একবিংশ শতাব্দীতে এসেও অনেক ধরনের অনিশ্চয়তা আমাদের ঘিরে আছে। গ্রহাণু বা ধূমকেতুর আঘাত। ছোট ধূমকেতু বা গ্রহাণুর ধেয়ে আসা প্রতিরোধ করতে পারলেও বড় গ্রহাণু বা ধূমকেতুকে কতটা পারব, তা আমরা এখনো জানি না। জানি না অনেক মহাজাগতিক বিপর্যয়ের কথা, বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা করছে জীবাশ্ম জ্বালানির কারণে ষষ্ঠ গণবিলুপ্তি। পরমাণু বা নিউক্লিয়ার যুদ্ধের ভয় উত্তর কোরিয়ার হাইড্রোজেন বোমার পরীক্ষামূলক বিস্ফোরণ থেকে বুঝতে পারি পরাশক্তি ছাড়াও অন্যান্য দেশের কাছে নিউক্লিয়ার শক্তি চলে যাচ্ছে। সবাই বলছে, পরাশক্তিগুলোর কাছে আমরা অনিরাপদ। সবাই তার নিজের দেশের জন্য ভাবছে, কিন্তু প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে পৃথিবীর জন্য কারা ভাববে, পৃথিবীকে কারা বাঁচাবে? প্রাযুক্তিক বয়ঃসন্ধিকাল আধুনিক প্রযুক্তি ও পুরোনো ধারণা…
Author: Yousuf Parvez
কার্ল সাগান ও ফ্রাঙ্ক ড্রেকের মতো বিজ্ঞানীরা এই আশাবাদী হয়ে বলেছেন, অল্প কিছু সভ্যতা উচ্চস্তরের প্রযুক্তিজ্ঞান নিয়ে বাঁচতে শিখেছে। যেখানে মস্তিষ্কের বিবর্তনে উদ্দেশ্যহীনভাবে আরোপিত অসংগতিগুলো সচেতনভাবে দূর করে নিজেদের রক্ষা করতে পেরেছে। অথবা বড় রকমের বিপর্যয় কাটিয়ে উঠতে সামর্থ্য হয়েছে। যেমন আমরা চেষ্টা করছি। যেসব সমাজ সফলভাবে দীর্ঘকাল টিকে থাকবে, সেসব সভ্যতার জীবনকাল পরিমাপ করা সম্ভব হবে। সম্ভবত ভূতাত্ত্বিক কাল অথবা নক্ষত্রের জীবন–মৃত্যুর সময়ের ব্যাপ্তিতে। যদি সভ্যতাগুলোর ১০০টির মধ্যে ১টিও তাদের প্রাযুক্তিক বিকাশের বয়ঃসন্ধিকাল অতিক্রম করতে পারে, ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণে সঠিক পথটি বেছে নিতে পারে এবং পরিপক্বতা অর্জন করতে পারে, তাহলে অন্তত ১ কোটি গ্রহে একই সময়ে প্রযুক্তিগতভাবে উন্নত সভ্যতার টিকে…
২০ সেপ্টেম্বর, ১৫১৯ সাল। স্পেনের সেভিল বন্দর থেকে ছাড়ল পাঁচটি ছোট্ট জাহাজের একটি স্কোয়াড্রন। জাহাজগুলোর নাম সান আন্তনিও, ট্রিনিদাদ, কনসেপসিয়ন, ভিকটোরিয়া ও সান্তিয়াগো। অফিসার এবং নাবিক মিলিয়ে সবসহ যাত্রা করে ২৩৯ জন, ফেরে মাত্র কয়েকজন। স্প্যানিশ স্কোয়াড্রনটির অধিনায়ক এ্যাডমিরাল ম্যাগেলান। জন্মসূত্রে তিনি স্পেনের লোক নন, প্রতিবেশী পর্তুগাল থেকে এসেছেন। যে কর্তব্যকর্ম ফার্দিনান্দ দ্য ম্যাগেলান নিজের সামনে রাখেন, তা দুরূহ। সেটি হলো, আটলান্টিক মহাসমুদ্র থেকে প্রশান্ত মহাসাগরে যাওয়ার একটি পথ বের করা। মানচিত্রে একবার চোখ বোলাও। দুটি মহাসমুদ্রের মাঝে বিরাট আমেরিকা (যুক্তরাষ্ট্র) মহাদেশ, সুমেরু মহাসমুদ্রের (উত্তর মহাসাগর) তুষারাবৃত্ত জল থেকে কুমেরু সমুদ্র (দক্ষিণ বা অ্যান্টার্কটিক মহাসাগর) পর্যন্ত তার বিস্তার। সে সময়…
সৌরজগতের কেন্দ্রে রয়েছে সূর্য। তার চারপাশে ঘুরছে সব গ্রহ। প্রশ্ন ওঠে, সূর্যের মাহাত্ম্যটা কী? কেন সব মহাজাগতিক বস্তু তার চারপাশে ঘুরছে? এর কারণ হলো সূর্য নামক নক্ষত্রটির ভর সবচেয়ে বেশি। এ কারণে এর মহাকর্ষজনিত বলের প্রভাবে সৃষ্ট মহাকর্ষকূপের (গ্রাভিটি ওয়েল) ঢালু চক্রটি সবচেয়ে গভীর। তাই অন্য গ্রহ ও সেই সঙ্গে এদের উপগ্রহগুলোর উপায় নেই, সূর্যের চারপাশে ঘুরতেই হয়। যেকোনো বস্তু স্পেস–টাইম ফেব্রিকে একটু কুয়ার মতো ঢালু চত্বর সৃষ্টি করে। সেই ঢালুর স্তর বেয়ে অন্য হালকা ভরের বস্তু চক্কর খায়। এটাই মহাকর্ষ বলের আকর্ষণপ্রক্রিয়া। বড় ও ভারী বস্তুর আকর্ষণ–ঢাল বেশি বড়, ছোট ভরের ক্ষেত্রে ছোট। বড় বস্তুর মহাকর্ষ বলের টানে ছোট…
আমরা জানি, সব প্রাণীর মধ্যে স্ত্রী–প্রজাতি গর্ভধারণ করে। কিন্তু একমাত্র সামুদ্রিক সিহর্স কেন পুরুষ প্রজাতি গর্ভধারণ করে? ব্যতিক্রম হলো কেন? পুরুষ সিহর্সের গর্ভধারণের বিষয়টি ব্যতিক্রম। এ নিয়ে বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন মতবাদ দিয়েছেন। মজার ব্যাপার হলো, সাধারণ প্রাণীর মতোই স্ত্রী সিহর্স ডিম্বাণুদাতা এবং পুরুষ সিহর্স শুক্রাণুদাতা। পুরুষ কেবল তার নিজের শরীরের বিশেষ থলের মধ্যে বাচ্চাদের ধারণ করে। আসলে নিজের অস্তিত্ব বাঁচিয়ে রাখতে এমনটি করে সিহর্স। পুরুষ সিহর্স একসঙ্গে ১ হাজার বাচ্চা জন্ম দিলেও এদের মধ্যে গড়ে মাত্র ৫টি বেঁচে থাকে। সিহর্স যাতে অল্প সময়ে বেশি শিশু জন্মদান করতে পারে, তাই পুরুষ গর্ভধারণের কাজটি করে থাকে। এ সময়টা স্ত্রী সিহর্স নিজের দেহে নতুন…
আমরা জানি, চুম্বকের মধ্যখানে কোনো আকর্ষণ বল কাজ করে না। পৃথিবীও তো একটি বিশাল বড় চুম্বক, তাহলে পৃথিবীর মধ্যখানেও কোনো আকর্ষণ বল কাজ করার কথা নয়। কিন্তু আমরা জানি, পুরো পৃথিবীর সব জায়গায় তার আকর্ষণ বল কাজ করে। কিন্তু কীভাবে? এর পেছনের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা জানতে চাই। ‘আমরা জানি, পুরো পৃথিবীর সব জায়গায় তার আকর্ষণ বল কাজ করে।’—তুমি কী মহাকর্ষ বলের কথা উল্লেখ করছ, না চৌম্বক বলের কথা বলছ? বলক্ষেত্র সব জায়গায় কাজ করতে পারে, কিন্তু তার মানে এই নয় যে সেখানে কোনো বিন্দুতে বলের মান শূন্য হতে পারবে না। যেমন আমরা বলি, পৃথিবীর কেন্দ্রে মোট মহাকর্ষ বলের মান শূন্য; এর…
হকিং রেডিয়েশনের মাধ্যমে ব্ল্যাকহোলদের সংকুচিত হতে প্রয়োজন সুদীর্ঘ সময়। যে ব্ল্যাকহোলের আকার যত বড়, তার মৃত্যুঘণ্টা বাজতে সময় লাগবে তত বেশি। তবে যতক্ষণ পর্যন্ত মহাজাগতিক বস্তুদের গ্রাস করা অব্যাহত থাকবে, ততক্ষণ পর্যন্ত বহাল তবিয়তেই টিকে থাকতে পারবে এগুলো। যখন মহাবিশ্বে গ্রাস করার মতো আর কোনো বস্তু অবশিষ্ট থাকবে না, তখন থেকেই বাজতে শুরু করবে এদের মৃত্যুঘণ্টা। হকিং রেডিয়েশনের মাধ্যমে এরা সংকুচিত হতে শুরু করবে। এভাবে আমাদের সূর্যের সমান ভরের ব্ল্যাকহোলের অন্তিম সময় উপস্থিত হতে প্রয়োজন পড়বে আনুমানিক ১০৬৭ (১-এর পর ৬৭টা শূন্য!) বছর। অন্যদিকে, সুপারম্যাসিভ বা অতিভারী কৃষ্ণগহ্বরদের ক্ষেত্রে এই সময়কাল হতে পারে ১০১০০ (১-এর পর ১০০টা শূন্য) বছরেরও বেশি! সংকুচিত হওয়ার…
কোয়ান্টাম পদার্থবিদ্যা অনুসারে, মহাবিশ্বের কোথাও প্রকৃত শূন্যস্থানের অস্তিত্ব নেই। আপাতদৃষ্টে মনে হওয়া সব শূন্যস্থানে ক্রমাগত আবির্ভূত হচ্ছে ভার্চ্যুয়াল কণারা। এগুলো সব সময় কণা-প্রতিকণা জোড় হিসেবে আবির্ভূত হয়। ইংরেজিতে বলে ম্যাটার-অ্যান্টিম্যাটার পেয়ার। পরমুহূর্তেই এরা ধ্বংস করে দেয় পরস্পরকে। এই ঘটনার নাম কোয়ান্টাম ফ্ল্যাকচুয়েশন। এভাবে আবির্ভূত কণা-প্রতিকণা জোড়ের একটি হয় ধনাত্মক শক্তিবিশিষ্ট, অন্যটি হয় ঋণাত্মক শক্তির। ফলে এমন অদ্ভুত ঘটনার পরেও ঠিকই মোটা দাগে অটুট থাকে শক্তির নিত্যতা সূত্র। ব্ল্যাকহোলের প্রান্ত সীমানা ঘটনা দিগন্তের কাছেও সমান তালে ঘটতে থাকে কোয়ান্টাম ফ্ল্যাকচুয়েশন। এর প্রভাবে অনেক সময় সেখানে এমনভাবে কণা-প্রতিকণা জোড় আবির্ভূত হতে পারে যে ঋণাত্মক শক্তির কণাটি ব্ল্যাকহোলের মহাকর্ষের প্রভাবে বাঁধা পড়ে যায়।…
শেষ পর্যন্ত মহাবিশ্বে টিকে থাকবে কেবল দানবাকৃতির ব্ল্যাকহোল বা কৃষ্ণগহ্বর! যদি গ্রাস করার মতো কোনো বস্তুর অস্তিত্ব না থাকে, তাহলে কী ঘটবে ব্ল্যাকহোলদের ভাগ্যে? এরা কি অনন্তকাল ধরে নিঃসঙ্গ পথিকের মতো মহাশূন্যে ভেসে বেড়াবে? নাকি অন্য সব মহাজাগতিক বস্তুর মতো অজানা উপায়ে জীবনাবসান হবে তাদেরও? ব্ল্যাকহোলদের সরাসরি দেখা সম্ভব নয়। পরোক্ষভাবে আশপাশের বস্তুদের আচরণ থেকে এদের খোঁজ পাওয়া যায়। বস্তুগুলো প্রবল মহাকর্ষের প্রভাবে ভেঙ্গেচুরে দুমড়ে-মুচড়ে গিয়ে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অংশে বিভক্ত হয়ে পড়ে। এই অংশগুলোকে ব্ল্যাকহোল ক্রমান্বয়ে নিজেদের দিকে টেনে নিতে থাকে। এগুলো যত নিকটবর্তী হয়, তত বাড়তে থাকে গতিবেগ। তীব্র গতিতে চলমান অংশগুলোর মধ্যে ঘটতে থাকে তুমুল সংঘর্ষ, উৎপন্ন হয় তাপশক্তি।…
মহাবিশ্বের রহস্যময় বস্তুগুলোর তালিকায় ব্ল্যাকহোলের অবস্থান নিঃসন্দেহে প্রথম সারিতে। এগুলোতে চলে অমিত শক্তিশালী গ্র্যাভিটি বা মহাকর্ষের রাজত্ব। ফলে আশপাশের সবকিছুর শেষ ঠিকানা হয় এদের গহীনে। এমনকি এদের ফাঁক গলে পালাতে পারে না মহাবিশ্বের সর্বোচ্চ গতিবেগের মুকুটধারী আলোও। আসলে প্রতিটি ব্ল্যাকহোল বা কৃষ্ণগহ্বরের চারপাশে একটি সীমারেখা থাকে। এর নাম ইভেন্ট হরাইজন বা ঘটনা দিগন্ত। একে অতিক্রম করলেই আলোসহ অন্য কোনো কিছু আর ফিরে যেতে পারে না। এভাবেই বাকি মহাবিশ্ব থেকে নিজেদের পুরোপুরি আড়াল করে রাখে রহস্যময় ব্ল্যাকহোলেরা। ব্ল্যাকহোল হরেক রকম ভরের হতে পারে। সাধারণত এদের ভর আমাদের সূর্যের পাঁচ গুণ থেকে শুরু করে একশ গুণ পর্যন্ত হয়। তবে মহাবিশ্বে দানবাকৃতির ব্ল্যাকহোলেরও…
ইউক্লিড স্পেস টেলিস্কোপ মাত্র ২৪ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণ করে ৩ লাখের বেশি মহাকাশীয় বস্তুর ছবি তুলেছে। এই ছবিগুলোর মধ্যে রয়েছে জ্বলজ্বলে গ্যালাক্সি ক্লাস্টার, গ্যাসের রঙিন মেঘ ও সবচেয়ে বড় সর্পিলাকার গ্যালাক্সির ছবি। ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি (ইসা) জানিয়েছে, আগামী আরও ছয় বছরে ইউক্লিড রাতের আকাশের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ জায়গার ছবি তুলবে। এ সময়ের মধ্যে প্রায় ১০০ কোটি গ্যালাক্সির ছবি তোলা যাবে। এসব গ্যালাক্সির বয়স হবে ১ হাজার কোটি বছরেরও বেশি। বর্তমানে ইউক্লিডের তোলা কয়েকটি ছবি প্রকাশ করেছে ইসা। এগুলোর মধ্যে দুটি হলো অ্যাবেল ২৩৯০ ও অ্যাবেল ২৭৬৪। অ্যাবেল ২৩৯০ পৃথিবী থেকে প্রায় ২৭০ কোটি আলোকবর্ষ দূরে পেগাসাস নক্ষত্রপুঞ্জে অবস্থিত। এই নক্ষত্রপুঞ্জে আরও…
২০১৭ সালের ২১ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখণ্ড থেকে একটি সূর্যগ্রহণ দেখা গিয়েছিল। সেটা দেখতে ওয়াইওমিং স্টেটে গিয়েছিলাম। তখনই ২০২৪ সালে আবার যে আরেকটি সূর্যগ্রহণ হবে, তা নিয়ে ভেবেছিলাম; ভেবেছিলাম তা অনেক দূর সময়ের ব্যাপার। কিন্তু দেখতে দেখতে সাতটি বছর কেটে গেল, মনে হয় চোখের পলকে, তবে মাঝখানে ছিল কোভিড মহামারির জন্য হারানো কয়েকটি বছর। বর্তমানে বিভিন্ন কারিগরি মাধ্যমের উন্নয়নের ফলে, যার মধ্যে শুধু সূর্যকে বিশেষভাবে জন্য দেখার জন্য পার্কার সোলার প্রোব, সোলার অ্যান্ড হেলিওস্ফিয়ার অবজারভেটরিসহ (SOHO) বেশ কয়েকটি স্যাটেলাইট সক্রিয় রয়েছে, সেখানে সূর্যগ্রহণের বৈজ্ঞানিক ভূমিকা কিছুটা হ্রাস পেয়েছে। এসব স্যাটেলাইট করোনাগ্রাফ নামে একটি যন্ত্র দিয়ে সূর্যকে কৃত্রিমভাবে ঢেকে ওপরের করোনাকে…
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে চাঁদ আমাদের ছেড়ে যত দূরে চলে যাবে, তত ছোট হয়ে আসবে এর আকার। সংকোচনের কারণে দৃশ্যমানভাবে চাঁদের আকার আরও ছোট দেখাবে। একসময় পৃথিবী থেকে আমরা আর চাঁদকে দেখতে পাব না। মাসের নানা সময় আমরা পৃথিবী থেকে চাঁদকে নানা আকারে দেখতে পাই। চাঁদের কক্ষপথ পুরপুরি বৃত্তাকার নয়, উপবৃত্তাকার। ফলে পৃথিবীর কাছে এলে চাঁদ বড় দেখায়, আবার পৃথিবী থেকে দূরের বিন্দুতে অবস্থান করলে ছোট দেখায় চাঁদ। কক্ষপথের আকার পরিবর্তনের চেয়ে প্রতি মাসে চাঁদের এই পরিবর্তন অনেক গুরুত্বপূর্ণ। শত শত কোটি বছর পর চাঁদের সরে যাওয়ার মারাত্মক প্রভাব দেখা যাবে পৃথিবীতে। সমুদ্রের স্রোত প্রায় বন্ধ হয়ে যাবে। ফলে প্রচুর সামুদ্রিক প্রাণী…
ছোট হয়ে আসছে পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহ চাঁদ। গত কয়েক শ কোটি বছরে অন্তত ৫০ মিটার কমেছে চাঁদের ব্যাসার্ধ। চাঁদের পৃষ্ঠের থ্রাস্ট ফল্টের ছবি বিশ্লেষণ করে এ তথ্য জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। বিশ্লেষণে ব্যবহৃত অতীতের ছবিগুলো তুলেছিলেন অ্যাপোলো অভিযানের নভোচারীরা। পাশাপাশি সাম্প্রতিক সময়ে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার রোবোটিক নভোযান লুনার রিকনিসেন্স অরবিটারের তোলা ছবিও তাঁরা ব্যবহার করেছেন। গবেষকরা বলছেন, ভূমিকম্পের কারণে তৈরি চাঁদের অগভীর কিছু ভূমিকম্পকেন্দ্র এসব থ্রাস্ট ফল্টের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে। চাঁদের এসব ভূমিকম্পকেন্দ্র শনাক্ত করা হয়েছিল সিসমোমিটারের সাহায্যে। তাও সেই অ্যাপোলো যুগে, অর্থাৎ অ্যাপোলো মিশন চলার সময়ে। ১৯৬৯ থেকে ১৯৭২ সালের মধ্যে মার্কিনিরা ৬টি অ্যাপোলো মিশনে মোট ১২ নভোচারীকে…
আমরা আছি মিল্কিওয়ের ভেতরে। আর এর বাইরে কোনো নভোযান, দুরবিন বা মানবনির্মিত কোনো বস্তু পাঠানো যায়নি। তাহলে বাইরে থেকে মিল্কিওয়ের ছবি তোলা হলো কীভাবে? উত্তরটা খুব সহজ: বাইরে থেকে আসলে মিল্কিওয়ের ছবি তোলাই হয়নি। তাহলে প্রশ্ন আসে, আমরা মিল্কিওয়ের যে ছবি দেখি, বেশ কিছু সর্পিল বা বাঁকানো বাহুর একটা গ্যালাক্সি—কোত্থেকে এল এই ছবি? সংশ্লিষ্ট প্রশ্ন হিসেবে মাথায় উঁকি দেবে আরেকটি বিষয়: মিল্কিওয়ের আকৃতি কেমন, সেটা কীভাবে জানলাম আমরা? আলোর বর্ণালির বিষয়টা হয়তো জানেন। হয়তো জানেন বিভিন্ন তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলোর কথা। আলো একধরনের তড়িৎ-চুম্বক তরঙ্গ। এর কিছু অংশ কেবল দেখি আমরা। মোটামুটি ৩৮০-৭০০ ন্যানোমিটার তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলো আমরা দেখতে পাই। একসময় বিজ্ঞানীরা এই…
মানুষ ইতিমধ্যে মহাজাগতিক পটভূমি বিকিরণের ছবি তুলেছে। তুলেছে বহুদূর কৃষ্ণগহ্বরের ইভেন্ট হরাইজন বা ঘটনা দিগন্তের ছবি। গ্যালাক্সি বা নক্ষত্রের ছবি তোলা তো জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞানীদের কাছে নিত্যদিনের ঘটনা। তাই ‘মিল্কিওয়ের ছবি কীভাবে তোলা হলো’—এরকম প্রশ্ন সহসা আমাদের মাথায় আসে না। কিন্তু প্রশ্নটা মাথায় এলে এবং খানিকটা ভাবলেই টের পাওয়া যাবে, জট পাকিয়ে যাচ্ছে। চাইলে একটু থেমে ভেবে নিতে পারেন আপনি। তবে সমস্যাটা ভালোভাবে বুঝতে হলে একটা উদাহরণ সহায়ক হতে পারে। চিন্তা করুন, আপনি দাঁড়িয়ে আছেন একটা বনের ভেতরে। চারদিকে গাছপালা। এই বনের ছবি কীভাবে তুলবেন? ছবি তো তুলতেই পারবেন—সেটা বনের ভেতরের ছবি। কিন্তু বাইরে থেকে গোটা বনটা কেমন—এই ছবি তোলার উপায় কী?…
জ্যোতির্বিদ কার্ল সাগান একে বলেছিলেন ‘পেল ব্লু ডট’। কারণ মহাকাশ থেকে পৃথিবীকে দেখায় ম্লান নীল একটি বিন্দুর মতো। এই গ্রহটিই আমাদের বাসস্থল। মহাবিশ্বের একমাত্র গ্রহ, যা জীবনধারণের উপযোগী। সৌরজগতের বাইরে থেকে দেখলে পৃথিবীকে বিশেষ কিছু মনে হবে না। তবে প্রাণের উপস্থিতি, তরল পানি, বায়ুমণ্ডল, প্রাণ রক্ষাকারী চুম্বকক্ষেত্রসহ গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে এ গ্রহের। এ গ্রহের অবস্থান সূর্যের গোল্ডিলকস অঞ্চলে। এর চেয়ে দূরে থাকলে সব পানি জমে বরফ হয়ে যেত, আর কাছে থাকলে বাষ্প হয়ে যেত। অথচ প্রাণের টিকে থাকার জন্য তরল পানি আবশ্যক। আর পৃথিবীর দুই-তৃতীয়াংশ পানিতে পূর্ণ। এই পানি কোত্থেকে এল? সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, পৃথিবীতে থাকা হাইড্রোজেনের ভূমিকা…
সম্প্রতি অ্যাস্ট্রোফটোগ্রাফার অ্যাণ্ড্রু ম্যাকার্থি নিজ বাড়ির উঠোন থেকে সৌরকলঙ্কের ছবি তুলেছেন। তাঁর ছবি তোলা এই সৌরকলঙ্কের অঞ্চলের নাম ‘এআর৩৬৯৭’। অঞ্চলটি সূর্যের দক্ষিণ পাশে। যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনা অঙ্গরাজ্যে নিজের বাড়ি থেকে ছবিটি তুলেছেন ম্যাকার্থি। সৌরকলঙ্কের এ অঞ্চলটি আগে ‘এআর৩৬৬৪’ নামে পরিচিত ছিল। সম্প্রতি নতুন করে দৃশ্যপটে হাজির হয়েছে এটি। বেড়ে গেছে এর সক্রিয়তা। নির্গত করছে সৌরশিখা ও করোনাল ম্যাস ইজেকশন (সিএমই)। চলতি বছরের মে মাসে পৃথিবীর দক্ষিণ গোলার্ধের মেরুজ্যোতি বা আরোরা যে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে গিয়েছিল, দেখা গিয়েছিল পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গা থেকে। সূর্যের এ সক্রিয়তা এর কারণ হতে পারে বলে ধারণা করছেন বিজ্ঞানীরা। আবার ভূ-চৌম্বকীয় ঝড়ও হতে পারে এর কারণ। ম্যাকার্থির তোলা ছবিটি…
পৃথিবী উদয়ের ছবি। তিনি উইলিয়াম অ্যান্ডার্স। অ্যাপোলো ৮ মিশনের এই মার্কিন নভোচারী গত ৭ জুন এক বিমান দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন। মৃত্যুকালে নাসার সাবেক এই নভোচারীর বয়স ছিল ৯০ বছর। দ্য সিয়াটল টাইমস পত্রিকার সূত্রে জানা গেছে, দুর্ঘটনার সময় অ্যান্ডার্স বিমানটি একাই চালাচ্ছিলেন। এটি যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটলের উত্তরে স্যান হুয়ান আইল্যান্ড আর্চিপেলাগোর অংশ—জোন্স আইল্যান্ড উপকূলে ক্র্যাশ করেছে। কেসিপিকিউ-টিভি সূত্রে রয়টার্স জানিয়েছে, এটি ছিল তাঁর মালিকানাধীন একটি পুরাতন এয়ারফোর্স সিঙ্গেল ইঞ্জিন টি-৩৪ মেন্টর বিমান। মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার চিফ বিল নেলসন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পৃথিবীদয়ের সেই ছবি পোস্ট করে তাঁর মৃত্যুতে শ্রদ্ধা জানিয়ে লিখেছেন, ‘কোনো নভোচারী মানবজাতিকে যেটুকু উপহার দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন, ‘তিনি তাঁর সর্বোচ্চটুকু দিয়েছেন। মানজাতিকে…
সরাসরি সূর্যের দিকে খালি চোখে তাকানো যাবে না। তাহলে কিন্তু চোখ নষ্ট হয়ে যাবে। তখন আর কোনো বস্তুই পরিষ্কার দেখা যাবে না। কারণ, সূর্য থেকে বিচ্ছুরিত বিভিন্ন ক্ষতিকর রশ্মি চোখের দৃষ্টিশক্তি নষ্ট করে দেয়। এমনকি সূর্যগ্রহণের সময় সব সূর্যগোলক ঢেকে গেলেও খালি চোখে সূর্যগ্রহণ দেখলে চোখ নষ্ট হয়। কারণ, সূর্য ঢেকে গেলেও এর চারপাশ দিয়ে কিছু অতিবেগুনি রশ্মি ছড়িয়ে পড়ে। এটা আলোকোজ্জ্বল না, কিন্তু সরাসরি চোখের ভেতর ঢুকলে ক্ষতি হয়। সে জন্যই সূর্যগ্রহণ পর্যবেক্ষণের জন্য বিশেষ ধরনের কালো কাচের চশমা বা অন্যান্য প্রতিরোধক ব্যবস্থা ব্যবহার করতে হয়। এখন নিশ্চয়ই বুঝতে পারছ, কেন সরাসরি সূর্যের দিকে তাকিয়ে থাকলে এরপর অন্য কিছু…
মঙ্গলের বিষুবীয় অঞ্চলে তুষার বা বরফের অস্তিত্ব একসময় অসম্ভব বলে মনে করা হতো বলে জানিয়েছেন ভ্যালেন্তিনাস। তিনি বলেন, ‘আমরা ভেবেছিলাম, মঙ্গলের বিষুবীয় অঞ্চলে তুষার জমা অসম্ভব। পাতলা বায়ুমণ্ডল ও সূর্যের আলো মিলে এসব পর্বতচূড়ায় তাপমাত্রা থাকে অনেক বেশি। পৃথিবীতে আমরা যেমন পর্বতচূড়ায় তুষার জমতে দেখি, এরকম নয়। এই তুষারের অস্তিত্ব একদিকে যেমন দারুণ উত্তেজনাকর, তেমনি এটি ইঙ্গিত করছে, অন্যরকম কিছু ঘটছে এখানে, যার ফলে তুষার জমতে পারছে।’ তুষারের এই পাতলা আবরণ জমেছিল মঙ্গলে সূর্যোদয়ের মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে। তারপর সূর্যোদয়ের ফলে এগুলো বাষ্পীভূত হয়ে গেছে। তুষারের এ আবরণ ছিল অত্যন্ত পাতলা—মানুষের চুলের মতো পলকা (এক মিলিমিটারের একশ ভাগের এক ভাগের…
প্রাণের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শর্ত পানি। সেই জমাট পানির তুষার পাওয়া গেছে মঙ্গলের বিষুবীয় অঞ্চলে। এ আবিষ্কারের ফলে তাই উত্তেজনা হাওয়া লেগেছে বিজ্ঞান সমাজে। কীভাবে পাওয়া গেল এই তুষারের সন্ধান? কেন এটি এত গুরুত্বপূর্ণ? প্রথমবারের মতো মঙ্গলের বিষুবীয় অঞ্চলে তুষারের সন্ধান পেলেন বিজ্ঞানীরা। লাল এ গ্রহের ট্রপিক্যাল এবং বিষুবীয় অঞ্চলে এ ধরনের ‘জলজ তুষার’ থাকার বিষয়টিকে এতদিন অসম্ভব বলেই ভাবা হতো। শুধু বৈজ্ঞানিক গবেষণার দিক থেকেই নয়, মানুষের মঙ্গল অভিযানের জন্যও এটাকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। এ আবিষ্কার সংক্রান্ত গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে বিখ্যাত জার্নাল নেচার জিওসায়েন্স-এ। এই তুষার শনাক্ত করেছে ইউরোপীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসার নভোযান এক্সোমার্স ট্রেস গ্যাস অর্বিটার…
সৌরজগতের চতুর্থ গ্রহ মঙ্গল। রোমানদের যুদ্ধের দেবতা মার্সের নামে এর নামকরণ করা হয়েছে। ১৬১০ সালে গ্যালিলিও গ্যালিলি প্রথম টেলিস্কোপের সাহায্যে গ্রহটি পর্যবেক্ষণ করেন। ভবিষ্যতে মঙ্গলে যাওয়ার জন্য এখনই প্রস্তুতি নিচ্ছে পৃথিবীবাসী। হয়তো একদিন মানুষ লাল গ্রহটিতে বসবাস করবে। তাই এই গ্রহ নিয়ে আমাদের আগ্রহ বেশি। বিভিন্ন দেশের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইতিমধ্যে গ্রহটিতে নানা অভিযান চালিয়েছে। পাঠিয়েছে ল্যান্ডার, রোভার, ড্রোন—এমনকি ছোট হেলিকপ্টার। মঙ্গলের কেন্দ্রে রয়েছে লোহা ও নিকেল। মঙ্গলের কোরের ব্যাস প্রায় ২ হাজার ১২০ মাইল। এর বায়ুমণ্ডল অত্যন্ত পাতলা। ৯৬ শতাংশ কার্বন ডাই-অক্সাইড, নাইট্রোজেন ও আর্গন ১.৯ শতাংশ। বায়ুমণ্ডল পাতলা হওয়ায় উল্কা, গ্রহাণু ও ধূমকেতু অনবরত আঘাত করে এর পৃষ্ঠে।…
ভরে ও আয়তনের সৌরজগতের সবচেয়ে বড় গ্রহ বৃহস্পতি। সৌরজগতের বাকি সব গ্রহের মোট ভরের দ্বিগুণ সে একাই। সে জন্য একে বলে গ্রহরাজ। গঠনের দিক থেকে গ্যাসদানব। এতে ৩০০ বছর ধরে চলছে প্রকাণ্ড এক ঝড়। লালচে দেখায় বলে একে বৃহস্পতির ‘গ্রেট রেড স্পট’ বলা হয়। সৌরজগতের সবচেয়ে বড় গ্রহ বৃহস্পতি। গ্রহটি এত বড় যে এর মধ্যে ১ হাজার ৩০০ পৃথিবী অনায়াসে ঢুকে যাবে। গ্রহটি বড় হলেও দিনের দৈর্ঘ্য প্রায় ১০ ঘণ্টার। তবে সূর্যের চারপাশে একবার ঘুরতে সময় লাগে প্রায় ৪ হাজার ৩৩৩ দিন। গ্রহটি গ্যাসীয়। ফলে এর কোনো পাথুরে পৃষ্ঠ নেই। স্বভাবতই সেখানে কোনো নভোযান অবতরণ করতে পারবে না। আবার কোনো…