বুধের পরিবেশ জীবনের উপযোগী নয়। তাপমাত্রা ও সৌরবিকিরণের কারণে এ গ্রহে টিকে থাকা অসম্ভব। এর ব্যাসার্ধ ২ হাজার ৪৪০ কিলোমিটার। পৃথিবীর প্রস্থের তিন ভাগের এক ভাগ থেকে একটু বেশি। সূর্য থেকে বুধের গড় দূরত্ব ৫ কোটি ৭ লাখ কিলোমিটার। এই দূরত্ব পাড়ি দিতে আলোর সময় লাগে মাত্র ৩ মিনিট ২ সেকেন্ড। পৃথিবী নিজ অক্ষের ওপর ২৩.৫ ডিগ্রি কোণে হেলে আছে। আর বুধ সূর্যের চারপাশে নিজের কক্ষপথের সমতলের সাপেক্ষে হেলে রয়েছে মাত্র ২ ডিগ্রি কোণে। ফলে এটি প্রায় পুরো সোজা হয়ে ঘোরে। তাই অন্য অনেক গ্রহে যেমন ঋতু আছে, তেমন ঋতু দেখা যায় না বুধে। বুধের কোনো চাঁদ নেই। নেই চারপাশে…
Author: Yousuf Parvez
সৌরজগতের সবচেয়ে ছোট গ্রহ বুধের অবস্থান সূর্যের সবচেয়ে কাছে। আকৃতিতে পৃথিবীর চাঁদের চেয়ে সামান্য বড়। বুধের পৃষ্ঠে দাঁড়িয়ে পৃথিবীকে দেখলে মনে হবে, পৃথিবী বুঝি সূর্যের চেয়ে তিন গুণ বড়! আর সূর্যের আলো তখন সাত গুণ বেশি উজ্জ্বল দেখাবে। অবস্থানের কারণে গ্রহটির তাপমাত্রা খুব গরম, আবার খুব ঠান্ডা হতে পারে। দিনে এর তাপমাত্রা হয় প্রায় ৪৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আবার রাতে তাপমাত্রা নেমে যায় মাইনাস ১৮০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। কারণ, তাপ ধরে রাখার জন্য গ্রহটিতে কোনো বায়ুমণ্ডল নেই। সূর্যের কাছাকাছি থাকা সত্ত্বেও বুধ সৌরজগতের সবচেয়ে উষ্ণতম গ্রহ নয়। সবচেয়ে উষ্ণতম গ্রহ শুক্র। কারণ শুক্র গ্রহের বায়ুমণ্ডল ঘন। বুধ ঘুরছে অতি দ্রুত গতিতে। তবে…
পৃথিবী থেকে কোনো কিছু ওপরের দিকে ছুড়লে তা পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণের প্রভাবে নিচের দিকে নেমে আসে বা পড়ে যায়। পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ বলকে অতিক্রম করে যেতে পারলে তা আর পৃথিবীতে ফিরে আসবে না। পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ বল অতিক্রম করে যেতে হলে পৃথিবী থেকে ছুড়ে দেওয়া বস্তুর বেগ হতে হবে পৃথিবীর মুক্তিবেগ বা স্কেপ ভেলোসিটির চেয়ে বেশি। পৃথিবীর মুক্তিবেগ হলো সেকেন্ডে ১১ দশমিক ২ কিলোমিটার বা ঘণ্টায় ৪০ হাজার ৩২০ কিলোমিটার। যে স্যাটেলাইটগুলো একেবারে পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ পার হয়ে মহাশূন্যে স্থাপন করা হয়, সেগুলোকে রকেটের সাহায্যে ঘণ্টায় প্রায় ৪১ হাজার কিলোমিটার গতিতে উৎক্ষেপণ করা হয়। যেসব স্যাটেলাইট আমাদের পৃথিবীর চারপাশে ঘুরতে থাকে, সেগুলো আমাদের পৃথিবীর…
সৌরজগৎ এর কাজ শেষ করে মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি বা ছায়াপথের আরও পূর্ণাঙ্গ ত্রিমাত্রিক ছবি তৈরিতে বিজ্ঞানীদের ক্যামেরাটি সাহায্য করবে। ছোট, ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বিভিন্ন বস্তুর যে স্পষ্ট ছবি তোলার ক্ষমতা এলএসএসটির আছে, আগের কোনো টেলিস্কোপেরই তা ছিল না। এ থেকে মিল্কিওয়ের সৃষ্টি ও গঠনের ব্যাপারে বেশ গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যাবে বলে ভাবছেন বিজ্ঞানীরা। এর সাহায্যে পৃথিবী থেকেই মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির আনুমানিক ১৭ বিলিয়ন নক্ষত্রের বিশাল মানচিত্র তৈরি করা সম্ভব হবে। ২০১৪ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সায়েন্স ফাউন্ডেশন (NSF) প্রকল্পটির জন্য তহবিলের অনুমোদন দেওয়ার পর আনুষ্ঠানিকভাবে এর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ইউনাইটেড স্টেটস ডিপার্টমেন্ট অব এনার্জি এ ক্যামেরা নির্মাণে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করে। এটি পরিচালিত হবে…
দুনিয়ার বৃহত্তম অসাধারণ এলএসএসটি ক্যামেরা ক্যামেরার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলোর একটি হলো ডার্ক ম্যাটার সম্পর্কে আরও স্পষ্ট ধারণা পাওয়া। মহাবিশ্বের মোট ভরের প্রায় ৮৫ শতাংশ এই ডার্ক ম্যাটার বা গুপ্ত বস্তু। অর্থাৎ অজানা ভর। যে ভরের কথা আমরা জানি, পরোক্ষভাবে এর প্রমাণ পাওয়া যায়, তবে প্রত্যক্ষভাবে আজও এর সন্ধান মেলেনি। রুবিন অবজারভেটরির প্রকল্পের নির্মাণ পরিচালক জেলকো ইভেজিচ (Željko Ivezić) বলেন, ‘সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র ও রাতের আকাশের সবচেয়ে তথ্যপূর্ণ মানচিত্র তৈরি করতে সক্ষম এই ক্যামেরাটি।’ এলএসএসটির মোট চারটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য-উদ্দেশ্য আছে। ডার্ক ম্যাটার বা গুপ্ত বস্তুর সন্ধানের পাশাপাশি এর দ্বিতীয় কাজ, মহাবিশ্বের বিভিন্ন বস্তুর আরও পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরিতে সাহায্য করা। ৯৬৪ সালে পারস্যের…
একটি টেলিস্কোপকে বোঝার জন্য তিনটি জিনিস ভালোভাবে বোঝা লাগবে। এক, মিরর সিস্টেম; দুই, ফিল্ড অব ভিউ এবং তিন, ক্যামেরা। মোট তিনটি আয়না নিয়ে গড়ে উঠেছে এলএসএসটি ক্যামেরার সম্পূর্ণ থ্রি-মিরর সিস্টেম। এটা মূলত ‘পল-বেকার থ্রি-মিরর অ্যানাস্টিগম্যাট’ নামে একধরনের ব্যবস্থার ওপর নির্মিত। ফলে এক বা দুই আয়নার টেলিস্কোপের চেয়ে অনেক স্পষ্ট ও অবিকৃত ছবি পাওয়া যাবে। এখানে প্রথম ও তৃতীয় আয়নাটি মূলত একটি কাচ দিয়েই তৈরি। ফলে এর মোট দৈর্ঘ্য আর অযথা বাড়েনি। তারপরও এর আয়নাগুলোর সম্পূর্ণ দৈর্ঘ্য হয়েছে ৮.৩ মিটার। মানে পুরো একটি টেনিস কোর্টের সমান! এটি ব্যবহার করে আকাশের ৩.৫ ডিগ্রিজুড়ে ছবি তুলতে পারবে এলএসএসটি। এই ফিল্ড অব ভিউটা কত…
শেষ হলো দীর্ঘ অপেক্ষা! দুই দশকের অক্লান্ত পরিশ্রমের পর অবশেষে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ও শক্তিশালী ক্যামেরার কাজ শেষ করেছেন বিজ্ঞানীরা। মূলত জ্যোতির্বিদ্যা ও জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞানের জন্য এ ডিজিটাল ক্যামেরা তৈরি করা হয়েছে। লিগ্যাসি সার্ভে অব স্পেস অ্যান্ড টাইম বা এলএসএসটি (LSST) নামের অসাধারণ এ যন্ত্র আমাদের মহাবিশ্ব সম্পর্কে জ্ঞান অর্জনে যুগান্তকারী ভূমিকা পালন করবে। জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের মতে, এলএসএসটি ক্যামেরার নির্মাণ কেবল একটি প্রযুক্তিগত অগ্রগতি নয়, বরং মহাবিশ্ব অন্বেষণের ক্ষেত্রে যুগান্তকারী এক ঘটনা। যেহেতু এটি মানব ইতিহাসের সবচেয়ে শক্তিশালী ক্যামেরা, তাই এর সাহায্যে মহাকাশের এত দূরের বস্তুও দেখা যাবে, যা আগে কখনো আমরা দেখতে পাইনি। ৩ হাজার ২০০ মেগাপিক্সেল বা ৩.২ গিগাপিক্সেল রেজ্যুলুশনের…
গঙ্গাফড়িং একটু বড় ধরনের, সুন্দর রঙিন দেখতে একধরনের পতঙ্গ। একে সংক্ষেপে ফড়িংও বলা হয়। এর দুই পাশে দুটি করে চারটি পাখা। মাথা একটু বড় এবং সে চারপাশে মাথা ঘুরিয়ে দেখতে পারে। তা ছাড়া এর পুঞ্জীভূত চোখ একই সঙ্গে ৩৬০ ডিগ্রি কোণে, অর্থাৎ চারদিক দেখতে পারে। এর পর্যবেক্ষণ ক্ষমতাও অনেক বেশি। প্রশ্ন হলো, একে খুঁজে বের করা কঠিন কেন। এখানে বলা দরকার, সাধারণত বাগানে বা বনের ঝোপঝাড়ে গঙ্গাফড়িং দেখা যায়। অবশ্য আজকাল নগরায়ণ বাড়ছে। বন ও ঝোপঝাড় কেটে লোকালয় ও শিল্পকারখানা গড়ে উঠছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলেও প্রাণিজগতে এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়ছে। তাই অনেক পতঙ্গ প্রজাতির প্রাণী বিলুপ্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। এই…
কোন বস্তুর পক্ষে আসলে আলোর গতিতে চলা সম্ভব না। কাজেই ৫০০ ফুট তো দূরের কথা, আপনি ১ ফুটও আলোর গতিতে চলতে পারবেন না। আলোর গতিতে চলাচল করতে পারে কেবল ফোটন। ফোটন হচ্ছে আলোর কণা। স্থির অবস্থায় এর ভর শূন্য। ব্যাপারটা আপেক্ষিক ভরবেগের সমীকরণ থেকে ব্যাখ্যা করা যায়। এখানে p হচ্ছে কোন একটা বস্তুর আপেক্ষিক ভরবেগ, m0 হচ্ছে স্থির অবস্থায় বস্তুটির ভর এবং v হচ্ছে বস্তুটির বেগ। সমীকরণটি থেকে বোঝা যাচ্ছে, বস্তুটির বেগ (v) যদি আলোর বেগের (c) সমান হয়, তাহলে বস্তুটির আপেক্ষিক ভরবেগ (p) কিন্তু অনির্ণেয় হয়ে যাবে। আর বস্তুটির বেগ যদি আলোর বেগ থেকে বেশি হয়, তাহলে ভরবেগ দাঁড়াবে একটি…
আমাদের মস্তিষ্ক হলো একটি কেন্দ্রীয় কম্পিউটারের মতো। এটা চিন্তাভাবনা, হৃদ্যন্ত্রের কাজ নিয়ন্ত্রণ, খাদ্যের পরিপাক প্রক্রিয়া পরিচালনাসহ বেঁচে থাকার জন্য আমাদের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ পরিচালনা ও সমন্বয় সাধন করে। নির্দেশ প্রদান করে। আর স্নায়ুতন্ত্র এই সব নির্দেশ বা সংকেত পরিবহন করে প্রয়োজনীয় অঙ্গপ্রত্যঙ্গে পৌঁছে দেয়। ধরা যাক, আমার হাতে একটা মশা বসে আচ্ছাসে কামড়াতে শুরু করল। এই খবর ত্বকে বিস্তৃত স্নায়ুতন্ত্রের শাখা–প্রশাখার কোষগুলো বিশেষ সংকেতের মাধ্যমে মস্তিষ্কে পাঠাবে। শুধু অনুভূতিটাই পাঠাবে, স্নায়ুকোষগুলোর কিন্তু চিন্তা করার সক্ষমতা নেই। মশা না অন্য কোনো পোকা, কী করা দরকার প্রভৃতি চিন্তা সে করতে পারে না। শুধু সংকেত পরিবহনই তার কাজ। মস্তিষ্কের সামনের অংশের কাজ হলো চিন্তা…
সৌরজগতের দ্বিতীয় গ্রহ শুক্র। সূর্য ও চাঁদের পরে আকাশে যে বস্তুটি স্পষ্ট দেখা যায়, সেটাই শুক্র গ্রহ। রোমানরা একে প্রেম ও সৌন্দর্যের দেবী ভেনাসের নামে নামকরণ করে। কোনো দেবীর নামে নামকরণ করা একমাত্র গ্রহও এটি। ব্যাবিলনীয়রা ৭ম শতাব্দীতে প্রথম শুক্র গ্রহের কথা লিপিবদ্ধ করেন। ১৬১০ সালে গ্যালিলিও গ্যালিলি তাঁর নিজের তৈরি টেলিস্কোপের সাহায্যে শুক্র গ্রহের দশা পর্যবেক্ষণ করেন। গ্রহটি যেহেতু সূর্যের অনেক কাছে, তাই তাপমাত্রাও অনেক বেশি। প্রায় ৪৬৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই তাপমাত্রায় শীশাও গলে যায়। গ্রহটির গঠন অনেকটা পৃথিবীর মতো, অর্থাৎ পাথুরে গ্রহ। এর কেন্দ্রে রয়েছে লোহা এবং খনিজ পদার্থ। তবে গঠন এক হলেও বায়ুমণ্ডল পৃথিবীর চেয়ে আলাদা। এর…
১৯১৯ সালে আর্থার এডিংটন ও তাঁর দল পশ্চিম আফ্রিকার কাছে প্রিন্সিপে দ্বীপে সূর্যগ্রহণের ছবি তুলেছিল আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিক তত্ত্ব প্রমাণের জন্য। ওই ছবিতে সূর্যের পাশের কয়েকটি তারার অবস্থান বিশ্লেষণ করে এডিংটন দেখিয়েছিলেন, তাদের আলো আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিক তত্ত্ব অনুযায়ী সূর্যের মাধ্যাকর্ষণ ক্ষেত্রে স্থান-কালের বক্রতা অনুসরণ করে। এভাবে প্রথমবারের মতো আপেক্ষিক তত্ত্বের সরাসরি প্রমাণ পাওয়া যায়। পরে যদিও এডিংটনের ওই গবেষণা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল, কিন্তু ১৯৭৯ সালে ১৯১৯-এ তোলা ছবিগুলো আবার বিশ্লেষণ করে এডিংটনের দাবির সত্যতা প্রতিষ্ঠা করা গেছে। বর্তমানে সূর্যের কাছাকাছি অবস্থানে থাকার সময় শুক্র ও বুধ গ্রহের পৃষ্ঠ থেকে পৃথিবী থেকে প্রেরিত রাডার বেতারতরঙ্গের প্রতিফলনের সময় থেকেই আপেক্ষিকতার সূত্রকে…
১৯৬৫ সালের ২৩ নভেম্বরের পূর্ণগ্রহণ বেশ আলাদা ছিলো। বলয়গ্রহণের সময় চাঁদ আমাদের থেকে দূরে থাকে, সূর্যকে পুরোপুরি ঢাকতে পারে না। সূর্য আংটির মতো চাঁদের কালো চাকতির চারদিকে জেগে থাকে। ফলে পূর্ণগ্রহণের আবহ পাওয়া যায় না। ১৯৯৫ সালের ২৪ অক্টোবর বাংলাদেশের একেবারে দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্ত দিয়ে একটি পূর্ণগ্রহণের পথ গিয়েছিল, আধুনিক সময়ে সেটাই ছিল প্রথম গ্রহণ। বাংলাদেশের জ্যোতির্বিদ্যায় উত্সাহীরা সেটা দেখতে গিয়েছিলেন সুন্দরবনে। এরপর পূর্ণগ্রহণ হয়েছিল ২০০৯ সালের ২২ জুলাই। অনুসন্ধিত্সু চক্রের একটা বড় দলকে নিয়ে সেবার পঞ্চগড়ে যাওয়ার অভিজ্ঞতা আমার হয়েছিল। সেখানে অন্তত ১৫ হাজার মানুষ পঞ্চগড় স্টেডিয়ামে জড়ো হয়েছিল। সেই সকালে আকাশ ছিল মেঘাচ্ছন্ন, বৃষ্টি পড়ছিল। তবু পূর্ণগ্রহণের সময়…
ধরা যাক, আমরা বিষুবরেখার কোনো বিন্দুতে অবস্থিত। তাহলে পৃথিবী স্থির থাকলে পৃথিবীর বুকে চাঁদের ছায়া ঘণ্টায় ৩ হাজার ৭০০ কিলোমিটার বেগে পূর্ব দিকে সরত (চাঁদের কক্ষপথ ও ভূপৃষ্ঠ বক্র হলেও কয়েক মিনিটের জন্য আমরা ওই কক্ষপথকে একটা সরলরেখা বলে কল্পনা করে নিতে পারি)। কিন্তু যেহেতু পৃথিবী ওখানে ঘণ্টায় ১ হাজার ৭০০ কিমি বেগে সেই পূর্ব দিকেই সরছে, সে জন্য আমাদের কাছে মনে হবে, চাঁদের ছায়া বিষুবরেখার কাছে ৩ হাজার ৭০০ – ১ হাজার ৭০০ = ২,০০০ কিমি বেগে পৃথিবীর বুকে ভ্রমণ করছে। বিভিন্ন অক্ষাংশে এই মান বিভিন্ন হবে। যেমন ২১ আগস্টের গ্রহণের সময় যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিমে যেখানে গ্রহণের শুরু, সেখানে ছায়ার…
পূর্ণগ্রহণের সময় পুনরাবৃত্তি কেন হয়, সে জন্য তিন ধরনের মাস ও বছরকে আমাদের বুঝতে হবে। প্রথমটি হলো এক অমাবস্যা (বা পূর্ণিমা) থেকে পরবর্তী অমাবস্যা (বা পূর্ণিমা)। একে জ্যোতির্বিদেরা বলেন সাইনোডিক (synodic) মাস। এর গড় দৈর্ঘ্য ২৯.৫৩০৫৯ দিন। দ্বিতীয়টি হলো একটি উচ্চপাত (বা নিম্নচাপ) যে জায়গায় সূর্যের সঙ্গে একটি সরলরেখায় মিলিত হয়েছিল, সেখানে বছর শেষে সূর্যের ফিরে আসতে যে সময় লাগে। একে বলে ড্রাকোনিক বছর। যেহেতু চাঁদের নোড বছরে ১৯.৩৬ ডিগ্রি পেছনে সরে আসে, সে জন্য ড্রাকোনিক বছর সৌরীয় বছর থেকে কয়েক সপ্তাহ ছোট। এক ড্রাকোনিক বছর ৩৪৬.৬২০০৫ দিনের সমান। তৃতীয়ত, এক অনুভূ (Perigee) থেকে আরেক অনুভূ পর্যন্ত যেতে চাঁদের যত…
সূর্যগ্রহণের সময় পৃথিবী, চাঁদ ও সূর্য একই সরলরেখায় আসে। এই চাঁদ হলো অমাবস্যার চাঁদ। অথচ প্রতিটি অমাবস্যায় কিন্তু সূর্যগ্রহণ হয় না। কারণ, চাঁদ সাধারণত সূর্যের একটু ওপরে না হয় একটু নিচ দিয়ে সূর্যকে পাড়ি দেয়। ১ নম্বর চিত্রে আমরা দেখছি পৃথিবীর চারদিকে চাঁদের কক্ষপথ সৌরীয় তল বা অয়নপথকে (Ecliptic) প্রায় ৫ ডিগ্রি কোণে ছেদ করে। পৃথিবীর উত্তর মেরুর অনেক ওপর থেকে সৌরমণ্ডলের দিকে তাকালে যা দেখা যায়, এই চিত্র সেভাবে আঁকা হয়েছে। চাঁদ যখন দক্ষিণ থেকে উত্তরে যায় এবং অয়নপথের সঙ্গে ০ ডিগ্রি অবস্থানে আসে, সেই বিন্দুকে উচ্চপাত (Ascending node) এবং উত্তর থেকে দক্ষিণে যাওয়ার সময় অয়নপথের ছেদবিন্দুকে নিম্নপাত (Descending…
পূর্ণগ্রহণের সময় চাঁদ সূর্যকে ঢেকে দেয়, তার ছায়া পৃথিবীর বুকে ভ্রমণ করে প্রচণ্ড গতি নিয়ে। সেই ছায়ার প্রতীক্ষায় বসে থাকা এক অপূর্ব অনুভব। তেমনই গ্রহণের সময় সূর্যের হীরক দ্যুতি, প্রমিনেন্স ও করোনা, দিনের আলোয় শুক্র গ্রহের আবির্ভাব, বাতাসের শীতলতা—সবই এক বিস্ময়কর অভিজ্ঞতা। মানুষের সঙ্গে আমাদের সৌরজগতের মেলবন্ধন ঘটাতে পূর্ণ সূর্যগ্রহণের সঙ্গে অন্য কোনো কিছুর তুলনা চলে না। যাঁদের সেটা দেখার অভিজ্ঞতা আছে, তাঁরা জানেন এটা কী রকম আবেগপূর্ণ ব্যাপার। ২০১৭ সালের ১৯ আগস্ট আমি যুক্তরাষ্ট্রের আইওয়া স্টেটে ছিলাম। আমার পরিকল্পনা ছিল আইওয়া থেকে দক্ষিণে মিজৌরি কিংবা পশ্চিমে নেব্রাস্কা স্টেটে ছয়-সাত ঘণ্টা গাড়ি চালিয়ে গিয়ে পূর্ণগ্রহণ দেখার। কিন্তু ১৯ তারিখ গভীর…
বিংশ শতাব্দীর বিখ্যাত বাঙালি চিত্রশিল্পী। বাংলাদেশের আধুনিক শিল্পকলা আন্দোলনের পথিকৃৎ। ১৯৪৩ সালে হাতে আঁকা দুর্ভিক্ষ চিত্রমালার মাধ্যমে দেশ ছাড়িয়ে বিশ্বের কাছে হয়েছেন বিখ্যাত। তাঁর ছবি যেন কথা বলে। কিছু দিন তার ‘সাঁওতাল দম্পতি’ নিলামে বিক্রি হয়েছে ৪ কোটি টাকার বেশি দামে। বাংলাদেশের কোনো শিল্পীর শিল্পকর্মের জন্য এটাই সর্বোচ্চ মূল্যে বিক্রি হওয়ার রেকর্ড। তিনি বাংলাদেশের আধুনিক চিত্রশিল্পের জনক জয়নুল আবেদিন। তাঁর নামেই বুধ গ্রহের একটা গর্তের নামকরণ করা হয়েছে। কিন্তু কীভাবে জয়নুল আবেদিনের নাম দেশ–বিদেশ ছাড়িয়ে পৌঁছে গেল বুধ গ্রহের বুকে? ২০০৪ সালে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা বুধ গ্রহ সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহের জন্য মেসেঞ্জার নামে একটি মহাকাশযান পাঠায়। ২০০৮ সালে…
সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা প্রায় ২৭ হাজার গ্রহাণুর খোঁজ পেয়েছেন। তাও আবার টেলিস্কোপের তোলা পুরানো ছবি থেকে। আর গ্রহাণু খুঁজে পাওয়ার কাজটা করেছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। মূলত গ্রহাণুগুলো অতি ক্ষুদ্র ও অস্পষ্ট হওয়ায় এর আগে এগুলো শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে গ্রহাণু খুঁজে পাওয়া তুলনামূলক সহজ। পাশাপাশি সম্ভাব্য বিপজ্জনক গ্রহাণু চিহ্নিত করতেও এই প্রযুক্তি সহায়তা করবে। এমনকি একটা গ্রহাণু কত বছর পরে পৃথিবীকে আঘাত করতে পারে, সম্ভাব্য সেই সময় বলে দিতে পারবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। আসলে সৌরজগতে গ্রহ ও উপগ্রহ ছাড়াও কিছু পাথুরে বস্তু সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে। এসব পাথুরে বস্তুকে বলা হয় গ্রহাণু। বেশিরভাগ নতুন আবিষ্কৃত গ্রহাণু মঙ্গল এবং বৃহস্পতির…
নক্ষত্রের সংখ্যা, প্রাণ-উৎপত্তির বিভিন্ন পরিবেশ ও পরিস্থিতি—এই তিনটি বিবেচনা করে বুদ্ধিমান প্রাণীর গতিপ্রকৃতি ও তা থেকে উন্নত প্রযুক্তিসম্পন্ন সভ্যতার বিকাশের প্রক্রিয়া বিশ্লেষণ করা যেতে পারে। এর মাধ্যমে আমাদের গ্যালাক্সিতে কী পরিমাণ উন্নত প্রযুক্তিসম্পন্ন সভ্যতা থাকতে পারে, ড্রেক সমীকরণের সাহায্যে তার একটা গাণিতিক হিসাব কষা যায়। এখানে উন্নত প্রযুক্তিসম্পন্ন সভ্যতা (অ্যাডভান্সড টেকনিক্যাল সিভিলাইজেশন) বলতে ন্যূনতম বেতার জ্যোতির্বিদ্যা ব্যবহারে সক্ষম সভ্যতাকে বোঝানো হয়েছে, যদিও এই সংজ্ঞা সীমাবদ্ধ। অসংখ্য জগৎ থাকতে পারে। যার অধিবাসীরা দক্ষ ভাষাবিদ, অসাধারণ কবি-সাহিত্যিক ও সংগীতজ্ঞ। কিন্তু বেতার জ্যোতির্বিদ্যায় অক্ষম। ফলে সেখানে না গিয়ে আমাদের পক্ষে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব নয়। এই হিসাবে পৃথিবীতে প্রাণের উদ্ভব ও বিকাশ,…
গবেষকরা বলেছেন, ৪০ হাজার কোটি নক্ষত্রের এক-তৃতীয়াংশে (fp = ১/৩) গ্রহমণ্ডল রয়েছে। তাহলে মিল্কিওয়েতে ১৩ হাজার কোটিসংখ্যক গ্রহমণ্ডল রয়েছে। সৌরজগতের আদলে ধরে নিই, প্রতিটিতে ১০টি গ্রহ আছে। তাহলে মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সিতে ১ লাখ ৩০ হাজার কোটি গ্রহ রয়েছে। জীবনের মহাজাগতিক নাটকের জন্য এ এক বিশাল ক্ষেত্র। সৌরজগতে কয়েক ধরনের গ্রহ-উপগ্রহ আছে, যেগুলো হতে পারে কতগুলো শ্রেণির প্রাণীর জন্য অনুকূল। একটা নিশ্চিতভাবে পৃথিবী এবং ইদানীং বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও সাক্ষ্যপ্রমাণ থেকে প্রায় নিশ্চিতভাবে বলা যায়, মঙ্গলে একসময় প্রাণের পরিবেশ ছিল। যদিও এখন পর্যন্ত সেখানে সরাসরি কোনো জীবাশ্ম–সাক্ষ্য পাওয়া যায়নি। টাইটানে জৈব মেঘ, বৃহস্পতির আবহমণ্ডলের পরিবেশ ও এর উপগ্রহ ইউরোপার কথাও বলা যায় তার পানির…
একবিংশ শতাব্দীতে এসেও অনেক ধরনের অনিশ্চয়তা আমাদের ঘিরে আছে। গ্রহাণু বা ধূমকেতুর আঘাত। ছোট ধূমকেতু বা গ্রহাণুর ধেয়ে আসা প্রতিরোধ করতে পারলেও বড় গ্রহাণু বা ধূমকেতুকে কতটা পারব, তা আমরা এখনো জানি না। জানি না অনেক মহাজাগতিক বিপর্যয়ের কথা, বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা করছে জীবাশ্ম জ্বালানির কারণে ষষ্ঠ গণবিলুপ্তি। পরমাণু বা নিউক্লিয়ার যুদ্ধের ভয় উত্তর কোরিয়ার হাইড্রোজেন বোমার পরীক্ষামূলক বিস্ফোরণ থেকে বুঝতে পারি পরাশক্তি ছাড়াও অন্যান্য দেশের কাছে নিউক্লিয়ার শক্তি চলে যাচ্ছে। সবাই বলছে, পরাশক্তিগুলোর কাছে আমরা অনিরাপদ। সবাই তার নিজের দেশের জন্য ভাবছে, কিন্তু প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে পৃথিবীর জন্য কারা ভাববে, পৃথিবীকে কারা বাঁচাবে? প্রাযুক্তিক বয়ঃসন্ধিকাল আধুনিক প্রযুক্তি ও পুরোনো ধারণা…
কার্ল সাগান ও ফ্রাঙ্ক ড্রেকের মতো বিজ্ঞানীরা এই আশাবাদী হয়ে বলেছেন, অল্প কিছু সভ্যতা উচ্চস্তরের প্রযুক্তিজ্ঞান নিয়ে বাঁচতে শিখেছে। যেখানে মস্তিষ্কের বিবর্তনে উদ্দেশ্যহীনভাবে আরোপিত অসংগতিগুলো সচেতনভাবে দূর করে নিজেদের রক্ষা করতে পেরেছে। অথবা বড় রকমের বিপর্যয় কাটিয়ে উঠতে সামর্থ্য হয়েছে। যেমন আমরা চেষ্টা করছি। যেসব সমাজ সফলভাবে দীর্ঘকাল টিকে থাকবে, সেসব সভ্যতার জীবনকাল পরিমাপ করা সম্ভব হবে। সম্ভবত ভূতাত্ত্বিক কাল অথবা নক্ষত্রের জীবন–মৃত্যুর সময়ের ব্যাপ্তিতে। যদি সভ্যতাগুলোর ১০০টির মধ্যে ১টিও তাদের প্রাযুক্তিক বিকাশের বয়ঃসন্ধিকাল অতিক্রম করতে পারে, ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণে সঠিক পথটি বেছে নিতে পারে এবং পরিপক্বতা অর্জন করতে পারে, তাহলে অন্তত ১ কোটি গ্রহে একই সময়ে প্রযুক্তিগতভাবে উন্নত সভ্যতার টিকে…
২০ সেপ্টেম্বর, ১৫১৯ সাল। স্পেনের সেভিল বন্দর থেকে ছাড়ল পাঁচটি ছোট্ট জাহাজের একটি স্কোয়াড্রন। জাহাজগুলোর নাম সান আন্তনিও, ট্রিনিদাদ, কনসেপসিয়ন, ভিকটোরিয়া ও সান্তিয়াগো। অফিসার এবং নাবিক মিলিয়ে সবসহ যাত্রা করে ২৩৯ জন, ফেরে মাত্র কয়েকজন। স্প্যানিশ স্কোয়াড্রনটির অধিনায়ক এ্যাডমিরাল ম্যাগেলান। জন্মসূত্রে তিনি স্পেনের লোক নন, প্রতিবেশী পর্তুগাল থেকে এসেছেন। যে কর্তব্যকর্ম ফার্দিনান্দ দ্য ম্যাগেলান নিজের সামনে রাখেন, তা দুরূহ। সেটি হলো, আটলান্টিক মহাসমুদ্র থেকে প্রশান্ত মহাসাগরে যাওয়ার একটি পথ বের করা। মানচিত্রে একবার চোখ বোলাও। দুটি মহাসমুদ্রের মাঝে বিরাট আমেরিকা (যুক্তরাষ্ট্র) মহাদেশ, সুমেরু মহাসমুদ্রের (উত্তর মহাসাগর) তুষারাবৃত্ত জল থেকে কুমেরু সমুদ্র (দক্ষিণ বা অ্যান্টার্কটিক মহাসাগর) পর্যন্ত তার বিস্তার। সে সময়…