বিনোদন ডেস্ক : হলিউডের বিখ্যাত অভিনেতা আর্নল্ড শোয়ার্জনেগারের জীবন নিয়ে গত মাসে নেটফ্লিক্সের একটি নতুন তথ্যচিত্র মুক্তি পেয়েছে।
এতে অভিনেতার কাছে জানতে চাওয়া হয় একজন বডিবিল্ডার, একজন অভিনেতা এবং সবশেষে একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে তার সফলতার রহস্য কী।
জবাবে শোয়ার্জনেগার একটি শব্দই বলেন, যা তিন পর্বের সিরিজজুড়ে তাকে বারবার বলতে দেখা গেছে। আর সেই শব্দটি হলো ‘কল্পনাশক্তি’।
“গোটা জীবনজুড়েই আমার মধ্যে যেকোনো বিষয় চোখের সামনে স্পষ্টভাবে দেখতে পারার একটা অসামান্য ক্ষমতা ছিল। আমি পুরো বিষয়টা মনের পর্দায় দেখতে পেতাম, উপলব্ধি করতাম এবং আমার মনে হতো- এটা অর্জন করা সম্ভব। নিজেকে বলতাম, কোনো সন্দেহ নেই যে তুমি তোমার কল্পনাকে বাস্তবে রূপান্তরিত করতে পারবে।”
আর নিজের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে যেসব পদক্ষেপ শোয়ার্জনেগার নিয়েছেন, সেগুলো একটা নীলনকশা উপস্থাপন করবে যে আপনি এই মুহূর্তে কোন অবস্থানে দাঁড়িয়ে আর আগামীতে আপনি নিজেকে কোথায় দেখতে চান।
প্রথম ধাপ: মনের মধ্যে সুনির্দিষ্ট চিত্র ফুটিয়ে তোলা
উদ্যোক্তারা গতানুগতিকের বাইরে গিয়ে কিছু তৈরি করেন। তাই তাদেরকে সাধারণের চেয়ে আলাদা একটা জীবন তৈরি করতে নিজেদের কল্পনাশক্তি কাজে লাগাতে হয়।
অস্ট্রিয়ার থাল নামের একটা ছোট্ট গ্রামে বেড়ে ওঠা শোয়ার্জনেগারের মধ্যে উদ্যোগী ভাব ছিল ঠিকই, কিন্তু অনুকরণের মতো উদাহরণ তার সামনে ছিল না। তাই তিনি নিজের মনের মধ্যেই উন্নত জীবনের একটা চিত্র আঁকতে থাকেন।
তিনি মেন্টরদের একটা দল তৈরি করেন, যদিও তিনি তাদেরকে ব্যক্তিগতভাবে চিনতেন না। শোয়ার্জনেগারের ঘরের দেয়াল ঢেকে গিয়েছিল ইংরেজ বডিবিল্ডার ও পরে অভিনেতা বনে যাওয়া রেজ পার্কের ছবিতে। শোয়ার্জনেগার বলেন, “আমি তখন ভেবেছিলাম, সে যদি ইংল্যান্ডের লিডস শহর থেকে উঠে এসে এই কাজ করতে পারে, তাহলে আমিও আমার স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে পারবো।”
‘টার্মিনেটর’ অভিনেতা তার কল্পনাকে বারবার পরিমার্জিত করেছেন যতক্ষণ না পর্যন্ত তিনি একটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য স্থির করতে পারছেন। তিনি চেয়েছিলেন মিস্টার ইউনিভার্স টাইটেল জিতবেন, হলিউডে যাবেন এবং সিনেমায় অভিনয় করবেন। “আমি শতভাগ বিশ্বাস করেছিলাম যে আমি আমার লক্ষ্যে পৌঁছাবোই। আপনি যদি এই স্বপ্ন দেখে থাকেন এবং মনের মধ্যে বিশ্বাস রাখেন, আপনি অবশ্যই তা অর্জন করতে পারবেন।”
হার্ভার্ড ইনস্ট্রাকটর ও লেখক কারমাইন গ্যালো বলেছেন, শোয়ার্জনেগার তাকে ‘মনের মধ্যে নিজের স্বপ্নগুলো একের পর এক সাজিয়ে তুলতে’ এবং স্বপ্নের ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট হতে শিখিয়েছেন।
তিনি বলেন, “২০০৩ সালে সিবিএস আমাকে নিয়োগ করে ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর হওয়ার জন্য শোয়ার্জনেগারের ক্যাম্পেইন কভার করতে। আমি সাংবাদিকতা ছেড়ে নিজে প্র্যাকটিস শুরু করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু আমার দর্শন ছিল অস্পষ্ট। কিন্তু একটা স্পষ্ট দর্শশক্তি থাকার বিষয়ে শোয়ার্জেনেগারের কথা শোনার পর আমি নিজে আমার লক্ষ্য ঠিক করি যে- আমি বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ডগুলোর কমিউনিকেশন কোচ হিসেবে কাজ করবো।
এই যে একটি স্পষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ, এটা আমার আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দেয়। এর পরের ধাপ ছিল এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা।
দ্বিতীয় ধাপ: স্বপ্নপূরণের ধাপগুলো সাজানো
আর্নল্ড শোয়ার্জনেগার যখন মি. ইউনিভার্স হবেন বলে ঠিক করলেন তখন তিনি কোন কোন ধাপে এই স্বপ্নপূরণের দিকে এগোবেন তা ঠিক করে ফেলেন। তিনি জিমে যাওয়া শুরু করেন এবং স্থানীয় প্রতিযোগিতাগুলোতে অংশ নেন। তিনি প্রতিদিন ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা ওয়ার্কআউট করতেন, কারণ তিনি জানতেন এই পদক্ষেপগুলোই তাকে স্বপ্নপূরণের খুব কাছে নিয়ে যাবে।
সম্প্রতি আমেন ও আউসার থম্পসন নামের দুই জমজ ভাই প্রথম একইসঙ্গে শীর্ষ ৫টি ক্লাবের দ্বারা নির্বাচিত হয়ে এনবিএ’তে ইতিহাস গড়েছেন। দ্য টুডে শো’তে এসে এই দুই ভাই তাদের ছোটবেলায়ই ঠিক করে রাখা লক্ষ্য বা স্বপ্নের কথা জানান; আর তা ছিল- ‘ইতিহাসের সেরা এনবিএ খেলোয়াড় হওয়া।’
কিন্তু আপনি যদি স্বপ্নপূরণের উপায়গুলো খুঁজে বের করা নিয়ে আগে থেকেই কাজ শুরু না করেন, একটা ভালো পরিকল্পনা না রাখেন তাহলে সেই স্বপ্ন দেখার কোনো মানেই হয় না। তাই থম্পসন ব্রাদারস তাদের নিত্যদিনের কাজের একটা লম্বা তালিকা বানিয়েছিলেন। যেমন, ‘প্রতিদিন ড্রিবলিং এর পেছনে এক ঘণ্টা সময় দেওয়া’, ‘লেফট-হ্যান্ডেড ড্রিবল করে ২ মাইল দৌড়ান’ ইত্যাদি।
একটা সুনির্দিষ্ট কল্পনাশক্তি থাকা এবং কল্পনাকে বাস্তবে রূপ দিতে ধাপে ধাপে পদক্ষেপ গ্রহণ আমাদের জীবনে ‘রিভার্স-ইঞ্জিনিয়ারিং’ এর মতো। আপনাকে আরম্ভ করতে হবে শেষ ফলাফল মাথায় রেখে যাতে পুরো প্রক্রিয়ায় এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা পান এবং সব বাধা চুরমার করে এগোতে পারেন।
তৃতীয় ধাপ: পরবর্তী পরিকল্পনার কথা ভাবা
শোয়ার্জনেগার জানান, তার একজন প্রিয় হিরো হলেন এডমন্ড হিলারি। এবং সেটা এই কারণে না যে হিলারি প্রথম এভারেস্ট জয় করেছিলেন; বরং হিলারির মনমানসিকতার জন্য তিনি তাকে পছন্দ করেন।
কারণ হিলারি একবার বলেছিলেন, ‘এভারেস্টের চূড়ায় দাঁড়িয়ে আমি চারপাশে তাকাচ্ছিলাম এবং মাকালু পর্বতের দিকের উপত্যকা বরাবর আমার চোখ যায়; ঐ মুহূর্তেই আমি ঐ পর্বতচূড়ায় ওঠার একটা পথ ভাবছিলাম মনে মনে।’
হিলারির এমন দর্শনই শোয়ার্জনেগারকে অনুপ্রাণিত করেছে। তাই বডিবিল্ডিং এর পাট চুকানোর পর তিনি অভিনয়ের দিকে মনোনিবেশ করলেন এবং সেই ক্ষেত্রেও সফল হয়েছেন।
আপনার স্বপ্ন-কল্পনাশক্তি যতটা বড়, আপনি ঠিক ততটাই বড় পর্যায়ে যেতে পারবেন।
ভবিষ্যতকে স্পষ্টভাবে দেখতে পাওয়ার এই ক্ষমতাকে শোয়ার্জনেগার ‘অসামান্য প্রতিভা’ বলে অভিহিত করেছেন। কিন্তু অনেকেই বিশ্বাস করেন যে প্রতিভা সবার মধ্যেই আছে, আপনাকে শুধু এর শক্তি উপলব্ধি করতে যথাযথ পদক্ষেপ অনুসরণ করতে হবে।
সূত্র : ইনক.কম
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।