বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক : পৃথিবীর বুকে মানব সভ্যতা ধ্বংসের অন্যতম শক্তিশালী অস্ত্র হচ্ছে পারমাণবিক বোমা। পারমাণবিক বোমার শক্তি বিশ্ববিদিত ৷ প্রযুক্তির অবদানে পারমাণবিক শক্তির সক্ষমতাকে মানুষের হাতের মুঠোয় নিয়ে এসে এখন কঠিন কাজগুলোকে সহজ করেছে। পারমাণবিক শক্তি বিদ্যুৎ উৎপাদন, স্বাস্থ্য, চিকিৎসা, কৃষিকাজে ব্যবহার করে মানুষকে উন্নতির শিখরে পৌঁছে দিচ্ছে।
সম্প্রতি পারমাণবিক শক্তিকে কাজে লাগিয়ে চীনের বিজ্ঞানীরা অবিনশ্বর কয়েনের থেকেও ছোট ব্যাটারি আবিষ্কার করেছেন। যা বছরের পর বছর ধরে বৈদ্যুতিক যন্ত্রের ‘প্রাণভোমরা’র কাজ করবে। কোনও রকম চার্জও সেই ব্যাটারিতে দিতে হবে না।
বিশেষজ্ঞদের দাবি, ছোট্ট এই ব্যাটারি চার্জ দেওয়ার দরকার তো নেই-ই, এমনকি রক্ষণাবেক্ষণেরও তেমন প্রয়োজন নেই। ৫০ বছর ধরে ওই পারমাণবিক ব্যাটারি বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে সক্ষম বলেও দাবি করেছে তারা।
প্রযুক্তির আবিষ্কার করেছে চীনা প্রতিষ্ঠান বেটাভোল্ট টেকনোলজি। তথ্যপ্রযুক্তিগত দিক থেকে পারমাণবিক এই ব্যাটারি এক যুগান্তকারী আবিষ্কার। ব্যাটারিটি নিয়ে বর্তমানে মোবাইল ফোন এবং ড্রোনের মতো বৈদ্যুতিক যন্ত্রের উপর পরীক্ষানিরীক্ষা করে বাজারজাত করবে।
ব্যাটারিটি এমন ভাবেই তৈরি করা হয়েছে যাতে তা মহাকাশ গবেষণায় ব্যবহৃত যন্ত্র, এআই (কৃত্রিম মেধা), চিকিৎসা সরঞ্জাম, উন্নত সেন্সর থেকে ছোট ড্রোন এবং রোবটের মতো প্রযুক্তিতে ব্যবহার করা যায়।
পারমাণবিক ওই ব্যাটারিটির দৈর্ঘ্য, প্রস্থ এবং উচ্চতা ১৫ মিলিমিটার। পারমাণবিক আইসোটোপ এবং হিরের পাতলা আস্তরণ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে সেটি। কয়েনের থেকে ছোট ব্যাটারিতে ৬৩টি আইসোটোপকে একত্রিত করতে সক্ষম হয়েছে।
পারমাণবিক ব্যাটারি থেকে যে তেজস্ক্রিয় বিকিরণ হবে তা শরীরের কোনও ক্ষতি করবে না। পেসমেকারের মতো গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা যন্ত্রেও ওই ব্যাটারি ব্যবহার করা যাবে। পরিবেশের উপরেও ওই ব্যাটারির কোনও বিরূপ প্রভাব নেই।
বর্তমান ব্যাটারি ১০০ মাইক্রোওয়াটের হলেও ২০২৫ সালের মধ্যে সেটির ক্ষমতা ১ ওয়াট পর্যন্ত বৃদ্ধির চেষ্টা চলছে। ব্যাটারিতে এমন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে যার সাহায্যে আইসোটোপ থেকে শক্তি ব্যবহার করে বিদ্যুৎশক্তিতে রূপান্তরিত করা সম্ভব হবে।
কনকনে ঠান্ডা এবং কাঠফাটা গরমেও ব্যাটারিটির কার্যক্ষমতা ঠিক থাকবে। হিমাঙ্কের ৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াস নীচে থেকে ১২০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মতো ভয়ঙ্কর তাপমাত্রাতেও সঠিক ভাবে কাজ করতে পারবে ব্যাটারিটি।
বেটাভোল্টের ব্যাটারি তুলনামূলকভাবে অনেক সস্তা ও ছোট আকারের। এগুলো সেরকম কোনো তাপ উৎপন্ন করে না। এছাড়া, বেটাভোল্টের ব্যাটারি আকারে ছোট হওয়ার কারণে অনেকগুলো ব্যাটারি একসঙ্গে ব্যবহার করা যাবে। যা আরও বেশি শক্তি উৎপাদনে সাহায্য করবে।
এই ব্যাটারি তৈরির জন্য বিজ্ঞানীরা শক্তির উৎস হিসেবে ব্যবহার করেছেন তেজস্ক্রিয় উপকরণ নিকেল-৬৩। শক্তি রূপান্তরের জন্য ব্যবহার করা হয়েছে হীরার সেমিকন্ডাক্টর। সেমিকন্ডাক্টরটি মাত্র ১০ মাইক্রন পুরু এবং নিকেল-৬৩ এর শীটটি কেবল ২ মাইক্রন-পুরু। তেজস্ক্রিয় নিকেল-৬৩ ক্ষয় হতে থাকলে সেই শক্তি বৈদ্যুতিক প্রবাহে রূপান্তরিত হয়।
কোনোপ্রকার চার্জিং বা রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজন ছাড়াই ৫০ বছর ধরে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারবে ব্যাটারি। পারমাণবিক ব্যাটারির সাহায্যে মোবাইল ফোন একবার চার্জ করার পর ৫০ বছরেও সেই চার্জ ফুরাবে না।
নতুন এই প্রযুক্তি চার্জার অথবা বহনযোগ্য পাওয়ার ব্যাংকের প্রয়োজনীয়তা পুরোপুরি দূর করে ইলেকট্রনিক প্রযুক্তি খাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে পারে। লিথিয়াম ব্যাটারির মতো এর কোনো ক্ষয়ও হয় না।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।