প্রশ্নটা মজার। উত্তরটা আরও মজার! হয়তো ভাবছেন, এ আবার এমন কী কঠিন প্রশ্ন। নিশ্চয়ই নীল তিমি। কিংবা কোনো বড় হাতি—আফ্রিকান বুশ হাতি হয়তো? আসলে তা নয়। সব প্রাণীকে ছাড়িয়ে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় জীবটি একটি ছত্রাক! বিশাল এই ছত্রাকের নাম হিউমাঙ্গাস ফাঙ্গাস। বৈজ্ঞানিক নাম Armillaria ostoyae।
মাথায় গিট্টু লেগে গেল? গিট ছাড়ানোর জন্য প্রথমেই বলা উচিৎ, জীব বা লিভিং অরগানিজম মানে কিন্তু শুধু প্রাণী নয়। উদ্ভিদ ও প্রাণী—দুটোই রয়েছে জীবের তালিকায়। যদিও জীব বা প্রাণ বললে আমাদের মাথায় শুধু প্রাণীদের কথাই আসে। আর জনপ্রিয় ধারায় নীল তিমি তো বিখ্যাত। এবার তাহলে চলুন, পৃথিবীর সবচেয়ে বড় জীবটির অদ্ভুত কাহিনি শুনে আসি।
‘হিউমাঙ্গাস ফাঙ্গাস’-এর আক্ষরিক বাংলা করলে দাঁড়ায় ‘অতিকায় ছত্রাক’। এটি একধরনের মাশরুমও বটে। তবে এটি একক বা ‘একটি’ মাশরুম নয়, বরং মাশরুম বা মাইসেলিয়াম ধরনের উদ্ভিদের একটি বিশাল নেটওয়ার্ক। অনেকগুলো শাখাযুক্ত মূলবিশিষ্ট একধরনের উদ্ভিদ এই মাইসেলিয়াম। এর নানা প্রজাতি রয়েছে। খাঁটি বাংলায় এ ধরনের উদ্ভিদ বা মাশরুমকে ‘ব্যাঙের ছাতা’ বলা হয়। হিউমাঙ্গাস ফাঙ্গাসের বিশাল নেটওয়ার্ক বনের মাটি কামড়ে ছড়িয়ে থাকে বিশাল এলাকাজুড়ে। সেই সঙ্গে এটি মাটি ও ক্ষয়িষ্ণু বা মৃত কাঠ থেকে শুষে নেয় প্রয়োজনীয় পুষ্টি।
হিউমাঙ্গাস ফাঙ্গাস মূলত যুক্তরাষ্ট্র, বিশেষ করে উত্তর আমেরিকার কিছু জায়গায় দেখা যায়। যুক্তরাষ্ট্রের অরিগনের ম্যালহিউর ন্যাশনাল ফরেস্টে ২ হাজার ৩৮৫ একর জায়গাজুড়ে রয়েছে এরকম একটি ফাঙ্গাস। বোঝার সুবিধার্থে বলা যায়, এ জায়গায় ১ হাজার ৬৬০টির বেশি ফুটবল বা সকার মাঠ বানানো যাবে। বিজ্ঞানীদের ধারণা, এই ছত্রাক প্রায় ৮ হাজার বছর পুরোনো। এ ছাড়াও ওরিগনের বেশ কটি জাতীয় বন বা উদ্যানজুড়ে ছড়িয়ে আছে এই ফাঙ্গাস। উটাহের ফিশলেক ন্যাশনাল ফরেস্টেও এর দেখা মেলে।
এত বিশাল অবকাঠামো আরও বেড়ে চলে কীভাবে? সে জন্য এটি নির্ভর করে মূলত বিশাল মূলব্যবস্থার ওপর। এই মূলব্যবস্থা বা মাইসেলিয়াম মৃত গাছপালা ও উদ্ভিদের বিভিন্ন জৈব উপাদান ভেঙে ফেলে, সেখান থেকে পুষ্টি সংগ্রহ করে বেড়ে ওঠে মাটি কামড়ে। অর্থাৎ গাছের মতো এটি আকাশপানে ছোটে না। মাটিজুড়ে আরও, আরও বেশি ছড়িয়ে যায়। স্বাভাবিক। গাছপালা সাধারণত সূর্যের দিকে বেড়ে ওঠে। কারণ, সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় খাদ্য উৎপাদনের জন্য রোদ বেশি প্রয়োজন এদের। এ ধরনের মূলব্যবস্থা যেহেতু খাদ্য উৎপাদনের জন্য মূলত মাটি নির্ভর, তাই মাটি কামড়ে ছড়িয়ে পড়লেই সহজে পুষ্টি উপাদান সংগ্রহ করতে পারে এরা।
ভালো করে খেয়াল করলে অবশ্য দেখা যাবে, মাটির ওপরে একধরনের মাশরুম মাথা তুলেছে। এই মাশরুমের নাম ‘হানি মাশরুম’। এগুলো বাতাসে স্পোর ছড়িয়ে দেয়। এই স্পোর ভেসে ভেসে অন্য জায়গায় গিয়ে পড়ে, তাতে নতুন এলাকায় ছড়াতে পারে ছত্রাকটি।
বিশ্বের সবচেয়ে বড় জীবের খেতাব এর দখলে থাকলেও কিছু উদ্ভিদ কাছাকাছি থেকে পাল্লা দিচ্ছে এর সঙ্গে। ‘জায়ান্ট সেকুয়া’ এরকমই একটি উদ্ভিদ। পৃথিবীর বৃহত্তম গাছ হিসেবে খ্যাত এ উদ্ভিদের বৈজ্ঞানিক নাম Sequoiadendron giganteum। কিছু স্তন্যপায়ী প্রাণীও রয়েছে এই লড়াইয়ে। কিন্তু এর কোনোটিই হিউমাঙ্গাস ফাঙ্গাসের মতো বিশাল এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে নেই। এটিই এ ছত্রাকের বিশেষ বৈশিষ্ট্য।
শুধু বৃহত্তম জীবের খেতাব দখলে রাখাই নয়, বনের বাস্তুতন্ত্রে এর ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ। বিভিন্ন মৃত গাছপালা ও উদ্ভিদ, বিশেষ করে কাঠ ও অন্য কিছু জৈব পদার্থ ভেঙে ফেলে পুষ্টিগুণ মাটিতে ফিরিয়ে দেওয়ায় এটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। এর ফলে অন্য অনেক প্রজাতির উদ্ভিদ মাটি থেকে পুষ্টি সংগ্রহ করতে পারে। ইউএসডিএ ফরেস্ট সার্ভিস বড় পরিসরে গবেষণা করে এ ব্যাপারে নিশ্চিত হয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।