আমাদের মস্তিষ্ক হলো একটি কেন্দ্রীয় কম্পিউটারের মতো। এটা চিন্তাভাবনা, হৃদ্যন্ত্রের কাজ নিয়ন্ত্রণ, খাদ্যের পরিপাক প্রক্রিয়া পরিচালনাসহ বেঁচে থাকার জন্য আমাদের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ পরিচালনা ও সমন্বয় সাধন করে। নির্দেশ প্রদান করে। আর স্নায়ুতন্ত্র এই সব নির্দেশ বা সংকেত পরিবহন করে প্রয়োজনীয় অঙ্গপ্রত্যঙ্গে পৌঁছে দেয়। ধরা যাক, আমার হাতে একটা মশা বসে আচ্ছাসে কামড়াতে শুরু করল। এই খবর ত্বকে বিস্তৃত স্নায়ুতন্ত্রের শাখা–প্রশাখার কোষগুলো বিশেষ সংকেতের মাধ্যমে মস্তিষ্কে পাঠাবে। শুধু অনুভূতিটাই পাঠাবে, স্নায়ুকোষগুলোর কিন্তু চিন্তা করার সক্ষমতা নেই। মশা না অন্য কোনো পোকা, কী করা দরকার প্রভৃতি চিন্তা সে করতে পারে না। শুধু সংকেত পরিবহনই তার কাজ। মস্তিষ্কের সামনের অংশের কাজ হলো চিন্তা…
Author: Yousuf Parvez
সৌরজগতের দ্বিতীয় গ্রহ শুক্র। সূর্য ও চাঁদের পরে আকাশে যে বস্তুটি স্পষ্ট দেখা যায়, সেটাই শুক্র গ্রহ। রোমানরা একে প্রেম ও সৌন্দর্যের দেবী ভেনাসের নামে নামকরণ করে। কোনো দেবীর নামে নামকরণ করা একমাত্র গ্রহও এটি। ব্যাবিলনীয়রা ৭ম শতাব্দীতে প্রথম শুক্র গ্রহের কথা লিপিবদ্ধ করেন। ১৬১০ সালে গ্যালিলিও গ্যালিলি তাঁর নিজের তৈরি টেলিস্কোপের সাহায্যে শুক্র গ্রহের দশা পর্যবেক্ষণ করেন। গ্রহটি যেহেতু সূর্যের অনেক কাছে, তাই তাপমাত্রাও অনেক বেশি। প্রায় ৪৬৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই তাপমাত্রায় শীশাও গলে যায়। গ্রহটির গঠন অনেকটা পৃথিবীর মতো, অর্থাৎ পাথুরে গ্রহ। এর কেন্দ্রে রয়েছে লোহা এবং খনিজ পদার্থ। তবে গঠন এক হলেও বায়ুমণ্ডল পৃথিবীর চেয়ে আলাদা। এর…
১৯১৯ সালে আর্থার এডিংটন ও তাঁর দল পশ্চিম আফ্রিকার কাছে প্রিন্সিপে দ্বীপে সূর্যগ্রহণের ছবি তুলেছিল আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিক তত্ত্ব প্রমাণের জন্য। ওই ছবিতে সূর্যের পাশের কয়েকটি তারার অবস্থান বিশ্লেষণ করে এডিংটন দেখিয়েছিলেন, তাদের আলো আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিক তত্ত্ব অনুযায়ী সূর্যের মাধ্যাকর্ষণ ক্ষেত্রে স্থান-কালের বক্রতা অনুসরণ করে। এভাবে প্রথমবারের মতো আপেক্ষিক তত্ত্বের সরাসরি প্রমাণ পাওয়া যায়। পরে যদিও এডিংটনের ওই গবেষণা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল, কিন্তু ১৯৭৯ সালে ১৯১৯-এ তোলা ছবিগুলো আবার বিশ্লেষণ করে এডিংটনের দাবির সত্যতা প্রতিষ্ঠা করা গেছে। বর্তমানে সূর্যের কাছাকাছি অবস্থানে থাকার সময় শুক্র ও বুধ গ্রহের পৃষ্ঠ থেকে পৃথিবী থেকে প্রেরিত রাডার বেতারতরঙ্গের প্রতিফলনের সময় থেকেই আপেক্ষিকতার সূত্রকে…
১৯৬৫ সালের ২৩ নভেম্বরের পূর্ণগ্রহণ বেশ আলাদা ছিলো। বলয়গ্রহণের সময় চাঁদ আমাদের থেকে দূরে থাকে, সূর্যকে পুরোপুরি ঢাকতে পারে না। সূর্য আংটির মতো চাঁদের কালো চাকতির চারদিকে জেগে থাকে। ফলে পূর্ণগ্রহণের আবহ পাওয়া যায় না। ১৯৯৫ সালের ২৪ অক্টোবর বাংলাদেশের একেবারে দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্ত দিয়ে একটি পূর্ণগ্রহণের পথ গিয়েছিল, আধুনিক সময়ে সেটাই ছিল প্রথম গ্রহণ। বাংলাদেশের জ্যোতির্বিদ্যায় উত্সাহীরা সেটা দেখতে গিয়েছিলেন সুন্দরবনে। এরপর পূর্ণগ্রহণ হয়েছিল ২০০৯ সালের ২২ জুলাই। অনুসন্ধিত্সু চক্রের একটা বড় দলকে নিয়ে সেবার পঞ্চগড়ে যাওয়ার অভিজ্ঞতা আমার হয়েছিল। সেখানে অন্তত ১৫ হাজার মানুষ পঞ্চগড় স্টেডিয়ামে জড়ো হয়েছিল। সেই সকালে আকাশ ছিল মেঘাচ্ছন্ন, বৃষ্টি পড়ছিল। তবু পূর্ণগ্রহণের সময়…
ধরা যাক, আমরা বিষুবরেখার কোনো বিন্দুতে অবস্থিত। তাহলে পৃথিবী স্থির থাকলে পৃথিবীর বুকে চাঁদের ছায়া ঘণ্টায় ৩ হাজার ৭০০ কিলোমিটার বেগে পূর্ব দিকে সরত (চাঁদের কক্ষপথ ও ভূপৃষ্ঠ বক্র হলেও কয়েক মিনিটের জন্য আমরা ওই কক্ষপথকে একটা সরলরেখা বলে কল্পনা করে নিতে পারি)। কিন্তু যেহেতু পৃথিবী ওখানে ঘণ্টায় ১ হাজার ৭০০ কিমি বেগে সেই পূর্ব দিকেই সরছে, সে জন্য আমাদের কাছে মনে হবে, চাঁদের ছায়া বিষুবরেখার কাছে ৩ হাজার ৭০০ – ১ হাজার ৭০০ = ২,০০০ কিমি বেগে পৃথিবীর বুকে ভ্রমণ করছে। বিভিন্ন অক্ষাংশে এই মান বিভিন্ন হবে। যেমন ২১ আগস্টের গ্রহণের সময় যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিমে যেখানে গ্রহণের শুরু, সেখানে ছায়ার…
পূর্ণগ্রহণের সময় পুনরাবৃত্তি কেন হয়, সে জন্য তিন ধরনের মাস ও বছরকে আমাদের বুঝতে হবে। প্রথমটি হলো এক অমাবস্যা (বা পূর্ণিমা) থেকে পরবর্তী অমাবস্যা (বা পূর্ণিমা)। একে জ্যোতির্বিদেরা বলেন সাইনোডিক (synodic) মাস। এর গড় দৈর্ঘ্য ২৯.৫৩০৫৯ দিন। দ্বিতীয়টি হলো একটি উচ্চপাত (বা নিম্নচাপ) যে জায়গায় সূর্যের সঙ্গে একটি সরলরেখায় মিলিত হয়েছিল, সেখানে বছর শেষে সূর্যের ফিরে আসতে যে সময় লাগে। একে বলে ড্রাকোনিক বছর। যেহেতু চাঁদের নোড বছরে ১৯.৩৬ ডিগ্রি পেছনে সরে আসে, সে জন্য ড্রাকোনিক বছর সৌরীয় বছর থেকে কয়েক সপ্তাহ ছোট। এক ড্রাকোনিক বছর ৩৪৬.৬২০০৫ দিনের সমান। তৃতীয়ত, এক অনুভূ (Perigee) থেকে আরেক অনুভূ পর্যন্ত যেতে চাঁদের যত…
সূর্যগ্রহণের সময় পৃথিবী, চাঁদ ও সূর্য একই সরলরেখায় আসে। এই চাঁদ হলো অমাবস্যার চাঁদ। অথচ প্রতিটি অমাবস্যায় কিন্তু সূর্যগ্রহণ হয় না। কারণ, চাঁদ সাধারণত সূর্যের একটু ওপরে না হয় একটু নিচ দিয়ে সূর্যকে পাড়ি দেয়। ১ নম্বর চিত্রে আমরা দেখছি পৃথিবীর চারদিকে চাঁদের কক্ষপথ সৌরীয় তল বা অয়নপথকে (Ecliptic) প্রায় ৫ ডিগ্রি কোণে ছেদ করে। পৃথিবীর উত্তর মেরুর অনেক ওপর থেকে সৌরমণ্ডলের দিকে তাকালে যা দেখা যায়, এই চিত্র সেভাবে আঁকা হয়েছে। চাঁদ যখন দক্ষিণ থেকে উত্তরে যায় এবং অয়নপথের সঙ্গে ০ ডিগ্রি অবস্থানে আসে, সেই বিন্দুকে উচ্চপাত (Ascending node) এবং উত্তর থেকে দক্ষিণে যাওয়ার সময় অয়নপথের ছেদবিন্দুকে নিম্নপাত (Descending…
পূর্ণগ্রহণের সময় চাঁদ সূর্যকে ঢেকে দেয়, তার ছায়া পৃথিবীর বুকে ভ্রমণ করে প্রচণ্ড গতি নিয়ে। সেই ছায়ার প্রতীক্ষায় বসে থাকা এক অপূর্ব অনুভব। তেমনই গ্রহণের সময় সূর্যের হীরক দ্যুতি, প্রমিনেন্স ও করোনা, দিনের আলোয় শুক্র গ্রহের আবির্ভাব, বাতাসের শীতলতা—সবই এক বিস্ময়কর অভিজ্ঞতা। মানুষের সঙ্গে আমাদের সৌরজগতের মেলবন্ধন ঘটাতে পূর্ণ সূর্যগ্রহণের সঙ্গে অন্য কোনো কিছুর তুলনা চলে না। যাঁদের সেটা দেখার অভিজ্ঞতা আছে, তাঁরা জানেন এটা কী রকম আবেগপূর্ণ ব্যাপার। ২০১৭ সালের ১৯ আগস্ট আমি যুক্তরাষ্ট্রের আইওয়া স্টেটে ছিলাম। আমার পরিকল্পনা ছিল আইওয়া থেকে দক্ষিণে মিজৌরি কিংবা পশ্চিমে নেব্রাস্কা স্টেটে ছয়-সাত ঘণ্টা গাড়ি চালিয়ে গিয়ে পূর্ণগ্রহণ দেখার। কিন্তু ১৯ তারিখ গভীর…
বিংশ শতাব্দীর বিখ্যাত বাঙালি চিত্রশিল্পী। বাংলাদেশের আধুনিক শিল্পকলা আন্দোলনের পথিকৃৎ। ১৯৪৩ সালে হাতে আঁকা দুর্ভিক্ষ চিত্রমালার মাধ্যমে দেশ ছাড়িয়ে বিশ্বের কাছে হয়েছেন বিখ্যাত। তাঁর ছবি যেন কথা বলে। কিছু দিন তার ‘সাঁওতাল দম্পতি’ নিলামে বিক্রি হয়েছে ৪ কোটি টাকার বেশি দামে। বাংলাদেশের কোনো শিল্পীর শিল্পকর্মের জন্য এটাই সর্বোচ্চ মূল্যে বিক্রি হওয়ার রেকর্ড। তিনি বাংলাদেশের আধুনিক চিত্রশিল্পের জনক জয়নুল আবেদিন। তাঁর নামেই বুধ গ্রহের একটা গর্তের নামকরণ করা হয়েছে। কিন্তু কীভাবে জয়নুল আবেদিনের নাম দেশ–বিদেশ ছাড়িয়ে পৌঁছে গেল বুধ গ্রহের বুকে? ২০০৪ সালে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা বুধ গ্রহ সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহের জন্য মেসেঞ্জার নামে একটি মহাকাশযান পাঠায়। ২০০৮ সালে…
সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা প্রায় ২৭ হাজার গ্রহাণুর খোঁজ পেয়েছেন। তাও আবার টেলিস্কোপের তোলা পুরানো ছবি থেকে। আর গ্রহাণু খুঁজে পাওয়ার কাজটা করেছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। মূলত গ্রহাণুগুলো অতি ক্ষুদ্র ও অস্পষ্ট হওয়ায় এর আগে এগুলো শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে গ্রহাণু খুঁজে পাওয়া তুলনামূলক সহজ। পাশাপাশি সম্ভাব্য বিপজ্জনক গ্রহাণু চিহ্নিত করতেও এই প্রযুক্তি সহায়তা করবে। এমনকি একটা গ্রহাণু কত বছর পরে পৃথিবীকে আঘাত করতে পারে, সম্ভাব্য সেই সময় বলে দিতে পারবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। আসলে সৌরজগতে গ্রহ ও উপগ্রহ ছাড়াও কিছু পাথুরে বস্তু সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে। এসব পাথুরে বস্তুকে বলা হয় গ্রহাণু। বেশিরভাগ নতুন আবিষ্কৃত গ্রহাণু মঙ্গল এবং বৃহস্পতির…
নক্ষত্রের সংখ্যা, প্রাণ-উৎপত্তির বিভিন্ন পরিবেশ ও পরিস্থিতি—এই তিনটি বিবেচনা করে বুদ্ধিমান প্রাণীর গতিপ্রকৃতি ও তা থেকে উন্নত প্রযুক্তিসম্পন্ন সভ্যতার বিকাশের প্রক্রিয়া বিশ্লেষণ করা যেতে পারে। এর মাধ্যমে আমাদের গ্যালাক্সিতে কী পরিমাণ উন্নত প্রযুক্তিসম্পন্ন সভ্যতা থাকতে পারে, ড্রেক সমীকরণের সাহায্যে তার একটা গাণিতিক হিসাব কষা যায়। এখানে উন্নত প্রযুক্তিসম্পন্ন সভ্যতা (অ্যাডভান্সড টেকনিক্যাল সিভিলাইজেশন) বলতে ন্যূনতম বেতার জ্যোতির্বিদ্যা ব্যবহারে সক্ষম সভ্যতাকে বোঝানো হয়েছে, যদিও এই সংজ্ঞা সীমাবদ্ধ। অসংখ্য জগৎ থাকতে পারে। যার অধিবাসীরা দক্ষ ভাষাবিদ, অসাধারণ কবি-সাহিত্যিক ও সংগীতজ্ঞ। কিন্তু বেতার জ্যোতির্বিদ্যায় অক্ষম। ফলে সেখানে না গিয়ে আমাদের পক্ষে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব নয়। এই হিসাবে পৃথিবীতে প্রাণের উদ্ভব ও বিকাশ,…
গবেষকরা বলেছেন, ৪০ হাজার কোটি নক্ষত্রের এক-তৃতীয়াংশে (fp = ১/৩) গ্রহমণ্ডল রয়েছে। তাহলে মিল্কিওয়েতে ১৩ হাজার কোটিসংখ্যক গ্রহমণ্ডল রয়েছে। সৌরজগতের আদলে ধরে নিই, প্রতিটিতে ১০টি গ্রহ আছে। তাহলে মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সিতে ১ লাখ ৩০ হাজার কোটি গ্রহ রয়েছে। জীবনের মহাজাগতিক নাটকের জন্য এ এক বিশাল ক্ষেত্র। সৌরজগতে কয়েক ধরনের গ্রহ-উপগ্রহ আছে, যেগুলো হতে পারে কতগুলো শ্রেণির প্রাণীর জন্য অনুকূল। একটা নিশ্চিতভাবে পৃথিবী এবং ইদানীং বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও সাক্ষ্যপ্রমাণ থেকে প্রায় নিশ্চিতভাবে বলা যায়, মঙ্গলে একসময় প্রাণের পরিবেশ ছিল। যদিও এখন পর্যন্ত সেখানে সরাসরি কোনো জীবাশ্ম–সাক্ষ্য পাওয়া যায়নি। টাইটানে জৈব মেঘ, বৃহস্পতির আবহমণ্ডলের পরিবেশ ও এর উপগ্রহ ইউরোপার কথাও বলা যায় তার পানির…
একবিংশ শতাব্দীতে এসেও অনেক ধরনের অনিশ্চয়তা আমাদের ঘিরে আছে। গ্রহাণু বা ধূমকেতুর আঘাত। ছোট ধূমকেতু বা গ্রহাণুর ধেয়ে আসা প্রতিরোধ করতে পারলেও বড় গ্রহাণু বা ধূমকেতুকে কতটা পারব, তা আমরা এখনো জানি না। জানি না অনেক মহাজাগতিক বিপর্যয়ের কথা, বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা করছে জীবাশ্ম জ্বালানির কারণে ষষ্ঠ গণবিলুপ্তি। পরমাণু বা নিউক্লিয়ার যুদ্ধের ভয় উত্তর কোরিয়ার হাইড্রোজেন বোমার পরীক্ষামূলক বিস্ফোরণ থেকে বুঝতে পারি পরাশক্তি ছাড়াও অন্যান্য দেশের কাছে নিউক্লিয়ার শক্তি চলে যাচ্ছে। সবাই বলছে, পরাশক্তিগুলোর কাছে আমরা অনিরাপদ। সবাই তার নিজের দেশের জন্য ভাবছে, কিন্তু প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে পৃথিবীর জন্য কারা ভাববে, পৃথিবীকে কারা বাঁচাবে? প্রাযুক্তিক বয়ঃসন্ধিকাল আধুনিক প্রযুক্তি ও পুরোনো ধারণা…
কার্ল সাগান ও ফ্রাঙ্ক ড্রেকের মতো বিজ্ঞানীরা এই আশাবাদী হয়ে বলেছেন, অল্প কিছু সভ্যতা উচ্চস্তরের প্রযুক্তিজ্ঞান নিয়ে বাঁচতে শিখেছে। যেখানে মস্তিষ্কের বিবর্তনে উদ্দেশ্যহীনভাবে আরোপিত অসংগতিগুলো সচেতনভাবে দূর করে নিজেদের রক্ষা করতে পেরেছে। অথবা বড় রকমের বিপর্যয় কাটিয়ে উঠতে সামর্থ্য হয়েছে। যেমন আমরা চেষ্টা করছি। যেসব সমাজ সফলভাবে দীর্ঘকাল টিকে থাকবে, সেসব সভ্যতার জীবনকাল পরিমাপ করা সম্ভব হবে। সম্ভবত ভূতাত্ত্বিক কাল অথবা নক্ষত্রের জীবন–মৃত্যুর সময়ের ব্যাপ্তিতে। যদি সভ্যতাগুলোর ১০০টির মধ্যে ১টিও তাদের প্রাযুক্তিক বিকাশের বয়ঃসন্ধিকাল অতিক্রম করতে পারে, ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণে সঠিক পথটি বেছে নিতে পারে এবং পরিপক্বতা অর্জন করতে পারে, তাহলে অন্তত ১ কোটি গ্রহে একই সময়ে প্রযুক্তিগতভাবে উন্নত সভ্যতার টিকে…
২০ সেপ্টেম্বর, ১৫১৯ সাল। স্পেনের সেভিল বন্দর থেকে ছাড়ল পাঁচটি ছোট্ট জাহাজের একটি স্কোয়াড্রন। জাহাজগুলোর নাম সান আন্তনিও, ট্রিনিদাদ, কনসেপসিয়ন, ভিকটোরিয়া ও সান্তিয়াগো। অফিসার এবং নাবিক মিলিয়ে সবসহ যাত্রা করে ২৩৯ জন, ফেরে মাত্র কয়েকজন। স্প্যানিশ স্কোয়াড্রনটির অধিনায়ক এ্যাডমিরাল ম্যাগেলান। জন্মসূত্রে তিনি স্পেনের লোক নন, প্রতিবেশী পর্তুগাল থেকে এসেছেন। যে কর্তব্যকর্ম ফার্দিনান্দ দ্য ম্যাগেলান নিজের সামনে রাখেন, তা দুরূহ। সেটি হলো, আটলান্টিক মহাসমুদ্র থেকে প্রশান্ত মহাসাগরে যাওয়ার একটি পথ বের করা। মানচিত্রে একবার চোখ বোলাও। দুটি মহাসমুদ্রের মাঝে বিরাট আমেরিকা (যুক্তরাষ্ট্র) মহাদেশ, সুমেরু মহাসমুদ্রের (উত্তর মহাসাগর) তুষারাবৃত্ত জল থেকে কুমেরু সমুদ্র (দক্ষিণ বা অ্যান্টার্কটিক মহাসাগর) পর্যন্ত তার বিস্তার। সে সময়…
সৌরজগতের কেন্দ্রে রয়েছে সূর্য। তার চারপাশে ঘুরছে সব গ্রহ। প্রশ্ন ওঠে, সূর্যের মাহাত্ম্যটা কী? কেন সব মহাজাগতিক বস্তু তার চারপাশে ঘুরছে? এর কারণ হলো সূর্য নামক নক্ষত্রটির ভর সবচেয়ে বেশি। এ কারণে এর মহাকর্ষজনিত বলের প্রভাবে সৃষ্ট মহাকর্ষকূপের (গ্রাভিটি ওয়েল) ঢালু চক্রটি সবচেয়ে গভীর। তাই অন্য গ্রহ ও সেই সঙ্গে এদের উপগ্রহগুলোর উপায় নেই, সূর্যের চারপাশে ঘুরতেই হয়। যেকোনো বস্তু স্পেস–টাইম ফেব্রিকে একটু কুয়ার মতো ঢালু চত্বর সৃষ্টি করে। সেই ঢালুর স্তর বেয়ে অন্য হালকা ভরের বস্তু চক্কর খায়। এটাই মহাকর্ষ বলের আকর্ষণপ্রক্রিয়া। বড় ও ভারী বস্তুর আকর্ষণ–ঢাল বেশি বড়, ছোট ভরের ক্ষেত্রে ছোট। বড় বস্তুর মহাকর্ষ বলের টানে ছোট…
আমরা জানি, সব প্রাণীর মধ্যে স্ত্রী–প্রজাতি গর্ভধারণ করে। কিন্তু একমাত্র সামুদ্রিক সিহর্স কেন পুরুষ প্রজাতি গর্ভধারণ করে? ব্যতিক্রম হলো কেন? পুরুষ সিহর্সের গর্ভধারণের বিষয়টি ব্যতিক্রম। এ নিয়ে বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন মতবাদ দিয়েছেন। মজার ব্যাপার হলো, সাধারণ প্রাণীর মতোই স্ত্রী সিহর্স ডিম্বাণুদাতা এবং পুরুষ সিহর্স শুক্রাণুদাতা। পুরুষ কেবল তার নিজের শরীরের বিশেষ থলের মধ্যে বাচ্চাদের ধারণ করে। আসলে নিজের অস্তিত্ব বাঁচিয়ে রাখতে এমনটি করে সিহর্স। পুরুষ সিহর্স একসঙ্গে ১ হাজার বাচ্চা জন্ম দিলেও এদের মধ্যে গড়ে মাত্র ৫টি বেঁচে থাকে। সিহর্স যাতে অল্প সময়ে বেশি শিশু জন্মদান করতে পারে, তাই পুরুষ গর্ভধারণের কাজটি করে থাকে। এ সময়টা স্ত্রী সিহর্স নিজের দেহে নতুন…
আমরা জানি, চুম্বকের মধ্যখানে কোনো আকর্ষণ বল কাজ করে না। পৃথিবীও তো একটি বিশাল বড় চুম্বক, তাহলে পৃথিবীর মধ্যখানেও কোনো আকর্ষণ বল কাজ করার কথা নয়। কিন্তু আমরা জানি, পুরো পৃথিবীর সব জায়গায় তার আকর্ষণ বল কাজ করে। কিন্তু কীভাবে? এর পেছনের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা জানতে চাই। ‘আমরা জানি, পুরো পৃথিবীর সব জায়গায় তার আকর্ষণ বল কাজ করে।’—তুমি কী মহাকর্ষ বলের কথা উল্লেখ করছ, না চৌম্বক বলের কথা বলছ? বলক্ষেত্র সব জায়গায় কাজ করতে পারে, কিন্তু তার মানে এই নয় যে সেখানে কোনো বিন্দুতে বলের মান শূন্য হতে পারবে না। যেমন আমরা বলি, পৃথিবীর কেন্দ্রে মোট মহাকর্ষ বলের মান শূন্য; এর…
হকিং রেডিয়েশনের মাধ্যমে ব্ল্যাকহোলদের সংকুচিত হতে প্রয়োজন সুদীর্ঘ সময়। যে ব্ল্যাকহোলের আকার যত বড়, তার মৃত্যুঘণ্টা বাজতে সময় লাগবে তত বেশি। তবে যতক্ষণ পর্যন্ত মহাজাগতিক বস্তুদের গ্রাস করা অব্যাহত থাকবে, ততক্ষণ পর্যন্ত বহাল তবিয়তেই টিকে থাকতে পারবে এগুলো। যখন মহাবিশ্বে গ্রাস করার মতো আর কোনো বস্তু অবশিষ্ট থাকবে না, তখন থেকেই বাজতে শুরু করবে এদের মৃত্যুঘণ্টা। হকিং রেডিয়েশনের মাধ্যমে এরা সংকুচিত হতে শুরু করবে। এভাবে আমাদের সূর্যের সমান ভরের ব্ল্যাকহোলের অন্তিম সময় উপস্থিত হতে প্রয়োজন পড়বে আনুমানিক ১০৬৭ (১-এর পর ৬৭টা শূন্য!) বছর। অন্যদিকে, সুপারম্যাসিভ বা অতিভারী কৃষ্ণগহ্বরদের ক্ষেত্রে এই সময়কাল হতে পারে ১০১০০ (১-এর পর ১০০টা শূন্য) বছরেরও বেশি! সংকুচিত হওয়ার…
কোয়ান্টাম পদার্থবিদ্যা অনুসারে, মহাবিশ্বের কোথাও প্রকৃত শূন্যস্থানের অস্তিত্ব নেই। আপাতদৃষ্টে মনে হওয়া সব শূন্যস্থানে ক্রমাগত আবির্ভূত হচ্ছে ভার্চ্যুয়াল কণারা। এগুলো সব সময় কণা-প্রতিকণা জোড় হিসেবে আবির্ভূত হয়। ইংরেজিতে বলে ম্যাটার-অ্যান্টিম্যাটার পেয়ার। পরমুহূর্তেই এরা ধ্বংস করে দেয় পরস্পরকে। এই ঘটনার নাম কোয়ান্টাম ফ্ল্যাকচুয়েশন। এভাবে আবির্ভূত কণা-প্রতিকণা জোড়ের একটি হয় ধনাত্মক শক্তিবিশিষ্ট, অন্যটি হয় ঋণাত্মক শক্তির। ফলে এমন অদ্ভুত ঘটনার পরেও ঠিকই মোটা দাগে অটুট থাকে শক্তির নিত্যতা সূত্র। ব্ল্যাকহোলের প্রান্ত সীমানা ঘটনা দিগন্তের কাছেও সমান তালে ঘটতে থাকে কোয়ান্টাম ফ্ল্যাকচুয়েশন। এর প্রভাবে অনেক সময় সেখানে এমনভাবে কণা-প্রতিকণা জোড় আবির্ভূত হতে পারে যে ঋণাত্মক শক্তির কণাটি ব্ল্যাকহোলের মহাকর্ষের প্রভাবে বাঁধা পড়ে যায়।…
শেষ পর্যন্ত মহাবিশ্বে টিকে থাকবে কেবল দানবাকৃতির ব্ল্যাকহোল বা কৃষ্ণগহ্বর! যদি গ্রাস করার মতো কোনো বস্তুর অস্তিত্ব না থাকে, তাহলে কী ঘটবে ব্ল্যাকহোলদের ভাগ্যে? এরা কি অনন্তকাল ধরে নিঃসঙ্গ পথিকের মতো মহাশূন্যে ভেসে বেড়াবে? নাকি অন্য সব মহাজাগতিক বস্তুর মতো অজানা উপায়ে জীবনাবসান হবে তাদেরও? ব্ল্যাকহোলদের সরাসরি দেখা সম্ভব নয়। পরোক্ষভাবে আশপাশের বস্তুদের আচরণ থেকে এদের খোঁজ পাওয়া যায়। বস্তুগুলো প্রবল মহাকর্ষের প্রভাবে ভেঙ্গেচুরে দুমড়ে-মুচড়ে গিয়ে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অংশে বিভক্ত হয়ে পড়ে। এই অংশগুলোকে ব্ল্যাকহোল ক্রমান্বয়ে নিজেদের দিকে টেনে নিতে থাকে। এগুলো যত নিকটবর্তী হয়, তত বাড়তে থাকে গতিবেগ। তীব্র গতিতে চলমান অংশগুলোর মধ্যে ঘটতে থাকে তুমুল সংঘর্ষ, উৎপন্ন হয় তাপশক্তি।…
মহাবিশ্বের রহস্যময় বস্তুগুলোর তালিকায় ব্ল্যাকহোলের অবস্থান নিঃসন্দেহে প্রথম সারিতে। এগুলোতে চলে অমিত শক্তিশালী গ্র্যাভিটি বা মহাকর্ষের রাজত্ব। ফলে আশপাশের সবকিছুর শেষ ঠিকানা হয় এদের গহীনে। এমনকি এদের ফাঁক গলে পালাতে পারে না মহাবিশ্বের সর্বোচ্চ গতিবেগের মুকুটধারী আলোও। আসলে প্রতিটি ব্ল্যাকহোল বা কৃষ্ণগহ্বরের চারপাশে একটি সীমারেখা থাকে। এর নাম ইভেন্ট হরাইজন বা ঘটনা দিগন্ত। একে অতিক্রম করলেই আলোসহ অন্য কোনো কিছু আর ফিরে যেতে পারে না। এভাবেই বাকি মহাবিশ্ব থেকে নিজেদের পুরোপুরি আড়াল করে রাখে রহস্যময় ব্ল্যাকহোলেরা। ব্ল্যাকহোল হরেক রকম ভরের হতে পারে। সাধারণত এদের ভর আমাদের সূর্যের পাঁচ গুণ থেকে শুরু করে একশ গুণ পর্যন্ত হয়। তবে মহাবিশ্বে দানবাকৃতির ব্ল্যাকহোলেরও…
ইউক্লিড স্পেস টেলিস্কোপ মাত্র ২৪ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণ করে ৩ লাখের বেশি মহাকাশীয় বস্তুর ছবি তুলেছে। এই ছবিগুলোর মধ্যে রয়েছে জ্বলজ্বলে গ্যালাক্সি ক্লাস্টার, গ্যাসের রঙিন মেঘ ও সবচেয়ে বড় সর্পিলাকার গ্যালাক্সির ছবি। ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি (ইসা) জানিয়েছে, আগামী আরও ছয় বছরে ইউক্লিড রাতের আকাশের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ জায়গার ছবি তুলবে। এ সময়ের মধ্যে প্রায় ১০০ কোটি গ্যালাক্সির ছবি তোলা যাবে। এসব গ্যালাক্সির বয়স হবে ১ হাজার কোটি বছরেরও বেশি। বর্তমানে ইউক্লিডের তোলা কয়েকটি ছবি প্রকাশ করেছে ইসা। এগুলোর মধ্যে দুটি হলো অ্যাবেল ২৩৯০ ও অ্যাবেল ২৭৬৪। অ্যাবেল ২৩৯০ পৃথিবী থেকে প্রায় ২৭০ কোটি আলোকবর্ষ দূরে পেগাসাস নক্ষত্রপুঞ্জে অবস্থিত। এই নক্ষত্রপুঞ্জে আরও…
২০১৭ সালের ২১ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখণ্ড থেকে একটি সূর্যগ্রহণ দেখা গিয়েছিল। সেটা দেখতে ওয়াইওমিং স্টেটে গিয়েছিলাম। তখনই ২০২৪ সালে আবার যে আরেকটি সূর্যগ্রহণ হবে, তা নিয়ে ভেবেছিলাম; ভেবেছিলাম তা অনেক দূর সময়ের ব্যাপার। কিন্তু দেখতে দেখতে সাতটি বছর কেটে গেল, মনে হয় চোখের পলকে, তবে মাঝখানে ছিল কোভিড মহামারির জন্য হারানো কয়েকটি বছর। বর্তমানে বিভিন্ন কারিগরি মাধ্যমের উন্নয়নের ফলে, যার মধ্যে শুধু সূর্যকে বিশেষভাবে জন্য দেখার জন্য পার্কার সোলার প্রোব, সোলার অ্যান্ড হেলিওস্ফিয়ার অবজারভেটরিসহ (SOHO) বেশ কয়েকটি স্যাটেলাইট সক্রিয় রয়েছে, সেখানে সূর্যগ্রহণের বৈজ্ঞানিক ভূমিকা কিছুটা হ্রাস পেয়েছে। এসব স্যাটেলাইট করোনাগ্রাফ নামে একটি যন্ত্র দিয়ে সূর্যকে কৃত্রিমভাবে ঢেকে ওপরের করোনাকে…