জুমবাংলা ডেস্ক : বাংলাদেশে ঘূর্ণিঝড়ের নাম শুনলেই স্মৃতিতে ফিরে আসে সিডর, আইলা, মহাসেন কিংবা আম্পানের ভয়াবহতা। বঙ্গোপসাগরে আবারও ঘূর্ণিঝড়ের হুমকি দেখা দিয়েছে। আন্দামান সাগরে সৃষ্ট একটি নিম্নচাপ শক্তিশালী হয়ে ঘূর্ণিঝড় ‘শক্তি’তে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, ১৬ থেকে ২২ মে’র মধ্যে এটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে, যা বিশেষ করে খুলনা, সাতক্ষীরা ও চট্টগ্রাম উপকূলীয় অঞ্চলে প্রভাব ফেলবে।
Table of Contents
ঘূর্ণিঝড় ‘শক্তি’র বিস্তারিত তথ্য
নিম্নচাপের অবস্থান
আন্দামান সাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপটি ধীরে ধীরে ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেবে।
সম্ভাব্য সময়সীমা
১৬ থেকে ২২ মে’র মধ্যে নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে। ২৩ থেকে ২৮ মে’র মধ্যে এটি উপকূল অঞ্চলে আঘাত হানার সম্ভাবনা রয়েছে।
ঘূর্ণিঝড়ের নাম ও অর্থ
‘শক্তি’ (Shakti) নামটি শ্রীলঙ্কার প্রস্তাবিত। সংস্কৃত ও দ্রাবিড় উৎসের এই শব্দের অর্থ “Power” বা “শক্তি”, যা দেবী শক্তির প্রতীক হিসেবেও ব্যবহৃত হয়।
বাতাসের গতি
ঘণ্টায় ৮০ থেকে ১০০ কিলোমিটার বেগে বাতাস বইতে পারে, ফলে ভারী বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়ার শঙ্কা রয়েছে।
জলোচ্ছ্বাসের সম্ভাবনা
৩ থেকে ৫ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস উপকূলীয় নিম্নাঞ্চল প্লাবিত করতে পারে।
ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল
- খুলনা
- সাতক্ষীরা
- বরগুনা
- পটুয়াখালী
- চট্টগ্রাম
উক্ত এলাকাগুলোর নদীবন্দর, চরাঞ্চল ও নিম্নভূমি প্লাবনের ঝুঁকিতে রয়েছে। বিদ্যুৎ বিভ্রাট, যোগাযোগ ব্যবস্থার বিঘ্ন, গৃহহানি ও প্রাণহানির সম্ভাবনাও রয়েছে।
উপকূলবাসীর প্রস্তুতি
স্থানীয় বাসিন্দারা ইতিমধ্যে আশ্রয়কেন্দ্রমুখী হচ্ছেন। সিডর (২০০৭), আইলা (২০০৯) ও আম্পান (২০২০)-এর অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে অনেকেই জরুরি সামগ্রী সংগ্রহে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন।
প্রশাসনের প্রস্তুতি ও ব্যবস্থাপনা
- খুলনা ও চট্টগ্রামে প্রায় ২,৪০০-এর বেশি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রয়েছে।
- শুকনো খাবার, নিরাপদ পানি ও ওষুধের মজুত গড়ে তোলা হয়েছে।
- মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে যাওয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
- জেলা প্রশাসন নিয়মিত সতর্কতা প্রচার করছে।
- আশ্রয়কেন্দ্রগুলোর বিদ্যুৎ, পানি ও শৌচাগারের অভাব রয়েছে, যা উন্নয়নের দাবি রাখে।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন
- আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে পর্যাপ্ত জায়গা আছে কি?
- নারী, শিশু, প্রতিবন্ধী ও বৃদ্ধদের নিরাপত্তা কতটা নিশ্চিত?
- দুর্বল মোবাইল সিগনালে সতর্ক বার্তা কিভাবে পৌঁছাবে?
তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তা ও সীমাবদ্ধতা
মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বার্তা পাঠানো হলেও চরাঞ্চলে নেটওয়ার্ক দুর্বল। কমিউনিটি রেডিও ও স্থানীয় প্রচারণা কার্যকর হলেও এখনো তা পর্যাপ্ত নয়। অনেকের অভিযোগ, “সতর্কতা পেতে পেতে তখন অনেক দেরি হয়ে যায়।”
অতীতের শিক্ষা, বর্তমানের চ্যালেঞ্জ
সিডর, আইলা, মহাসেন ও আম্পানের মতো ঘূর্ণিঝড়ের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে আমরা কতটা প্রস্তুত?
- আশ্রয়কেন্দ্র কি আধুনিক হয়েছে?
- দুর্যোগ পরিকল্পনা কি কার্যকর?
- বাস্তবায়নে কোথায় ঘাটতি?
করণীয়
- ইউনিয়ন পর্যায়ে স্থানীয় নেতৃত্বকে সক্রিয় করতে হবে।
- আশ্রয়কেন্দ্রের অবকাঠামো ও স্বাস্থ্যসেবা উন্নত করা জরুরি।
- স্বেচ্ছাসেবী দল ও মোবাইল মেডিকেল ইউনিট প্রস্তুত রাখতে হবে।
- নারী ও শিশুবান্ধব আশ্রয় নিশ্চিত করতে হবে।
- অফলাইন যোগাযোগ ব্যবস্থার (মাইকিং, রেডিও) পরিধি বাড়াতে হবে।
ঘূর্ণিঝড় ‘শক্তি’ একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ, যা এড়ানোর উপায় নেই। তবে পরিকল্পিত প্রস্তুতি ও সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে ক্ষয়ক্ষতি অনেকাংশে কমানো সম্ভব। উপকূলীয় মানুষের জানমাল রক্ষায় রাষ্ট্র, সমাজ ও ব্যক্তি পর্যায়ে সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণ এখন সময়ের দাবি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।