করতে শুরু করেন। অরেলিয়ে চুয়েমানি যখন শট নিতে যান, বাইশ বছর বয়সী এই মিডফিল্ডারের মাথায় প্রত্যাশার চাপ, গোল করতেই হবে।
এমন সময় মার্টিনেজ স্পট থেকে বল সরিয়ে দেন, যাতে চুয়েমানির গিয়ে সেটা আনতে হয়।
মার্টিনেজের এমন আচরণকে ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন তবে তার কাজ হয়ে গেছে। চুয়েমানি বলটি টার্গেটে রাখতে পারেননি। গোল করার চাপ সাথে মার্টিনেজের কার্যকলাপ তাকে আরও বিপাকে ফেলে দেয় ওই সময়ে।
ফ্রান্সের ইব্রাহিম কোনাটের বল থেকে কোলো মুয়ানির শট ঠেকিয়ে দেন মার্টিনেজ।
এই পেনাল্টি মিস হওয়ার পর মার্টিনেজ একটি নাচের ভঙ্গি করেন যা দেখে মনে পড়ে যায় ২০১৬ সালে এফএ কাপ ফাইনালে ক্রিস্টাল প্যালেসের কোচ অ্যালান পার্ডুর ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের বিপক্ষে নাচের কথা।
এই একটা মাইন্ড গেম আর্জেন্টিনাকে ৩৬ বছর পর বিশ্বকাপ জয়ের আরও একধাপ কাছে নিয়ে গিয়েছিল।
এরপর কোলো মুয়ানি ফ্রান্সের হয়ে গোল করেন কিন্তু এটা কেবলই সময়ের ব্যাপার ছিল আর্জেন্টিনার জন্য।
আর্জেন্টিনার গনজালো মন্টিয়ল গোল করে উৎসবের শুরু এনে দেন বুয়েনেস আইরেস, ঢাকাসহ বিশ্বের নানা প্রান্তে যেখানেই লিওনেল মেসির সমর্থকরা আছেন, যেখানেই আর্জেন্টিনার সমর্থকরা আছেন তাদের জন্য।
ম্যাচ শেষে আর্জেন্টিনার কোচ লিওনেল স্কালোনি বলেন, “এমি মার্টিনেজ খুবই ইতিবাচক একজন মানুষ। সে সতীর্থদের আশ্বস্ত করেই গিয়েছিলেন যে পেনাল্টি ঠেকাবেন।”
পেনাল্টি শুটআউটে অবশ্যই মার্টিনেজের ভূমিকা ছিল তবে খেলাটিকে পেনাল্টি শুটআউটে নিতেও তিনি ছিলেন মূখ্য, অতিরিক্ত সময়েরও একদম শেষভাগে তিনি গোল ঠেকান।
ফ্রান্সের ইব্রাহিম কোনাটের বল থেকে কোলোমুয়ানির শট ঠেকিয়ে দেন মার্টিনেজ।
একশ কুড়ি মিনিটের খেলার অমন মুহূর্তে গোলঠেকানোর পর ফ্রান্সের আর ঘুরে দাঁড়ানো হয়নি পুরোপুরি। মার্টিনেজ শটটি ঠেকাতে একেবারেই পুরো শরীর ছড়িয়ে দেন, যাতে মুয়ানি জায়গানা পান শট নেয়ার।
কাতার বিশ্বকাপে এমিলিয়ানো মার্টিনেজ ছিলেন দুর্দান্ত। তিনি গুরুত্বপূর্ণ সব বল ঠেকিয়েছেন। টুর্নামেন্টের সেরা গোলকিপারের পুরস্কার গোল্ডেন গ্লাভ জিতেছেন তিনি।
মাত্রই গত বছর আর্জেন্টিনার জার্সি গায়ে প্রথম মাঠে নামেন এমিলিয়ানো মার্টিনেজ।
অভিষেকের এক বছরের মাথায় তার নামের পাশে কোপা আমেরিকার শিরোপা, বিশ্বকাপের শিরোপা। মার্টিনেজের ক্যারিয়ারের শুরুটা ছিল কঠিন। আট বছর তিনি লন্ডনের ক্লাব আর্সেনালে ছিলেন।
এই আট বছরে মাত্র ১১টি প্রিমিয়ার লিগ ম্যাচে মাঠে নামেন তিনি। ছয়বারই ধারে বিভিন্ন ক্লাবে চলে গিয়েছিলেন।
মূলত মার্টিনেজের উত্থান হয় অ্যাস্টন ভিলার হয়ে। দুই বছর ধরে তিনি এই ক্লাবের হয়ে খেলছেন। আর এই দুই বছরের মধ্যে ফুটবল থেকে যা যা পাওয়া সম্ভব সবই পেয়েছেন। সূত্র: বিবিসি বাংলা
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।