জুমবাংলা ডেস্ক : স্বায়ত্তশাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠাসহ ১১ দফা দাবিতে গণজমায়েত কর্মসূচি পালন করেছে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের বিজ্ঞানী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। রোববার কমিশনের প্রধান কার্যালয়ে এ গণজমায়েত অনুষ্ঠিত হয়েছে।
গণজমায়েত শেষে কমিশনের একটি প্রতিনিধি দল দাবির পক্ষে সংগ্রহকৃত গণস্বাক্ষরের কপিসহ একটি স্মারকলিপি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার নিকট দাখিল করেন।
এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে কমিশন। এতে বলা হয়, বিদ্যমান সমস্যা সমাধানে কমিশনের বিজ্ঞানী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পক্ষ থেকে গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। স্মারকলিপির ব্যাপারে মন্ত্রণালয় হতে কোনো সাড়া এবং আলোচনার সুযোগ না পেয়ে গত ১০ এপ্রিল কমিশনের সব সংগঠনের পক্ষ থেকে বিদ্যমান সমস্যা সমাধানে অনুরোধ জানিয়ে পুনরায় পত্র প্রদান করা হয়। এরপরও মন্ত্রণালয়ের কোনো সাড়া না পাওয়ায় গত ২২ এপ্রিল ঢাকার আগারগাঁওয়ে অবস্থিত কমিশনের প্রধান কার্যালয়ে বিজ্ঞানী-কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দের পক্ষ হতে একটি সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হয় এবং একই দিন হতে শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেওয়া হয়।
এরই ধারাবাহিকতায় ২৩ এপ্রিল থেকে কমিশনের সব প্রতিষ্ঠানে একযোগে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হয়। এরপর গত ২৭ ও ২৮ এপ্রিল বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের প্রধান কার্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে স্থাপিত ৪০টি প্রতিষ্ঠানে একযোগে অবস্থান গ্রহণ এবং গণস্বাক্ষর গ্রহণ কর্মসূচি পালিত হয়েছে। পরবর্তীতে গত ২৯ এবং ৩০ এপ্রিল সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি ও কালো ব্যাজ ধারণ করা হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন (বাপশক) আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (IAEA) রীতিনীতি অনুসরণ করে বাংলাদেশে পরমাণু শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহার, উন্নয়ন, প্রসার, তদ্সংক্রান্ত গবেষণা কার্যক্রম, সেবা ও শিক্ষা সম্পর্কিত কার্যক্রম পরিচালনা, পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন এবং এতদসংশ্লিষ্ট বিষয়াদি সম্পাদনের জন্য ১৯৭৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এই কমিশনটি ১৯৭৩ সালের প্রেসিডেন্সিয়াল অর্ডার নং-১৫ দ্বারা প্রতিষ্ঠিত এবং ২০১৭ সালের আইন নং-২৩ পরিচালিত একটি বিশেষায়িত গবেষণা প্রতিষ্ঠান।
বিগত সরকারের শাসনামলে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী এবং সংশ্লিষ্ট আমলারা কমিশনের আইনকে উপেক্ষা করে কমিশনের শীর্ষ পদগুলো শূন্য রেখে কমিশনকে দূর্বল করে মন্ত্রণালয়ের আজ্ঞাবহ একটি নতজানু প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছিল। আওয়ামী সরকার বিদায় নিলেও সে অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয়নি বরং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের আমলাদের কর্তৃত্ববাদী আচরণ ও কমিশনের এখতিয়ারভূক্ত কাজে অযাচিত হস্তক্ষেপ দিন দিন বেড়েই চলেছে যা কমিশনের স্বায়ত্তশাসনকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে এবং কমিশনের কর্মদক্ষতা, মর্যাদা ও মনোবলে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এ পরিস্থিতিতে কমিশনের গবেষণা কর্মকান্ড ও সেবা কার্যক্রম পরিচালনা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। এ প্রেক্ষাপটে চলমান আন্দোলন ও ১১ দফা দাবি বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোনো উদ্যোগ না নেওয়ায় দাবিসমূহ বাস্তবায়নে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর একটি স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।
কমিশনের বিজ্ঞানী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ১১ দফা দাবিগুলো হলো-
১. কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্যদের শূন্য পদে দ্রুত স্থায়ী নিয়োগ দিয়ে পূর্ণ কমিশন গঠন।
২. কমিশনের স্বায়ত্তশাসন বজায় রাখার স্বার্থে কমিশনের এখতিয়ারভুক্ত কাজে মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ বন্ধ করে গবেষণাবান্ধব ও সম্মানজনক কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।
৩. দেশে-বিদেশে উচ্চশিক্ষা এবং প্রশিক্ষণের পূর্বানুমতি এবং মনোনয়ন দেওয়ার এখতিয়ার কমিশনে ফিরিয়ে দিতে হবে।
৪. উচ্চশিক্ষা, প্রশিক্ষণ ইত্যাদির জিও প্রদানে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও বৈষম্য নিরসন করতে হবে, এবং অপ্রাসঙ্গিক তথ্য চাওয়াসহ IDSDP-তে অন্তর্ভুক্তির বাধ্যবাধকতা বন্ধ করতে হবে।
৫. কমিশনের নিউক্লীয় তথ্যের সুরক্ষা ও গোপনীয়তা নিশ্চিত করতে, কমিশনকে iBAS++ সিস্টেমের বাইরে রেখে বাপশক আইন ২০১৭-এর ধারা ২০(১) ও ২০(২) অনুযায়ী কমিশনের তহবিল তফসিলি ব্যাংকে জমা ও বিধি অনুসারে ব্যয় নির্বাহের এখতিয়ার বলবৎ রাখতে হবে।
৬. বিজ্ঞানী, কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের অবনমনকৃত সব পদ নির্ধারিত গ্রেডে উন্নীত করে বৈষম্য নিরসন করতে হবে।
৭. বাপশক চাকুরীবিধিমালা ১৯৮৫ এর ১৮(২) অনুযায়ী পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের ন্যায় কমিশনের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা সমপর্যায়ের বিজ্ঞানীদের গ্রেড-২, গ্রেড-১ পাওয়া নিশ্চিত করতে প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে।
৮. মালিক সংস্থা হিসেবে কমিশনকে বাদ দিয়ে এনপিসিবিএল এবং পিডিবির মধ্যে পিপিএ সম্পন্ন করার সিদ্ধান্ত বাতিল করতে হবে।
৯. গবেষণা কর্মকান্ড সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য নতুন পদ সৃজন, সব অস্থায়ী পদ স্থায়ীকরণ এবং গবেষণা বরাদ্দ বৃদ্ধি করতে হবে।
১০. কমিশনের বিজ্ঞানী, কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের জন্য বিশেষ সুবিধাদি, যেমন- গৃহনির্মাণ/ফ্ল্যাট ক্রয় ঋণ, রেশন, এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে সুদ মুক্ত ঋণ, গাড়ী সেবা নগদায়ন, ইত্যাদি চালু করতে হবে।
আইনজীবী আলিফ হত্যা মামলায় চিন্ময়কে গ্রেপ্তার দেখানোর নির্দেশ
১১. ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্সে কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্যদের পদমানক্রম উন্নীতকরণ এবং বিজ্ঞানী ও কর্মকর্তাদের উপযুক্ত পদমানক্রম নির্ধারণ করতে হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।