বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক : মানুষের জীবনের মৌলিক উপাদান ডিএনএ এবং কৃত্রিমভাবে এই ডিএনএ তৈরির একটি বিতর্কিত প্রকল্প শুরু হয়েছে। বিশ্বে এমন উদ্যোগ এটিই প্রথম বলে ধারণা করা হচ্ছে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য অপ্রত্যাশিত পরিবর্তনের আশঙ্কায় এই গবেষণা এতদিন পর্যন্ত একরকম নিষিদ্ধই ছিল। তবে বিশ্বের বৃহত্তম চিকিৎসা সম্পর্কিত দাতব্য সংস্থা ওয়েলকাম ট্রাস্ট এই প্রকল্পে প্রাথমিকভাবে ১০ মিলিয়ন পাউন্ড তহবিল দিয়েছে। সংস্থাটি বলছে, এই গবেষণার মাধ্যমে অনেক দুরারোগ্য রোগের চিকিৎসায় দ্রুত অগ্রগতি আনা সম্ভব। যা এই গবেষণায় ক্ষতির চেয়ে ভালো ফল বয়ে আনবে।
যিনি এই প্রকল্পের অংশ হিসেবে কেমব্রিজের এমআরসি ল্যাবরেটরি অব মলিকিউলার বায়োলজির ড. জুলিয়ান সেলের মতে, এই গবেষণা জীববিজ্ঞানের ক্ষেত্রে পরবর্তী ধাপের এক বিশাল পদক্ষেপ। তিনি বলেন, ‘সীমা এখন আকাশ। আমরা এমন থেরাপির কথা ভাবছি যা মানুষের বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের জীবনকে উন্নত করবে, সুস্থ বার্ধক্য নিয়ে আসবে এবং রোগ কমাবে। এই পদ্ধতি ব্যবহার করে রোগ-প্রতিরোধী কোষ তৈরি করতে চাই, যা ক্ষতিগ্রস্ত অঙ্গ যেমন লিভার, হার্ট এবং এমনকি ইমিউন সিস্টেমকে পুনরুজ্জীবিত করতে ব্যবহার করা যেতে পারে।‘
তবে সমালোচকরা আশঙ্কা করছেন, এই গবেষণা অসাধু গবেষকদের জন্য উন্নত বা পরিবর্তিত মানুষ তৈরির পথ খুলে দিতে পারে। ‘বিয়ন্ড জিএম’ প্রচারাভিযান গোষ্ঠীর পরিচালক ড. প্যাট থমাস বলেছেন, ‘আমরা মনে করি সব বিজ্ঞানীই ভালো কাজের জন্য আছেন। কিন্তু বিজ্ঞানকে খারাপ উদ্দেশ্যে এবং যুদ্ধের জন্যও ব্যবহার করা যেতে পারে।‘
আমাদের শরীরের প্রতিটি কোষে ডিএনএ নামক একটি অণু থাকে, যাতে থাকে আমাদের শারীরিক গঠন এবং বৈশিষ্ট্য সম্পর্কিত সমস্ত জিনগত তথ্য। ডিএনএ চারটি ছোট ব্লক নিয়ে গঠিত, যাদের বলা হয়— এ, জি, সি এবং টি। বিভিন্ন বিন্যাসে বারবার পুনরাবৃত্তি হয় এই ব্লকগুলোর। মানব জিনোম প্রকল্প বিজ্ঞানীদেরকে মানব জিনগুলোকে একটি বারকোডের মতো পড়তে সাহায্য করেছে। এখন যে নতুন কাজ শুরু হচ্ছে, যার নাম ‘সিন্থেটিক হিউম্যান জিনোম প্রজেক্ট’, যা এই অগ্রগতিকে আরো এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে। এটি গবেষকদের কেবল ডিএনএ অণু পড়তে নয়, বরং এর বিভিন্ন অংশও তৈরি করতে সাহায্য করবে।
কৃত্রিমভাবে একটি মানব ক্রোমোজোম তৈরির আগ পর্যন্ত বিজ্ঞানীদের প্রথম লক্ষ্য হল মানব ডিএনএর বড় ব্লক তৈরির পদ্ধতির বিকাশ ঘটানো। মানব জিনোমের সবচেয়ে বড় অংশ সিকোয়েন্স করেছিলেন ওয়েলকাম স্যাঙ্গার ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ম্যাথিউ হার্লেস। তার মতে, এই কৃত্রিমভাবে তৈরি উপাদানগুলো নিয়ে গবেষণা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা যাবে, যা জিন এবং ডিএনএ কীভাবে আমাদের শরীরকে নিয়ন্ত্রণ করে সে সম্পর্কে আরো জানতে সাহায্য করবে। অনেক রোগই ঘটে যখন এই জিনগুলো ভুলভাবে কাজ করে। তাই এই গবেষণাগুলো চিকিৎসাকে উন্নত করবে।
এই প্রকল্পের কাজ পরীক্ষাগারের টেস্টটিউব এবং ডিশের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে এবং কৃত্রিম জীবন তৈরির কোনো প্রচেষ্টা করা হবে না। এই প্রকল্পের লক্ষ্য চিকিৎসা সংক্রান্ত সুবিধা, তবে অসাধু বিজ্ঞানীরা এই প্রযুক্তির অপব্যবহার করতে পারেন। এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের জিনতত্ত্বের বিজ্ঞানী প্রফেসর বিল আর্নশ কৃত্রিম মানব ক্রোমোজোম তৈরির একটি পদ্ধতি তৈরি করেছেন। তার মতে, বিজ্ঞানীরা জৈবিক অস্ত্র, উন্নত মানুষ, এমনকি মানব ডিএনএ সহ প্রাণী তৈরির চেষ্টা করতে পারে। তিনি বিবিসি নিউজকে বলেছেন—‘দৈত্য বোতল থেকে বেরিয়ে এসেছে। আমরা এখন কিছু বিধিনিষেধ রাখতে পারি। কিন্তু যদি কোনো সংস্থা উপযুক্ত যন্ত্রপাতির অ্যাক্সেস পেয়ে কিছু তৈরি করা শুরু করে, তবে আমি মনে করি না আমরা তাদের থামাতে পারব।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।