বাংলাদেশের একমাত্র ছাগল প্রজাতি ব্ল্যাক বেঙ্গলের জিনোম সিকোয়েন্স উন্মোচন হয়েছে। কেন এই সিকোয়েন্সের কথা মাথায় এল, কীভাবেই-বা সেটা করা হলো, এ প্রশ্ন বিজ্ঞানপ্রেমীদের মনে আসা স্বাভাবিক। কিন্তু ছাগলের ডিএনএ সিকোয়েন্সিং কীভাবে হলো, সেটা জানতে আমাদের আগে জানা উচিত ডিএনএ কী, কী কী কাজ করে এটা আর কী প্রক্রিয়ায়ই-বা এটাকে সিকোয়েন্সিং করা হলো? এসব প্রশ্নের জবাব আগের একাধিক লেখায় এসেছে। তাই এই বিষয় নিয়ে আমরা আলোচনা করব না। তার চেয়ে বরং সিকোয়েন্সিংয়ের সঙ্গে জড়িত দুটি গুরত্বপূর্ণ বিষয় অ্যাসেম্বলিং ও অ্যাটেনশন সম্পর্কে জানার চেষ্টা করি। তারপর ব্ল্যাক বেঙ্গলের গল্পে যাব। বায়োইনফরমেটিকসের পরিভাষায় সিকোয়েন্স অ্যাসেম্বলি বলতে অপেক্ষাকৃত লম্বা ডিএনএ সূত্রকের খণ্ডাংশগুলোকে সারিবদ্ধভাবে সাজিয়ে…
Author: Yousuf Parvez
বিশালাকার সব ডাইনোসর ঘুরে বেড়াচ্ছে শিকারের খোঁজে। তবে মূল উদ্দেশ্য তা নয়। পার্কের নিরাপত্তাবেষ্টনী ভেঙে বেরিয়ে এসেছে দৈত্যগুলো। ওরা বেরোতে চায়। মুক্তি চায়। মানুষ পালিয়ে বেড়াচ্ছে প্রাণ হাতে নিয়ে। ডাইনোসরই শুধু নয়, আছে প্রাগৈতিহাসিক আরও বিভিন্ন দৈত্যাকার প্রাণী। প্রতিটাই হিংস্র। শিকারি। হয় মারো, নয় মরো—এই আপ্তবাক্য মেনেই ওদের জীবন যাপন। এদের হাত থেকে কি মানুষ বাঁচতে পারবে? বলছিলাম জুরাসিক পার্ক মুভির কথা। স্টিফেন স্পিলবার্গের জগদ্বিখ্যাত এই মুভির কল্যাণে ডাইনোসর আজ জীবাশ্মবিজ্ঞানের সীমানা ছাড়িয়ে ছড়িয়ে পড়েছে সবার মাঝে। ‘জুরাসিক পার্ক’ নিয়ে এরপর একাধিক চলচ্চিত্র বানানো হয়েছে, নির্মিত হয়েছে অ্যানিমেশন সিরিজ। প্রথম ধাপের তিন কিস্তি রীতিমতো চলচ্চিত্রের জগৎ কাঁপিয়ে দেওয়ার পর ফের বানানো হয়েছে জুরাসিক…
বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের কয়েকটি এলাকায়, বিশেষ করে পদ্মাতীরের কিছু জেলা ও চরাঞ্চলে গত কিছুদিন ধরে বিষাক্ত রাসেলস ভাইপার সাপের কামড়ে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। সম্প্রতি কয়েকটি জেলায় এ সাপের কামড়ে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। ফলে দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে আতঙ্ক। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, যেমন ফেসবুকে, এ নিয়ে অনেকে নানাভাবে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন। অনেকে দাবি করেছেন, এ সাপের কামড়ে দ্রুত মানুষের মৃত্যু হয়। তবে সাপ গবেষক ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দ্রুত চিকিৎসা নিলে সেরে ওঠা সম্ভব। রাসেলস ভাইপারের বিষ প্রতিষেধক বা অ্যান্টিভেনম নিকটস্থ সরকারি হাসপাতালে বিনা মূল্যে পাওয়া যায়। দেশে পর্যাপ্ত পরিমাণে এর বিষের প্রতিষেধক বা অ্যান্টিভেনম আছে। রাসেলস ভাইপার বাংলাদেশে চন্দ্রবোড়া, বোড়া বা উলুবোড়া…
বাবলগাম, আইসক্রিম কিংবা এনার্জি ড্রিংকস খেয়ে শরীরের যে খুব উপকার হয়, তা কিন্তু নয়। আশার কথা হলো, আগামী এক দশক পরে মানুষ নতুন কিছু খাদ্যের সঙ্গে পরিচিত হতে চলেছে, যা কেউ কখনো দেখেনি আগে। বাবলগাম ফোলাতে পারেনি এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া গেলেও ফোলানোর চেষ্টা করেনি এমন কাউকে পাওয়া অসম্ভব। কিন্তু একসময় এই বাবলগাম কেউ চোখেই দেখেনি। মানে ১৯২৮ সালের আগের কথা বলছিলাম আর কী। কিন্তু তারপর থেকেই তো শুরু হয়ে গেল পাল্লা দিয়ে বাবলগাম ফোলানোর প্রতিযোগিতা। একই রকমভাবে ১৯৩০ সালের আগে আইসক্রিমগুলোও এতটা নরম ছিল না। তখন আইসক্রিম খেতে দাঁতে বেশ জোর থাকতে হতো বৈকি! আবার ১৯৯০ সালের শেষ দিকে…
ভৌগলিক অবস্থানের দিক থেকে বাংলাদেশ ছোট হলেও বন্যপ্রাণীতে খুব সমৃদ্ধ। দেশের পরিবেশ ও প্রতিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় এসব প্রাণী খুব গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে রয়েছে পাহাড়ি চির সবুজ বন, দক্ষিণ-পশ্চিমে বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ সুন্দরবন, দক্ষিণজুড়ে বঙ্গোপসাগর আর মধ্যাঞ্চল থেকে উত্তর-পশ্চিম পর্যন্ত শালবন ও জালের মতো ছড়ানো নদ-নদী। সব মিলে গড়ে উঠেছে জীববৈচিত্র্যের এক অপূর্ব সমাহার। এ কারণে হাজারো জীববৈচিত্র্যের আশ্রয়স্থল হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্বে সুপরিচিত। ওরিয়েন্টাল নামে প্রাণিভৌগলিক অঞ্চলের ইন্দো-বার্মা ও ইন্দো-চায়না অংশের সংযোগস্থলে থাকায় এ দেশের প্রাণিবৈচিত্র্যে যুক্ত হয়েছে এক অনন্য মাত্রা। এখানকার বন্যপ্রাণীদের একটি অংশ উভচর শ্রেণির সদস্য। এই উভচর শ্রেণিবিন্যাসের মধ্যে অ্যানুরা (Anura) এবং জিমনোফিনা (Gymnophiona) পরিবারের উভচরদের…
জ্বর আসলে সংক্রমণের বিপরীতে আমাদের শরীরের একটি তড়িৎ ও প্রয়োজনীয় প্রতিক্রিয়া ছাড়া কিছু নয়। ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া বা যেকোনো জীবাণুর বিরুদ্ধে প্রাথমিক প্রতিরোধ হলো এই জ্বর বা শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া। এই প্রতিরোধ তৈরি করার জন্য আমাদের মস্তিষ্কের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রক এলাকা, হাইপোথ্যালামাস শরীরের অন্তর্গত বা ইন্টারনাল থার্মোস্ট্যাটকে একটু উঁচুতে সেট করে নেয়। ফলে শরীরের অন্যান্য অঙ্গ এই থার্মোস্ট্যাটে নিজেদের মানিয়ে নিতে বাড়তি তাপ বা হিট তৈরি করতে শুরু করে। ফলে ত্বকের পেশি সংকুচিত হয়। গা কাঁপতে থাকে বা কাঁপুনি শুরু হয়। লোম খাড়া হয়ে যায়। যাতে ত্বক অতিরিক্ত তাপ ছেড়ে দেয়। আকস্মিক কোর টেম্পারেচার বা শরীরের অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা নেমে যাওয়ায় শীত…
মাঝেমধ্যে আমরা সবাই দুর্ঘটনার মুখে পড়ি। পড়ে গিয়ে ব্যথা পাই, রক্তক্ষরণ হয়। কিন্তু তাৎক্ষণিক চিকিৎসা করা গেলে বড় ধরনের সমস্যার হাত থেকে বাঁচা যায়। ‘দুর্ঘটনায় প্রাথমিক চিকিৎসা’ বইয়ে সেরকমই কিছু তাৎক্ষণিক চিকিৎসা সম্পর্কে বলা হয়েছে। ক্ষত সৃষ্টি, রক্তপাত, হাড় ভাঙ্গা, পুড়ে যাওয়া কিংবা সামান্য আহত হওয়ার ফলে যা যা হতে পারে, সেগুলোর প্রাথমিক চিকিৎসার উপায় বাতলে দেওয়া হয়েছে এই বইয়ে। বইটি ১৯৭৯ সালে প্রথম প্রকাশিত হয় তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নে। এরপর ১৯৮২ সালে মির পাবলিশার্স মূল বইটির ইংরেজি অনুবাদ প্রকাশ করে। ১৯৮৬ সালে দ্বিজেন শর্মার বাংলা অনুবাদে বইটি প্রকাশ করে মির প্রকাশন। বইয়ের লেখক ভ. ভ. ইউদেনিচ। বিজ্ঞানচিন্তার পাঠকদের জন্য বইটি…
পৃথিবীতে উদ্ভিদের জন্ম হয়েছে কবে? আর সেটি কী ছিল? পৃথিবীতে উদ্ভিদ জীবনের আবির্ভাব ঘটেছিল প্রায় ১০০ কোটি বছর আগে, কয়েক কোষী একধরনের শেওলার মাধ্যমে। সেই শেওলা থেকে কোটি কোটি বছরের অভিযোজনে পাওয়া গেছে আজকের উদ্ভিদজগৎ। এই উদ্ভিদজগতে আবার সব উদ্ভিদ বা গাছে ফুল ফোটে না। যেসব গাছে ফুল ফোটে সেগুলোকে আমরা বলি সপুষ্পক উদ্ভিদ বা ফুল ফোটানোর গাছ। সপুষ্পক উদ্ভিদ পেয়েছি প্রায় ১৪ থেকে ২৫ কোটি বছর আগের মধ্যবর্তী কোনো এক সময়ে। কবে সেই আদিমতম ফুলটি ফুটেছিল এই পৃথিবীর বুকে, কোটি কোটি বছরের সেই রহস্য কে ভেদ করে সঠিক উত্তর খুঁজে দিতে পারে? ২০১৯ সালে একদল গবেষক খুঁজে পেয়েছে প্রায়…
সত্যিই আপনার দেহের ওপর অন্য কিছু প্রাণীর অধিকার আছে। যথারীতি তারা আপনার শরীরেই বাস করছে, হয়তো আপনার নিজেরই সে খবর জানা নেই। চলুন জানার চেষ্টা করি, আপনার অজান্তে কারা বাস করছে আপনার শরীরে! আইল্যাশ মাইট আট পায়ের এই ক্ষুদ্র প্রাণী আমাদের শরীরে বাস করে। কিন্তু এটা এত ক্ষুদ্র যে খালি চোখে দেখা যায় না। সাধারণত আমাদের চোখের পাতা বা ভ্রুতে থাকে এগুলো। কিন্তু রাতে মুখের ওপর ঘোরাফেরা করে। ক্ষুদ্র এই প্রাণীগুলো ওদের গোটা জীবন আমাদের চোখ ও মুখের ওপর কাটিয়ে দেয়, আমরা টেরও পাই না। এরা ত্বকের মৃত কোষ ও কোষের সঙ্গে থাকা কিছু তেল খায়। তবে আমাদের ত্বকের জন্য…
আমরা যখন কোনো কিছুর গন্ধ পাই, তখন বাতাসে ভেসে থাকা অনেক ছোট ছোট কণা নিশ্বাসের সঙ্গে আমাদের নাকে ঢুকে পড়ে। নাসা গহ্বরে এক ধরনের পিচ্ছিল পর্দা থাকে, যাকে বলে অলফ্যাক্টরি এপিথেলিয়াম। নিশ্বাসের সঙ্গে চলে আসা ছোট কণাগুলো এই পর্দায় আঘাত করে। এই অলফ্যাক্টরি এপিথেলিয়াম পর্দায় থাকে প্রচুর অলফ্যাক্টরি রিসেপ্টর স্নায়ুকোষ। কোষগুলো সূক্ষ্ম চুলের মতো সিলিয়া দিয়ে ঢাকা থাকে। এরা অলফ্যাক্টরি নার্ভে গন্ধের জন্য সংকেত পাঠায়। এভাবে মস্তিস্ক পর্যন্ত ঘ্রাণের সংকেত পৌঁছে যাওয়ার পর আমরা ঘ্রাণের অনুভূতি পাই। মানুষ প্রায় ১০ হাজার ভিন্ন ভিন্ন গন্ধ অনুভব করতে পারে। দুজন মানুষ কোনো নির্দিষ্ট কিছুর হুবহু এক রকম গন্ধ পায় না। যেসব কোষ…
২০১৮ সালের নভেম্বরের হে জিয়ানকুই একটা ইউটিউব ভিডিওতে একটি ঘোষণা দিয়ে পৃথিবীকে চমকে দেন। তিনি জানান, পৃথিবীর প্রথম জিনোম সম্পাদিত শিশুর জন্ম হয়েছে। নিশ্চয়তা দিয়ে বলার উপায় নেই যে একদম সঠিক জায়গায় জিনোম সম্পাদনাটি হবে। জিনোমে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিবর্তনের ফলে অনাগত শিশুর মৃত্যুব্যাধিও হতে পারে। দ্বিতীয় কারণ হলো নৈতিক অনিশ্চয়তা। মানবশিশুর জিনোম চিরতরে বদলে দেওয়ার নৈতিক যৌক্তিকতা নিয়ে বিজ্ঞানীরা আলোচনা করছেন বহুকাল ধরেই। এর মাধ্যমে যে পরিবর্তন হবে, তা কি ভবিষ্যতে অসম সমাজ তৈরি করবে? সন্তানদের জিনোমে কী পরিবর্তন করা হবে, এটা ঠিক করার অধিকার কার? সরকার পরিবর্তন বাধ্যতামূলক করে দিতে পারে? বা বাস্তুসংস্থানের দিক থেকে দেখলে মানবগোষ্ঠীর মধ্যে জিনগত বৈচিত্র্যতা…
কফির রং ঘন কালো এবং স্বাদ একটু কড়া। অনেকের কাছে এই কড়া স্বাদই বেশি ভালো লাগে। গরম পানি দিয়ে কফি বানিয়ে পান করলে মন প্রফুল্ল হয়। কারণ, কফি তাৎক্ষণিকভাবে শরীর-মনকে সতেজ করে। তাই গরম কালো কফির স্বাদ অনেকেই পছন্দ করেন। কিন্তু সেই স্বাদ আর যা-ই হোক, মিষ্টি নয়; বরং কিছুটা ঝাঁজালো। সেটাও অবশ্য একধরনের আমেজ আনে। এই অর্থে কালো কফি সুস্বাদু। আবার কফির সঙ্গে দুধ মেশালে আরেক ধরনের স্বাদ পাওয়া যায়। সেটা ঠিক মিষ্টি না হলেও তেতো বলা যায় না। খুব গরম কালো কফি পান করলে গলার তন্তুগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। সারা দিনে বেশ কয়েক কাপ করে খুব গরম কালো…
সাধারণত বালু–মাটি ও কাদামাটি উচ্চ তাপে পুড়িয়ে ইট তৈরি করা হয়। ইটের বেশির ভাগ অংশ সিলিকা বা সিলিকন ডাই-অক্সাইড। এ ছাড়া রয়েছে অ্যালুমিনা, আয়রন অক্সাইড, ম্যাগনেশিয়া, সামান্য চুন ও অন্য কিছু পদার্থ। তবে ইটের জন্য সবচেয়ে প্রয়োজনীয় উপাদান হলো সিলিকা (বালু) ও অ্যালুমিনা (কাদামাটি)। সিলিকা ও অ্যালুমিনা সঠিক অনুপাতে মিশিয়ে বিশেষ আকৃতির ছাঁচে সারি সারি ইট প্রথমে তৈরি করা হয়। এরপর ইটভাটায় প্রচণ্ড তাপে নির্দিষ্ট সময় পোড়ালে ইট তৈরি হয়। সিলিকা ও অ্যালুমিনার মিশ্রণকে শক্ত ইটে পরিণত করার পেছনে চুনের একটি বড় ভূমিকা থাকে। প্রচণ্ড তাপে এই চুন সিলিকা ও অ্যালুমিনার মিশ্রণকে শক্ত গাঁথুনি দেয়। ইট পাকা বাড়ি তৈরির…
ধরে নিই মাছ, মাংস, দুধ—সবকিছুর গন্ধ একই রকম হলো। তাহলে আমরা কীভাবে বুঝতাম কোনটা মাছ, কোনটা মাংস? সবই তো এক রকম স্বাদের মনে হতো। খাওয়ায় রুচি থাকত না। জীবনটাই বিস্বাদ হয়ে যেত, তা–ই না? সেদিক থেকে এটা আমাদের সৌভাগ্য যে বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্যের স্বাদ-গন্ধ বিভিন্ন রকম। নাহলে তো ভোজন বিলাসিতা বলে শব্দটাই অভিধানে থাকত না। এবার আসছি কেন স্বাদ-গন্ধ আলাদা। আমাদের জিবে ও নাকের ভেতরে বিশেষ ধরনের স্বাদ-গন্ধ বোঝার জন্য বিশেষ ধরনের অনুভূতি-সংবেদনশীল স্নায়ুতন্তু রয়েছে। এদের বলা হয় ওলফ্যাক্টরি সেনসরি নিউরন। এরা মস্তিষ্কের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। কোনো খাবার মুখে দিলেই সেটা মিষ্টি না টক, ঝাল না সুস্বাদু, তরল না শক্ত—সব খবর…
ভাইরাস হলো দেহকোষের ডিএনএ অথবা আরএনএর জেনেটিক উপাদানের সমন্বয়ে গঠিত খুব ক্ষুদ্র কণা। এর চারপাশে থাকে প্রোটিনের আবরণ। কোনো কোনো ভাইরাসে এই আবরণের চারপাশে স্পাইক প্রোটিনও থাকে। জীবকোষের বাইরে ভাইরাস নির্জীব, মৃত। নিজে তার প্রতিলিপি তৈরি বা বংশবিস্তার করতে পারে না। বংশবিস্তারের জন্য প্রাণিদেহের জীবকোষের বংশবিস্তারের নিজস্ব পদ্ধতি ব্যবহার করার দরকার হয়। এ জন্য ভাইরাস সাধারণত কোনো প্রাণিদেহে ঢুকে তার বহিরাবরণের কোনো প্রোটিনের (করোনাভাইরাসের ক্ষেত্রে সেটা স্পাইক প্রোটিন) সাহায্যে জীবকোষ বা সেলের রিসেপ্টার প্রোটিন আঁকড়ে ধরে কোষের ভেতরে ঢুকে পড়ে। এরপর ভাইরাস দেহকোষের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় এবং দ্রুত বংশবিস্তার করতে থাকে। এভাবে ভাইরাস মানুষ বা অন্য জীবকে আক্রান্ত করে। কিন্তু…
আমাদের দেশ পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধে। শীতকালে এখানে মূলত আরও উত্তরের দেশ থেকে পাখিরা দল বেঁধে আমাদের দেশে আসে। এদের বলা হয় পরিযায়ী। এরা আবার গ্রীষ্মকালে চলে যায়। এই পরিযায়ী পাখি আসার মূল কারণ খাদ্য সংগ্রহ। আমাদের দেশের আরও উত্তরে রাশিয়া, সাইবেরিয়া প্রভৃতি অঞ্চলে শীতের সময় চারদিক বরফে ঢাকা পড়ে, তাপমাত্রা শূন্যের নিচে ৫০–৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে যায়। এ অবস্থায় সেখানে পাখিদের খাওয়ার প্রচণ্ড অভাব দেখা দেয়। তাই সেখান থেকে দল বেঁধে পাখিরা আমাদের মতো দেশে আসে মূলত খাদ্যের সন্ধানে। ওদের ওখানে প্রচণ্ড শীতের জন্য নয়। শীতে ওদের তেমন সমস্যা হয় না। কারণ, ওরা শীতের আবহাওয়ায় থাকতেই অভ্যস্ত। আমাদের দেশের আবহাওয়া…
বয়স বাড়লে চেহারায় বেশ পরিবর্তন আসে। বিশেষভাবে চামড়ায় ভাঁজ পড়ে বা চামড়া কুঁচকে যায়। চোখের নিচে, গলা ও হাত–পায়ের চামড়া মনে হয় যেন কিছুটা ঝুলে পড়ছে। এর প্রধান কারণ হলো বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীরে কোলাজেনের উৎপাদন কমে যায়। এই কোলাজেন হলো একধরনের প্রোটিন। এরা মূলত চামড়া, অস্থি, পেশি, লিগামেন্ট, টেন্ডন প্রভৃতির জন্য প্রয়োজনীয় বিল্ডিং ব্লক। এর অভাবে চামড়ার স্থিতিস্থাপকতা কমে যায়। চামড়া শুকিয়ে ম্লান হয়ে পড়ে। চেহারার ঔজ্জ্বল্য কমে যায়। দুর্বল মনে হয়। তা ছাড়া সূর্যের প্রখর আলোয় বেশি সময় কাটালে সূর্যরশ্মির আলট্রাভায়োলেট রে–এর প্রভাবে চামড়ার ইলাস্টিন তন্তু নষ্ট হয়ে যায়। এর ফলে হাত–পা প্রসারিত করলে চামড়ার প্রসারণ আবার…
কম্পিউটার জীবন্ত কিছু নয়, নিষ্প্রাণ যন্ত্র। আর এর অ্যান্টিভাইরাসও নিষ্প্রাণ কিছু প্রোগ্রাম। কম্পিউটার চলে মূলত কিছু প্রোগ্রামে। সেখানে কেউ কম্পিউটারের কাজে ওলট–পালট লাগানোর জন্য যদি এমন কিছু প্রোগ্রাম ঢুকিয়ে দেয়, যেন যোগ করতে বললে বিয়োগ করে, গুণ করতে বললে ভাগ করে, তাহলে গোলমাল লেগে যাবে। বলা হয় কম্পিউটারে ভাইরাস ঢুকেছে, সে জন্যই উল্টা–পাল্টা করছে। এই গোলমাল বন্ধের জন্য কম্পিউটারে এমন ব্যবস্থা করা হয়, যেন ভাইরাস ঢুকতে না পারে। এ জন্য অ্যান্টিভাইরাস ব্যবহার করা হয়। এখানে এই অ্যান্টিভাইরাসকে আমাদের জীবনযাত্রায় আসল ভাইরাসের প্রতিরোধক টিকা বা ভ্যাকসিনের সঙ্গে তুলনা করা যায়। টিকা যেমন শরীরে রোগ প্রতিরোধব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে ভাইরাস ঠেকায়, তেমনি…
মাথার চুলে উকুন থাকে। চুলেই ডিম পাড়ে এবং ডিম ফুটে বাচ্চা বেরোয়। ডিমগুলো চুলের গোড়া থেকে সামান্য ওপরে চুলের সঙ্গে লেগে থাকে। মা উকুন একধরনের আঠালো পদার্থের নিঃসরণ ঘটায়। সেটাই উকুনের ডিমকে চুলে আটকে রাখে। সাধারণত মাথার ত্বকের উষ্ণতাই ডিম ফোটাতে সাহায্য করে। প্রায় এক সপ্তাহ সময় লাগে। ডিম থেকে জন্ম নেওয়া বাচ্চাদের আমরা সাধারণত ‘নিক’ বা ‘লিক’ বলি। এরাও কুটুস কুটুস করে কামড়ায়। কারণ, এরা রক্ত খেয়ে বাঁচে। উকুন চুলের গোড়ায় ত্বকে সারা দিন কামড়ায় ও রক্ত খায়। এরপর একজনের মাথা থেকে আরেকজনের মাথায় যায়। সাধারণত বাচ্চারা স্কুলে ক্লাসে পাশাপাশি বসে পড়ে বা অবসরে খেলে। তখন একজনের মাথা থেকে…
করোনাকালে আমরা সবাই এখন জানি যে শরীরের তাপমাত্রা মাপার জন্য কাচের থার্মোমিটার না হলেও চলে। একটি ছোট ইলেকট্রনিক যন্ত্র কপালের সামনে ধরলে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে সেই যন্ত্রের পর্দায় ত্বকের তাপমাত্রা দেখা যায়। এটিই ইনফ্রারেড থার্মোমিটার। এই ইলেকট্রনিক যন্ত্র ইনফ্রারেড রশ্মি সেন্সর ব্যবহার করে কপালের ধমনিতে প্রবাহিত রক্তের তাপমাত্রা দেখায়। অফিস বা অনুষ্ঠানস্থল যেখানেই জনসমাগম বেশি, সেখানে এই বিশেষ থার্মোমিটার ব্যবহার করা হয়। করোনার জন্য সতর্কতার একটি বিশেষ ব্যবস্থা হিসেবে এটা এখন সব দেশে প্রচলিত। যদি জ্বর থাকে, তাহলে অনুষ্ঠানস্থল বা কর্মক্ষেত্রে তাঁর যাওয়া ঠিক হবে না বলে পরামর্শ দেওয়া হয়। তখন করোনা টেস্ট পজিটিভ কি না, তা পরীক্ষা করে দেখা…
গবেষণায় দেখা গেছে, শিশুরা যখন ঘুমায় তখন তারা গড়ে ২৫% সময় বাঁ কাত, ২৫% সময় ডান কাত, ২৫% উপুড় এবং ২৫% সময় চিত হতে ঘুমায়। অর্থাৎ সব অবস্থানে সমান সময় ব্যয় করে। কিন্তু বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কোনো এক পাশ ফিরে শোয়ার সময়কাল বেড়ে ৫৫% বা তারও বেশি হতে পারে। অর্থাৎ চিত বা উপুড় হয়ে শোয়ার প্রবণতা বয়স বাড়লে স্বাভাবিকভাবে কমে যায়। এর কারণ কী, তা জানা যায়নি। আমরা সাধারণত ঘুমের মধ্যে এপাশ–ওপাশ করি। কোন পাশ ফিরে ঘুমানো ভালো, সেটা চিন্তা করি না। তবে পারতপক্ষে উপুড় হয়ে না শোয়াই ভালো, কেননা এতে পাকস্থলীতে চাপ পড়ে এবং শ্বাস-প্রশ্বাসও বাধাগ্রস্ত হতে পারে।…
আসলে সভ্যতার উষালগ্নে কোনো এক কালে মানুষের সময়ের হিসেব রাখার প্রয়োজন দেখা দিয়েছিল। অনেক মাথা খাটিয়ে তারা সূর্যঘড়ি উদ্ভাবন করে। সূর্যঘড়ি হয়তো আধুনিক মানুষের মনে আকর্ষণ বা বিস্ময় জাগায় না। অথচ এই সাধারণ একটি ঘড়ি তৈরি করতেই তাদের হয়তো কয়েক যুগ ধরে অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছিল। অনেক পরে পানিঘড়ি, বালুঘড়িসহ অন্যান্য ঘড়ি উদ্ভাবন করে মানুষ। সূর্যঘড়ি বানানো অনেক সহজ। একটা ফাঁকা জায়গায় একটা লাঠি পুঁতে এটি বানানো সম্ভব। লাঠির চারদিকে বৃত্তাকারে সময় সূচক ঘন্টার চিহ্ন বসিয়ে দিলেই তৈরি হয়ে যাবে একটি সূর্যঘড়ি। পূর্ব দিকে সূর্য উঠলে লাঠির ছায়া লম্বভাবে বৃত্তকার ঘড়িতে পড়বে। এরপর সূর্য স্থান বদলের সঙ্গে সঙ্গে ঘুরতে থাকবে…
ফুলে যাওয়ার ব্যাপারটি ঘটে মশার নিজস্ব একটি কৌশলের কারণে। সাধারণত ডিম পাড়ার আগে স্ত্রী মশাদের প্রচুর রক্ত খাওয়ার দরকার হয়। তাদের পুষ্টির জন্য এটা জরুরি। রক্ত খেলে একটি মশা প্রচুর ডিম পাড়তে পারে, কিন্তু রক্ত খেতে না পারলে সামান্য কয়েকটি ডিম পাড়ে। বংশবিস্তারের জন্যই তাদের রক্ত খেতে হয়। কিন্তু মশা খুব ভালোভাবেই জানে যে সে হুল ফোটালে মানুষের হাতের চাপড় খেয়ে মরতে হবে। তাহলে কী করা যায়? সে একটা বুদ্ধি বের করেছে। প্রথমে আস্তে করে আমাদের হাতে–পায়ে বসে, এরপর প্রথমে তাদের হুল দিয়ে কিছু ঘন তরল ত্বকের ভেতর ঢুকিয়ে দেয়। এটা আসলে একধরনের ব্যথানাশক তরল, যা ত্বকের কিছুটা অংশ কিছুক্ষণের…
লিখতে লিখতে হাত ব্যথা হয়ে যাবে, তারপরও পেন্সিল শেষ হবে না। কেন? কারণ, পরীক্ষা করে দেখা গেছে, একটি পেন্সিল দিয়ে প্রায় ৪৫ হাজার শব্দ লেখা যায়। আবার পেন্সিল দিয়ে দাগ টেনে একটানা চলে যাওয়া সম্ভব প্রায় ৩৫ মাইল। দেখাই যাচ্ছে, পেন্সিলের অনেক গুণ। এক হিসেবে দেখে গেছে, শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই প্রতিবছর ২০০ কোটি পেন্সিল ব্যবহার করা হয়। আমাদের দেশে কতগুলো ব্যবহার হয়, তার সঠিক পরিসংখ্যান না থাকলেও ব্যবহারের পরিমাণ কম নয়। সেটা সব শিক্ষার্থীর হাতে হাতে পেন্সিল দেখে সহজেই অনুমান করা যায়। পেন্সিলেরও আছে রকমভেদ। কোনোটার লিড (Lead) বা শীষ নরম, কোনোটার শক্ত। আবার কোনোটা দিয়ে বেশি কালো টানা যায়, কোনোটায়…