পৃথিবীর বাইরে প্রাণ বা এলিয়েন লাইফের সন্ধান চলছে দীর্ঘদিন। মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ‘নাসা’ এবার সে জন্য তৈরি করেছে এক্সোবায়োলজি এক্সট্যান্ট লাইফ সার্ভেয়ার (ইইএলএস)। নাসার তৈরি এই স্ব-চালিত যন্ত্র দেখতে সাপের মতো। অর্থাৎ এটি একধরনের উন্নত প্রযুক্তির অটোনোমাস রোবোটিক স্নেক। অনেকটা প্রতিকূল পরিবেশে টিকে থেকেও কাজ করতে পারে। মূলত পৃথিবীর বাইরে দূরের কোনো গ্রহ বা উপগ্রহে ভিনগ্রহী প্রাণের সন্ধান এবং থ্রিডি ম্যাপিংয়ের মতো জটিল কাজের উপযোগী করে তৈরি করা হয়েছে এটি। যন্ত্রটি বানিয়েছে নাসার জেট প্রোপালশন ল্যাবরেটরি। নাসার তথ্যমতে, সাপ আকৃতির এই যন্ত্রটির দৈর্ঘ্য ৪.৪ মিটার। ওজন প্রায় ১০০ কেজি। এতে বেশ কিছু অংশ রয়েছে। এর মধ্যে আছে অ্যাকচুয়েশন ও…
Author: Yousuf Parvez
রাতের আকাশে উজ্জ্বল চাঁদ আমরা সবাই দেখেছি। চাঁদের বুকে যে কালো দাগগুলো দেখা যায়, সেগুলো আসলে চাঁদের খাদ বা গর্ত। এসব জায়গায় সূর্যের আলো পড়ে না। এই খাদগুলোকেই আমরা চাঁদের কলঙ্ক বলি। কিন্তু আরও অনেক রহস্য লুকিয়ে আছে চাঁদের বুকে। অজানা এসব বিষয় আজও কৌতূহলী করে রেখেছে বিজ্ঞানীদের। সম্প্রতি তেমনি এক নতুন রহস্যের সন্ধান পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। চাঁদের বুকে তাঁরা একটি বিশাল গুহা আবিষ্কার করেছেন। মহাকাশ গবেষণার ইতিহাসে এর মাধ্যমে সূচিত হয়েছে নতুন অধ্যায়। এই গুহা কীভাবে সৃষ্টি হয়েছিল, এর ভেতরে কী রয়েছে এবং এটি ভবিষ্যতে কীভাবে মানুষের কাজে লাগতে পারে, তা নিয়ে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। গুহাটি চাঁদের ‘সি অব…
গত শতক থেকেই মহাকাশে মানুষের বিচরণ। ১৯৬১ সালে ইউরি গ্যাগারিন প্রথম মহাকাশে ভ্রমণ করেন। ১৯৬৯ সালে মার্কিন নভোচারীরা প্রথম পা রাখেন চাঁদে। টানা ৬ মিশনে ১২ নভোচারী হেঁটেছেন চাঁদের মাটিতে। মানুষের এই যাত্রা অব্যাহত রয়েছে আজও। মঙ্গলে যাওয়ার পরিকল্পনা চলছে অনেকদিন ধরেই। হয়তো আগামী দশকেই মানুষ পা রাখবে মঙ্গলে। অবশ্য এর মধ্যেই অনেকগুলো রোবট নভোযান হেঁটে বেড়িয়েছে লাল গ্রহটিতে। মানবনির্মিত ভয়েজার নভোযান ছাড়িয়ে গেছে আমাদের সৌরজগত। ভবিষ্যতে প্রযুক্তির উন্নতির মাধ্যমে মানুষ যে মহাকাশের আরও গভীরে ও দূরে পাড়ি দেবে, তা বলা বাহুল্য। কিন্তু সেই প্রযুক্তি ব্যবহার করে কি আমরা কখনো সৌরজগতের সবচেয়ে কাছের নক্ষত্রে পৌঁছাতে পারব? পৃথিবীর সবচেয়ে কাছের নক্ষত্র…
চাঁদের কোনো বায়ুমণ্ডল আছে? প্রশ্নটা শুনে একটু থতমত খেয়ে গেলে দয়া করে সে জন্য নিজেকে দোষ দেবেন না। ধূসর চাঁদকে বরাবরই পাথরের স্তুপ বলেই ভেবেছে মানুষ। কবি-সাহিত্যিকেরা তাতে কাব্যের প্রলেপ দিয়েছেন, রূপকথায় উঠে এসেছে চাঁদের বুড়ির কথা; একটু কাব্যিক ঢঙে জনপ্রিয় ধারার বিজ্ঞানে বলা হয়েছে ‘পৃথিবীর বহুকালের সঙ্গী’। তবে প্রচলিত ধারায় এর কথা এলেই শোনা যায়—চাঁদে বাতাস নেই, কারণ, এর কোনো বায়ুমণ্ডল নেই। কথাটা অর্ধসত্য। চাঁদে শ্বাস নেওয়ার মতো বাতাস নেই বটে, তবে অত্যন্ত পাতলা বায়ুমণ্ডল রয়েছে একে ঘিরে। প্রশ্নটা তো ঠোঁটে এসেই রয়েছে—কোত্থেকে, কীভাবে এল এই বায়ুমণ্ডল? সে রহস্যের সমাধান অবশেষে পাওয়া গেল। এ নিয়ে একদল বিজ্ঞানী গত ২…
সূর্যের যত কাছাকাছি থাকা যাবে, উষ্ণতা তত বেশি হবে—এটাই স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। ধরুন, একটা আগুনের চুল্লি জ্বলছে। আপনি চুল্লির যত কাছে যাবেন, তত বেশি গরম অনুভব করবেন। একইভাবে বলা যায়, চুল্লি থেকে দূরে সরে গেলে ধীরে ধীরে আর গরম লাগবে না। কিন্তু ইউরেনাস ও নেপচুনের ক্ষেত্রে এ তত্ত্ব খাটে না। কারণ, সূর্য থেকে সবচেয়ে দূরের গ্রহ নেপচুন। সৌরজগতের ৮ম গ্রহ। সূর্য থেকে প্রায় ৪৪৮ কোটি ২২ লাখ কিলোমিটার দূরে। তার আগে অর্থাৎ সৌরজগতের ৭ম গ্রহ হলো ইউরেনাস যার দূরত্ব সূর্য থেকে প্রায় ২৯০ কোটি কিলোমিটার। অর্থাৎ গ্রহ দুটির মধ্যে দূরত্ব প্রায় ১৫৮ কোটি কিলোমিটার। মানে সূর্য থেকে ইউরেনাস যতটা দূরে রয়েছে,…
স্যার আইজ্যাক নিউটন মহাকর্ষ সূত্র প্রকাশ করে গেছেন। সেই সূত্রটা আমাদের পরিচিত। সূত্রটায় যে দুটো বস্তুর মধ্যকার মহাকর্ষ বল মাপতে চাওয়া হয়, তাদের ভর ও মহাকর্ষীয় ধ্রুবক গুণ করতে হয়। তারপর বস্তু দুটোর দূরত্বের বর্গ দিয়ে ভাগ করে দিলেই হলো। ঘটনা হলো, নিউটন কিন্তু নিজে এই মহাকর্ষীয় ধ্রুবকের মান বের করার কোনো চেষ্টা করেননি। পৃথিবীর ভরও মাপতে চাননি। ১৭ শতকে এসে বিজ্ঞানীদের এই কৌতূহল মাথাচাড়া দেয়। তখন নানা জন নানাভাবে এ সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেন। কেউ কেউ প্রস্তাব করেন, ভর মাপার জন্য ঘনত্ব মাপা যেতে পারে। ১৭৭২ সালে রয়্যাল সোসাইটি রীতিমতো ‘কমিটি অব অ্যাট্রাকশন’ বা আকর্ষণ পরিষদ গঠন করে। তাদের…
আমাদের মনে হয় পৃথিবী বুঝি এক জায়গায় আছে আর সূর্য আমাদের চারপাশে ঘুরছে। আমাদের এরকম মনে হওয়ার কারণ এই যে ভূমণ্ডল বিরাট, নিরেট। এরকম একটা প্রকাণ্ড ভারী জিনিস সাধারণ কোন লাটিমের মতো বন বন করে ঘুরতে পারে না। সে ঘুরতে থাকে ধীরে ধীরে মন্থর গতিতে, কোনো রকম ক্যাঁচক্যাঁচ আওয়াজ ও ঝাঁকুনি ছাড়াই। নিজের অক্ষরেখার ওপর এক পাক ঘুরে আসতে ভূমণ্ডলের লাগে পুরো চব্বিশ ঘণ্টা। এই কারণে তার ঘোরা আমাদের নজরেই পড়ে না। বড় একটা জাহাজে করে যখন সমুদ্রপথে ঘোরে তখনো কিন্তু খেয়াল করতে পার না কখন সেটা ঘুরছে। অবশ্য এটা ঠিক যে তীরভূমি দৃষ্টিগোচর হলে তাকে দেখে বাঁক বোঝা যায়।…
গবেষণাটি গত ১২ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রের প্রসিডিংস অব দ্য ন্যাশনাল একাডেমি অব সায়েন্সেস (পিএনএএস) ভূতাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানীরা সম্প্রতি মঙ্গলপৃষ্ঠের নিচে বিশাল এক সমুদ্র আবিষ্কার করেছেন। তাঁদের দাবি, এ সমুদ্রে প্রাণের অস্তিত্ব থাকতে পারে। জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। বিশাল এই ভূগর্ভস্থ জলাধারের সন্ধান পাওয়া গেছে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার ইনসাইট ল্যান্ডারের সংগৃহীত সিসমিক ডেটা তথা ভূকম্পন-সংক্রান্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে। জানা গেছে, এতে এত বিপুল পরিমাণ পানি আছে যে গ্রহটির পুরোটাজুড়ে এই পানি ছড়িয়ে পড়লেও এর উচ্চতা হবে প্রায় ১ মাইল বা প্রায় দেড় কিলোমিটারের সমান। তবে এই সমুদ্র মাটির এত গভীরে যে জানা কোনো পদ্ধতি বা প্রযুক্তির মাধ্যমে এতে পৌঁছানো বর্তমানে সম্ভব নয়। লাইভ সায়েন্স-এর…
স্যালমোনেলা (Salmonella), ই কলির (E Coli) মতো ব্যাকটেরিয়া প্রাণিদেহে বাস করে তাদের সহযোগী হিসেবে। ওই প্রাণীর মৃত্যুর পর ব্যাকটেরিয়াগুলো মাংসে ছড়িয়ে পড়ে। ওই সব প্রাণীর মাংস খেলে পরজীবী ব্যাকটেরিয়া আমাদের পেটে চলে যায়। এই ব্যাকটেরিয়ার কারণে ডায়রিয়া, বমি ও পেট খারাপের মতো অসুখ হয় আমাদের। এ থেকে বাঁচার উপায় হলো, এ মাংস ৪৫ মিনিট ধরে রান্না করা। এতে মাংসের তাপমাত্রা ৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে দাঁড়াবে এবং পুরোপুরি ধ্বংস হবে ব্যাকটেরিয়া। অন্যদিকে স্টেক সরাসরি গরুর মাংস থেকে কেটে নেওয়া হয়। এর বাইরের দিকে থাকা অসাড় চামড়ায় প্রচুর ব্যাকটেরিয়া থাকে। সেগুলো ধ্বংস করা যায় না। তাই কোনো স্টেকই আসলে খাওয়ার জন্য নিরাপদ নয়।…
রাতের খাবারের টেবিলে পেট ভরে খাওয়ার পরও মিষ্টির জন্য প্লেট বাড়িয়ে দেয় অনেকে। ভরা পেটে মিষ্টির জন্য প্রবল এই আগ্রহকে ব্যাখ্যা করা যায় বিজ্ঞানের ভাষায়। ‘নির্ধারিত স্বাদে তৃপ্তির আস্বাদ’—এমন মজার শব্দে মানুষের এই প্রবণতার ব্যাখ্যা দেন গবেষকেরা। একই ধরনের খাবারে অভ্যস্ত হয়ে গেলে নতুন খাবারে মুখের স্বাদ ফিরে পাওয়ার জন্য মানুষ এমন করে বলে ধারণা গবেষকদের। অভ্যাসের কারণেই ধীরে ধীরে খাবারভেদে বিভিন্ন অনুভূতির সৃষ্টি হয় মানুষের মনে। একটু মিষ্টি বা ফল জিবে আলাদা স্বাদের অনুভূতি তৈরি করে। পেট ভরার পরও শেষ পাতের সামান্য ফল বা মিষ্টিই আসল স্বাদ বা পরিপূর্ণ তৃপ্তি দেয়। এই অতিরিক্ত খাবার শুধু স্বাদে নয়; বরং পুষ্টিতেও…
বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শুরুর দিকে জেনারেল ফিজিকস পরীক্ষায় ফেল করেছেন। অথচ ১৯২৯ সালে সেই মানুষটি নোবেল পুরস্কার পেয়ে গেলেন পদার্থবিজ্ঞানে। তিনি লুই ভিক্টর পিয়েরে রেমন্ড ডি ব্রগলি। ইলেকট্রনের তরঙ্গধর্ম আবিষ্কারের জন্য তাঁর খ্যাতি কিংবদন্তীতুল্য। আজ ১৫ আগস্ট তাঁর জন্মদিন। ৯১১ সালে ব্রাসেলসে অনুষ্ঠিত প্রথম সলভে কনফারেন্সের অন্যতম সেক্রেটারি ছিলেন মরিস ডি ব্রগলি। তিনি ব্রাসেলসে যাওয়ার সময় ছোট ভাই লুইকেও সঙ্গে নিয়ে গেলেন। ইউরোপের প্রথম সারির সব পদার্থবিজ্ঞানীর মধ্যে কোয়ান্টাম মেকানিকসের ক্রমবর্ধমান গতিপথ লক্ষ করে ১৯ বছরের তরুণ লুই ডি ব্রগলি তাঁর ভবিষ্যতের পথ খুঁজে পেলেন। তত্ত্বীয় পদার্থবিজ্ঞানের প্রতি সত্যিকারের ভালোবাসা অনুভব করলেন। ১৯১৩ সালে সরবোন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘লাইসেনসিয়েট ইন সায়েন্স’ বা…
প্রতি চার বছরে একবার আসে অলিম্পিক। বিশ্বের বেশির ভাগ ক্রীড়াবিদ এতে নিজেদের দক্ষতা প্রদর্শনের জন্য মুখিয়ে থাকেন। আয়োজক দেশগুলোও অলিম্পিক আয়োজনে গর্ববোধ করে, নিজেদের সেরা প্রমাণ করতে চায়। প্যারিস অলিম্পিকে তাই এসেছে নতুন ও দারুণ সব প্রযুক্তি। এসব প্রযুক্তির ব্যাপারে আপনি কতটা জানেন? এ বছর অলিম্পিকে বাংলাদেশের কতজন খেলোয়াড় অংশগ্রহণ করেছে? চলতি বছর ৫ বাংলাদেশি খেলোয়াড় অলিম্পিকে অংশ নিয়েছেন। এর মধ্যে ৪ জন ওয়াল্ডকার্ডে সুযোগ পেয়েছেন। শুধু আর্চারিতে সাগর ইসলাম যোগ্যতা অর্জন করে গেছেন। খেলার হাইলাইটস তৈরি করার জন্য এবার ইন্টেল তৈরি করেছে স্বয়ংক্রিয় হাইলাইটস জেনারেশন সিস্টেম। যেকোনো খেলা শেষ হওয়ার ১০ মিনিটের মধ্যে এখন হাইলাইটস তৈরি হয়ে যাচ্ছে। আগে…
আমরা অনেক সময় ভুলে যাই যে আমরা বাস করি একটি তারার পাশেই। বলা বাহুল্য, পৃথিবীর প্রায় সব জীবনই এই তারাটির ওপর নির্ভর করে—আমাদের আবহাওয়া, উদ্ভিদ জীবন, শস্য—সবই। আমরা জানি এই আলোর উৎস হচ্ছে সূর্যের গভীরে কেন্দ্রীন সংযোজন বা নিউক্লিয়ার ফিউশন। এই ফিউশন বিক্রিয়ার বিভিন্ন ধাপ আছে, যাকে প্রোটন-প্রোটন অনুসৃত শৃঙ্খল (chain) বলা হয়। চারখানা প্রোটন বা চারটি হাইড্রোজেনের নিউক্লিয়াস একসঙ্গে হয়ে একটি হিলিয়াম নিউক্লিয়াস, দুটি পজিট্রন, দুটি ইলেকট্রন নিউট্রিনো ও দুটি গামা ফোটন সৃষ্টি করছে। ফোটন হলো আলোক কণিকা, কিন্তু গামা ফোটন দৃশ্যমান আলোর থেকে, এমনকি এক্স-রে থেকেও শক্তিশালী। আমরা গামা রশ্মিকে চোখে দেখতে পাই না। আর এই বিক্রিয়ায় যে…
সাধারণ মানুষের কাছে আজও ব্ল্যাকহোল বা কৃষ্ণগহ্বর এক রহস্যময় বস্তু। এটি আলোর কণাকে নিজের মাঝে টেনে নেয়। ফলে এটা থেকে কোনো বিকিরণ নির্গত হতে পারে না। ১৯৭৫ সালে স্টিফেন হকিং দেখান যে কৃষ্ণগহ্বর আদতে বিকিরণহীন নয়, বরং কোয়ান্টাম মেকানিকসের নিয়ম প্রয়োগ করে তিনি দেখালেন, এটা কৃষ্ণ বস্তুর মতো বিকিরণ করে। তাঁর বের করা এই ফল তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের ভিত্তিকে তুমুলভাবে নাড়িয়ে দেয় এবং আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের দুটি পরীক্ষিত খুঁটি—কোয়ান্টাম মেকানিকস ও সাধারণ আপেক্ষিকতাকে সাংঘর্ষিক অবস্থানে দাঁড় করিয়ে দেয়। আমরা কৃষ্ণগহ্বরকে এ রকম বিশেষণ দিয়ে বোঝার চেষ্টা করলেও আসলে কৃষ্ণগহ্বরকে বিজ্ঞানীরা অন্যভাবে বিশেষায়িত করে থাকেন, এটার জন্য সাধারণ আপেক্ষিকতার কিছু ন্যূনতম জ্ঞান থাকা…
২০১৯ সালে মহাবিশ্ব ও বহিঃসৌরগ্রহবিষয়ক যুগান্তকারী আবিষ্কারের জন্য তিন বিজ্ঞানীকে যৌথভাবে পদার্থবিদ্যায় নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়। এই তিন নোবেল জয়ী পদার্থবিদ হলেন কানাডিয়ান বিজ্ঞানী জেমস পেবলস এবং সুইডিশ পদার্থবিদ মাইকেল মায়োর ও দিদিয়ের কুইলোজ। মহাজাগতিক ইতিহাস, মহাবিশ্বের বিবর্তন এবং এতে পৃথিবীর স্থান কোথায়—এ সংশ্লিষ্ট গবেষণার জন্য পুরস্কার পান জেমস পেবলস। আর মাইকেল মায়োর ও দিদিয়ের কুইলোজকে প্রথম এক্সোপ্ল্যানেট বা বহিঃসৌরগ্রহ আবিষ্কারের জন্য পুরস্কৃত করা হয়। দিদিয়ের কুইলোজ বলেন, যেকোনো আবিষ্কারই আসলে ভাগ্যের ব্যাপার। জুয়া খেলার মতো। আমরা ভাগ্যবান ছিলাম। পিছিয়েও যেতে পারতাম। অন্যরা আমাদের আগে এ আবিষ্কার করে ফেলতে পারত। আমরা ভাগ্যবান ছিলাম বলে কাজ ঠিকঠাক করেছিলাম। পিএইচডি গবেষণার সময়…
বিংশ শতাব্দীর অন্যতম সেরা ব্যক্তিত্ব ছিলেন তিনি। আবিষ্কার করেছিলেন আপেক্ষিকতা, একাই আমূলে বদলে দিয়েছিলেন পদার্থবিজ্ঞানের মূল ধারা। তিনি আলবার্ট আইনস্টাইন। ১৯০৫ সালে প্রকাশিত আইনস্টাইনের প্রথম গবেষণাপত্রটি ছিল: On a Heuristic Point of View Concerning the Production and Transformation of Light. Annalen der Physik, সংখ্যা ১৭ (১৯০৫), পৃষ্ঠা ১৩২-১৪৮। এ প্রবন্ধে আইনস্টাইন আলোর কণা ফোটনের ধারণা প্রতিষ্ঠা করেন। আলো তরঙ্গের আকারে যেমন থাকতে পারে, তেমনি থাকতে পারে গুচ্ছ গুচ্ছ কণার শক্তির আকারে। এই ধারণা ইতিমধ্যে প্রতিষ্ঠা করেছেন ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক। আলোর এ রকম গুচ্ছাকার শক্তিকে আলোর কোয়ান্টা বলা হয়। আলোর কোয়ান্টা বা ফোটনের ধারণার ওপর ভিত্তি করে আইনস্টাইন দেখান যে কোনো বস্তুর ওপর…
বাঘা বাঘা বিজ্ঞানী হয়েও সবাই একে একে ব্যর্থ হচ্ছেন! তাঁদের ব্যর্থতার কারণ এখন স্পষ্ট বোঝা যায়। আসলে আইনস্টাইন যে সময় ইউনিফায়েড ফিল্ড থিওরি নিয়ে কাজ করছিলেন, তখন মহাবিশ্বকে শাসন করা প্রাকৃতিক বল মাত্র দুটি বলে ধারণা করা হতো। সেগুলো মহাকর্ষ ও বিদ্যুৎ–চুম্বকীয় বল। কিন্তু আইনস্টাইনের মৃত্যুর পর একে একে উদ্ঘাটিত হলো প্রকৃতির আরও কিছু রহস্য। দেখা হলো, মহাকর্ষ আর বিদ্যুৎ–চুম্বকীয় বলই শেষ কথা নয়, পরমাণুর গহিনে লুকিয়ে আছে আরও দুটি প্রাকৃতিক বল। সেগুলো হলো সবল ও দুর্বল নিউক্লিয়ার বল। আবার আইনস্টাইনের মৃত্যুর পর আবিষ্কৃত হতে থাকে নিত্যনতুন কণা। তাতে একটা পুরো বিশৃঙ্খল অবস্থার মধ্যে পড়েছিল মৌলিক কণাপদার্থবিজ্ঞান। পদার্থের মৌলিক গাঠনিক…
শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করলেন আলবার্ট আইনস্টাইন। দিনটি ছিল ১৯৫৫ সালের ১৮ এপ্রিল। মৃত্যুশয্যায় তাঁর পাওয়া গেল একটি খাতা। দেখা গেল, জীবনের শেষ সময়টুকুতেও তিনি কাজ করছিলেন সমন্বিত ক্ষেত্রতত্ত্ব নিয়ে। সেই তত্ত্বটিই আজ থিওরি অব এভরিথিং নামে পরিচিত। বিশ শতকের অন্যতম সেরা এই বিজ্ঞানী কী ভেবেছিলেন এ তত্ত্ব নিয়ে? পরিচ্ছন্ন হাতের লেখায় লাইনের পর লাইন বীজগাণিতিক হিসাব কষছেন। তবে অসুস্থতার কারণে কিছুক্ষণেই হাঁপিয়ে উঠলেন। খাতা-কলম পাশে রেখে একসময় বিছানায় এলিয়ে পড়লেন। সেদিনই রাতের দিকে বিড়বিড় করে মাতৃভাষা জার্মানে কী যেন বললেন। সেটাই ছিল তাঁর শেষ কথা। তারপরই মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয় আইনস্টাইনের। মজার ব্যাপার হলো, থিওরি অব এভরিথিং শিরোনামটা বিজ্ঞানজগতে পাকাপাকি আসন…
স্ট্রি থিওরি হলো একটিমাত্র সমীকরণ, যা মহাবিশ্বের সব সূত্রকে সংক্ষেপিত করতে পারে। আইনস্টাইন তাঁর জীবনের ৩০ বছর ছুটেছিলেন থিওরি অব এভরিথিংয়ের পেছনে। তিনি এমন একটি সমীকরণ আশা করতেন, যার দৈর্ঘ্য ১ ইঞ্চির চেয়ে বড় হবে না। আর এই সমীকরণের মাধ্যমে তিনি ঈশ্বরের মন বুঝতে চেয়েছিলেন। আমাদের কাছে মহাবিশ্বের দুটি অসাধারণ তত্ত্ব আছে। এর একটি কোয়ান্টাম তত্ত্ব, যেটা খুব ছোট পরিসরে কাজ করে। এর মাধ্যমে আমরা পারমাণবিক বোমা, স্মার্টফোন, কম্পিউটারসহ ইন্টারনেট পেয়েছি। এটি খুব ছোট কণাদের তত্ত্ব। আরেকটি তত্ত্ব বড় পরিসর নিয়ে কাজ করে। সেটি সাধারণ আপেক্ষিকতা, বা আইনস্টাইনের মহাকর্ষতত্ত্ব। এটি গ্রহ, নক্ষত্র কৃষ্ণগহ্বর, মহাবিস্ফোরণ নিয়ে কাজ করে। কিন্তু এ দুটি…
এর বেশ কয়েকটি ব্যাখ্যা আছে। অনেকের ধারণা, বাস্তবতা আসলে সিমুলেশন বা নকল হতে পারে, অনেকটা ম্যাট্রিক্স সিনেমার মতো। কিন্তু আমার তা মনে হয় না। প্রথমত নিউটনের সূত্র ব্যবহার করে এবং যদি ধরে নেওয়া হয় যে আবহমণ্ডল পরমাণুর বদলে অতিক্ষুদ্র মার্বেল দিয়ে গঠিত, তাহলেও বিশ্বের সবচেয়ে বড় কম্পিউটারও এই আবহমণ্ডল সিমুলেট করতে পারবে না। সেটি অনেক জটিল। সবচেয়ে ছোট যে বস্তুটি আবহাওয়া সিমুলেট করতে পারে, সেটি আমাদের স্বয়ং দৃশ্যমান আবহাওয়া। কাজেই আবহাওয়াকে সিমুলেট করা যায় না, কারণ এতে অগণিত কণা থাকে। দুর্ঘটনাক্রমে কোয়ান্টাম বলবিদ্যা একে আরও কঠিন করে তুলেছে। পরমাণুর স্পিন স্বতঃস্ফূর্তভাবে আপ, ডাউন ও পার্শ্ব থাকতে পারে। তাই কোয়ান্টাম বলবিদ্যা…
যদি বিশ্বাস করেন, আমাদের ছায়াপথে পৃথিবীর মতো বহিঃসৌরজাগতিক গ্রহ আছে, তাহলে প্রশ্ন উঠতে পারে: সেসব গ্রহে কি বুদ্ধিমান প্রাণী আছে? যদি থাকে, তাহলে তারা আমাদের সঙ্গে দেখা করতে আসছে না কেন? উন্নত প্রযুক্তির সুবিধা আমাদের তুলে দিচ্ছে না কেন? আমার প্রশ্ন হলো, বনে বেড়াতে গিয়ে যদি হরিণ বা কাঠবিড়ালির সঙ্গে দেখা হয়, তাহলে কি তাদের সঙ্গে আপনি কথা বলবেন? শুরুতে হরিণ ও কাঠবিড়ালির সঙ্গে হয়তো আপনি কথা বলতে চাইবেন। কিন্তু একসময় সব আগ্রহ হারিয়ে ফেলতে বাধ্য হবেন। কারণ আপনার কথার উত্তর দিতে পারবে না তারা। কোনো প্রস্তাবও দেবে না তারা। সে কারণে তাদের রেখেই চলে আসতে হবে। আমার ধারণা, অতি…
এক সময় পরমাণু তত্ত্বে বিশ্বাস করতেন না অনেক বিজ্ঞানী। রোজ দুবেলা নিয়ম করে পরমাণু নিয়ে তর্ক-বিতর্ক করতেন তাঁরা। কেউ কারও কথা মানতে নারাজ। ঠিক এ সময় পরমাণুর পক্ষে তাত্ত্বিকভাবে শক্ত এক প্রমাণ হাজির করেন জার্মান বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন। ডেমোক্রিটাস মনে করতেন, একটা বস্তুকে ভাঙতে ভাঙতে এমন একটা পর্যায়ে আসবে, যখন বস্তুটাকে আর ভাঙা যাবে না। অর্থাৎ বস্তুটার সবচেয়ে ক্ষুদ্র কণা পাওয়া যাবে। সেই কণাকেই অ্যাটম বললেন ডেমোক্রিটাস। ভারতীয় পণ্ডিতরাও প্রায় একই সময়ে এরকম অবিভাজ্য কণার নাম দেন পরমাণু। মানে পরম অণু। এখন অ্যাটমকে বাংলায় বলা হয় পরমাণু। আর এ ধারণাকে বলা হয় পরমাণু মতবাদ। এ মতবাদ অনুযায়ী, জগতের সবকিছুর মূল…
ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক কোয়ান্টাম তত্ত্বের জনক। নতুন কিছু আবিষ্কারের প্রতি তেমন আগ্রহ ছিল না প্ল্যাঙ্কের। তাঁর চাওয়া ছিল, শুধু এ পর্যন্ত যা কিছু আবিষ্কৃত হয়েছে তা ভালোভাবে ও গভীরভাবে বুঝতে। সেই তৃষ্ণা মেটাতে অধিকাংশ সময় পড়ালেখায় মশগুল থাকতেন তিনি। পদার্থবিদ্যার নতুন নতুন বিষয় শিখতে গিয়ে বস্তু সম্পর্কেও নতুন নতুন চিন্তা করতে শিখলেন। এ সময় তিনি পদার্থবিদ্যার তত্ত্বগুলো সম্পর্কে বিশদভাবে জানতে পারেন, বিশেষ করে তাপগতিবিদ্যা সংক্রান্ত বিষয়গুলো। তাঁর মতে, তত্ত্ব হল বিভিন্ন প্রাকৃতিক ঘটনার ব্যাখ্যা। যেসব বিষয় দেখা যায় না, তা নিয়ে বুঝতে ও চিন্তা করার উপায় হল তত্ত্ব। এই উলপদ্ধির পর ধীরে ধীরে বৈজ্ঞানিক পরীক্ষার প্রতি অনাগ্রহী হয়ে ওঠেন প্ল্যাঙ্ক। তাঁর…
২০১৩ সালে ‘হিগস বোসন’ নিয়ে গবেষণার জন্য পদার্থবিজ্ঞানে যৌথভাবে নোবেল পুরস্কার পান যুক্তরাজ্যের পদার্থবিদ পিটার হিগস ও বেলজিয়ামের ফ্রাঙ্কোই অ্যাংলার্ট। গত শতাব্দীর ষাটের দশকে যুক্তরাজ্যের গবেষক পিটার হিগস ও অন্যান্য আরও কজন বিজ্ঞানী পদার্থের ভর সৃষ্টিকারী অতিক্ষুদ্র নতুন এক কণার সম্ভাবনার কথা বলেন। কণাটি ‘গড পার্টিকেল’ বা ‘ঈশ্বর কণা’ নামেও পরিচিতি। ২০২১ সালে কণাটি শনাক্ত করেন সার্নের বিজ্ঞানীরা। এক ইন্টারভিউতে পিটার হিগস বলেন, ১৯২০ দশকের মাঝামাঝি সময়ে কোয়ান্টাম মেকানিকসের প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে তিনি ছিলেন অন্যতম। তাঁর সম্পর্কে আমি কৌতূহলী ছিলাম। প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের কৃতিত্বের কথা উঠে এলেই বারবার তাঁর নাম ঘুরে-ফিরে আসত। এই কৌতূহল থেকেই আমি পারমাণবিক পদার্থবিজ্ঞান (অ্যাটমিক ফিজিকস) ও কোয়ান্টাম…