জুমবাংলা ডেস্ক : গাইবান্ধা জেলায় যৌথ বাহিনীর অভিযানে একজন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাসহ যে পাঁচজনকে সোমবার রাতে গ্রেফতার করা হয়েছিল, তাদের মধ্যে দুইজন মারা গেছে। তাদের ‘পিটিয়ে মেরে ফেলার’ অভিযোগ তুলছেন পরিবারের সদস্য ও অন্য আটককৃতরা। খবর বিবিসি’র।
তবে, এ অভিযোগ অস্বীকার করে পুলিশ বলছে, তাদের কোনো অসুস্থতা ছিল।
হাসপাতালে ভর্তির সময় তাদের শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের চিহ্ন ছিল বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। তবে, সেগুলোই মৃত্যুর কারণ কি না তা নিয়ে সন্দিহান তারা।
বাকি আটককৃতরাও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তারা সাংবাদিকদের কাছে ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন।
গাইবান্ধার সাঘাটা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন সুইটের বাসায় গিয়ে ‘অস্ত্র উদ্ধারের পর’ সুইটসহ বাকিদের গ্রেফতার করে সেনাবাহিনী ও পুলিশের যৌথ বাহিনী।
বাকি চারজন ইউপি চেয়ারম্যানের প্রতিবেশী ও স্বজন। তারা হলেন শফিকুল ইসলাম, সোহরাব হোসেন আপেল, সাহাদত হোসেন ও রিয়াজুল ইসলাম।
এদের মধ্যে শফিকুল ইসলাম ও সোহরাব হোসেন মঙ্গলবার দুপুরে মারা যান।
সম্প্রতি শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর চেয়ারম্যান ও তার ভাইদের ‘সিন্ডিকেট চক্রকে’ গ্রেফতার করে শাস্তির দাবিতে এলাকাবাসী কয়েক দফায় বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সাংবাদিক জিল্লুর রহমান পলাশ। তাদের বিরুদ্ধে নদীর চর দখল ও অবৈধ ভাবে বালু তোলার অভিযোগও রয়েছে স্থানীয়দের।
‘পাঁচ মিনিট যদি রেস্ট দেয়, দশ মিনিট পিটায়’
নিহতদের মধ্যে সোহরাব হোসেন আপেল গাইবান্ধা সদর হাসপাতালে মারা যান। শফিকুল ইসলাম মারা যান বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
সদর হাসপাতালে আপেলের স্বজনদের আহাজারি করতে দেখা যায়।
মোশারফ হোসেন সুইটসহ অন্যরাও চিকিৎসাধীন রয়েছেন সেখানে।
তারা জানান, সোমবার রাত ১২ টার দিকে তাদের বাড়িতে অভিযানে যায় যৌথ বাহিনীর সদস্যরা।
তার বাসায় তল্লাশি চালিয়ে অভিযানকারীরা কিছু পায়নি বলে দাবি করেন মোশাররফ হোসেন সুইট। যদিও গ্রেফতারের পর তোলা ছবিতে কয়েকটি দেশি অস্ত্র দেখা যায়।
হাসপাতালের বেডে শুয়ে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন সাহাদত হোসেন।
তিনি জানান, স্থানীয় বাজার থেকে তাকে আটক করা হয়। নিয়ে আসা হয় ইউপি চেয়ারম্যানের বাড়িতে।
পেছনে থেকে বাড়ি শুরু করছে। বলে, তোরা চেয়ারম্যানের ক্যাডার… পাঁচ মিনিট যদি রেস্ট দেয়, দশ মিনিট পিটায়, বলছিলেন সাহাদত হোসেন।
নিহত সোহরাব হোসেন আপেলের স্ত্রীর দাবি, পরিবারের সবাইকে একটা রুমে আটকে রেখে আপেলকে মারধোর করা হয়।
আমার স্বামীর কাছে কোন অস্ত্র ছিল না। সে দাপাচ্ছিল, যোগ করেন তিনি।
প্রশাসন যে একটা লোককে মারতে মারতে মাইরে ফেলায় দিবে, এটা আমাদের জানা ছিল না, বলছিলেন সোহরাব হোসেন আপেলের স্ত্রীর চাচাতো ভাই মো. বিপ্লব।
মোশাররফ হোসেন সুইটের অভিযোগ, ভোর পর্যন্ত নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তারা।
রাত ১২ টা থেকে মাইর শুরু করছে ভোর ছয়টা পর্যন্ত মারছে। ছয়টার সময় তারা বলতেছে রামদা আছে, বলেন তিনি।
পুলিশ কী বলছে?
গত চৌঠা সেপ্টেম্বর থেকে সশস্ত্র বাহিনী, পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, কোস্টগার্ড, আনসারের সমন্বয়ে যৌথ আভিযানিক দল করে সারাদেশে অস্ত্র উদ্ধার অভিযান শুরু করা হয়।
চলমান এই অভিযানের অংশ হিসেবে যৌথবাহিনীর সদস্যরা সাঘাটা উপজেলায় অভিযান চালান বলে জানান গাইবান্ধার পুলিশ সুপার মো. মোশারফ হোসেন।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে মোশারফ হোসেন আরও জানান, সেখানে সাঘাটা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন সুইট ও তার সঙ্গীদের বাড়ি থেকে ককটেল ও দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। ওই ঘটনায় সুইটসহ পাঁচজনকে আটক করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
থানায় নেওয়ার আগে যেহেতু আসামিদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার নিয়ম রয়েছে, সেজন্য তাদের সবাইকে সাঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়েছিল, বলেন পুলিশ সুপার মোশারফ হোসেন।
সেখানে অসুস্থ হয়ে পড়ায় সোহরাব হোসেন আপেলকে জেলা সদর হাসপাতালে এবং শফিকুল ইসলামকে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানোর পরামর্শ দেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। পরে ওই দুই হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাদের মৃত্যু হয় বলে জানিয়েছে পুলিশ।
আটক করার পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নির্যাতনেই সোহরাব হোসেন আপেল এবং শফিকুল ইসলামের মৃত্যু হয়েছে বলে নিহতদের স্বজনরা যে অভিযোগ তুলেছেন তা অস্বীকার করেছেন পুলিশ সুপার মোশারফ হোসেন।
তবে অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
অন্যদিকে, আটকদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
শরীরে আঘাতের চিহ্ন
সাঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে গ্রেফতারকৃত আসামিদের চারজনকে সদর হাসপাতালে যখন আনা হয় তখন তাদের শরীরে আঘাতের চিহ্ন ছিল বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
হাসপাতালের তত্তাবধায়ক মো. মাহাবুব রহমান পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের কাছে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
নিহত সোহরাব হোসেন আপেলের পায়ে আঘাত ছিল বলে জানান আবাসিক চিকিৎসক আসিফুর রহমান। তবে, সেই আঘাতের জন্য মৃত্যুর হওয়া ‘অপ্রত্যাশিত’ বলে মনে করেন তিনি।
ওনার পায়ে আঘাত ছিল, সেটার জন্য মারা গেলেন, এটা অপ্রত্যাশিত, কোনো অভ্যন্তরীণ রোগ বা জটিলতা থেকে থাকতে পারে, বলেন চিকিৎসক আসিফুর রহমান।
তবে, মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পোস্টমর্টেমের জন্য অপেক্ষা করার কথা বলেন তিনি।
সূত্র: বিবিসি বাংলা
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।