জুমবাংলা ডেস্ক : অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হবেন ড. ইউনূস। আজ রাত ৮টায় শপথ অনুষ্ঠান। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সদস্য সংখ্যা হতে পারে ১৫ জন। দু-একজন বেশিও হতে পারেন। বুধবার বিকালে সেনাসদরে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন, সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। একই সঙ্গে সেনাবাহিনী সম্পর্কে কোনো ধরনের গুজবে কান না দেওয়ার জন্য তিনি সাধারণ জনগণকে আহ্বান জানান। তিনি আরও বলেন, যারা লুটপাট ও অপরাধে জড়িয়েছেন তাদের যতটা সম্ভব আইনের আওতায় আনা হবে।
ব্রিফিং শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সেনাপ্রধান বলেন, বৃহস্পতিবার শপথ অনুষ্ঠানের চেষ্টা করছি। বিকালে করার একটি প্রস্তাব ছিল। কিন্তু এটি অনেক টাইট সময় হয়ে যাবে, কারণ উনি (ড. ইউনূস) দুপুর ২টা ১০ মিনিট নাগাদ দেশে আসবেন। আমরা হয়তো রাত ৮টায় করতে পারি। শপথ অনুষ্ঠানে অন্তত ৪০০ অতিথি উপস্থিত থাকবেন।
তিনি আরও বলেন, আমি নিশ্চিত করতে চাই সর্বদা জনগণের সঙ্গে সেনাবাহিনী, নৌ এবং বিমানবাহিনী আছে এবং থাকবে। আমরা সবার সঙ্গে কাজ করে একটি সুন্দর ভবিষ্যতের দিকে যেতে পারব। একটি সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারব। এটি আমাদের বিশ্বাস এবং আপনারা আমাদের সাহায্য-সহযোগিতা করবেন।
এ সময় তিনি জনগণকে কোনো ধরনের গুজবে কান না দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, অনেক ধরনের গুজব চলছে। আমার সেনাবাহিনী নিয়ে, সেনানিবাসে বিভিন্ন কিছু হচ্ছে এ ধরনের রটনা করা হচ্ছে। এসব গুজবে আপনারা কান দেবেন না। এ ধরনের গুজব ছড়াতে সাহায্য করবেন না। প্যানিক থেকেই গুজব ছড়াচ্ছে, ইচ্ছাকৃত নয় সেটি আমি জানি। গুজব থেকে নিবৃত্ত থাকলে এটি ভালো হবে। কোনো ধরনের নিশ্চিত না হয়ে এ ধরনের সংবাদ দেওয়া থেকে বিরত থাকবেন। তাহলে এটি আমাদের সাহায্য করবে।
বিভিন্ন জায়গায় লুটপাট, ডাকাতি হচ্ছে, সাধারণ মানুষ উদ্বেগে আছেন, সেনাবাহিনী এ বিষয়ে কি পদক্ষেপ নিচ্ছে প্রশ্নের জবাবে সেনাপ্রধান বলেন, আমি দায়িত্ব পেয়েছি অবশ্যই। এই সময়ে নানা ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে, এজন্য আমি রাজনৈতিক নেতাদের জানিয়ে সাহায্য চেয়েছি। তারাও বলেছিলেন, যতদূর সম্ভব সাহায্য করবেন। কিছু কিছু ঘটনা ঘটেছে, এটি ঘটার পেছনে কিছু কারণও রয়েছে। এখন পরিস্থিতি অনেকটা শান্ত হয়ে আসছে। পুলিশ বর্তমানে কোনো ডিউটিতে নেই। পুলিশ ফোর্সে যে শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে, তা সেনাবাহিনী দিয়ে পূরণ করা সম্ভব নয়। এরপরও আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছি। এসব সমস্যা থেকে হাজার হাজার লোককে উদ্ধার করেছি। আমার জানা মতে বহু পুলিশ, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উদ্ধার করেছি। কূটনৈতিকপাড়া, সচিবালয়, আদালত চত্বরসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে আমরা নিরাপত্তা দিচ্ছি। এরপরও কিছু জায়গায় দু-একদিন ঘটনা ঘটেছে। সেজন্য আমি অত্যন্ত দুঃখিত এবং বিব্রত। আমার সঙ্গে নৌবাহিনী এবং বিমানবাহিনীও কাজ করেছে।
তিনি আরও বলেন, পুলিশের পুনর্গঠন কাজ চলছে। পুলিশ প্রধান নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আমি নিশ্চিত মনোবল ফিরে আসবে পুলিশের। একটি পেশাদার বাহিনী হিসাবে দায়িত্ব পালন করতে সক্ষম হবে। পুলিশ পুনর্গঠন হয়ে কাজে নেমে পড়লে এ শূন্যতা দূর হবে এবং এসব অন্যায় প্রতিরোধ করবে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচন প্রসঙ্গে সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, আমার কাছে মনে হয়েছে এ কাজটি করার জন্য তিনি (ড. ইউনূস) অত্যন্ত আগ্রহী। আমার বিশ্বাস তিনি একটি সুন্দর ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় আমাদের নিয়ে যেতে সক্ষম হবেন এবং এর থেকে আমরা উপকৃত হব।
এ ব্যাপারে মহামান্য রাষ্ট্রপতি, সব রাজনৈতিক নেতা এবং স্টুডেন্ট ফোরামের সঙ্গে আলোচনা করেছি এবং সর্বসম্মতভাবে সম্মত হয়েছি ড. ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করার জন্য। এরপর আমরা প্রস্তাব দিয়েছি। এখন ড. ইউনূস আমাদের চিফ অ্যাডভাইজার। এ সময় আমার সঙ্গে নৌবাহিনী এবং বিমানবাহিনীর প্রধান ছিলেন। আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) দুপুরে তিনি দেশে আসবেন। আমি রিসিভ করতে যাব এবং তাকে সর্বাÍকভাবে সহায়তা করব। আমি নিশ্চিত রাজনৈতিক দলসহ সবার কাছ থেকে উনি সাহায্য-সহযোগিতা পাবেন। এতে উনি অত্যন্ত সফলভাবে উনার এ কাজ সমাধান করতে সক্ষম হবেন।
ছাত্রদের কার্যক্রমের প্রশংসা করে সেনাপ্রধান বলেন, ‘আমি দেখলাম যে স্টুডেন্ট এবং ভলান্টিয়ারসরা অত্যন্ত চমৎকার কাজ করছেন।’ যেহেতু ট্রাফিক পুলিশ ছিল না, তারা ট্রাফিকিংয়ের কাজ করছেন। এছাড়া রাস্তা পরিষ্কার এবং ক্ষতিগ্রস্ত স্থাপনাগুলো পরিষ্কার করছেন। আমরা অত্যন্ত আনন্দিত তারা এ ভালো কাজগুলো চালিয়ে যাচ্ছেন। আমি অনুরোধ করব, এ ভালো কাজগুলো যেন তারা চালিয়ে যান।
ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জায়গায় লুটতরাজ ও অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে সেগুলো প্রতিহত করতে অনুরোধ করেছিলাম, তারা সে কাজও করছেন। আমি নিশ্চিত সবাই মিলে একটি সুন্দর অবাধ স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে আমরা ফেরত চলে আসতে পারব।
মিডিয়ার প্রশংসা করে বলেন, ইতোমধ্যে আপনারা অনেক দায়িত্বপূর্ণভাবে সংবাদ পরিবেশন করছেন, এজন্য কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সেনাপ্রধান বলেন, ‘এখন রাজনীতিবিদরা বললেন যে জেনারেল সাহেব আপনি নিরাপত্তার দায়িত্ব নেন, সামবডি হেজ টু টেক ইট, আর তো কেউ নেওয়ার নেই, নিয়েছি এবং যদি কোনো ব্যর্থতা থাকে সে দায়দায়িত্বও আমার। আমি আমার সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি। খুব কম সময়ের মধ্যে একটি স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফেরত আসছে। আমাদের আরও অনেক কাজ করতে হবে। আরও একটু সময় দেন, স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে চলে আসব।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।