জেআইসি সেলে গুম-নির্যাতনের ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সাবেক-বর্তমান ১৩ সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের শুনানির দিন ধার্য ছিল রবিবার । ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন বিচারিক প্যানেলে শুনানি করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। শুনানিতে বন্দিদের দেওয়া বিভিন্ন বিবরণ দেন তিনি।

পরে সংবাদ সম্মেলনে চিফ প্রসিকিউটর বলেন, ডিজিএফআইয়ের সদর দপ্তরের দক্ষিণ পাশে মেস-বি এর মাঝে একটি দোতলা ভবনে ছোট ছোট খোপের মতো বন্দিশালা ছিল। এতে ছিল মোটা রডের গ্রিল ও বাইরে ছিল ঢাকনা। ভেতরে কোনো আলোর ব্যবস্থা ছিল না। প্রত্যেকটা সেলের ভেতরে সিসি ক্যামেরা লাগানো থাকত। ছোট ভেন্টিলেটর ছিল। এ ছাড়া যখনই আজান হতো তখন এগজস্ট ফ্যান চালানো থাকত। কখনো কখনো উচ্চশব্দে সাউন্ড বক্সে গান বাজানো হতো। বন্দিরা যেন আজান বা বাইরের কোনো শব্দ শুনে বুঝতে না পারেন এটা কোন জায়গা।
তাজুল ইসলাম বলেন, সেলের ভেতরে থাকা এগজস্ট ফ্যানও চালিয়ে দেওয়া হতো। ফলে অসহ্য শব্দে অনেকের কান বধির হয়েছে। তারা বাইরের কোনো আওয়াজ শুনতে পেতেন না। কখনো কখনো কোনো বন্দি এগজস্ট ফ্যান চালানোর আগেই হয়ত মসজিদের মাইক থেকে আজানের শব্দ শুনেছেন। কখনো জুমার খুতবা শুনেছেন। কখনো ঘোষণা শুনেছেন যে এই এলাকার অমুক ব্যক্তি ইন্তেকাল করেছেন। তার জানাজা অমুক মসজিদে এতটা সময় অনুষ্ঠিত হবে, কেউ কেউ এটা শুনে ফেলেছেন। তাদের এই শব্দ নিয়ন্ত্রণের পরও তা থেকে বুঝতে পেরেছেন যে এটা ডিজিএফআইয়ের এই জায়গায় অবস্থিত একটা সেল।
শেখ হাসিনার পতনের পর তদন্ত সংস্থার সঙ্গে বন্দিশালা পরিদর্শনে যান ২৬ ভুক্তভোগী। তখন নিজেরাই এসব সেল চিহ্নিত করেন। কেননা, দেয়ালের কোনায় কেউ কেউ নাম লিখে এসেছিলেন। এ ছাড়া অন্যান্য আলামত দেখে গুমের সময় রাখা স্থানগুলো শনাক্ত করেছেন। এসব বন্দিশালা ভিডিও করে নিয়ে আসা হয়েছে বলে শুনানিতে জানিয়েছেন চিফ প্রসিকিউটর। যা ট্রায়ালে তুলে ধরার কথা জানিয়েছেন।
চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন, বন্দিশালায় সবসময় ২০-২৫ জন বন্দি থাকতেন। সবার ব্যবহারের জন্য বাথরুমের সামনে একটা নোংরা গামছা টানিয়ে রাখা হতো। এই একটা গামছা দিয়েই হাত-মুখ মুছতেন সবাই। গোসলের সময়ও ব্যবহার করতে হতো। ফলে অ্যালার্জিসহ নানা চুলকানি রোগে আক্রান্ত হতেন বন্দিরা। নোংরা গামছায় মুখ মোছার কারণে প্রায় সবারই চোখ উঠত। এ ছাড়া টুথব্রাশ রাখা হতো একটি। সেই ব্রাশই ২৫ জনকে ব্যবহার করতে বলা হতো। একজন মানুষকে কতটা অমানবিক পরিবেশে রাখা যায়, তার ব্যবস্থা ছিল জেআইসি সেলে। এখানেই গেল ১৫ বছর বিরোধী মতাদর্শের লোকদের গুম করে রাখা হয়েছিল। আর এসব কারণে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছে প্রসিকিউশন।
এ মামলায় ১৩ জনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের ওপর শুনানি শেষ করেছে প্রসিকিউশন। স্টেট ডিফেন্স ও আসামিপক্ষে শুনানির জন্য আগামী মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) দিন ধার্য করেছেন ট্রাইব্যুনাল।
এদিন সকালে ঢাকার সেনানিবাসের বিশেষ কারাগার থেকে কড়া নিরাপত্তায় তিন সেনা কর্মকর্তাকে হাজির করেছে পুলিশ। তারা হলেন ডিজিএফআইয়ের সাবেক পরিচালক মেজর জেনারেল শেখ মো. সরওয়ার হোসেন, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমান সিদ্দিকী ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহমেদ তানভির মাজাহার সিদ্দিকী।
শেখ হাসিনাসহ পলাতক অন্য আসামিরা হলেন শেখ হাসিনার প্রতিরক্ষা বিষয়ক সাবেক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, ডিজিএফআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক (ডিজি) লে. জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ আকবর হোসেন, সাবেক ডিজি মেজর জেনারেল (অব.) সাইফুল আবেদিন, লে. জেনারেল (অব.) মো. সাইফুল আলম, সাবেক ডিজি লে. জেনারেল তাবরেজ শামস চৌধুরী, সাবেক ডিজি মেজর জেনারেল (অব.) হামিদুল হক, মেজর জেনারেল তৌহিদুল ইসলাম, মেজর জেনারেল কবির আহাম্মদ ও লে. কর্নেল (অব.) মখসুরুল হক।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।



