জুমবাংলা ডেস্ক : ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দেওয়া হয় ৫ হাজারের বেশি আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স। এসব লাইসেন্সের অধিকাংশই ছিল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও দলটির সমর্থক ব্যবসায়ীদের নামে। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ব্যক্তি কিংবা প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে সব ধরনের আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স ফি ও নবায়ন ফি দ্বিগুণ করেছে। এছাড়া পিস্তল/রিভলবার/রাইফেলের ক্ষেত্রে ন্যূনতম ৫ লাখ টাকা এবং শটগানের ক্ষেত্রে ন্যূনতম ২ লাখ টাকা আয়কর দেওয়ার নিয়ম করা হয়েছে।
সম্প্রতি আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স প্রদান, নবায়ন ও ব্যবহার নীতিমালা-২০১৬ বাতিল করে আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স প্রদান, নবায়ন ও ব্যবহার নীতিমালা-২০২৫ প্রকাশ করা হয়েছে। নতুন নীতিমালায় বেশকিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স ফি ও নবায়ন ফি বাড়ানো হয়েছে। আগ্নেয়াস্ত্রের জন্য আয়করও বাড়ানো হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আগ্নেয়াস্ত্রের ক্ষেত্রে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কিছুটা কড়াকড়ি করেছে। ‘যাকে তাকে’ আর আগ্নেয়াস্ত্র দেওয়া হবে না। যারা আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের যোগ্য শুধু তাদের যাচাই-বাছাই শর্তে আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া হবে। এছাড়া আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দেওয়া ৫ হাজারের বেশি আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স বাতিল করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। অন্তর্বর্তী সরকারের নির্দেশে জমা পড়া ও জমা না পড়া অস্ত্রের লাইসেন্সের তথ্য যাচাইয়ে এগুলোর কাগজপত্রে অসংগতি পাওয়ায় এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়।
নীতিমালায় বলা হয়েছে, ২০১৬ সালে জারি করা আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্সের সংশোধন বাতিল বলে গণ্য হবে। এছাড়া পূর্বে জারি করা এ সংক্রান্ত অন্যান্য নির্বাহী আদেশ বা নির্দেশাবলীর ওপরে বর্তমানে জারি করা নীতিমালা প্রাধান্য পাবে এবং এ নীতিমালা অবিলম্বে কার্যকর হবে। আবেদনকারী কর্তৃক আবেদনের পূর্ববর্তী তিন কর বছরে ধারাবাহিকভাবে পিস্তল/রিভলভার/রাইফেলের ক্ষেত্রে ন্যূনতম ৫ লাখ টাকা এবং শটগানের ক্ষেত্রে ন্যূনতম ২ লাখ টাকা আয়কর দিতে হবে। ২০১৬ সালের নীতিমালায় এ অর্থের পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ৩ লাখ এবং ১ লাখ টাকা।
পিস্তল/রিভলভারের ক্ষেত্রে আবেদনকারীর অস্ত্রের লাইসেন্স প্রাপ্তির যোগ্যতা যাচাই-বাছাইপূর্বক সংশ্লিষ্ট জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে যোগ্য বিবেচিত হলে সুপারিশ সহকারে প্রস্তাবটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠাবেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অনাপত্তি দিলে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট লাইসেন্স ইস্যু করবেন।
ব্যক্তি পর্যায়ে লাইসেন্সের ইস্যু ফি পিস্তল/রিভলভারের ক্ষেত্রে ছিল ৩০ হাজার টাকা, এখন তা দ্বিগুণ হয়ে ৬০ হাজার টাকা করা হয়েছে। বন্দুক/শটগান/রাইফেলের ফি ছিল ২০ হাজার টাকা, এখন তা দ্বিগুণ হয়ে ৪০ হাজার টাকা করা হয়েছে। লাইসেন্সের নবায়ন ফির ক্ষেত্রে পিস্তল/রিভলভারের ফি ছিল ১০ হাজার টাকা, এখন তা দ্বিগুণ হয়ে ২০ হাজার টাকা করা হয়েছে। বন্দুক/শটগান/রাইফেলের ফি ৫ হাজার টাকা থেকে দ্বিগুণ হয়ে ১০ হাজার টাকা করা হয়েছে।
সূত্র বলেছে, সব লাইসেন্স স্থগিত করে অস্ত্র জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হলেও এখনো ৭ হাজারের বেশি লাইসেন্সকৃত অস্ত্র জমা পড়েনি। বাড়ি বাড়ি গিয়েও পুলিশ এসব লাইসেন্সধারী বা লাইসেন্সের বিপরীতে থাকা অস্ত্র পায়নি। ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর অস্ত্রের লাইসেন্স পাওয়া ব্যক্তিদের অনেকে গাঢাকা দিয়েছেন। অনেকে পাড়ি জমিয়েছেন বিদেশে।
পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) তথ্য অনুযায়ী, দেশে বৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের ৪৯ হাজার ৬৭১টি লাইসেন্স রয়েছে। এগুলোর মধ্যে সাড়ে ৪৬ হাজার লাইসেন্স ব্যক্তির নামে। বাকিগুলো প্রতিষ্ঠানের নামে। ব্যক্তির নামে থাকা লাইসেন্সগুলোর মধ্যে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নামে আছে অন্তত ৮ হাজার ২০০টি লাইসেন্স। বিএনপির নেতাকর্মীদের নামে লাইসেন্স আছে প্রায় ২ হাজার ৫০০টি। অন্য দলগুলোর রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের নামে আছে মাত্র ৭৯টি লাইসেন্স।
এতে বলা হয়, সুনির্দিষ্ট কর ফাঁকির তথ্য পাওয়ায় এ পর্যন্ত শতাধিক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, রাজস্ব খাতে আয়কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিটের কার্যক্রম নৈতিকতা, প্রযুক্তি ও আইনগত দিক থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হিসেবে বিবেচিত। ইতোমধ্যে ইউনিট যে সাফল্য অর্জন করেছে, তা প্রমাণ করে- শুধু রাজস্ব আদায় নয়, বরং করদাতাদের আইন মেনে চলার প্রবণতা বৃদ্ধিতে এবং একটি সুস্থ কর সংস্কৃতি গড়ে তুলতেও এই ইউনিট কার্যকর ভূমিকা রাখবে।
উল্লেখ্য, শুল্ক ও কর ফাঁকি উদঘাটনসহ গোয়েন্দা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য এনবিআরের অধীনে আয়কর বিভাগের পাশাপাশি ভ্যাট ও শুল্ক বিভাগেও পৃথক গোয়েন্দা ইউনিট রয়েছে। এ ছাড়াও এসব কার্যক্রমকে সমন্বিতভাবে পরিচালনার জন্য এনবিআরের অধীনে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেল (সিআইসি) নামে একটি স্বতন্ত্র ইউনিটও কাজ করছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।