মিজানুর রহমান : চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানার একটি চিঠির সূত্র ধরে গেল মাসে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের সহযোগী সাইফুল ইসলাম সুমনের শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে বিদেশযাত্রা আটকে দেয় ইমিগ্রেশন পুলিশ। সুমনের বিরুদ্ধে অবশ্য পাঁচলাইশ থানার মামলা ছাড়াও চট্টগ্রামের চান্দগাঁও ও হাটহাজারী থানায় দুটি হত্যা মামলা এবং পটিয়া থানায় বিস্ফোরক মামলা রয়েছে। এত মামলা থাকার পরও ৬ জানুয়ারি গ্রেপ্তার হওয়ার পরের দিনই জামিন পেয়ে যান তিনি।
চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম সুমন সাবেক মন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের প্রভাব খাটিয়ে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে অন্তত এক হাজার ৩০০ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে সাবেক মন্ত্রী জাবেদ ও ড. হাছান মাহমুদসহ কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতার অন্তত ১০ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচারের ক্ষেত্রে সহযোগিতা করার অভিযোগ রয়েছে। এসব অভিযোগে সাইফুল ইসলাম সুমনের বিরুদ্ধে তদন্ত করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
ফরোয়ার্ডিংয়ে হত্যা মামলা উল্লেখ করেনি বিমানবন্দর থানা
পুলিশের মামলা সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য জমা থাকে সিডিএমএস (ক্রাইম ডাটা ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম) নামে একটি ওয়েবসাইটে। যেখানে কারও নাম-ঠিকানা দিয়ে সার্চ দিলে তার নামে কয়টি মামলা রয়েছে এবং আগে কোনো সময় ফৌজদারি মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন কি না, তা বেরিয়ে আসে।
এই প্রতিবেদক একাধিক পুলিশ কর্মকর্তার সহযোগিতায় সাইফুল ইসলামের নাম-ঠিকানা দিয়ে তার মামলা সংক্রান্ত তথ্য দেখেছেন। সেখানে সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে তিনটি ফৌজদারি মামলা পাওয়া যায়। এর মধ্যে রয়েছে— হাটহাজারী থানার একটি হত্যা মামলা, পাঁচলাইশ থানার একটি হত্যাচেষ্টা মামলা এবং পটিয়া থানার একটি বিস্ফোরক মামলা। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে সর্বশেষ বিমানবন্দর থানায় দায়ের হওয়া জিডিটিও অনলাইনে রেকর্ড রয়েছে। চান্দগাঁও থানায় দায়ের হওয়া মামলাটির তথ্য সিডিএমএসে পাওয়া যায়নি। তবে এ মামলা সংক্রান্ত নথি ঢাকা পোস্টের হাতে রয়েছে।
পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, ফৌজদারি মামলা বা অভিযোগে একজন ব্যক্তি গ্রেপ্তার হওয়ামাত্র পুলিশ কর্মকর্তাদের প্রথম কাজ তার নাম-ঠিকানা যাচাই করা। এরপর সেই তথ্য দিয়ে সিডিএমএস ওয়েবসাইটে সার্চ দেওয়া। এক্ষেত্রে আসামি সাইফুল ইসলাম সুমনের ব্যক্তিগত পাসপোর্ট ছিল। সুতরাং তার নাম-ঠিকানা নিশ্চিত হওয়া গিয়েছিল। এই তথ্য দিয়ে ওয়েবসাইটে তার মামলা পাওয়া যায়। কিন্তু বিমানবন্দর থানা ফরোয়ার্ডিং দেওয়ার সময় কেবল পাঁচলাইশ থানার হত্যাচেষ্টা মামলা দিয়ে ফরোয়ার্ড করে।
সাইফুল ইসলামকে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ফরোয়ার্ড করেন বিমানবন্দর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. হাবিবুল হাসিব। ফরোয়ার্ডিংয়ে শুধুমাত্র একটি মামলার কথা উল্লেখ করার কারণ জানতে চাইলে তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি আসামির সিডিএমএস যাচাই করে শুধু পাঁচলাইশ থানার মামলাটি পেয়েছিলাম। এটি লিখে আমি আদালতে ফরোয়ার্ড করেছি।
যেহেতু ফরোয়ার্ডিং দেওয়ার সময় আমলযোগ্য ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত অর্থাৎ হত্যাচেষ্টা মামলার আসামি হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে, সেহেতু বিচারক সেটি বিবেচনা করে জামিন না মঞ্জুর করতে পারতেন। চট্টগ্রাম আদালতের আইনজীবী আনোয়ার হোসেন। -চট্টগ্রাম আদালতের আইনজীবী আনোয়ার হোসেন
তবে, এসআই হাবিবুল হাসিবের এমন দাবির পর আরও কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তার মাধ্যমে সিডিএমএস যাচাই করে সাইফুল সুমনের বিরুদ্ধে হত্যা, হত্যাচেষ্টা ও বিস্ফোরকসহ তিনটি মামলার তথ্য পাওয়া যায়।
হত্যা মামলা থাকার পরও সন্দেহজনক আসামি হিসেবে আদালতে চালান
দুটি হত্যা মামলা, একটি হত্যাচেষ্টা ও বিস্ফোরকসহ বড় বড় চারটি মামলা থাকার পরও ৫৪ ধারায় আদালতে সোপর্দ করা হয় সাইফুল ইসলাম সুমনকে। অথচ এই ধারায় চালান দেওয়া হয় যদি কোনো মামলা না থাকে। আইনজীবীরা মনে করছেন, সবচেয়ে ভালো আইনানুগ ব্যবস্থা ছিল আসামিকে চট্টগ্রামের মামলা সংশ্লিষ্ট কোনো থানায় হস্তান্তর করা। এক্ষেত্রে পুলিশ স্কোয়াড দিয়ে আসামিকে চট্টগ্রামে পাঠিয়ে দেওয়ার কথা ছিল। তারা বলছেন, কিন্তু চট্টগ্রামের পুলিশ কর্মকর্তারা জনবল সংকটের কারণ দেখিয়ে আসামিকে চট্টগ্রামে নিতে পারেননি। এ কারণে আসামিকে ৫৪ ধারায় আদালতে সোপর্দ করা হয়।
পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, গত ৫ আগস্টের পর আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগীরা দেশের সীমান্তবর্তী বিভিন্ন জেলা ও বিমানবন্দর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার হন। সেক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে আসামিদের মামলার রেফারেন্স দিয়ে ৫৪ ধারায় আদালতে সোপর্দ করা হয়। পরবর্তীতে মামলা সংশ্লিষ্ট থানা থেকে আদালতের মাধ্যমে পরোয়ানা পাঠানো হয়। তখন ৫৪ ধারা বিলুপ্ত হয়ে আসামিকে সংশ্লিষ্ট মামলায় সংশ্লিষ্ট কারাগারে রাখা হয়।
আইনজীবীরা জানান, ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারায় বলা হয়েছে, যেকোনো পুলিশ কর্মকর্তা ম্যাজিস্ট্রেটের আদেশ বা পরোয়ানা ছাড়াই যেকোনো ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করতে পারেন। মোট নয়টি কারণে এ ধারায় গ্রেপ্তারের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে পুলিশকে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে কেউ আমলযোগ্য অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকলে বা জড়িত থাকার যুক্তিসঙ্গত অভিযোগ বা সন্দেহ থাকলে।
সাইফুল ইসলাম সুমন স্পষ্ট আমলযোগ্য অপরাধে জড়িত। পাঁচলাইশ থানার ওসি বিষয়টি লিখিতভাবে জানিয়েছেন। এই রেফারেন্স দিয়ে বিমানবন্দর থানাও ফরোয়ার্ডিংয়ে উল্লেখ করেছে। কিন্তু বিচারক ৫৪ ধারা বিবেচনায় পরের দিনই জামিন দেন। গত ৭ জানুয়ারি মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. শরীফুর রহমানের আদালত জামিন আদেশ দেন।
চট্টগ্রাম আদালতের আইনজীবী আনোয়ার হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, শুধু ৫৪ ধারার আসামি না, যেকোনো মামলার আসামিকে আদালত জামিন দিতে পারেন। বিচারক চাইলে সুমনের মামলা থাকার বিষয়টি বিবেচনায়ও আনতে পারতেন। যেহেতু ফরোয়ার্ডিং দেওয়ার সময় আমলযোগ্য ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত অর্থাৎ হত্যাচেষ্টা মামলার আসামি হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে, সেহেতু বিচারক সেটি বিবেচনা করে জামিন না মঞ্জুর করতে পারতেন। কিন্তু তিনি শুধু ৫৪ ধারার আসামি বিবেচনায় জামিন দিয়েছেন।
পুলিশের মামলা সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য জমা থাকে সিডিএমএস (ক্রাইম ডাটা ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম) নামে একটি ওয়েবসাইটে। যেখানে কারও নাম-ঠিকানা দিয়ে সার্চ দিলে তার নামে কয়টি মামলা রয়েছে এবং আগে কোনো সময় ফৌজদারি মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন কি না, তা বেরিয়ে আসে।
পরোয়ানা যায় চট্টগ্রাম আদালত থেকে, কিন্তু তার আগেই জামিনে মুক্ত
সাইফুল ইসলাম সুমন আটক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পাঁচলাইশ থানা পুলিশ বিষয়টি জানতে পারে। ৬ জানুয়ারি ভোর ৫টার মধ্যে বিমানবন্দর থানায় পাঁচলাইশ থানার পক্ষ থেকে রিক্যুইজিশন পাঠানো হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ৬ জানুয়ারি সকালে সাইফুলকে আদালতে সোপর্দ করে বিমানবন্দর থানা পুলিশ। এদিকে, ৭ জানুয়ারি চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সাইফুলকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করে পাঁচলাইশ থানা। ৮ জানুয়ারি ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে আদেশ যায় আসামি সাইফুলকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে ১২ জানুয়ারি চট্টগ্রাম আদালতে হাজির করার জন্য। কিন্তু তার আগেই অর্থাৎ ৭ জানুয়ারি আসামি সাইফুলকে কারাগার থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। ৯ জানুয়ারি চট্টগ্রামের অতিরিক্ত মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত বরাবর এ সংক্রান্ত একটি চিঠি দেয় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা এ প্রতিবেদককে জানান, ৫৪ ধারায় সোপর্দ করার পর যদি কোনো মামলার রেফারেন্স দেওয়া হয় তাহলে ওই মামলায় গ্রেপ্তার না দেখানো পর্যন্ত সচরাচর আসামিকে জেল-হাজতে রাখা হয়। মামলা থাকার পরও এভাবে এক দিনের মধ্যে জামিন এর আগে দেখা যায়নি। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন এলাকার আসামি গ্রেপ্তার হচ্ছেন। তাদের সংশ্লিষ্ট মামলায় গ্রেপ্তার না দেখানো পর্যন্ত জেলে আটকে রাখা হচ্ছে। পরবর্তীতে সংশ্লিষ্ট মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হচ্ছে।
তারা আরও জানান, অনেক সময় ফাঁসির আসামিকেও ৫৪ ধারায় আদালতে সোপর্দ করা হয়। কারণ, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থানায় পাঠানো না হলে এবং সংশ্লিষ্ট আসামি গ্রেপ্তার হলে তাকে ৫৪ ধারায় ফরোয়ার্ডিং দেওয়া হয়। পরবর্তীতে ফাঁসির মামলায় আসামিকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এই প্র্যাক্টিসই হয়ে আসছে। কিন্তু সুমনের ক্ষেত্রে অস্বাভাবিক দ্রুততার সঙ্গে জামিন দেওয়া হয়েছে।
বিএনপির নেতাদের আশ্রয় খুঁজছেন সাইফুল
আওয়ামী লীগের মন্ত্রীদের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সাইফুল ইসলাম সুমন গত ৫ আগস্টের পর বিএনপির নেতাদের সহযোগিতা নিচ্ছেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিনিময়ে বিনিয়োগ করছেন কোটি কোটি টাকা। তার এমন জামিনে বিএনপির কেন্দ্রীয় তরুণ এক নেতা কাজ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়া সুমন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি ইদ্রিস মিয়ার ভাইয়ের ছেলে।
গত ২ ফেব্রুয়ারি বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভীর সই করা এক আদেশে দক্ষিণ জেলা বিএনপির পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠিত হয়। এতে ইদ্রিস মিয়াকে আহ্বায়ক করা হয়। সুমনের টাকায় কমিটিতে ঠাঁই হওয়ার অভিযোগের বিষয়ে জানতে ইদ্রিস মিয়াকে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। পরবর্তীতে খুদে বার্তা পাঠানো হলেও সাড়া মেলেনি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সাইফুল ইসলাম সুমনের বিরুদ্ধে পটিয়া থানায় বিস্ফোরক মামলাটি রেকর্ড হয় গত বছরের ১ নভেম্বর। এরপর থেকে তাকে গ্রেপ্তারে একাধিক অভিযান পরিচালনা করে পটিয়া থানা পুলিশ। পাশাপাশি নগরের পাঁচলাইশ থানা পুলিশ তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালায়। বিষয়টি আঁচ করতে পেরে সুমন পুলিশকে ম্যানেজ করতে মরিয়া হয়ে ওঠেন। এক পুলিশ কর্মকর্তার মাধ্যমে ওসিদের জন্য বড় অঙ্কের টাকা পাঠান সুমন। তবে, সেই টাকা ওসিদের হাত পর্যন্ত গেছে কি না, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। যদিও ডিসেম্বরে এসে ওসিদের তৎপরতা থেমে যায়। সুমনও নিশ্চিন্ত মনে বিদেশ পালানোর চেষ্টা চালান।
এ ধরনের মামলা থাকলে ৫৪ ধারায় চালান দিলেও আসামিকে অন্তত ১৫ দিন কারাগারে রাখা যায়। এ সময়ের মধ্যে সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তা আরেকটি প্রতিবেদন পাঠান। সেই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে সাধারণত আসামির জামিনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু আসামির কীভাবে জামিন হলো আমি বুঝতে পারছি না। -চান্দগাঁও থানার ওসি আফতাব উদ্দিন
টাকা লেনদেনের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে চান্দগাঁও থানার ওসি আফতাব উদ্দিন ও পাঁচলাইশ থানার ওসি মোহাম্মদ সোলাইমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, এ ধরনের কোনো কিছু হলে আমরা রিকুইজিশনসহ এত কাগজপত্র পাঠাতাম?
৬ জানুয়ারি বিমানবন্দরেও নির্ভার ছিলেন সাইফুল ইসলাম সুমন। কারণ, তিনি ইতোমধ্যে ওসিদের ম্যানেজ করে ফেলেছিলেন। কিন্তু ইমিগ্রেশন পুলিশ তাকে আটকে দেয়। এ সময় তাকে চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানা পুলিশের পাঠানো একটি চিঠি দেখানো হয়। ২৪ ডিসেম্বর চিঠিটি বিশেষ পুলিশ সুপার (ইমিগ্রেশন অ্যাডমিন) বরাবর পাঠানো হয়। সেখানে আসামি সুমনকে ‘stop listed’ করার আবেদন করা হয়। ওই চিঠি দেখে অবাক হন সুমন। ইমিগ্রেশন পুলিশ তখন পাঁচলাইশ থানা পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে। পাঁচলাইশ থানা পুলিশের অনড় অবস্থানের কারণে আসামিকে বিমানবন্দর থানায় সোপর্দ করা হয়।
পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সোলাইমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের হাতে সুমনের বিরুদ্ধে একটি মামলা রয়েছে। ওই মামলায় গ্রেপ্তারের জন্য আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। তাকে আটকানোর জন্য ইমিগ্রেশন পুলিশ বরাবরে চিঠি দিয়েছি। আমাদের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে তাকে আটকানো হয়েছে। কিন্তু জনবল সংকটের কারণে আমরা আসামি সাইফুলকে ঢাকা থেকে আনতে পারিনি। কিন্তু আমরা তাকে গ্রেপ্তার দেখানোর যাবতীয় প্রক্রিয়া অনুসরণ করেছি।
হত্যা মামলা যোগ হয়নি সিডিএমএসে
সাইফুল ইসলাম নগরের চান্দগাঁও থানায় রেকর্ড হওয়া একটি হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি। ২০ সেপ্টেম্বর চান্দগাঁও থানায় মামলাটি রেকর্ড হয়। এটি চান্দগাঁও থানার ২৬ নম্বর মামলা। থানায় যেকোনো মামলা রেকর্ড হলেই সিডিএমএসে যোগ হয়ে যায়। আসামির নামে আগে থেকে যদি প্রোফাইল করা থাকে তাহলে সেটিতে যোগ হয়। অন্যথায় নতুন করে তার নামে প্রোফাইল তৈরি হয়। তবে, সাইফুল ইসলাম সুমনের বিরুদ্ধে চান্দগাঁও থানায় দায়ের হওয়া মামলাটি সিডিএমএসে যোগ হয়নি।
এ প্রসঙ্গে চান্দগাঁও থানার ওসি আফতাব উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, সাইফুল ইসলাম সুমনের বিরুদ্ধে আমাদের থানায় একটি হত্যা মামলা রয়েছে। সুমন ঢাকা বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার হয়েছে, এমন তথ্য পেয়ে আমরা সংশ্লিষ্ট থানায় যথাযথ প্রক্রিয়ায় অবহিত করেছি। চট্টগ্রাম আদালতের মাধ্যমে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করেছি। কিন্তু আসামিকে আমরা পাইনি। তার জামিন হওয়ার বিষয়টিও আমি জানি না। তবে, এ ধরনের মামলা থাকলে ৫৪ ধারায় চালান দিলেও আসামিকে অন্তত ১৫ দিন কারাগারে রাখা যায়। এ সময়ের মধ্যে সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তা আরেকটি প্রতিবেদন পাঠান। সেই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে সাধারণত আসামির জামিনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু আসামির কীভাবে জামিন হলো আমি বুঝতে পারছি না।
সিডিএমএসে হত্যা মামলা যোগ না হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি বলেন, মামলাটি হয়েছে সেপ্টেম্বর মাসে। আমি থানায় যোগ দিয়েছি নভেম্বর মাসে। সাধারণত মামলা রুজুর সঙ্গে সঙ্গে সিডিএমএসে যোগ হওয়ার কথা। কিন্তু এটি হয়নি কেন, আমি সঠিক বলতে পারব না। তবে, আমার কাছে মনে হচ্ছে মামলায় হয়তো তার বাবার নাম, ঠিকানা বা অন্য কোনো তথ্য ভুল দেওয়া হয়েছে। এ কারণে হয়তো সার্ভারে দেখাচ্ছে না।
গোটা বিষয়ে জানতে সাইফুল ইসলাম সুমনের মোবাইলে ফোন করা হলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। হোয়াটসঅ্যাপে কল করা হলেও সংযোগ পাওয়া যায়নি।
সূত্র ও ছবি : ঢাকা পোস্ট
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।