আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পুলিশ বাহিনীর সহায়ক হিসাবে ৪০ হাজার বডি-ওর্ন ক্যামেরা (বডিক্যাম) কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। মঙ্গলবার অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে এর নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ওই বৈঠকে আরও ৬টি প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়। এছাড়া পৃথকভাবে অনুষ্ঠিত ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে সার আমদানির প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়। দুটি বৈঠকে সভাপতিত্ব করেছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, জাতীয় নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকারী পুলিশ সদস্যদের জন্য ৪০ হাজারের বেশি বডি ক্যামেরা কেনার অনুমোদন দিয়েছি। দেশে ডলার মজুত আপৎকালের জন্য পর্যাপ্ত নয় বলেও তিনি জানান।
ক্যামেরা কেনার খরচ সম্পর্কে জানতে চাইলে সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, টাকার অঙ্ক না-ই বললাম, কারণ এটা সংগ্রহ করা হবে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) মাধ্যমে। দরপত্র আহ্বান করে কিনতে গেলে পণ্যের মান ও দামের বিষয় থাকে। এখন ইউএনডিপি মান ও দামের নিশ্চয়তা দেবে।
যেমনভাবে আমরা ইপিআই টিকা ইউনিসেফের মাধ্যমে সংগ্রহ করেছিলাম। উপদেষ্টা আরও বলেন, বডি ক্যামেরা কেনার খরচ বাংলাদেশ সরকারই দেবে। ইউএনডিপি পণ্যের সঠিক মান ও মূল্য নির্ধারণে সহযোগিতা করবে। এতে করে আর কোনো বিতর্ক সৃষ্টি হবে না।
কারণ আমরা কারও সঙ্গে মূল্য নিয়ে নেগোসিয়েশন করতে চাচ্ছি না। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, টাকা দেবে সরকার, কিন্তু কিনতে হবে বেসরকারি খাত থেকে। স্বচ্ছতা বজায় রাখার জন্য ইউএনডিপির মাধ্যমে কেনা হবে।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে পুলিশকে বডিক্যাম দেওয়া হয় প্রথম ২০১৪ সালে। শুরুতে ঢাকা মহানগর পুলিশ এবং পরে ট্রাফিক পুলিশকে এই ক্যামেরা দেওয়া হয়। দায়িত্বরত পুলিশের বুকে কিংবা কপালে লাগানো থাকে এই ক্যামেরা।
যে কোনো অভিযান, চেকপোস্টে তল্লাশি ও গুরুত্বপূর্ণ ডিউটিতে পুলিশ সদস্যদের পোশাকের সঙ্গে থাকা লাইভ ক্যামেরা হিসাবে কাজ করে। পুলিশ সদর দপ্তরের মনিটরিং সেল এসব ক্যামেরা কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়ন্ত্রণ ও মনিটর করে।
ডলার প্রসঙ্গে ওই ব্রিফিংয়ে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, আমরা বাজার থেকে ডলার কিনছি সেটা ঠিক আছে। বর্তমানে আমাদের কাছে যে পরিমাণ ডলার আছে তা দেশের আপৎকালের জন্য পর্যাপ্ত নয়। দেশে বড় ধরনের কোনো একটা কিছু হলে মোকাবিলা কঠিন হবে।
এটা আমি টের পেয়েছিলাম ২০০৭-০৮ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর থাকাকালীন। ওই সময় দেশে সিডর, আইলা হলো, অনেক ঝামেলা হয়েছে। আমরা সেটা সামাল দিয়েছিলাম।
সুতরাং এমন পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক বাজার থেকে ডলার কিনে রিজার্ভ বাড়ানোর যে উদ্যোগ নিয়েছে তা দরকার আছে। বাংলাদেশ ব্যাংক বাজার থেকে দুই মিলিয়ন ডলার কিনে নেওয়ায় দাম একই পর্যায়ে রয়েছে।
এদিকে অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে বডি ক্যামেরা কেনা ছাড়াও মিসর থেকে টিএসপি সার আমদানির জন্য চুক্তির প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চুক্তিভিত্তিক পরামর্শক নিয়োগে চুক্তির মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বিদ্যমান রানওয়ে ও টেক্সিওয়ের শক্তি বৃদ্ধিকরণ প্রকল্পের ক্রয়চুক্তির ভেরিয়েশন প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এতে ৪৭৩ কোটি টাকার চুক্তির মূল্য বেড়ে ৬০৬ কোটি টাকায় উঠেছে।
এছাড়া হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রাস্তা সংস্থাপন প্রকল্পের ভেরিয়েশন প্রস্তাব অনুমোদন পেয়েছে। এতে বিদ্যমান চুক্তিমূল্য ৬৫৯ কোটি টাকা থেকে বেড়ে ৮০১ কোটি টাকায় উঠেছে।
ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক : এ বৈঠকে সৌদি আরব থেকে ৩০ হাজার মেট্রিক টন ইউরিয়া সার আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রতি মেট্রিক টন সারের মূল্য পড়বে ৪৪৭.৫০ মার্কিন ডলার। মোট ব্যয় হবে ১১৫ কোটি টাকা। সৌদি আরবের সাবিক এগ্রি নিউট্রেন্ট কোম্পানি এই সার সরবরাহ করবে।
এছাড়া প্রতি মেট্রিক টন সার ৪১৫ মার্কিন ডলার মূল্যে কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি লি. (কাফকো) বাংলাদেশ থেকে ৩০ হাজার মেট্রিক টন ইউরিয়া সার কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ওই হিসাবে মোট মূল্য হবে ১৫৩ কোটি টাকা।
এছাড়া রাশিয়া থেকে ৩৫ হাজার টন এমওপি সার আমদানির সিদ্ধান্ত হয়। প্রতি মেট্রিক টন সারের মূল্য ৩৬১ মার্কিন ডলার। এতে ব্যয় হবে ১৫৫ কোটি টাকা। সার সংরক্ষণের জন্য রাজশাহীতে একটি সাইড গুদাম নির্মাণকাজের ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়। এতে ব্যয় হবে ৬৮ কোটি টাকা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।