যা কিছু দোলে, তা–ই দোলক, যেমন দোলনা। দোলকের মজার কিছু বৈশিষ্ট্য আছে। যার একটি হলো, একটি দোলক একটি বিন্দুকে বারবার অতিক্রম করে, একবার ডান দিক থেকে বাঁ দিকে, আরেকবার বাঁ দিক থেকে ডান দিকে; এই ধরনের গতিকে দোলনগতি বলে। বিষয়টি সত্যিই ভাবার মতো, সুতার মাথায় ভারী বল না থাকলে সুতা দুলবে না। অথচ দোলকের দোলনকালে এই ভরের কোনো ভূমিকা নেই। বলটির কাজ হলো পৃথিবীর অভিকর্ষ বল অনুভব করা, যার জন্য সুতা দোল খায়। দোলনকাল পৃথিবীর অভিকর্ষজ ত্বরণের ওপর নির্ভর করে, যা কিনা পুরো পৃথিবীর একটি বৈশিষ্ট্য। দোলকের দোলনকাল প্রথমে পৃথিবীর পৃষ্ঠে মাপব, তারপর খাড়া ওপরের দিকে উঠতে থাকব। ঠিক যে…
Author: Yousuf Parvez
কোয়ান্টাম বলবিদ্যার গাণিতিক কাঠামো নিয়ে গবেষণা করেই অনিশ্চয়তা নীতির সন্ধান পেয়েছেন হাইজেনবার্গ। দীর্ঘ কয়েক মাস আমেরিকায় কাটিয়ে এশিয়া ট্যুরে এলেন তিনি। জাপান ও সিঙ্গাপুর হয়ে এবার তাঁর গন্তব্য ভারতবর্ষ, তথা বাংলা। ৪ অক্টোবর ১৯২৯, জাহাজে কলকাতায় এসে নামলেন হাইজেনবার্গ। ঘটনাচক্রে সত্যেন্দ্রনাথ বসুও তখন কলকাতায়। সত্যেন্দ্রনাথ, কে এস কৃষ্ণাণ, ডি এম বোস, আর রাও এবং অন্যান্য পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক ও শিক্ষকেরা সেদিন অবাক হয়ে গিয়েছিলেন, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর আকস্মিক আগমনে। কলকাতায় আসার আরেকটি কারণ অবশ্যই ভারতীয় কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। বছর তিনেক আগে রবীন্দ্রনাথের কথা তিনি প্রথম শুনেছিলেন অধ্যাপক ম্যাক্স বর্নের স্ত্রী হেডভিগের কাছে। গ্যোটিংগেন বিশ্ববিদ্যালয়ে হাইজেনবার্গের শিক্ষক ছিলেন বর্ন। ভারতীয় কবি তখন…
ভূতের মতো রহস্যময় বলেই নাম হয়েছে ভুতুড়ে কণা। বিজ্ঞানীরা ডাকেন নিউট্রিনো বলে। ভূতের ওজন মাপার মতোই কণাটির ওজন মাপাও অসম্ভব কঠিন কাজ। অথচ মহাবিশ্বে যেসব কণা অনেক বেশি পরিমাণ আছে তাদের মধ্যে নিউট্রিনো অন্যতম। তবে এর কোনো চার্জ বা আধান নেই। ভরও প্রায় নেই বললেই চলে। আর এ কারণে সাধারণ বস্তুর সঙ্গে এদের মিথস্ক্রিয়াও হয় না খুব একটা। প্রতিমুহূর্তে দেহের ভেতর দিয়ে চলে যাচ্ছে শত শত কোটি নিউট্রিনো কণা। সহজে শনাক্তও করা যায় না। হ্যাঁ, শনাক্ত করার কিছু উপায় আছে। এই যেমন চেরেনকভ নিউট্রিনো ডিটেক্টর। তবে এরা কাজটি করে পরোক্ষ উপায়ে। নিউট্রিনো কোনো জায়গা দিয়ে চলে যাওয়ার পর তার রেখে…
বিখ্যাত বিজ্ঞানী রিচার্ড ফাইনম্যান যোগ দিয়েছিলেন ম্যানহাটান প্রজেক্টে। তাঁর মূল গবেষণার বিষয় ছিল, কীভাবে ইউরেনিয়াম-২৩৫ থেকে ইউরেনিয়াম-২৩৮-কে আলাদা করা যায়। ওদিকে হুইলার তখন শিকাগো চলে গেছেন। ফার্মির সঙ্গে মিলে পারমাণবিক রিঅ্যাক্টর বানানোর কাজ শুরু করেছেন। হুইলারের অনুপস্থিতিতে ফাইনম্যানের থিসিসের কাজে সাহায্য করতে এগিয়ে এলেন ইউজিন উইগনার। তিনি ফাইনম্যানকে বললেন থিসিস পেপারটা লিখে ফেলতে। পেপার লেখা শেষ হলে উইগনার নিজেই পেপারটা দেখে দিলেন। এর মাধ্যমে ১৯৪২ সালে রিচার্ড ফাইনম্যানের পিএইচডি ডিগ্রি সম্পন্ন হলো। ১৯৪৫ সালে পারমাণবিক বোমা প্রথমবারের মতো পরীক্ষা করে দেখার আগেই স্ত্রী আরলিন মারা যান। ফাইনম্যান আবারো নিজের কাজ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। কাজ বলতে, এ সময় তিনি কর্নেল…
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মার্কিন সরকার পারমাণবিক বোমা বানাতে একটি বিপুল ব্যয়বহুল প্রকল্প হাতে নেয়। এ প্রকল্পের নাম দেওয়া হয় ম্যানহাটান প্রজেক্ট। প্রকল্পটির প্রধান পরিচালক ছিলেন রবার্ট ওপেনহাইমার। বড় বড় বিজ্ঞানীদের সঙ্গে কাজ করার জন্য ডাক পেয়েছেন এক তরুণ বিজ্ঞানীও। তাঁর বয়স কেবল বিশ পেরিয়েছে। উচ্ছলতার বয়স। সেই বয়সে তরুণ এই বিজ্ঞানীর ঘাড়ে চেপেছে জটিল সব গাণিতিক হিসাবনিকাশের দায়িত্ব। গুরুদায়িত্ব, বলা বাহুল্য। একটু এদিক-ওদিক হলেই হয়েছে! সামান্য ভুলের জন্যও গুনতে হতে পারে চড়া মাশুল। তরুণ যেন জাদু জানেন। দারুণ দক্ষতার সঙ্গে সামাল দিলেন সবকিছু। সেই সঙ্গে ইউরেনিয়াম-২৩৫ আর ইউরেনিয়াম-২৩৮-কে কীভাবে আলাদা করা যায়, এ নিয়েও কাজ করলেন সফলভাবে। শুধু তাই নয়। পরবর্তীতে…
শুক্রবার, শীতের সকাল। ১৯০৫ সালের ৭ মার্চ। ঘড়ির কাঁটা আটটা ছুঁই ছুঁই। কর্মব্যস্ত লোকজন ছুটছেন নিজ নিজ গন্তব্যে। যেকোনো মুহূর্তে বার্ন শহরের সিগ্লোগকা নামের ক্লক টাওয়ারের ঘণ্টা বেজে উঠবে ঢং ঢং আওয়াজে। সচকিত হয়ে উঠবেন আশপাশের লোকজন। সুইজারল্যান্ডের বার্ন শহরের এই ক্লক টাওয়ার নির্মাণ করা হয়েছিল সেই মধ্যযুগে। নামকরা ক্যামগ্যাছে এলাকায় সটান দাঁড়িয়ে শাসন করে চলেছে গোটা শহর। এখান থেকে মাত্র ২০০ মিটার দূরে পুরোনো ধাঁচের একটা চারতলা বাড়ি। ঠিকানা ৪৯ ক্যামগ্যাছে। সেই বাড়ির সরু সিঁড়ি বেয়ে দোতলা থেকে হন্তদন্ত হয়ে নিচে নেমে এলেন এক যুবক। তাঁর এক হাতে একটা খাম। শক্ত করে আঁকড়ে ধরা। যেন মহামূল্যবান বস্তুটা কোনোভাবেই হাতছাড়া…
মাত্র তিন দিন আগে ২৬ বছর বয়সে পা দিয়েছেন আইনস্টাইন। বাবা হয়েছেন ১০ মাস আগে। ক্যামগ্যাছের ওই বাড়িতে দুই কামরার ছোট্ট ফ্ল্যাটে স্ত্রী মেলিভা আর ছেলে হ্যান্স আলবার্টকে নিয়ে আইনস্টাইনের সংসার। টেকনিক্যাল ক্লার্ক হিসেবে কাজ করেন সুইস পেটেন্ট অফিসে। কারিগরি বিশেষজ্ঞ। নামটা গালভারী হলেও পদ হিসেবে তা তৃতীয় শ্রেণির। তাঁর নিজের ভাষায়, ‘পেটেন্ট স্লেভ’। এটি তাঁর স্বপ্নের চাকরি নয়। মাসে যে বেতন পান, তা দিয়ে সংসারও স্বাচ্ছন্দ্যে চলে না। সে সময় পদার্থবিজ্ঞানের এক অমীমাংসিত সমস্যা ছিল ফটোইলেকট্রিক ইফেক্ট। বাংলায় যাকে বলে আলোকতড়িৎ ক্রিয়া। একদিন সেটা নজরে পড়ল আইনস্টাইনের। সমস্যাটার শুরু ১৮৮৭ সালের দিকে। সে বছর জার্মান বিজ্ঞানী হেনরিক হার্জ আকস্মিকভাবে…
১৯০০ সালে কোয়ান্টাম তত্ত্ব আবিষ্কার করেছেন ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক। কৃষ্ণবস্তুর বিকিরণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে চিরায়ত পদার্থবিজ্ঞান থেকে আমূল সরে আসতে বাধ্য হন তিনি। সে জন্য অনুমান করে নেন, শক্তির পরিমাণ তরলের মতো মসৃণ বা নিরবচ্ছিন্ন নয়; বরং তা নির্দিষ্ট, বিচ্ছিন্ন প্যাকেট হিসেবে ঘটে। অর্থাৎ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণার মতো। প্ল্যাঙ্ক এ বিচ্ছিন্ন প্যাকেটের নাম দেন কোয়ান্টা (একবচনে কোয়ান্টাম)। শক্তির প্রতিটি কোয়ান্টাম তার কম্পাঙ্কের সমানুপাতিক। এ সমানুপাতিক ধ্রুবকটি ছিল প্রকৃতির নতুন এক ধ্রুবক, যাকে এখন বলা হয় প্ল্যাঙ্কের ধ্রুবক। তবে কোয়ান্টাম তত্ত্বকে সিরিয়াসভাবে নেননি সমসাময়িক কোনো পদার্থবিজ্ঞানী। একটি সমীকরণকে প্রতিষ্ঠিত করতে জোড়াতালি দেওয়া একটি তত্ত্ব হিসেবে মনে করতেন সবাই। কোয়ান্টাম তত্ত্বের সারকথা পড়ে…
১৯২৪ সাল ছিল বিজ্ঞানের ইতিহাসে বাঙালি জাতির এক গৌরবের বছর। শতবর্ষ আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যা বিভাগের রিডার (সহযোগী অধ্যাপক) সত্যেন্দ্রনাথ বসুর কালজয়ী প্রবন্ধ, বোস–আইনস্টাইন সংখ্যাতত্ত্ব (অনেকে এটিকে বোস-আইনস্টাইন সংখ্যায়ন বা পরিসংখ্যানও বলে থাকেন) প্রকাশিত হয়। কার্জন হলে বসে সত্যেন বসু পদার্থবিদ্যার অস্বস্তিকর বন্ধ্যত্বের ওপর কাজ করছিলেন। সাধারণ পরিসংখ্যান তাঁর ভালোভাবেই জানা ছিল। চিরায়ত বলবিদ্যার সাহায্যে চিরায়ত বস্তুর গতিধর্ম শ্রেণিকক্ষে পড়াতেন আর চিন্তা করতেন, সম্পূর্ণ কোয়ান্টাম বলবিদ্যার সাহায্যে কীভাবে পারমাণবিক ও উপপারমাণবিক বস্তুকণার গতিবিদ্যা ও তার ধর্মাবলির একটি কাঠামো দাঁড় করাবেন। তত্ত্বীয় পদার্থবিদ্যায় (যা পরীক্ষালব্ধ জগতেও স্বীকৃত) পারমাণবিক ও উপপারমাণবিক বস্তুকণাকে মোটা দাগে তিন ভাগে ভাগ করা যায়: যেসব বস্তুকণার ঘূর্ণন…
১৯৭০-এর গোড়ার দিকে হকিং কৃষ্ণগহ্বর নিয়ে কাজ করছিলেন। বলে রাখা ভালো যে আইনস্টাইনের তত্ত্ব অনুসারে কৃষ্ণগহ্বর হলো এমন কোনো মৃত তারা বা মহাবিশ্বের এমন কোনো এলাকা যেখান থেকে আলো বা অন্য কোনো কিছুই নির্গত হতে পারে না। কৃষ্ণগহ্বরের প্রচণ্ড শক্তিশালী মহাকর্ষ ক্ষেত্র তার চারপাশের স্থানকালকে অতিমাত্রায় বাঁকিয়ে ফেলে বলেই এমনটি ঘটে। হকিং ভেবে দেখলেন সাধারণ আপেক্ষিকতা ও কণাবাদী নীতির যুগপৎ প্রয়োগ করার জন্য কৃষ্ণগহ্বর একটি মোক্ষম জায়গা। শক্তিশালী মহাকর্ষক্ষেত্রের উপস্থিতিতে কণাবাদী ক্ষেত্রতত্ত্ব কী ফল দেবে? হিসাব কষে তিনি দেখলেন যে কণাবাদী নীতির কারণে কৃষ্ণগহ্বর থেকেও সামান্য হারে আলো বা অন্য বিকিরণ নির্গত হতে পারে। আমরা একে বলি হকিং বিকিরণ। পরিমাণে…
জন ডাল্টন ১৮০০ খ্রিস্টাব্দের প্রথম দশকে একটা হাইপোথিসিস বা বৈজ্ঞানিক প্রস্তাবনার কথা বলেন। তিনি বলেন, একটা মৌলের পরমাণু হলো সেই মৌলের ক্ষুদ্রতম কণা, যার মধ্যে সেই মৌলের সব রাসায়নিক ধর্ম থাকে। অর্থাৎ একটা লোহার পরমাণু হলো লোহার ক্ষুদ্রতম কণা, যার মধ্যে লোহার সব রাসায়নিক ধর্ম আছে। একই কথা সোনা, রূপা, হাইড্রোজেন, অক্সিজেন, নাইট্রোজেন ইত্যাদি সব মৌলের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। একই মৌলের সব পরমাণু অভিন্ন, তবে বিভিন্ন মৌলের পরমাণু আলাদা। ডাল্টন একটা হাইড্রোজেন পরমাণুর সাপেক্ষে বিভিন্ন মৌলের পরমাণুর ভর কত হবে, তা গণনা করেন। গণনা থেকে সিদ্ধান্তে আসেন, বিভিন্ন মৌলের পরমাণুগুলো পূর্ণ সংখ্যায় যুক্ত হয়ে একটা যৌগের অণু গঠন করে। অণু হচ্ছে…
জাতিসংঘের তথ্য মতে, প্রতি বছর বাংলাদেশে গড়ে ৩০০ মানুষ বজ্রপাতে মারা যায়। সে তুলনায় যুক্তরাষ্ট্রে মারা যায় মাত্র ২০ জন। মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ বজ্রপাতের অন্যতম হটস্পট। আর সবচেয়ে বেশি বজ্রপাত হয় সিলেটে। সাধারণত এপ্রিল-মে মাসে, বা বলা যায় বৈশাখে দেখা যায় বজ্রপাত। সে জন্য স্থির তড়িৎ সম্পর্কে জানতে হবে। তার আগে জানতে হবে চার্জ সম্পর্কে। নিশ্চয়ই জানেন, সব বস্তু অসংখ্য ক্ষুদ্র কণা দিয়ে তৈরি। এর নাম পরমাণু। প্রতিটি পরমাণুর কেন্দ্রে থাকে নিউক্লিয়াস। এর ভেতরে থাকে প্রোটন ও নিউট্রন। এদের ভর প্রায় সমান। প্রোটন ধনাত্মক আধানযুক্ত, আর নিউট্রন নিরপেক্ষ। মানে এর কোনো আধান বা চার্জ নেই।…
ফারেনহাইট স্কেল ব্যবহারকারীদের জন্য খুব একটা সহজবোধ্য নয়, খুব একটা যুক্তিগ্রাহ্যও নয়। পানি জমে বরফ হয়ে যাওয়ার তাপমাত্রা কেন ৩২ ডিগ্রি হবে, আর গরম হয়ে ফুটতে শুরু করবে কেন ২১২ ডিগ্রিতে? এর কোনো সদুত্তর নেই। ১৭৪২ সালে সুইডেনের বিখ্যাত জ্যোতির্বিজ্ঞানী অ্যান্ডার্স সেলসিয়াস ফারেনহাইটের স্কেলকে সহজ করার ব্যবস্থা করলেন। তিনি পানির গলনাঙ্ককে ১০০ ডিগ্রি এবং স্ফুটনাঙ্ককে শূন্য ডিগ্রি ধরে একটি স্কেল চালু করলেন। এই সেলসিয়াস স্কেল সহজ হলেও কেমন যেন উল্টো মনে হলো সবার কাছে। তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ডিগ্রির পরিমাণ বাড়া উচিত। সেলসিয়াস তাঁর স্কেল ঠিক করার আগেই ১৭৪৪ সালে মারা যান মাত্র ৪৩ বছর বয়সে। সেলসিয়াসের মৃত্যুর পর উদ্ভিদবিজ্ঞানী…
অসীম বা ইনফিনিটি নিয়ে মানুষ হয়তো সভ্যতার শুরু থেকেই ভেবেছে। সেই ভাবনায় কতটা গণিত ছিল, তা জানা কঠিন। তবে রাতের আকাশের দিকে তাকিয়ে আদিমানব যে বিস্মিত হয়েছিল, ভেবেছিল এর বিস্তারের কথা, তা নিয়ে কোনো বিবাদ থাকার কথা নয়। মায়া সভ্যতার আদিজ্যোতির্বিজ্ঞানীদের কথা বলুন, কিংবা বলুন মিশরের ফেরাউনদের পিরামিড তৈরির ভাবনার কথা—অসীমের দিকে মানুষের দৃষ্টি নিবদ্ধ ছিল আজন্ম। প্রশ্ন হলো, গাণিতিক দৃষ্টিকোণ থেকে অসীমের ভাবনা উপস্থাপিত হলো কখন? বার্নার্ড বোলজানো নামে এক বোহেমিয়ান (প্রাচীন চেক সাম্রাজ্য) পাদ্রী প্রথম সতের শতকের শেষদিকে অসীমের গাণিতিক সংজ্ঞা দেন তাঁর প্যারাডক্স অব দ্য ইনফাইনাইট গ্রন্থে। গাণিতিক দৃষ্টিকোণ থেকে অসীমের অনুপস্থিতি যে প্যারাডক্স বা হেঁয়ালির জন্ম দেয়, তার…
কণাপদার্থবিজ্ঞানের বিস্ময়কর জগতে একটা নীতি আছে। চার্জের সংরক্ষণশীলতা নীতি। এ নীতিকে কণা পদার্থবিজ্ঞানের স্ট্যান্ডার্ড মডেলের একটা খুঁটি হিসেবে বিবেচনা করা যায়। এ নীতি আমাদের বলে, ভর ও শক্তির মতো বৈদ্যুতিক চার্জেরও কোনো ধ্বংস বা সৃষ্টি নেই। মহাবিশ্বের বিপুল মিথস্ক্রিয়ার মাঝে চার্জের মোট পরিমাণ স্থির। কোনো হ্রাস-বৃদ্ধি হবে না। সব সময় একই থাকবে। অর্থাৎ পরিমাণটি ধ্রুব। অগণিত কণা দিয়ে গড়ে উঠেছে আমাদের এই মহাবিশ্ব। এর মধ্যে একটি মৌলিক কণা ইলেকট্রন। এটি একধরনের লেপটন, আরেকটু বড় পরিসরের হিসেবে ফার্মিওন, অর্থাৎ বস্তুকণা। সহজ করে বললে, বস্তুর কণাগুলোকে বলা হয় ফার্মিওন আর বলের কণাগুলোকে বাঙালি বিজ্ঞানী সত্যেন বসুর নামে ডাকা হয় বোসন। বেশির ভাগ…
মাথায় মুকুট পরার চেয়ে খোলাটাই নাকি বেশি কষ্টের। ইতিহাস আর ক্ষমতালোভী রাজনৈতিক নেতাদের ক্ষেত্রেও কথাটা সত্যি। ক্ষমতা ছাড়তে কষ্ট হলেও সিঁড়ি দিয়ে নামার চেয়ে ওপরে উঠতেই বেশি কষ্ট হয়। কিন্তু কেন? এর পেছনে রয়েছে মাধ্যাকর্ষণ বল। পৃথিবী সবসময় তার কেন্দ্রের দিকে আমাদের টানছে। একেই বলে মাধ্যাকর্ষণ বল। এ বলের কারণে আমরা ঘূর্ণমান পৃথিবীর বাইরে ছিটকে পড়ছি না। সিঁড়ি দিয়ে ওপরে ওঠার সময় এ মাধ্যাকর্ষণ বা মহাকর্ষ বলের বিপরীতে শক্তি প্রয়োগ করতে হয়। সে কারণে পায়ের পেশীগুলোকে কাজ করতে হয় তুলনামূলক বেশি। পায়ের পেশীতে অনেক বেশি রক্ত সরবরাহ করতে হয় হৃৎপিণ্ডকে। একই কারণে ফুসফুসকেও বেশি বেশি অক্সিজেন সরবরাহ করতে হয়, আর…
১৯৯৩ সালে বিজ্ঞানী লিও লেডারম্যান প্রায় সাড়ে চারশ পৃষ্ঠার এক বই লিখেছিলেন। হিগস-বোসন কণা অনুসন্ধান কেন জরুরি, সেটা বোঝাতে বইটি লেখেন তিনি। তবে বইটির নামকরণ নিয়ে বেশ ভোগান্তিতে পড়েন। অনেক ভেবেচিন্তে কোনো নামই মনপূত না হওয়ায় অবশেষে বিরক্তি নিয়ে বইটির নাম রাখেন দ্য গড-ড্যাম পার্টিকেল। কিন্তু ওই নামও পছন্দ হলো না প্রকাশকের। নামটাকে আরও ছেঁটে ‘গড পার্টিকেল’ রাখার প্রস্তাব দিলেন তিনি। বইয়ের কাটতি বাড়াতে লেডারম্যান ওই নামেই রাজি হলেন। বইটির প্রভাবে বিজ্ঞানী মহলসহ সব জায়গায় হিগস-বোসন কণার নাম হয়ে গেল গড পার্টিকেল। বাংলায়—ঈশ্বর কণা। এ তো গেল নামকরণের গল্প। কিন্তু ঈশ্বর কণা আসলে কী? এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ড কীভাবে সৃষ্টি হয়েছে, তা অনেক…
গরম চা কীভাবে ঠান্ডা হলো? শুরুতে চায়ের ভেতর এমন একটা কিছু ছিল, যা এখন নেই, একে আমরা তাপ বলি। তাপ একধরনের শক্তি, অন্যভাবে বলা যায় শক্তির একটি রূপ হলো তাপ। আর ঠান্ডা বা গরমের যে অনুভূতি, তাকে বলি তাপমাত্রা। একটি বস্তু শূন্য কেলভিনের (প্রায় মাইনাস ২৭৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস) ওপর থাকলেই তাপ বিকিরণ করতে থাকে। এই বিকিরণের মাত্রা নির্ভর করে বস্তুর তাপমাত্রার ওপর, বস্তুর তাপের ওপর নয়। বিকিরণ করার মানে হলো, তাপ হারানো। কাপের চা তাপ বিকিরণ করে ঠান্ডা হয়ে গেছে। বিকিরণ ছাড়াও একটি বস্তু আরও দুটি উপায়ে তাপ হারাতে পারে, যেগুলোকে পরিচলন এবং পরিবহন বলে। পৃথিবী কেন গরম, এর ব্যাখ্যার…
কোয়ান্টাম টানেলিং ঘটতে কতটা সময় লাগে, এটা নিয়ে এত দিন বিজ্ঞানীরা ঠিক নিশ্চিত ছিলেন না। কিন্তু তিন বছরের দীর্ঘ এক গবেষণার পর ২০১৯ সালে এর জবাব খুঁজে পেয়েছেন বিজ্ঞানীদের একটি আন্তর্জাতিক দল। হাইড্রোজেন থেকে নির্গত একটি ইলেক্ট্রনের টানেলিং করে দেখেছেন তাঁরা। বলতে গেলে ঘটনাটা প্রায় চোখের পলকেই ঘটে যায়। এ জন্য তাঁরা ব্যবহার করেছেন অ্যাটোক্লক নামে একধরনের অপটিক্যাল গণকযন্ত্র। যন্ত্রটি দিয়ে অতিক্ষুদ্র তরঙ্গের আয়নিত আলো ব্যবহার করা হয়। এই আলো ইলেকট্রনের নড়াচড়া অ্যাটোসেকেন্ডে মাপতে পারে। ১ অ্যাটোসেকেন্ড খুবই ক্ষুদ্র সময়। একটা উদাহরণ দিলে ব্যাপারটা পরিষ্কার হয়ে যাবে। এক সেকেন্ডের বিলিয়ন ভাগের এক ভাগ হচ্ছে ১ অ্যাটোসেকেন্ড। বিজ্ঞানীরা করলেন কী, অ্যাটোক্লকের…
প্রাকৃতিক চারটি বল হলো বিদ্যুৎচুম্বকীয় বল, শক্তিশালী নিউক্লিয়ার বল, দুর্বল নিউক্লিয়ার বল এবং মহাকর্ষ। প্রথম তিনটিকে ব্যাখ্যা করা হয় কণাপদার্থবিজ্ঞানের স্ট্যান্ডার্ড মডেল দিয়ে। এ ত্রয়ী বলকে বলা হয় নন-গ্র্যাভিটেশনাল ফোর্স বা অমহাকর্ষীয় বল। আর শেষেরটি—মহাকর্ষ বা গ্র্যাভিটিকে ব্যাখ্যা করে আপেক্ষিকতা তত্ত্ব। আরও সঠিকভাবে বললে, সাধারণ আপেক্ষিকতা তত্ত্ব। বিদ্যুৎ-চুম্বকীয়, শক্তিশালী ও দুর্বল নিউক্লিয়ার বল ব্যাখ্যা করে পরমাণুর মতো অতিক্ষুদ্র জগৎ। অন্যদিকে মহাবিশ্বের বড় পরিসরের কাঠামো (যেমন গ্রহ, নক্ষত্র, কৃষ্ণগহ্বর ইত্যাদি) ব্যাখ্যা করে আপেক্ষিকতা তত্ত্ব। স্ট্যান্ডার্ড মডেলে তিনটি বলের ব্যাখ্যায় বলা হয়, এসব বলে বলবাহী অতিপারমাণবিক কণা বিনিময় হয়। বস্তুকণাদের একত্রিত রাখার পেছনে কাজ করে প্রকৃতির তিনটি মৌলিক বল। এরকম ব্যাখ্যায় স্ট্যান্ডার্ড…
২২ বছর বয়সে তিনি আবিষ্কার করেছেন একটি উপপারমাণবিক কণা বা সাবঅ্যাটমিক পার্টিকেল (প্রচলিত ‘ভুল’ বাংলায় যাকে বলে ‘অতিপারমাণবিক’ কণা)। তারপর পরিবারের জন্য ছেড়ে গেছেন গবেষণার জগৎ। তিনি ব্রিটিশ পদার্থবিদ রোজমেরি ফাউলার। প্রায় ৭৫ বছর পর সম্মানসূচক পিএইচডি ডিগ্রি পেয়েছেন এই বিজ্ঞানী। কণাপদার্থবিজ্ঞানের আজব চিড়িয়াখানাটির নাম স্ট্যান্ডার্ড মডেল। এই মডেলে মৌলিক কণাগুলোকে সহজেই খুঁজে পাবেন আপনি। এতে আছে ছয় ধরনের কোয়ার্ক—আপ, ডাউন, টপ, বটম, চার্ম ও স্ট্রেঞ্জ; এবং ছয় ধরনের লেপটন—ইলেকট্রন, মিউওন, টাউ, ইলেকট্রন নিউট্রিনো, মিউওন নিউট্রিনো ও টাউ নিউট্রিনো। এসবই বস্তুকণা। পাশাপাশি বলের কণা হিসেবে পাবেন গ্লুয়ন, ফোটন, জেড বোসন, ডব্লিউ বোসন এবং সব কণার ভরের জন্য দায়ী হিগস বোসন।…
২০১২ সালে জেনেভার সার্নের লার্জ হ্যাড্রন কলয়ডার (এলএইচসি) যন্ত্রে পাওয়া যায় হিগস-বোসন কণা। এ ঘটনা চমকে দেয় পুরো পৃথিবীকে। মহাবিশ্বের সব কণা ও তাদের আচরণ ব্যাখ্যার জন্য পদার্থবিজ্ঞানীরা যে স্ট্যান্ডার্ড মডেল ব্যবহার করে আসছেন, হিগস কণা ছিল এই স্ট্যান্ডার্ড মডেলের ব্যাখ্যার সর্বশেষ অধরা কণা। তবে এখনো স্বস্তির নিশ্বাস ফেলার সময় আসেনি। গবেষণায় পাওয়া নতুন কিছু তথ্য ধারণা দিচ্ছে, এই স্ট্যান্ডার্ড মডেলের বাইরে আরও কিছু কণা থাকতে পারে। পদার্থবিজ্ঞানে এটা নতুন চ্যালেঞ্জ। হিগস কণা আবিষ্কার হয় এলএইচসির অ্যাটলাস এবং সিএমএস—এই দুই প্রজেক্ট থেকে। নতুন কণা আবিষ্কারের জন্য কাজ করছে এলএইচবি। কলয়ডারে বিউটি হ্যাড্রন কণার ভাঙন কীভাবে হয়, তার পর্যবেক্ষণ আর বিশ্লেষণ…
বিংশ শতাব্দীর তত্ত্বীয় পদার্থবিজ্ঞানের সবচেয়ে বড় আবিষ্কার কোয়ান্টাম মেকানিকস। শতাব্দী প্রাচীন ক্ল্যাসিক্যাল মেকানিকস পরমাণু ও পরমাণুর চেয়ে ছোট অতিপারমাণবিক কণার গতিপ্রকৃতি সঠিকভাবে ব্যাখ্যা করার জন্য যথেষ্ট শক্তিশালী নয়। পরমাণুর গঠন ও গতিপ্রকৃতি সম্পর্কে নতুন নতুন ধারণা তৈরি হবার সঙ্গে সঙ্গে সেগুলোকে সঠিকভাবে ব্যাখ্যা করার জন্য একটা নতুন গাণিতিক প্রক্রিয়ার যে ভীষণ দরকার, তা বিংশ শতাব্দীর শুরুতেই বুঝতে পেরেছিলেন বিজ্ঞানীরা। ম্যাক্স প্ল্যাংক, ম্যাক্স বর্ন, নীলস বোরসহ যে কজন বিজ্ঞানীর হাতে কোয়ান্টাম মেকানিকসের জন্ম ও বেড়ে ওঠা, পল ডিরাক তাঁদের অন্যতম। কোয়ান্টাম মেকানিকসের দুটো প্রধান সমীকরণের একটি হলো শ্রোডিঙ্গার সমীকরণ এবং অন্যটি ডিরাক সমীকরণ। কোয়ান্টাম মেকানিকসে আইনস্টাইনের থিওরি অব রিলেটিভিটির প্রয়োগ করে…
কৃষ্ণগহ্বরকে প্রায়ই নেতিবাচক হিসাবে বিবেচনা করা হয়। কিন্তু কৃষ্ণগহ্বরের কী কোনো উপকার নেই? কৃষ্ণগহ্বর সবকিছু গ্রাস করে নেয়, এমন কি আলোও ওখান থেকে বের হতে পারে না, এরকম ধারণা থেকে কৃষ্ণগহ্বরকে নেতিবাচক বলে বিবেচনা করা হয়। আসলে কৃষ্ণগহ্বর অতটা নেতিবাচক নয়। স্টিফেন হকিং প্রমাণ করে দিয়েছেন যে কৃষ্ণগহ্বর থেকেও বিকিরণ নির্গত হয়- যাকে আমরা হকিং রেডিয়েশান বলে জানি। মহাবিশ্বকে ভালোভাবে জানার জন্য এবং মহাবিশ্বের অনেক মৌলিক নীতি পরীক্ষা করে দেখার জন্য, বিশেষ করে আইনস্টাইনের জেনারেল রিলেটিভিটি বা আপেক্ষিকতার সার্বিক তত্ত্ব, কোয়ান্টাম মেকানিকস, এবং মহাবিশ্ব সৃষ্টিতত্ত্ব বা কসমোলজির তত্ত্ব পর্যবেক্ষণের জন্য কৃষ্ণগহ্বর খুবই উপকারি ভূমিকা রাখছে।