আন্তর্জাতিক ডেস্ক : কথায় বলে শখের তোলা আশি টাকা। এই শখ যদি হয় কোন নারীর, তাহলে দাম বেড়ে যায় আরও অনেক। নিজেদের শখ পূরণে নারীরা কত কিছুই না করেন। একজন নারীর সবচেয়ে বড় শখ বা ইচ্ছার একটি হলো একদিন মা হবেন তিনি, ভূমিষ্ঠ হবে নিজের উত্তরাধিকার। আর বিষয়টি অনেকটাই প্রকৃতির চক্র।
কিন্তু এমন কী কখনও শুনেছেন, গর্ভবতী হতে স্বামী বা সঙ্গীকে ছেড়ে অন্য দেশে ছুটে যাচ্ছেন নারীরা। তা হলে খুলেই বলা যাক। গর্ভবতী হতে নারী সুদূর ইউরোপ থেকে এখনও ভারতের একটি গ্রামে ছুটে আসেন। শুনে চমকে গেলেন তো? কিন্তু কথাটা একেবারে সত্যি।
বলা হয়, ভারতের লাদাখে এমন একটি জায়গা আছে সেখানে নাকি আর্যরা বাস করে। আজ যে কয়েকটি খাঁটি আর্য সম্প্রদায় অবশিষ্ট রয়েছে তার মধ্যে একটি হলো ব্রোকপা সম্প্রদায়। তাদের মধ্যে দারদ উপজাতির নারীও রয়েছেন, যাদের গল্প আজ কেবল আধুনিক ভারত নয়, গোটা বিশ্বের রীতিনীতিকে ছাড়িয়ে গেছে।
জেনে অবাক হবেন যে সারা বিশ্বের লোকেরা আর্য জাতির লোকদের সন্ধান করে এবং চায় যে তাদের সন্তান আর্য জাতির হোক। ইউরোপের এমন কিছু নারী আছেন যারা শুধুমাত্র আর্য জাতির পুরুষের কাছ থেকেই গর্ভবতী হতে লাদাখের একটি জায়গায় ছুটে আসেন।
আর্যদের মধ্যে ব্রাকাপা উপজাতির লোকেরা এখনও আছেন, আর তাদের চাহিদা তুঙ্গে। এই কারণেই নারীরা এখানে আসতে এবং গর্ভবতী হতে পছন্দ করেন। এনিয়ে এখানে একটি ব্যবসাও গড়ে উঠেছে। গর্ভবতী হতে টাকা দিতে হয় নারীদের। এমনকি আর্য গোত্রের লোকদের সঙ্গে ছবি তুলতেও দিতে হয় টাকা।
কার্গিল থেকে ৭০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই গ্রামটির নাম হল আর্য উপত্যকা। এখানকার লোকেরা নীল চোখের সাথে চেহারায় অন্যান্য পুরুষদের থেকে আলাদা এবং স্বাভাবিকের চেয়ে লম্বা। বলা হয়, ইউরোপ থেকে নারীরা মা হবার ইচ্ছা নিয়ে এই আর্য উপত্যকায় আসেন। এরপর গর্ভবতী হয়ে দেশে ফিরে যান।
ঐতিহাসিকদের মতে, এই উপজাতির নাম ব্রাকাপা যার নীল চোখ, হালকা হালকা ত্বক এবং উচ্চতা অন্যান্য জাতের মানুষের চেয়ে বেশি। এটি বিশ্বাস করা হয় যে ব্রাকাপা উপজাতির লোকেরা আলেকজান্ডার দ্য গ্রেটের সেনা দলের সদস্য ছিলো, যারা লাদাখে বসবাস শুরু করে।
আরও দাবি করা হয়, যে আজও আর্য উপত্যকায় দুই হাজারের বেশি আর্য উপজাতির মানুষ বাস করে।ইউরোপীয় নারীদের বিশ্বাস, এখানকার পুরুষদের সাথে শারীরিক সম্পর্কের মাধ্যমে তারা গর্ভবতী হলে আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট-র মতো সন্তান জন্ম দেবেন।
ব্রোকপা জাতির লোকেরা তাদের পূর্বপুরুষ এবং জিনগত স্বতন্ত্রতা নিয়ে গর্ব করে। তারা শক্তিশালী সামাজিক বিধিনিষেধ এবং নিয়ম ব্যবহার করে তাদের জীবন এবং জিনগত স্বতন্ত্রতা সংরক্ষণ করেছে। লাদাখের লেহ জেলার দা-হানু উপত্যকায় তাদের মাদ্র দুটো গ্রামে যেতে দেয়ার অনুমতি দেয় ভারত।
আর্য রক্তের শুদ্ধতা বজায় রাখতে ব্রোকপারা কেবলমাত্র নিজেদের জনগোষ্ঠীর মধ্যেই বিয়ে করেন। নারীর তুলনায় পুরুষের সংখ্যা বেশি হওয়ায় এখানে নারীদের মধ্যে বহু-বিবাহের রেওয়াজ আছে। এখন অবশ্য আধুনিক ব্রোকপারা অন্য গোষ্ঠীতেও বিবাহ করছেন। তবে সেক্ষেত্রে তাদের ঠাঁই হয় না গ্রামে।
দারুণ রঙিন এই ব্রোকপাদের সাজগোজ ও বেশভূষা। লাদাখ অঞ্চলের অন্যান্য এলাকার থেকে বেশ কিছুটা নিচুতে অবস্থিত হওয়ার জন্য এখানে শীত অনেকটাই কম। লাদাখের অন্যান্য অঞ্চলের মতো জমে যাওয়া ঠান্ডা নয়। বলা ভাল চিরবসন্তের গ্রাম।
গ্রামে একটু ঘুরলেই চোখে পড়বে আঙুর, আপেল, খুবানি, বার্লি আর আখরোটের বাগান। এই গ্রামে পাওয়া যায় কমলা রঙের এক ধরনের ফুল যা বহু বছর একই রকম থেকে যায়। এই গ্রামের শস্যের উৎসব ‘বনোনা’ আর উপজাতিদের ব্রোকপা ভাষা উৎসব। সেই সময়ে আরও রঙিন হয়ে ওঠে গ্রামগুলো।
পুরুষ ও নারী উভয়েই সাজতে ভালোবাসে। মাথায় ফুল এবং ধাতব গয়না দিয়ে ব্রোকপা উপজাতির সাজ জগৎখ্যাত। ছবির মত সুন্দর গ্রাম আর টুকটুকে লাল গালের সুন্দর মানুষদের টানে প্রতি বছর বহু দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যটক আসেন এই দুই ব্রোকপা গ্রামে।
ব্রোকপারা নিজেদের বলে ‘মিনারো’। এর অর্থ, গবাদিপশু নিয়ে ঘুরে বেড়ানো মানুষ। লাদাখের ব্রোকপারা মূলত ‘বজ্রায়ণ’ শাখার বৌদ্ধ। ইসলাম ও সনাতন ধর্মকেও আপন করে নিয়েছেন কেউ কেউ। কিছু গবেষক মনে করেন, ব্রোকপারা লাদাখে এসেছিল গিলগিট বাল্টিস্থানের ‘চিলাস’ এলাকা থেকে।
ছবিটি জুম করে দেখুন বাথরুমের মধ্যে একটি ভুল রয়েছে, জিনিয়াসরাই খুঁজে পাবেন
দু’হাজার বছর আগে। কারণ গিলগিট-বাল্টিস্তানের ‘হুনজা’ ও নুরিস্তানের কাফিরদের মতোই, ব্রকপারাও নিজেদের মনে করে আলেকজান্ডারের সৈন্যদের বংশধর। ভিন্ন মত বলছে, পাঁচ হাজার বছর আগে মধ্য এশিয়ার স্তেপ অঞ্চল থেকে লাদাখের এই এলাকায় সরাসরি চলে এসেছিল ব্রোকপারা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।