বিশ্বের মানচিত্রে একটি বিশাল দেশ—অস্ট্রেলিয়া। কিন্তু জানলে অবাক হবেন, এই বিশাল ভূখণ্ডের প্রায় ৯৫ শতাংশ এলাকাতেই মানুষের বসবাস নেই। এত বড় দেশের এতখানি এলাকা জনশূন্য থাকার পেছনে আছে একাধিক কারণ—ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য, চরম জলবায়ু, পানির সংকট, এবং ঐতিহাসিক বাস্তবতা।
শুষ্কতা ও মরুভূমি—জীবনযাপন করার অযোগ্য পরিবেশ
অস্ট্রেলিয়া বিশ্বের সবচেয়ে শুষ্ক জনবসতিপূর্ণ মহাদেশ। দেশের প্রায় ৭০% এলাকা মরুভূমি বা আধা-মরুভূমি, যাকে বলা হয় “আউটব্যাক”। এই এলাকাগুলোতে:
- বার্ষিক বৃষ্টিপাত মাত্র ২৫০ মিলিমিটারেরও কম
- গ্রীষ্মে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যায়
এই চরম জলবায়ু মানবজীবনের জন্য খুবই প্রতিকূল। ফলে এ অঞ্চলে বসতি স্থাপন প্রায় অসম্ভব।
পানীয় জলের তীব্র সংকট
অস্ট্রেলিয়ার অন্তর্দেশীয় এলাকায় মিঠা পানির উৎস অত্যন্ত সীমিত। পানির অভাব:
- কৃষিকাজের জন্য বড় বাধা
- জনবসতির স্থায়ী ভিত্তি গড়ার পথে অন্যতম প্রধান প্রতিবন্ধক
ফলে এই সব অঞ্চলে মানুষ বসবাস করতে আগ্রহী নয়।
উর্বর জমির অভাব—খাদ্য উৎপাদনে বড় বাধা
মরুভূমি ও আধা-মরুভূমি এলাকার মাটি অনুর্বর, যা:
- চাষাবাদের অনুপযোগী
- খাদ্য উৎপাদন কঠিন করে তোলে
এই পরিস্থিতিতে কৃষি অর্থনীতি গড়ে ওঠে না, আর কৃষি না থাকলে জনবসতির সম্ভাবনাও ক্ষীণ হয়।
অবকাঠামোগত ঘাটতি—টিকে থাকা কঠিন
প্রত্যন্ত জনবসতি এলাকায় বসবাসের জন্য প্রয়োজনীয়:
- রাস্তা, বিদ্যুৎ, পানি, স্বাস্থ্যসেবা ও যোগাযোগব্যবস্থা
কিন্তু জনসংখ্যা কম থাকায় এসব অবকাঠামো গড়ে তোলা ব্যয়বহুল এবং রক্ষণাবেক্ষণ করাও কঠিন। ফলে অনেকেই এসব এলাকা থেকে দূরেই থাকতে চান।
উপকূলেই কেন গড়ে উঠেছে বড় শহরগুলো?
অস্ট্রেলিয়ার ৮৫-৯০ শতাংশ মানুষ বাস করেন উপকূলবর্তী এলাকায়, বিশেষ করে দেশের পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলে। যেমন:
- সিডনি
- মেলবোর্ন
- ব্রিসবেন
- পার্থ
- অ্যাডিলেড
এই শহরগুলো গড়ে উঠেছে সমুদ্রের ধারে, কারণ:
- মৃদু ও আরামদায়ক জলবায়ু
- পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত ও উর্বর জমি
- পানির সহজলভ্যতা
- বন্দর ও বাণিজ্যিক সুবিধা
ইতিহাসও বলছে—উপকূলই ছিল প্রথম পছন্দ
অস্ট্রেলিয়া ব্রিটিশ উপনিবেশ ছিল বহু বছর। সেই সময় থেকেই উপকূলবর্তী এলাকায় গড়ে ওঠে বসতি। কারণ:
- সহজ প্রবেশাধিকার
- কৃষিকাজের সম্ভাবনা
- সমুদ্রপথে ব্যবসা ও বাণিজ্য
অন্যদিকে, অভ্যন্তরীণ অঞ্চলগুলো রয়ে গেছে পশ্চাৎপদ ও অবিকশিত।
অস্ট্রেলিয়ার শূন্যতা: প্রকৃতি ও ইতিহাসের মিলিত প্রতিচ্ছবি
ভূগোল, জলবায়ু ও ইতিহাস—এই তিনটি মিলে অস্ট্রেলিয়াকে করেছে এক বিস্তীর্ণ অথচ জনশূন্য দেশ। দেশটির বেশিরভাগ জমি:
- অব্যবহৃত
- জনশূন্য
- রুক্ষ ও শুষ্ক
এই বিস্ময়কর বাস্তবতা অস্ট্রেলিয়াকে পৃথিবীর সবচেয়ে কম জনবসতিপূর্ণ বৃহৎ দেশের একটি হিসেবে গড়ে তুলেছে।
বিশ্বের শীর্ষ ১০ শক্তিশালী পাসপোর্ট ২০২৫ : শীর্ষে সিঙ্গাপুর, তালিকায় জাপান-যুক্তরাষ্ট্রও
সংক্ষেপে মূল কারণসমূহ:
কারণ | ব্যাখ্যা |
---|---|
শুষ্ক জলবায়ু | বৃষ্টিপাত কম, তাপমাত্রা বেশি |
পানির সংকট | পানীয় জলের অভাব |
অনুর্বর মাটি | কৃষিকাজের অনুপযোগী জমি |
অবকাঠামোর অভাব | সেবা পৌঁছানো কঠিন |
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট | উপনিবেশিক শাসনের সময় উপকূলেই ছিল বসতি |
অস্ট্রেলিয়া শুধু একটি দেশ নয়, এটি প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য ও চরম বাস্তবতার এক অপূর্ব নিদর্শন। এর জনশূন্যতার রহস্য আমাদের ভাবায়—কীভাবে প্রাকৃতিক ও ঐতিহাসিক কারণ মিলে একটি দেশকে গড়ে তুলতে পারে ব্যতিক্রমী একভাবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।