জুমবাংলা ডেস্ক : সরকারের লোক দেখানো অনেক কাজ আছে; এসবের একটা হচ্ছে সম্পদবিবরণী। বিবরণীগুলো বিশ্লেষণ করা হয় না। সরকারের সংশ্লিষ্টদের বিশ্লেষণ করার সক্ষমতাও গড়ে তোলা হয়নি। তারপরও সরকারের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব সরকারীভাবেই নেওয়া হয়। সতর্ক করাই বিবরণী দাখিলের উদ্দেশ্য। যদিও কার্যত এ কাজের উদ্দেশ্য হাঁকডাক করা, কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করা নয়। এখন সংস্কারের পালে তুমুল হাওয়া বইছে। তারপরও সম্পদের হিসাব যাচাই করার কার্যকর উপায় খোঁজায় কারো মন নেই।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টরা বলেন, ‘দেশব্যাপী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্পদবিবরণী সংগ্রহ করার প্রক্রিয়াটি বেশ সময়সাপেক্ষ। তারপরও বিবরণী গ্রহণ করার উদ্দেশ্য হচ্ছে অসৎ পথে, জনসেবা ব্যহত করে কারা বিত্তশালী হচ্ছে তার নজরদারি করা। পদ্ধতিগত সীমাবদ্ধতা থাকায় এ বিষয়ে খুব বেশি নজর রাখা যায় না। গোয়েন্দা তথ্য পাওয়া গেলেই দাখিল করা হিসাবের সত্যতা নিরূপণ করা হয়। শাস্তির বিষয়টি বিভাগীয় কর্তৃপক্ষ দেখে।’
সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্পদের বিবরণী সরকারের কতটা কাজে আসে জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. শেখ আব্দুর রশিদ বলেন, ‘সরকার শৃঙ্খলার স্বার্থে এ বিবরণী জমা নেয়। সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও নিয়মানুযায়ী তাদের সম্পদের বিবরণ দেন। কিন্তু তাতে আয়-ব্যয়ে তারতম্য দেখা গেলে সেটি দেখার তেমন সুনির্দিষ্ট এবং কার্যকরী ব্যবস্থা নেই; এটি কষ্টসাধ্যও বটে। তবে বেতনস্কেল অনুযায়ী আয়-ব্যয়ে ভারসাম্য থাকুক সরকার তা চায়।’
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ওই মন্ত্রণালয়ের অধীন ক্যাডার কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন দপ্তর-সংস্থা, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও মাঠ প্রশাসনের কর্মচারীর সংখ্যা কমবেশি ৬৮ হাজার। শুধু ক্যাডার কর্মকর্তার সংখ্যাই ৬৫৩৯। প্রায় সবাই তাদের সম্পদের হিসাববিবরণী জমা দিয়েছেন মন্ত্রণালয়ে। বিভাগীয় ও ডিসি অফিসের কর্মকর্তারা সম্পদের হিসাব জমা দিয়েছেন নিজ নিজ কর্মস্থলে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, সংস্থা ও দপ্তরে প্রায় ১৫ লাখ কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন। তাদের হিসাবও জমা পড়েছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, সম্পদের বিবরণীগুলো শৃঙ্খলা-৫ শাখার একটি রুমে ফাইলবন্দী থাকে। সেখানে হাতে হাতে হিসাব করতে হয়।
সম্পদবিবরণী কতটা কার্যকরী জানতে চাইলে সাবেক সচিব আব্দুল আউয়াল মজুমদার বলেন, ‘এটি একটি রুটিন কাজ, সরকারের প্রত্যেক কর্মকর্তা-কর্মচারীর সম্পদের বিবরণ নেওয়া। যদি এসব বিবরণীর ত্রুটি-বিচ্যুতি দেখে ব্যবস্থা নেওয়া যেত তাহলে এটি প্রশাসনে কার্যকরী ভূমিকা পালন করত। যতটুকু জানি, এসব বিবরণী বস্তাবন্দি থাকে। বস্তাবন্দি না রেখে কোনো অসামঞ্জস্য পেলে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।’
রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের আগে সরকারি কর্মচারীদের বিধি অনুযায়ী পাঁচ বছর পর পর বাধ্যতামূলকভাবে সম্পদের হিসাব দিতে হত। বিগত ১৫ বছরে তাদের কারো কারো সম্পদ বেড়েছে অনেক গুণ। বিদেশেও রয়েছে তাদের সম্পত্তি।
গত সেপ্টেম্বরে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়, ডিসেম্বরের মধ্যেই জমা দিতে হবে সম্পদের হিসাব। পরে সময় বাড়ালে এটি এবছর ফেব্রুয়ারিতে শেষ হয়। এবারই প্রথম বলা হয়, যাদের সম্পদ নেই তাদেরও জনস্বার্থে হিসাব জমা দিতে হবে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, একটি ডিজিটাল ডাটাবেজ থাকলে সরকার পুরো বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে হালনাগাদ করতে পারত। কারো বিষয়ে অনুসন্ধানের প্রয়োজন হলে তার বিবরণী খুঁজে পেতে লাখ লাখ ফাইল ঘাঁটতে হত না।
এ সম্পদবিবরণী কোনো কাজে আসে কিনা জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রালয়ের অতিরিক্ত সচিব আবু মমতাজ সাদ উদ্দিন বলেন, ‘এটি শৃঙ্খলা রক্ষার প্রক্রিয়া। অবশ্যই এটির প্রয়োজন আছে। এটি দুর্নীতিগ্রস্তদের সতর্ক রাখবে। অনিয়ম পাওয়া গেলে কয়েকজনকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিলে বাকিরা সতর্ক থাকবে। তবে পুরো কাগজপত্র খুঁজে তথ্য বের করা কষ্টকর। এ প্রক্রিয়ার আধুনিকায়নও ব্যয়সাপেক্ষ ব্যাপার। সরকার হয়ত ভবিষ্যতে এটি বিবেচনা করবে।’
অন্তর্বর্তী সরকার আসার পর জোরেশোরে দুর্নীতিগ্রস্তদের খুঁজে বের করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। তার মধ্যে সম্পদবিবরণীও রয়েছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, এনবিআরের কর্মকর্তা মতিউর রহমানের ছেলের ছাগলকাণ্ডের পর সরকার বেশ বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে। সেসময় সচিব কমিটির বৈঠকে মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও সিনিয়র সচিবরা সিদ্ধান্ত নেন, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্পদ সরকারের নজরে রাখা হবে। সবাই তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীকে প্রতিবছর সম্পদবিবরণী জমা দেওয়ার কথা বলেন। সিদ্ধান্ত হয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে বিষয়টি দ্রুত কার্যকর করার নির্দেশনা দেওয়া হবে। তারপর বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সরকারপ্রধান পদত্যাগ করেন।
সম্পদবিবরণীতে অসামঞ্জস্য পাওয়া গেলে কী করা হবে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব ড. মোখলেস উর রহমান সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘সারা দেশে ১৫ লাখের মত সরকারি কর্মচারী রয়েছেন। সম্পদের বিবরণী জমা না দিলে দণ্ডের কথা সংশ্লিষ্ট আইনে বলা আছে। যত বড়ই হোক, চোরকে চোর বলতে হবে।’
এবার মন্ত্রণালয়, দপ্তর ও সংস্থার পাশাপাশি বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় ও ডিসির কার্যালয়ে সম্পদবিবরণী জমা নেওয়া হয়। বেশির ভাগ জেলা কমিশনার (ডিসি) জানিয়েছেন, তাদের কার্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রায় সবাই বিবরণী জমা দিয়েছেন। যারা জমা দেননি তাদের বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া শুরু হয়েছে। সূত্র : দেশ রূপান্তর
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।