সাইফুল ইসলাম, মানিকগঞ্জ : মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ইকবাল হোসেন ও উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি)তানভীর আহমদের বিরুদ্ধে নিলামের নামে বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। এই দুই কর্মকর্তাঅভিযানে জব্দ ৮টি ড্রাম ট্রাক নামমাত্র মূল্যে নিলামে বিক্রি করেন। তবে নিলাম পরিচালনায় তারা কোন আইনি বিধান মানেননি। নিজেদের খেয়াল-খুশি মতো কমিটি করে জব্দ ট্রাকগুলো নিলাম করেন তারা। অভিযোগ রয়েছে, মোটা অংকের টাকা নিয়ে ট্রাকগুলো নিলাম করা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাতের আঁধারে তিন ফসলি জমির মাটি কেটে সেগুলো ইটভাটায় বিক্রির খবর পেয়েগত ১১ জানুয়ারি দিবাগত গভীর রাতে (১২ জানুয়ারি) সাটুরিয়া ইউনিয়নেরশেখরীনগর এলাকায় অভিযান চালান উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) তানভীর আহমদ। এ সময় ১২টি ড্রাম ট্রাক জব্দ করা হয়। এর মধ্যে ৪টি ড্রাম ট্রাকের মালিককে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়। বাকি ৮টি ট্রাক জব্দ করে থানায় নেয়া হয়। ট্রাকের চালক ও চালকের সহযোগিসহ মোট ১৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
এরপর জব্দ ট্রাক ছাড়াতে শুরু হয় নানা তদবির। পরে স্থানীয় এক সাংবাদিক নেতার সহযোগিতায় ট্রাকগুলো নিলামে বিক্রির সিদ্ধান্ত নেন ইউএনও। এজন্য ওইদিনই উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তাডা. ইমরান হোসেনকে সভাপতি, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাখলিলুর রহমান মোল্লা ও উপজেলা প্রকৌশলী মো. ইমরুল হাসানকে সদস্য করেএকটি নিলাম কমিটি গঠন করা হয়। নিলাম কমিটি ১৫ জানুয়ারি বুধবার জব্দ একেকটি ট্রাক মাত্র ২৪ হাজার টাকা করে নিলামে বিক্রি করেন। অর্থাৎ ৮টি ট্রাম মাত্র ১ লাখ ৯২ হাজার টাকায় বিক্রি করা হয়। যদিও একেটি ট্রাকের দাম ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকা। যার মোট মূল্য প্রায় দুই থেকে আড়াই কোটি টাকা।
আইন অনুযায়ি, জব্দ মালামালের মালিক পাওয়া না গেলে সেগুলো নিলাম করার জন্য আদালতে আবেদন করতে হয়। এরপর আদালত সার্টিফাইড করার পর নিলামের বিষয়ে বিজ্ঞপ্তি দিতে হয়। রাজস্ব বৃদ্ধিতে প্রয়োজনে মাইকিংও করা হয়। তবে জব্দ ট্রাক নিলাম করতে এর কোনোটাই করা হয়নি। এমনকি সংশ্লিষ্ট দপ্তরের নোটিশ বোর্ডেও এ সংক্রান্ত কোনো নোটিশ টাঙানো হয়নি। ফলে নিলাম সম্পর্কে কিছুই জানেন না এলাকাবাসী। কেবল মাত্র জব্দকৃত গাড়িগুলোর মালিকদের নিয়ে নিলাম পরিচালনা করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে গত রোববার সাটুরিয়া উপজেলায় গিয়ে ইউএনও মো. ইকবাল হোসেন, উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) তানভীর আহমদ, প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তাডা. ইমরান হোসেন ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা খলিলুর রহমান মোল্লাকে তাদের কার্যালয়ে পাওয়া যায় না। এদের মধ্যে ইউএনও, এসিল্যান্ড ও পিআইও জেলা সমন্বয় কমিটির মিটিংয়ে ছিলেন। প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. ইমরান হোসেনের মোবাইলে কল দেয়া হলে তিনি বলেন, অফিসের কাজে তিনি বাহিরে আছেন। ফিরতে দেরি হবে। এ বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলী মো. ইমরুল হাসানের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন তিনি।
উপজেলা প্রকৌশলী মো. ইমরুল হাসান বলেন, ইউএনও স্যারের পরামর্শে নিলাম পরিচালনা করা হয়েছে। তবে জব্দ ট্রাকের কোনো ভ্যালুয়েশন করা হয়নি। নিলাম কমিটিকে সিগনেটরি কমিটি হিসেবে দাবি করে এই কর্মকর্তা বলেন, আমরা মূলত ইউএনও স্যারের আদেশ পালন করেছি।
এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) তানভীর আহমদকে কল করা হলে সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে তিনি কল কেটে দেন। এরপর বারবার কল করা হলেও তিনি আর কল রিসিভ করেননি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইকবাল হোসেন বলেন, এ বিষয়ে নিলাম কমিটি করা হয়েছে। নিলাম কিভাবে হয়েছে, তা কমিটির সদস্যরাই বলতে পারবেন।
বিষয়টি নিয়ে মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক ড. মনোয়ার হোসেন মোল্লা বলেন, গাড়ি জব্দ বা নিলামের বিষয়টি আমার জানা নেই। আপনার কাছ থেকেই জানলাম। তবে নিলামে কম মূল্য বা বেশি মূল্য কোন বিষয় না। নিলামে যে দাম উঠবে সে দামেই বিক্রি করতে পারে নিলাম কমিটি। বিধি মেনে নিলাম পরিচালনা করা হলে কিছু করার নেই। তবে নিলাম পরিচালনায় কোন অনিয়ম হলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।