জুমবাংলা ডেস্ক : গোপালগঞ্জে সংঘটিত সহিংস ঘটনার প্রতিবাদে রোববার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সর্বাত্মক হরতালের ডাক দিয়েছে আওয়ামী লীগের চারটি সংগঠন—যেগুলোর সব ধরনের কার্যক্রম ইতোমধ্যে নিষিদ্ধ করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, জাতীয় শ্রমিক লীগ এবং নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ—এই চার সংগঠন শনিবার এক যৌথ বিবৃতির মাধ্যমে হরতালের কর্মসূচি ঘোষণা করে।
বিবৃতিটি আওয়ামী লীগ এবং সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলোর নিজ নিজ ফেসবুক পেজেও প্রকাশ করা হয়েছে, পাশাপাশি সংবাদমাধ্যমেও পাঠানো হয়।
বুধবার গোপালগঞ্জ শহরে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-এর পদযাত্রা ও সমাবেশকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে এখন পর্যন্ত পাঁচজন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
এনসিপির অভিযোগ, তাদের সমাবেশস্থল এবং গাড়িবহরে জয়বাংলা স্লোগান দিয়ে হামলা চালিয়েছে ‘নিষিদ্ধ’ আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের কর্মীরা।
অন্যদিকে, আওয়ামী লীগের চার সংগঠনের দাবি, গোপালগঞ্জে “নির্বিচারে গুলি চালিয়ে হত্যা করা হয়েছে।”
যৌথ বিবৃতিতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালকে ‘অবৈধ’ আখ্যা দিয়ে সংগঠনগুলো ট্রাইব্যুনালের বিচার কার্যক্রমের বিরোধিতা করে।
এছাড়া তারা অন্তর্বর্তী সরকারের পদত্যাগের দাবিতে এই হরতালের ডাক দিয়েছে।
এর আগে, ১৬ ও ১৯ ফেব্রুয়ারিতে যথাক্রমে অবরোধ ও হরতালের কর্মসূচি দিলেও নিষিদ্ধ থাকা সংগঠনগুলোর কোনো নেতাকর্মীকে সেদিন মাঠে দেখা যায়নি।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে এবং তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান।
বর্তমানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী ও এমপিদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের কার্যক্রম চলছে।
বিবৃতিতে সংগঠনগুলো দাবি করে, অন্তর্বর্তী সরকার “জোর করে ক্ষমতা দখল করে সন্ত্রাস, সহিংসতা ও ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে জনগণের প্রতিনিধিত্ব ছাড়াই ক্ষমতায় বসেছে।”
সরকারকে ‘সংবিধান লঙ্ঘনকারী’ ও ‘খুনি-ফ্যাসিস্ট’ আখ্যা দিয়ে তারা বলেছে, আসন্ন “মার্চ টু যমুনা” কর্মসূচির প্রস্তুতির অংশ হিসেবেই এই হরতাল ডাকা হয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এসব সংগঠনের সরব উপস্থিতি থাকলেও মাঝে মাঝে তাদের ঝটিকা মিছিলও দেখা গেছে। এরপর চলতি বছরের ১২ মে অন্তর্বর্তী সরকার আওয়ামী লীগসহ সব অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে।
এর আগে ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে ছাত্রলীগকে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।
২৩ জুন আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতেও দেশে কোনো আয়োজন হয়নি; তবে লন্ডনে অবস্থানরত নেতাকর্মীরা সেখানেই সমাবেশ করেছেন। ভার্চুয়ালভাবে যুক্ত হয়ে সেখান থেকে দিল্লি থেকে ভাষণ দেন দলের সভাপতি শেখ হাসিনা।
ফেব্রুয়ারিতে হরতালের আগেও অন্তর্বর্তী সরকারের পদত্যাগসহ দশ দফা দাবিতে হরতাল ও বিক্ষোভ কর্মসূচি দিয়েছিল ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ। ১৬ ফেব্রুয়ারি অবরোধ এবং ১৮ ফেব্রুয়ারি সর্বাত্মক হরতালের ডাক দেওয়া হলেও নেতাকর্মীদের অনুপস্থিতিতে সেসব কর্মসূচি ব্যর্থ হয়।
এবার আবারও নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগের চারটি সংগঠন হরতাল ডেকেছে।
এই বিষয়ে নিরাপত্তা প্রস্তুতির ব্যাপারে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) যুগ্ম কমিশনার (অপারেশনস) মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ জানান, “যেকোনো পরিস্থিতিতে আমাদের সর্বোচ্চ প্রস্তুতি থাকে। যে কোনো হুমকি বা ইস্যুকে গুরুত্ব দিয়ে আমরা নিরাপত্তা পরিকল্পনা তৈরি করি। সবকিছু আমাদের কভারেজের মধ্যেই থাকে।”
তিনি আরও বলেন, “প্রতিদিনই আমরা এ ধরনের হুমকি পেয়ে থাকি। যদি কিছু থাকে, তার গুরুত্ব অনুযায়ী আমরা ব্যবস্থা নিই এবং সেই মোতাবেক পরিকল্পনা করি।”
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।