আমরা জানি, অক্সিজেন ছাড়া আগুন জ্বলে না। তাহলে সূর্যে আগুন জ্বলে কীভাবে? সেখানে তো কোনো অক্সিজেন নেই, ব্যাপারটা কী? এই প্রশ্নের উত্তরে প্রথমে বলা দরকার যে আমরা যেভাবে আগুন জ্বলতে দেখি, সূর্য কিন্তু সেভাবে জ্বলে না। কাঠ বা কয়লা পুড়তে অক্সিজেন লাগে, এটা ঠিক। কিন্তু সূর্য অথবা কোনো নক্ষত্র তাদের কেন্দ্র থেকে যে শক্তি বিকিরণ করে, এবং যাকে আমরা প্রজ্বলন হিসেবে দেখি, সেটা কিন্তু প্রচলিত পদ্ধতির প্রজ্বলন নয়। সূর্যের এই প্রজ্বলন ঘটে হাইড্রোজেনকে হিলিয়ামে রূপান্তরের মাধ্যমে। সূর্যের কেন্দ্রে অক্সিজেন নেই সত্য, কিন্তু হাইড্রোজেন আছে। সেই গ্যাস ব্যবহার করেই সূর্য তাপ বিকিরণ করে। অবশ্য চলতি ভাষায় একেই আমরা বলি, সূর্য হাইড্রোজেন…
Author: Yousuf Parvez
গিরগিটির ত্বকের কোষের ভেতর বিভিন্ন রঙের কণা থাকে। চারপাশের পরিবেশের রং অনুসারে নির্দিষ্ট রঙের কণা কোষের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে এবং তখন গিরগিটির রংটিও সেই কণার রং ধারণ করে। ফলে শিকার বা শিকারির পক্ষে তাকে খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়। ফলে টিকে থাকার এটা বাড়তি সুবিধা গিরগিটির জন্য। এই বৈশিষ্ট্য প্রাকৃতিকভাবে নির্বাচিত হয়েছে। ওপরের ব্যাখ্যাটা চমত্কার। কিন্তু বাস্তব তথ্য-উপাত্তের সঙ্গে এর অধিকাংশই মেলে না! তবে কিছুটা মেলে। ১৯০৩ সালে ফ্রাংক কার্লটন নামে হার্ভার্ডের একজন প্রাণিবিজ্ঞানী একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেন। তাতে তিনি দাবি করেন, গিরগিটিসহ রং পরিবর্তনকারী বিভিন্ন প্রাণীর ত্বকে একধরনের রঞ্জক কোষ পেয়েছেন। বলে রাখা ভালো, গিরগিটি বলতে Chamaeleonidae গোত্রভুক্ত যেকোনো প্রজাতিকে…
মহাবিশ্বের শেষ পরিণতি কী এটা নিয়ে তাঁর আগে অন্য কোনো বিজ্ঞানী সেভাবে ভাবেননি। এ বিষয়ে গত শতাব্দীর সত্তরের দশকে জামাল নজরুল ইসলাম লিখেছিলেন বিশ্ব বিখ্যাত এক বই- দ্য আল্টিমেট ফেট অব দ্য ইউনিভার্স। সেই বইয়ের একটা অংশ অনুবাদ করা হলো পাঠকদের জন্য। অন্তিম পরিণতিতে এই মহাবিশ্বের ভাগ্যে কী ঘটবে? বুদ্ধিমত্তা বিকাশের পর থেকেই এই প্রশ্ন আন্দোলিত করেছে এক মানুষ থেকে আরেক মানুষের মন। এই প্রশ্ন থেকে মানুষের মনে জন্ম নিয়েছে আরও কিছু প্রশ্ন। এই পৃথিবীর ভবিষ্যৎ কী? কিংবা এই মানবজাতির ভবিষ্যৎ কী? বর্তমানে প্রশ্নগুলো খুব সহজ মনে হলেও অনেক কাল পর্যন্ত এদের কোনো বিজ্ঞানসম্মত ও গ্রহণযোগ্য উত্তর ছিল না। এ…
বিজ্ঞানী জোসেলিন বেল বেড়ে ওঠেন আরমাঘ শহরের লুরগানে এবং সেখানকারই একটি কলেজে ভর্তি হন। তবে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও বিজ্ঞান পড়তে দেওয়া হয়নি তাঁকে। মেয়েদের জন্য বিজ্ঞানের পরিবর্তে সেলাই ও রান্নার বিষয় অন্তর্ভুক্ত ছিল। ফলে কলেজ পরীক্ষায় অকৃতকার্য হন তিনি। পরে অন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে ভর্তি হন। সেখানে একজন পদার্থবিদ্যার শিক্ষকের দ্বারা অনুপ্রাণিত হন তিনি। পরে গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিদ্যায় সম্মানসহ স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। পিএইচডি করেন কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে, ১৯৬৯ সালে। পরে যুক্ত হন কেমব্রিজের সম্প্রতি আবিষ্কৃত কোয়েসার পর্যবেক্ষণ প্রকল্পের সঙ্গে। কর্মজীবনে তিনি সাউদাম্পটন বিশ্ববিদ্যালয়, লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, এডিনবার্গ রাজকীয় মানমন্দির এবং হাওয়াই মাউনাকে (Mauna Kea) জেমস ক্লার্ক ম্যাক্সওয়েল টেলিস্কোপের প্রজেক্ট…
জোসেলিন বেল জন্মগ্রহণ করেন নর্দান আয়ারল্যান্ডে, ১৯৪৩ সালে। তাঁর বাবা ছিলেন একজন স্থপতি, যিনি আয়ারল্যান্ডের আরমাঘ প্লানেটরিয়ামের নকশা করেছিলেন। প্লানেটরিয়াম পরিদর্শনের সময় বেলকে জ্যোতির্বিজ্ঞান পেশা গ্রহণের জন্য উদ্বুদ্ধ করেছিল কর্তৃপক্ষ। ছোটবেলায় বাবার সংগ্রহে থাকা জ্যোতির্বিজ্ঞানবিষয়ক বইয়ের সঙ্গে পরিচিত হন তিনি। বেল বেড়ে ওঠেন আরমাঘ শহরের লুরগানে এবং সেখানকারই একটি কলেজে ভর্তি হন। তবে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও বিজ্ঞান পড়তে দেওয়া হয়নি তাঁকে। মেয়েদের জন্য বিজ্ঞানের পরিবর্তে সেলাই ও রান্নার বিষয় অন্তর্ভুক্ত ছিল। ফলে কলেজ পরীক্ষায় অকৃতকার্য হন তিনি। পরে অন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে ভর্তি হন। সেখানে একজন পদার্থবিদ্যার শিক্ষকের দ্বারা অনুপ্রাণিত হন তিনি। পরে গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিদ্যায় সম্মানসহ স্নাতক ডিগ্রি লাভ…
পিএইচডি গবেষণার সময়েই বানিয়েছিলেন বেতার দুরবিন। যৌথভাবে আবিষ্কার করেন মহাবিশ্বের এক দুর্বোধ্য জ্যোতিষ্ক পালসার। অথচ নারী বলে হয়েছিলেন নোবেল বঞ্চিত। তিনি জোসেলিন বেল। আজ তাঁর জন্মদিন। মহাকাশে প্রথম পালসার আবিষ্কারের কৃতিত্ব কেমব্রিজের মুলার্ড বেতার জ্যোতির্বিজ্ঞান মানমন্দিরের। ১৯৫৭ সালে কেমব্রিজের লর্ডস ব্রিজে মানমন্দিরটি স্থাপিত হয়। স্থাপন করেন কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিখ্যাত ক্যাভেনডিশ ল্যাবরেটরির একদল বেতার জ্যোতির্বিজ্ঞানী। নেতৃত্বে ছিলেন প্রখ্যাত ব্রিটিশ বেতার জ্যোতির্বিজ্ঞানী অধ্যাপক মার্টিন রাইলে। আধুনিক বেতার জ্যোতির্বিজ্ঞানের অন্যতম প্রাণকেন্দ্র মুলার্ড মানমন্দির। প্রতিষ্ঠার ১০ বছরের মাথায় ১৯৬৭ সালে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অ্যান্টনি হিউইশ ও তাঁর ছাত্রী জোসেলিন বেল যৌথভাবে আবিষ্কার করেন মহাবিশ্বের এক দুর্বোধ্য জ্যোতিষ্ক পালসার। পিএইচডি গবেষণার সময়ই জোসেলিন বেলকে বানাতে…
মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা চাঁদের কক্ষপথে একটি নতুন মহাকাশ স্টেশন নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছে। এ মহাকাশ স্টেশনের নাম রাখা হবে ‘লুনার গেটওয়ে’। ভবিষ্যতে মানুষের চাঁদে বসবাস, মহাকাশের গভীরে অনুসন্ধান ও মঙ্গল বা অন্য কোনো গ্রহে সহজে যাওয়ার জন্য এ প্রকল্পের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। লুনার গেটওয়ে হবে একটি বহুমুখী মহাকাশ স্টেশন। এটি থাকবে চাঁদের কক্ষপথে। চন্দ্রপৃষ্ঠে অভিযানের জন্য মঞ্চ হিসাবে কাজ করবে এই মহাকাশ স্টেশন। নাসার প্রশাসক বিল নেলসন জানিয়েছেন, ‘লুনার গেটওয়ে হবে চাঁদ ও মহাকাশ গবেষণা প্রচেষ্টার কেন্দ্রবিন্দু। হয়তো ভবিষ্যতে এই স্টেশন ব্যবহার করে যাওয়া যাবে মঙ্গল গ্রহেও।’তবে এই মহাকাশ স্টেশন নাসা একা তৈরি করবে না। এটি হবে একটা বহুজাতিক…
২০৩০ সালের মধ্যে মহাকাশে নিজস্ব প্রযুক্তির স্পেস স্টেশন তৈরির ঘোষণা দিয়েছে রাশিয়া। গত ২ জুলাই, মঙ্গলবার রুশ মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (রসকসমস) এই তথ্য জানিয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় দেশটি প্রাথমিকভাবে উচ্চ প্রযুক্তিসম্পন্ন স্পেস স্টেশনের ৪টি মডিউল কোর তৈরি করবে। পর্যায়ক্রমে সেগুলো পাঠানো হবে পৃথিবীর লো-আর্থ অরবিট বা নিম্ন কক্ষপথে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়াসহ পৃথিবীর মোট ৩২টি দেশ ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশন (আইএসএস) পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ করছে। ১৯৯৮ সালের ২০ নভেম্বর প্রথম আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন স্থাপনের কাজ শুরু হয়। প্রযুক্তিগত দিক বিবেচনা করে এই স্টেশনের সার্ভিস লাইফ টাইম ধরা হয়েছে ২০৩০ সাল পর্যন্ত। এরই মধ্যে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা স্পেসএক্সকে দায়িত্ব দিয়েছে…
আমাদের ছায়াপথের নাম আকাশগঙ্গা। ইংরেজি নাম মিল্কিওয়ে। বিশেষত গ্রীষ্মের আকাশে ছায়াপথটির দেখা মেলে। দেখতে আসলেই নদীর মতো। কিন্তু ছায়াপথ আবার নদীর মতো কী করে হয়? আসলে আকাশগঙ্গা ছায়াপথ অনেকগুলো সর্পিল বাহু নিয়ে গঠিত। তেমনি একটি বাহুর নাম ওয়ারনবাহু। আমরা খালি চোখে এই বাহুর ভেতরের দিকের তারকাগুলোকেই দেখতে পাই। অন্য দিকের তুলনায় বেশি নক্ষত্র থাকায় বাহুটি খুব সহজে চোখে পড়ে। তাকালে মনে হয় উত্তর থেকে দক্ষিণে একটি নদী যেন বয়ে যাচ্ছে। শুধু নেই কুলু কুলু ধ্বনিটি। কিন্তু গ্রিকরা আবার ভাবল, আকাশে একটি পথের মতো দেখা যাচ্ছে। আর পথের ওপর যেন দুধ বিছিয়ে রাখা হয়েছে। তাই তারা এর নাম দিল গ্যালাক্সিয়াস কিক্লোস…
নিউট্রিনো নামে এক ধরনের কণা আছে। ছলনাময়ী এই কণারা সহজে ধরা দিতে চায় না। অথচ প্রতিমুহূর্তে শত-সহস্র নিউট্রিনো পৃথিবীর মধ্য দিয়ে, এমনকি মানুষের দেহের মধ্যে দিয়েও ছুটে যাচ্ছে অবিরাম। এদের ধরার জন্য বিজ্ঞানীরা বরফের বুক খুঁড়ে ফাঁদ পাতলেন। বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ব্যয় করে বসানো হলো টেলিস্কোপ, বানানো হলো অবজারভেটরি বা পর্যবেক্ষণাগার। নাম দেওয়া হলো আইসকিউব অবজারভেটরি। বরফের বুকের ভেতরে বসে সেই টেলিস্কোপ পৃথিবীর উল্টো দিকের আকাশে তাকিয়ে রইল। নিউট্রিনোর মতো আর কোনো কণা পৃথিবীকে এমন করে পেরিয়ে যেতে পারে না। মিথস্ক্রিয়া করে সাধারণ বস্তুর সঙ্গে। কাজেই কোনো কণা যদি পৃথিবীর উল্টো দিকের আকাশ থেকে ছুটে এসে আইসকিউব অবজারভেটরির টেলিস্কোপে ধরা…
জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞানে আগ্রহী অথচ ব্ল্যাকহোল বা কৃষ্ণগহ্বরের কথা শোনেনি, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। মহাকর্ষের শক্তি সেখানে আলোর বেগের চেয়েও বেশি। ফলে সেখান থেকে পালাতে পারে না কোনো কিছুই। যে খাঁচার ভেতরে অচিন পাখি একবার ঢুকলে আর বেরোতে পারে না—সহজ কথায় তা-ই কৃষ্ণগহ্বর। কোয়াসার শব্দটা একটু কম শোনা গেলেও এটা মোটামুটি পরিচিত শব্দ। মহাকাশে মানুষের দেখা সবচেয়ে দূরবর্তী উজ্জ্বল জিনিস এই কোয়াসার। কিন্তু জিনিসটা আসলে কী? বিশাল কোনো নক্ষত্র? সুপারনোভার মতো কিছু? কোয়াসারের ব্যাপারটা বুঝতে হলে সেই কৃষ্ণগহ্বরের কাছেই আবার ফিরে যেতে হবে। যে প্রশ্নটা থেকে শুরু করা যায়, তা হলো কৃষ্ণগহ্বর কোথায় থাকে? কৃষ্ণগহ্বর থাকে মূলত গ্যালাক্সির কেন্দ্রে। এমনকি আমাদের…
জ্যোতির্বিদেরা কিছু কোয়াসার (গ্যালাক্সি) আবিষ্কার করেছেন, যেগুলো কিনা কয়েক বিলিয়ন আলোকবর্ষজুড়ে সুতার মতো একটা আকার সৃষ্টি করেছে (ছবি ৪)। তবে এসব আবিষ্কারের পরিসংখ্যানগত বিশ্লেষণ নিয়ে বিজ্ঞানীদের মতভেদ আছে। অনেকে বলছেন, বিজ্ঞানীরা যে পদ্ধতিতে বিশালকায় গঠন আবিষ্কার করছেন, তা ঠিক নয় এবং এখন পর্যন্ত যত বড় গঠন পাওয়া গেছে, সেগুলোকে সাধারণ বিগব্যাং মডেল দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায়। কিন্তু বিশালকায় কোয়াসার সমষ্টির গঠন নতুন পর্যবেক্ষণের মধ্যে ক্রমাগতই পাওয়া যাচ্ছে। প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালে একদল গবেষক গামা রশ্মি বিস্ফোরণের বিতরণ তথ্য থেকে প্রায় ২ থেকে ৩ বিলিয়ন আলোকবর্ষজুড়ে একটি গঠনের অস্তিত্ব দাবি করেন। যেহেতু অন্য কোনো তরঙ্গ দৈর্ঘ্যে এই আবিষ্কারকে সমর্থন করা যাচ্ছে না,…
আধুনিক পর্যবেক্ষণ আকাশে গ্যালাক্সিদের বিতরণ সম্পর্কে কী বলছে? ৩০ বছর ধরে জ্যোতির্বিদেরা হাজার হাজার গ্যালাক্সির অবস্থান নির্ধারণ করেছেন। সেটা করতে গিয়ে তাঁরা আবিষ্কার করেছেন, মহাবিশ্বে গ্যালাক্সিরা সমসত্ত্বভাবে বিতরিত নয়। গ্যালাক্সিরা মহাকর্ষ শক্তির মাধ্যমে এসে অপরের কাছে আসে ঠিকই, কিন্তু তারা সমানভাবে ছড়ানো থাকে না, তারা সৃষ্টি করে বিশাল সুপারক্লাস্টার, যা কিনা অতিকায় গ্যালাক্সি দল। অনেক সময় তারা সৃষ্টি করে মহাকাশের বিরাট জায়গাজুড়ে ফিলামেন্ট-সুতোর মতো বক্ররেখা, অথবা কাগজের মতো দ্বিমাত্রিক তল। এর এই বিশালকায় গঠনগুলোর মাঝে থাকে শূন্যস্থান। CfA2 দেয়াল আমার মনে পড়ে, আমি যখন পিএইচডি করছিলাম, তখন জ্যোতির্বিদ মারগারেট গেলার ও জন হুকরা প্রথম বড় স্কেলের মহাবিশ্বের একটি মানচিত্র প্রকাশ…
কয়েক হাজার বছর ধরে আমরা ভেবে এসেছি, এই যে মহাবিশ্ব, নিশ্চয় তার মধ্যে মানুষের একটা বিরাট ভূমিকা আছে। আমরা ভেবেছি পৃথিবী মহাকাশের কেন্দ্রে অবস্থিত, পর্যবেক্ষণকারী হিসেবে আমাদের স্থান বিশেষ। প্রাচীন বিজ্ঞানীরা ভেবেছিলেন, মহাবিশ্বের পরিসর—আজ আমরা যা জানি—তার তুলনায় ছিল খুবই ছোট। তাঁরা ভাবতেন, আকাশের নক্ষত্ররা আমাদের খুব কাছে, গ্রিক দার্শনিকদের ধারণা অনুযায়ী মহাকাশের ব্যাস আমাদের বর্তমান সৌরজগতের আকার থেকে বড় ছিল না। এমনই ছোট ছিল তাঁদের মহাবিশ্ব। ১৫৪৩ সালে নিকোলাস কোপার্নিকাস তাঁর De revolutionibus orbium coelestium (খগোল গোলকদের ঘূর্ণন প্রসঙ্গে) বইতে লিখলেন, পৃথিবী নয়, সূর্যই আমাদের সৌরজগতের কেন্দ্র। বিজ্ঞান ও দর্শনজগতের জন্য সেটি ছিল একটি বিপ্লবী বক্তব্য। কিন্তু কোপার্নিকাসের মডেলে সূর্য ছিল মহাশূন্যের…
এ দুটি গ্রহ সূর্যের এত কাছে যে তাদের কোনো উপগ্রহ থাকা কঠিন। কারণ যদি কোনো গ্রহাণু মহাশূন্যে ঘুরতে ঘুরতে তাদের কাছাকাছি এসেও পড়ে, তাহলে ওই গ্রহ দুটির উপগ্রহ না হয়ে বরং সূর্যের আকর্ষণে সূর্যের দিকেই আকৃষ্ট হয়ে ওদিকে চলে যায়। অথবা ধরা যাক, কোনো গ্রহাণু তাদের আঘাত করল। তাতে কী? বিচ্ছিন্ন অংশ সেই সূর্যের আকর্ষণে ওদিকেই চলে যেত। আমাদের পৃথিবী যখন গঠনের প্রক্রিয়ায় ছিল, পৃথিবীর অধিকাংশ প্রায় গলিত পদার্থে আবৃত, সেই সময় বড় কোনো গ্রহাণু সজোরে আঘাত করায় একটি অংশ বিচ্ছিন্ন হয়ে পৃথিবীর চারপাশে নির্দিষ্ট কক্ষপথে ঘুরতে থাকে। এভাবে আমাদের চাঁদের জন্ম। এটা সম্ভব হয়েছিল, কারণ পৃথিবী সৌরজগতের অভ্যন্তরের চারটি…
কীভাবে ব্রেক পেডেলের ওপর সামান্য চাপ একটি গতিশীল গাড়িকে থামাতে পারে? গতিশীল যেকোনো বস্তুর গতিশক্তি থাকে। গতিশক্তি হারিয়ে ফেললে বস্তুটি থেমে যায়। গতিশীল গাড়ি বা যন্ত্রকে থামাতে এই মূলনীতির ওপর ভিত্তি করে ব্রেক সিস্টেম তৈরি করা হয়। ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার বেগে গতিশীল একটি গাড়ির কথা চিন্তা করুন, ব্রেক পেডেলে শুধু আপনার পায়ের চাপ কোনোভাবে গাড়িটিকে থামাতে পারবে না। তাই গতি কমাতে এই বলের মান বাড়াতে হয়। আধুনিক গাড়িতে হাইড্রোলিক ব্রেকের মাধ্যমে এই বলের মান বাড়ানো হয়। পেডেলে প্রযুক্ত বলকে বহুগুণ বাড়াতে ব্রেকের হাইড্রোলিক সিস্টেম ব্যবহৃত হয়। বিভিন্ন আকারের সিলিন্ডার ও বিভিন্ন প্রবাহী (Fluid) ব্যবহার হয় এতে। অর্থাৎ পেডেলের ওপর প্রযুক্ত…
ধরুন, একটি উত্স থেকে এইমাত্র আলো জ্বলে উঠল। তাহলে কি সঙ্গে সঙ্গেই আলোর গতি সেকেন্ডে ১ লাখ ৮৬ হাজার মাইল হবে? একেবারে শুরু থেকেই? নাকি ধীরে ধীরে বাড়বে এবং একসময় ধ্রুব গতি অর্জন করবে? এ প্রশ্নের উত্তর হলো, আলোর গতি স্থির এবং সেটা সেকেন্ডে ১ লাখ ৮৬ হাজার মাইল। আলো জ্বলে ওঠামাত্রই এই বেগে ছোটা শুরু করে। অ্যাস্ট্রোফিজিকস-সম্পর্কিত হার্ভার্ড-স্মিথসোনিয়ান সেন্টারের তাত্ত্বিক পদার্থবিদ অ্যাভি লোয়েব এভাবেই কথাটা বলেছেন (দেখুন, স্মিথসোনিয়ান ম্যাগাজিন, ১ এপ্রিল ২০১৮)। বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন ১৯০৫ সালে আলোর ধ্রুব গতির এই ধর্ম ব্যবহার করে বিশেষ আপেক্ষিকতা তত্ত্ব প্রদান করেন। এটা তাঁর স্পেশাল থিওরি অব রিলেটিভিটি বা বিশেষ আপেক্ষিকতার মূল ভিত্তি।…
রাতের আকাশ, নক্ষত্র, গ্রহ, উপগ্রহ—মহাবিশ্বের অপার রহস্য আমাদের সব সময় মুগ্ধ করে। ফটোগ্রাফার বা আলোকচিত্রীরা ক্যামেরায় সেসব রহস্যের কিছু ধারণ করতে পারেন। প্রতিবছর ইংল্যান্ডের রয়েল মিউজিয়ামস গ্রিনউইচ আয়োজন করে ‘অ্যাস্ট্রোনমি ফটোগ্রাফার অব দ্য ইয়ার’ প্রতিযোগিতা। সেখানে নিজেদের অসাধারণ দক্ষতা ও সৃজনশীলতা প্রদর্শন করেন বিশ্বের সেরা জ্যোতির্বিদ্যাবিষয়ক ফটোগ্রাফাররা। এ বছর ১৬তম ‘অ্যাস্ট্রোনমি ফটোগ্রাফার অব দ্য ইয়ার’ প্রতিযোগিতায় ৫৮টি দেশের পেশাদার ও শখের আলোকচিত্রীর কাছ থেকে প্রায় ৩ হাজার ৫০০টি ছবি জমা পড়ে। সেখান থেকে বাছাইকৃত সেরা ছবিগুলোর সংক্ষিপ্ত তালিকা প্রকাশিত হয়েছে। আর্কটিক ড্রাগন আর্কটিক ড্রাগন নামে পরিচিত এটি একটি অরোরা। আইসল্যান্ডের আর্কটিক হেঞ্জ থেকে এই অসাধারণ দৃশ্য ধারণ করা হয়েছে। সে…
পৃথিবীতে সব কিছুই কিছু না কিছু অবলম্বন করে থাকে। যদি অবলম্বনের কিছু না থাকে তাহলে নিচে পড়ে যায়। গ্যাস-বেলুন অথবা হালকা ফেঁসো তো মাটিতে নাও পড়তে পারে? ঠিক কথা। শুধু তা-ই নয়, তারা ওপরেও উঠতে পারে। কিন্তু তার একমাত্র কারণ এই যে গ্যাস-বেলুন ও ফেঁসো বাতাসে ভর দিয়ে থাকতে পারে। তারা এতই হালকা যে বাতাসে ভাসে, যেমন কাঠের টুকরো পানি ভর্তি একটা পাত্রে ভাসতে পারে। পাত্র থেকে পানি ফেলেই দেখো না, কাঠের টুকরোটাও সঙ্গে সঙ্গে তলায় এসে ঠেকবে। বাতাসের ক্ষেত্রেও তাই। পৃথিবী থেকে সব বাতাস যদি সরিয়ে নেওয়া সম্ভব হতো তাহলে যে সব বস্তু বাতাসে ভাসে, সেগুলো সব এসে ঠেকত…
মহাজাগতিক সব বস্তুই ঘুরছে। এই যেমন সূর্যের আরেক প্রতিবেশী নক্ষত্র বার্নাডের তারা। এর আবর্তন সম্পন্ন হয় ১৩০ দিনে। একইভাবে ঘুরছে দূরের বা কাছের অন্য সব নক্ষত্রও। নক্ষত্রের সমাবেশ নিয়ে গড়ে ওঠে একেকটি ছায়াপথ। আমাদের ছায়াপথের নাম মিল্কিওয়ে বা আকাশগঙ্গা। আকৃতিটা সর্পিল। আর আকারটা কত বিশাল! এক প্রান্ত থেকে আলো নিক্ষেপ করলে সে আলো আরেক প্রান্তে পৌঁছাবে এক লাখ বছর পর। মিল্কিওয়ে ও অ্যান্ড্রোমিডাসহ ৫০-এর বেশি ছায়াপথ নিয়ে একটি গুচ্ছের নাম লোকাল গ্রুপ। লোকাল গ্রুপের দ্বিতীয় বৃহত্তম ছায়াপথ আমাদের আকাশগঙ্গা। মজার ব্যাপার হলো আকাশগঙ্গাও কিন্তু আবর্তিত হচ্ছে, যেমন করে আবর্তিত হচ্ছে এর অভ্যন্তরের গ্রহ, উপগ্রহ, গ্যাসীয় কণারা। ঠিক যেন বাচ্চাদের খেলনা…
হার্ভার্ড-স্মিথসোনিয়ান সেন্টার ফর অ্যাস্ট্রোফিজিকসের বিজ্ঞানী ব্রেট এ ম্যাকগুইরের নেতৃত্বাধীন একদল জ্যোতির্বিজ্ঞানী একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছেন অ্যাস্ট্রোফিজিক্যাল জার্নাল লেটার্স-এ। তাতে ওই গবেষক দল জানিয়েছে, আলমা অবজারভেটরির মাধ্যমে সৌরজগতের বাইরে পানির অস্তিত্ব ও জটিল জৈব যৌগের উপস্থিতির প্রমাণ পেয়েছে তারা। বহির্জাগতিক অঞ্চলে সরাসরি কোনো জটিল রাসায়নিক প্রক্রিয়ার পর্যবেক্ষণ এই প্রথম। আতাকামা লার্জ মিলিমিটার/সাবমিলিমিটার অ্যারে, সংক্ষেপে ডাকা হয় আলমা (ALMA)। অবস্থান চিলিতে, ৬৬টি ডিশ অ্যানটেনা দিয়ে বানানো রেডিও টেলিস্কোপ। এই টেলিস্কোপের মূল কাজ হলো রেডিও ওয়েভের যে অংশ বায়ুমণ্ডল পাড়ি দিয়ে পৃথিবীতে পৌঁছায়, তা পর্যবেক্ষণ করা। রেডিও ওয়েভের কম কম্পাঙ্কের অংশ সহজেই পৃথিবীতে পৌঁছায়, সে অংশ পর্যবেক্ষণ করে মহাকাশবিজ্ঞানীরা বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করেন।…
নক্ষত্রের গতি ব্যবহার করে প্রথম ডার্ক ম্যাটারে প্রস্তাব করেন ডাচ জ্যোতির্বিদ জ্যাকোবাস ক্যাপটেইন। আরেক ডাচ বিজ্ঞানী ও রেডিও অ্যাস্ট্রোনোমার জ্যান উর্ট ১৯৩২ সালে একই কাজ করেন। তিনি কাজ করেছিলেন লোকাল গ্রুপের গ্যালাক্সিদের গতি নিয়ে। লোকাল গ্রুপ হলো আমাদের মিল্কিওয়ে ও এর আশপাশের অন্তত ৫৪টি গ্যালাক্সির একটি সমাবেশ। আরেকটু বড় আকারে কাজ করেন সুইস জ্যোতির্বিদ ফ্রিৎজ জুইকি। ১৯৩৩ সালে তিনি বিভিন্ন রকমের গ্যালাক্সিপুঞ্জ নিয়ে কাজ করে অদেখা ভরের প্রমাণ হাজির করেন। তিনি বিশেষ করে নজর দেন কোমা ক্লাস্টার নামের গ্যালাক্সিপুঞ্জের দিকে। তিনি এই ক্লাস্টারের প্রান্তের দিকের গ্যালাক্সিদের বেগ পরিমাপ করেন। এবার একে তুলনা করেন মোট গ্যালাক্সির সংখ্যা ও তাদের উজ্জ্বলতার সঙ্গে।…
টলেমীয় দর্শন এত জটিল যে টলেমি নিজে না বলে পারেননি: ‘গ্রহগুলো কী করে চলে, তা বোঝার চেয়ে আমার পক্ষে গ্রহগুলো চালানো আরও সহজ।’ তাঁর দর্শনের দৌলতে কিন্তু আকাশে গ্রহগুলোর গতির বিষয়ে আগে থেকে বলা সম্ভব হলো। তাঁর ধারণা ভ্রান্ত হলেও নিজের কালে টলেমি ছিলেন মহা জ্যোতির্বিজ্ঞানী, তাঁর দর্শন অ্যারিস্টটলের চেয়ে অনেক অগ্রসর। পরে টলেমীয় দর্শনকে সত্য বলে স্বীকার করে খৃষ্টীয় চার্চ। তাঁর ধারণায় সন্দেহ করাটা বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়ায়। স্বাধীন চিন্তার সঙ্গে সংঘর্ষ হয় সে খালের খৃষ্টীয় বিশপ ও পাদ্রীদের। তাঁদের কাছে বিজ্ঞানী এবং তাদের বই—উভয়ই পরম শত্রু। টলেমি থাকতেন যে আলেকজান্দ্রিয়া শহরে, সেখানে তাঁর মৃত্যুর ২০০ বছর পরে একটা ব্যাপার…
পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার-২০২০ ঘোষণার পর রজার পেনরোজের টেলিফোন সাক্ষাৎকার নেন নোবেল সংবাদমাধ্যমের প্রধান বিজ্ঞান কর্মকর্তা অ্যাডাম স্মিথ। এই সাক্ষাৎকারে পেনরোজ ফিরে গেছেন অতীতে। বলেছেন, কীভাবে একটি ক্রসরোড তাঁর ১৯৬৫ সালের পেপারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। পেনরোজ বলেন, আপনি হয়তো জিজ্ঞেস করতে পারেন, মহাবিশ্বের সবচেয়ে বেশি এনট্রপি এখন কোথায়? এখন পর্যন্ত আমরা যা জানি, অনেকটাই নিশ্চিতভাবে বলা যায়—কৃষ্ণগুহ্বরের ভেতরে। তাহলে এই এনট্রপি পরে কোথায় যায়? হকিং আমাদের বলেন, দূর ভবিষ্যতে এই কৃষ্ণগহ্বরগুলো উবে যাবে…আমিও মনে করি, এমনটাই হওয়ার কথা। কৃষ্ণগহ্বর অনেক অনেক বিশাল হলে, সবচেয়ে বড়গুলোর জন্য বললে আরকি, যেহেতু ওগুলোর মধ্যেই এনট্রপি সবচেয়ে বেশি—ডন পেইজের মতে, এগুলো উবে যেতে যেতে লেগে…