জুমবাংলা ডেস্ক : কলকাতার আরজিকর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের পোস্ট গ্রাজুয়েট দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রীকে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় বিচার চেয়ে রাস্তায় নেমেছেন আমজনতা। এবার পাল্টা প্রতিরোধ কর্মসূচি হিসেবে অভিযুক্তদের ফাঁসির দাবিতে রাজপথে নামলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
শুক্রবার (১৬ আগস্ট) বিকেলে কলকাতার মৌলালি থেকে ধর্মতলার ডোরিনা ক্রসিং পর্যন্ত একটি পদযাত্রায় সামিল হন মুখ্যমন্ত্রী। মমতার সঙ্গে সেই মিছিলে পা মেলান রাজ্যের মন্ত্রী শশী পাঁজা, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, এমপি মহুয়া মৈত্র, রচনা ব্যানার্জি, সায়নী ঘোষ, জুন মালিয়া, শতাব্দী রায়, দোলা সেন, বিধায়ক অদিতি মুন্সি প্রমুখ।
পরে সংক্ষিপ্ত ভাষণ থেকে মমতা বলেন, আগামীকাল সব ব্লকে ব্লকে দোষীদের ফাঁসির দাবিতে এবং রাম-বাম-এর চক্রান্তের বিরুদ্ধে মিছিল করবেন। আমরা চাই সত্য উদঘাটিত হোক। কিন্তু অসত্য ঘটনা নিয়ে কেউ কেউ ভুয়া ভিডিও তৈরি করে অসত্য সংবাদ দিয়ে মানুষের মনকে উত্তেজিত করে দিচ্ছে। সত্যটাকে লুকিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়ার সব খবর সত্যি নয়। কেউ কেউ পয়সা কামানোর জন্য ডিজিটাল প্লাটফর্মে তৈরি করেছে। ওগুলো পলিটিক্যাল পার্টি স্পনসর্ড।
আরজিকরের ঘটনা নিয়ে মমতা বলেন, একটা মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে। এটা বাংলার কেউ সমর্থন করে না। আমরা প্রথম দিন থেকে বলে আসছি দোষীদের শাস্তি হোক এবং এমন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাইছি যাতে আর কেউ কোনদিন এই কাজ করতে সাহস না পায়। সেটা ফাঁসি হোক। আমরা রাজ্য সরকার ফাঁসির পক্ষে এবং এই তদন্তের অগ্রগতিতে রাজ্য পুলিশ সমস্তভাবে সিবিআইকে সাহায্য করবে।
মমতার অভিমত, ‘আমার হৃদয়টা জ্বলে পুড়ে যাচ্ছে। আমি এ ঘটনা সহ্য করতে পারছি না। আমি রাজনীতি করি কিন্তু তার আগে একজন মানবিক মানুষ। আমি আমার জীবনে কোন ক্ষতি করিনি।’
বাংলাদেশের ঘটনা উত্থাপন করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বিজেপি কি ভাবছে?… বাংলাদেশে একটা দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা ঘটেছে, এত ছাত্র মারা গেল। বাংলাদেশ নিয়ে কথা বলতে পারি না। আমি বলিও না। এটা দেশের ব্যাপার দেশ দেখবে। কিন্তু আমরা শুধু ভদ্রতা করব আর আপনারা ভাববেন আমরা দুর্বল হয়ে গেছি, এটা নয়।’
প্রতিবেশী রাষ্ট্রের অচল অবস্থার জন্য ঘুরিয়ে মোদি সরকারকেই নিশানা করে মুখ্যমন্ত্রী এও বলেন ‘লজ্জা করে না? মাত্র সাতদিনের মধ্যে পাল্টি খেয়ে গেলেন! প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলো কেন বলবে যে ভারত যেন আমাদের কাজে হস্তক্ষেপ না করে। এর আগে কোনদিনই এমনটা হয়নি। এই প্রথম আপনাদের আমলে… চ্যারিটি বিগেন্স অ্যাট হোম। আয়নায় আগে নিজেদের মুখ দেখুন।’
এই ঘটনার প্রতিবাদে বিজেপিও আলাদা করে রাজ্যজুড়ে প্রতিবাদে নামে। অন্যদিকে গোটা রাজ্যে আধাবেলা (১২ ঘণ্টা) হরতালের ডাক দিয়েছিল সোশ্যালিস্ট ইউনিটি সেন্টার অব ইন্ডিয়া (এসইউসিআই)। যদিও সেই হরতালের তেমন কোনো প্রভাবই পড়েনি।
এদিকে আরজিকর মেডিকেল কলেজ এবং হাসপাতালের সাবেক প্রিন্সিপাল ডা: সন্দীপ ঘোষকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই।
গত ৯ আগস্ট এই হাসপাতালেরই পোস্ট গ্রাজুয়েট দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রীকে ধর্ষণ এবং খুন করা হয় বলে অভিযোগ। সেই ঘটনায় হাসপাতালের প্রিন্সিপাল ডা. সন্দীপ ঘোষের ভূমিকা নিয়ে একাধিক প্রশ্ন উঠতে শুরু করে। ঘরে বাইরে চাপের মুখে পড়ে অবশেষে ঘটনা তিনদিন পর প্রিন্সিপালের পদ থেকে পদত্যাগ করেন ডা. সন্দীপ ঘোষ। তবে সকালে ইস্তফার পর বিকেলে তাকে কলকাতার ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজের প্রিন্সিপালের পদে নিয়োগ দেয় রাজ্যের স্বাস্থ্য দপ্তর। আর তারপর থেকে ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজেও শুরু হয় বিক্ষোভ। তারপর সরিয়ে দেয় মমতা ব্যানার্জির রাজ্য সরকার। এরপরই ছুটিতে চলে যান তিনি।
শুক্রবার ডা. সন্দীপ ঘোষকে আটক করে সিবিআইয়ের আঞ্চলিক দপ্তর কলকাতার সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। আর সেখানেই চলছে টানা জিজ্ঞাসাবাদ।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।